Ajker Patrika

জামশেদের কাছে সব বাধাই তুচ্ছ, চান পড়াশোনা করতে

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ০৮: ৪৪
জামশেদের কাছে সব বাধাই তুচ্ছ, চান পড়াশোনা করতে

মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে ছোট থাকতেই হয়ে পড়েন এতিমখানার বাসিন্দা। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর ভর্তি হন একটি মাদ্রাসায়। কিন্তু অভাব-অনটনে পঞ্চম শ্রেণিতেই থেমে যায় পড়াশোনা। এর কয়েক বছর পর চট্টগ্রাম শহরে এসে চাকরি নেন একটি প্লাস্টিকের ফ্যাক্টরিতে। সেখানে এক ভোরে কাজ করার সময় ইঞ্জিনের ভেতরে ঢুকে যায় তাঁর ডান হাত। পরে সেই হাত কেটে ফেলতে হয়। হঠাৎ ‘প্রতিবন্ধী’ হয়ে পড়ায় হারাতে হয় চাকরি। বাঁচার জন্য শেষমেশ নেমে পড়েন রিকশা নিয়ে। চালিয়ে যান পড়ালেখা।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি পাস করার পর এবার পাহাড়তলী কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন তিনি। অদম্য এই তরুণের নাম মোহাম্মদ জামশেদ।

কলেজে প্রথম দিনের ক্লাস শেষেই গত শনিবার দুপুরে জামশেদ তাঁর জীবনের গল্প শোনাতে এসেছিলেন আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম কার্যালয়ে। সেই গল্প বলতে গিয়ে ছলছল করে উঠে ফটিকছড়ির ভুজপূরে জন্ম নেওয়া ২১ বছর বয়সী এই তরুণের চোখ।

দুঃখের সঙ্গে জামশেদের পরিচয় সেই ছোট বয়সেই। মা-বাবা আলাদা হলে দুই বছরের জামশেদকে আগলে রাখেন দাদি ফাতেমা বেগম। কিন্তু দাদাহীন দাদিরও নিত্যসঙ্গী ছিল অভাব। এতিমখানার হোস্টেলে জামশেদকে ভর্তি করালেও খাবারের টাকা দাদিকেই দিতে হচ্ছিল। নাতির সেই টাকা দিতে ফাতেমা একপর্যায়ে রান্নার কাজ নেন সেই এতিমখানায়। কিন্তু তিন বছরের মাথায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে জামশেদকে এক আত্মীয়ের সহায়তায় মীরসরাইয়ের একটি মাদ্রাসায় পাঠান। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অভাবে থেমে যায় সব। এরপর চাচার ঘরে জায়গা হয় জামশেদের।

জামশেদ জানান, ২০১৪ সালের দিকে চট্টগ্রাম শহরে এসে এক প্লাস্টিক তৈরি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতনে। ১৫ দিনের মাথায় সেখানে কাজ করতে গিয়ে হারাতে হয় ডান হাত। সুস্থ হলেও এক হাতে কাজ কম পারেন সেই অজুহাতে ৫০০ টাকা বেতন কমিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠানটিতে ব্রাত্য হয়ে উঠলে ছেড়ে দেন চাকরি। ২০১৮ সালের শেষের দিকে বাঁ হাতের সাহায্য ভাড়ায় চালাতে শুরু করেন রিকশা। সেই থেকে অন্য রিকশাচালকদের সঙ্গে সিটি গেট এলাকার একটি গ্যারেজে থাকেন তিনি।

জামশেদ আরও জানান, এত কিছুর মধ্যেও সব সময় তাড়িয়ে বেড়াত পড়ালেখা করতে না পারার দুঃখ। সাহস করে তাই ২০১৯ সালের শুরুতে বহু স্বাদের মোবাইল ফোন বিক্রি করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফৌজদারহাট কে এম হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হন। রিকশা চালানোর ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা করে ২ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট পেয়ে এবার এসএসসি পাস করেন।

জামশেদ এই দীর্ঘ সংগ্রামমুখর সময়ে পাশে পেয়েছেন কাট্টলি এলাকার সজল দাস নামের এক তরুণকে। তাঁর উদ্যোগেই ভর্তি হন পাহাড়তলী কলেজ। মনের জোরে এত দূর এলেও দুর্ভাবনার মেঘ সরেনি জামশেদের মন থেকে। এই চিন্তা একদিকে রিকশা চালানো অন্যদিকে পড়াশোনা—দুটোই কীভাবে টানবেন।

জামশেদ তাই বলেন, ‘গ্যারেজে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। আমি কম্পিউটারের কাজ পারি। একটা পার্টটাইম চাকরির হলে পড়ালেখাটা নির্বিঘ্নে চালিয়ে নিতে পারতাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, দেখতেও খারাপ: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত