Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরে প্রজাপতি কমেছে ২২ শতাংশ, ঝুঁকিতে বাস্তুতন্ত্র

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৫, ২২: ৫৫
ফ্লোরিডা হোয়াইট প্রজাপতি: ছবি: ফ্লোরিডা মিউজিয়াম
ফ্লোরিডা হোয়াইট প্রজাপতি: ছবি: ফ্লোরিডা মিউজিয়াম

যুক্তরাষ্ট্রে এক-পঞ্চমাংশের বেশি কমেছে পরাগায়ন এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী প্রজাপতির সংখ্যা। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশটিতে প্রজাপতির সংখ্যা কমেছে ২২ শতাংশ। গবেষকেরা জানান, বাসস্থান ধ্বংস, কীটনাশকের ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রজাপতির সংখ্যা কমছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা ও টেক্সাসের মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রজাপতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কমেছে।

সারা দেশে ৭৬ হাজারের বেশি প্রজাপতি জরিপ করে ৫৫৪ প্রজাতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ৩৪২টি প্রজাতির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১১৪টি প্রজাতির সংখ্যা কমেছে, যার মধ্যে ১০৭টির ৫০ শতাংশের বেশি এবং ২২টির ৯০ শতাংশের বেশি কমেছে।

চারটি প্রজাতি—ফ্লোরিডা হোয়াইট, হারমেস কপার, টেইলড অরেঞ্জ ও মিচেলের স্যাটারের সংখ্যা কমেছে ৯৯ শতাংশের বেশি। সাধারণ প্রজাতিগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন। এর মধ্যে রেড অ্যাডমিরাল ৫৮ শতাংশ, ক্যাবেজ হোয়াইট ৫০ শতাংশ, আমেরিকান লেডির সংখ্যা কমেছে ৪৪ শতাংশ।

ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সাবেক বাস্তুবিদ ও বর্তমান ওয়াশিংটন রাজ্য মৎস্য ও বন্য প্রাণী বিভাগের প্রধান লেখক কলিন এডওয়ার্ডস ‘বিজ্ঞান’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার প্রধান গবেষক। তিনি বলেন, ‘এই গবেষণার ফল খুবই উদ্বেগজনক। তবে প্রজাপতিরা দ্রুত পুনরুদ্ধার হতে পারে, যদি আমরা তাদের জন্য পরিবেশ উন্নত করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাপতির জীবনচক্র দ্রুত পরিবর্তনশীল। অনেক প্রজাতির বছরে দুই থেকে তিনবার বংশবিস্তার হয়। আমরা তাদের বাসস্থান সংরক্ষণে উদ্যোগ নিলে তারা দ্রুত সংখ্যা বাড়াতে পারবে।’

গবেষণায় মনার্ক প্রজাপতি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এদের সংখ্যা হ্রাসের স্পষ্ট তথ্য মেক্সিকোর শীতকালীন আবাসস্থল থেকেই পাওয়া যায়। তাই এই গবেষণায় তাদের নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।

বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির সংরক্ষণবিদ এলিজা গ্রেমস বলেন, ‘মাত্র ২০ বছরে আমরা প্রতি পাঁচটি প্রজাপতির মধ্যে একটি হারিয়েছি। এটি খুবই আশঙ্কার বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন কারণ প্রজাপতি সংকট সৃষ্টি করছে। যেমন সাউথইস্ট অঞ্চলে খরা, মিডওয়েস্ট অঞ্চলে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, অন্যান্য অঞ্চলে পরিবেশগত নানা চাপ।’

গবেষকেরা জানান, প্রজাপতির সংখ্যা কমে যাওয়া বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের অব্যাহত ক্ষতির একটি অংশ। বিশেষ করে কীটপতঙ্গের সংখ্যা হ্রাস পরাগায়ন, খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যের জন্য ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

কলিন এডওয়ার্ডস বলেন, ‘প্রজাপতিদের আমরা কয়লাখনির ক্যানারির মতো ব্যবহার করি—তাদের সংখ্যা হ্রাস মানে, আরও অনেক পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটছে, যাদের নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি।’

এলিজা গ্রেমস বলেন, ‘প্রজাপতিরা শুধু সুন্দরই নয়, বরং তারা বাস্তুসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তৃণভোজী প্রজাপতি পরাগায়ন এবং অনেক পাখির খাদ্য হিসেবে বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

পরিবেশবিদেরা বলছেন, যদি জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং প্রজাপতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা করা হয়, তাহলে এই পতঙ্গদের সংখ্যা বাড়তে পারে।

এলিজা গ্রেমস বলেন, ‘আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

১০ কোটি বছরের বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে প্রজাপতি। এর সংখ্যা কমে যাওয়া বিশ্বব্যাপী চলমান জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের একটি অংশ। পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ, বাস্তুতন্ত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় এদের অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত