Ajker Patrika

একবার-দুবার নয়, ১৬ বার সুন্দরবনে বাঘ দেখেছেন মনিরুল খান

আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৩, ১৫: ৪৮
একবার-দুবার নয়, ১৬ বার সুন্দরবনে বাঘ দেখেছেন মনিরুল খান

সুন্দরবনে বাঘের দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। বাঘ দেখার জন্য অসংখ্যবার সুন্দরবনে গিয়েও অনেক পর্যটক, বন্যপ্রাণীপ্রেমী বাঘের দেখা পাননি। তেমনি বছরের পর বছর ধরে গোলপাতা বা অন্য কোনো উদ্ভিদ আহরণে সুন্দরবনে যাওয়া অনেক বাওয়ালি কিংবা মধু সংগ্রহকারী মৌয়ালও এর দেখা পাননি। সুন্দরবনে কাজ করা বন বিভাগের কর্মীদের জন্যও বাঘের দেখা মেলে কালেভদ্রে। 

সে ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনিরুল খান ব্যতিক্রম। একবার-দুবার নয়, সুন্দরবনে বাঘ দেখেছেন তিনি ১৬ বার। তাঁর সর্বশেষ বাঘ দেখার অভিজ্ঞতাসহ আগের কিছু অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে।

শুরুটা অবশ্যই মনিরুল খানের সর্বশেষ, অর্থাৎ তাজা অভিজ্ঞতাটি দিয়ে। বন বিভাগের ফরেস্টারদের জন্য একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষক হিসেবে এতে অংশ নিতে মনিরুল খান সুন্দরবনে গিয়েছিলেন গত মে মাসের শেষ দিকে। ২৮ মে যান সুন্দরবনের কচিখালীতে। বেলা সাড়ে ৩টা বাজে তখন। ছোট একটা নৌকা নিয়ে তাঁদের দলটা ঢুকল কচিখালী খালে। নৌকাটা বেশি বড় নয়, তবে ফরেস্টার, অন্য বন কর্মকর্তাসহ তাঁরা ৩০ জনের মতো ছিলেন নৌকাটিতে। 

সাড়ে ৪টার দিকে খালের একেবারে গভীরে চলে গেল তাঁদের বহন করা নৌকাটি। এখানে খালটি দুটি অংশে ভাগ হয়ে গেছে। একটা মোটামুটি সোজা, আরেকটু একটু বাঁয়ে বেঁকে গেছে। অনেকটা ওয়াইয়ের মতো তৈরি হয়েছে এখানে। ওয়াইয়ের শুরু যেখানটায়, সেখানে হেতালের চারার একটি ঝোপের মতো তৈরি হয়েছে। ওখানে ঝোপের আড়ালে ঘুমিয়ে ছিল বাঘটি। 

মজার ঘটনা, বাঘটার ১০ ফুটের মধ্যে চলে এলেও প্রথমে মনিরুল খান এবং তাঁর সঙ্গীরা একে দেখতেই পাননি। তবে নৌকার কিংবা যাত্রীদের কথাবার্তার শব্দেই সম্ভবত জেগে উঠে যখন সামনের ঝোপের ভেতরে ঢুকে পড়ল, তখন দেখতে পেলেন একে। বাঁ দিকের খালের পাশের জঙ্গলেই ঢুকল বলে মনে হলো। নৌকা নিয়ে সেদিকে এগোলেন তাঁরা। কিছুটা এগিয়ে আবার ফিরে আসার সময় দেখলেন, যেখানে প্রথম ঘুমিয়েছিল, তার কাছেই আবার ঘুমিয়ে আছে বাঘ। 

বহুবার সুন্দরবন ভ্রমণ করেও অনেকে বাঘের দেখা পাননি, তবে মনিরুল খান গুনে গুনে ১৬ বার বাঘ দেখেছেন এই বনে‘মোটামুটি ওটার থেকে ফুট পঁচিশেক দূরে গিয়ে নৌকাটা বাঁধা হলো। একটা ঝোপের আড়ালে থাকায় বাঘটার শরীরের ওপরের অংশটি দেখা যাচ্ছে। আমরা এখানেই অপেক্ষায় রইলাম। ঝোপঝাড়ের ফাঁক দিয়েই আশ্চর্য সুন্দর প্রাণীটিকে দেখতে লাগলাম। কী আশ্চর্য! বাঘটাও একটু পরপর ঘুম থেকে জেগে মাথা তুলে আমাদের দেখছিল। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ছিল। এভাবেই চলতে লাগল। আমরা শুরুতে কোনো কথা না বললেও একপর্যায়ে যখন দেখলাম বাঘটার ডেম কেয়ার ভাব। অর্থাৎ আমাদের গুনায়ই ধরছে না। নিজেদের কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম। সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এভাবেই চলল।’ বলেন মনিরুল খান। 

তারপর বাঘের বিচরণ, অর্থাৎ চলাফেরার সময় হয়ে যাওয়ায় এটি উঠে জঙ্গলের দিকে চলে গেল। তখন আরও পরিষ্কারভাবে দেখতে পান তাঁরা এটাকে। পূর্ণবয়স্ক আর চমৎকার স্বাস্থ্যের অধিকারী একটি মদ্দা বা পুরুষ বাঘ এটি। 

সুন্দরবনে মনিরুল খানের প্রথম বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা শুনতে চাইলে আপনাকে টাইম মেশিনে চেপে চলে যেতে হবে গুনে গুনে ২২ বছর আগে। সেটা ২০০১ সাল, দিনটা ৯ আগস্ট। সেটি ছিল মনিরুল খানের পিএইচডির মাঠ পর্যায়ে কাজের প্রথম ভ্রমণ। তিন সঙ্গীসহ লঞ্চ থেকে নেমে কটকা পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের জেটির পাশের একটা খালের জঙ্গল ধরে হাঁটছিলেন তাঁরা। শ্বাসমূলে ভরা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বেশ কসরত করে হেঁটে যেতে হচ্ছে তাঁদের। জঙ্গলের ভেতরে ভ্যাপসা গরম, শরীরের সঙ্গে ভেজা জবজবে পোশাক লেগে আছে। হঠাৎ সরু খালটার ওপাশের জঙ্গল থেকে ভেসে এল ‘হাউউউ, হাউউউ’। বাঘ ডাকছে। 

রোমাঞ্চিত হলেন, জীবনে প্রথম শুনলেন বাঘের ডাক। তারপর তাঁদের চমকে দিয়ে খুব কাছ থেকেই ভেসে এল অপর একটি বাঘের ডাক। বনের ভেতরে একটা নয়, দুই–দুটো বাঘের এত কাছাকাছি থাকা মোটেই নিরাপদ নয়। দ্রুত বনের মধ্য দিয়ে ফিরে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আকতারুজ্জামান কামাল। সুন্দরবন তাঁর নখদর্পণে। মনিরুল খানের অনুরোধেই ষাটোর্ধ্ব আকতারুজ্জামান কামাল তাঁদের সঙ্গে এসেছেন।

সাঁতরে নদী পেরোচ্ছে সুন্দরবনের বাঘ।বাঘকে বোকা বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা। সুন্দরবনে আসার পথে মোংলা বাজার থেকে কিনে এনেছিলেন মাটির এক হাঁড়ি। খুব সাবধানে টাওয়ার থেকে নেমে কাছাকাছি যেদিক থেকে বাঘের ডাক শোনা যাচ্ছিল, সেদিকে একটু এগোলেন। তারপর একটা বুনো বরই ঝোপের নিচে লুকিয়ে কয়েকবার বাঘের ডাক নকল করলেন তাঁরা। যেন অন্য কোনো বাঘ এসেছে মনে করে বাঘটি এগিয়ে আসে। 

কিছুটা সময় পেরিয়ে গেল ঘটনাবিহীনভাবে। তবে টেনশন, উত্তেজনায় তাঁরা রীতিমতো কাঁপছেন। তারপর সবুজ কার্পেটের মতো বিছিয়ে থাকা মাঠে দেখা দিল প্রকাণ্ড একটা মাথা। তাহলে এটাই সেই মদ্দা বাঘ, যেটা বাঘিনীকে ডাকছিল। অপলক চোখে সোজা তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোমাঞ্চে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুততর হলো তাঁদের। খালি চোখে দেখলেন, বাইনোকুলার দিয়ে দেখলেন। জীবনে প্রথমবার বাঘ দেখা বলে কথা। 

বাঘের দুই পাশের গাল থেকে ঝুলে আছে লম্বা লোম। বিকেলের পড়ন্ত রোদে চকচক করছে ওটার গায়ের সোনালি রং। মিনিট বিশেক তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকল ওটা, জায়গা থেকে না সরেই। তারপর ধীরেসুস্থে হেঁটে মাঠ পেরিয়ে বনে ঢুকে পড়ল। 

দ্বিতীয়বার বাঘ দেখেন ওই বছরই। তারিখটা ১৮ অক্টোবর। দিনের পর দিন শুধু বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে দেখতে বিতৃষ্ণা ধরে গিয়েছিল। শণের মাঠে শুকনো বালুতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে মনিরুল খান বলেন, ‘বাঘের পায়ের ছাপই তো শুধু দেখি, বাঘ তো দেখি না।’ যে ছাপটা দেখছিলেন, সেটা ছিল আকারে বিশাল। তো পায়ের ছাপ থেকে মাথা তুলতেই চমকে উঠলেন, দূরে হালকাভাবে গজিয়ে ওঠা শণের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে বিশাল এক পুরুষ বাঘ। মনিরুল খান জানান, সুন্দরবনে যত বাঘ দেখেছেন, আকারে এটি ছিল সবচেয়ে বড়। 

হাতের লাঠি বাগিয়ে বাঘটার পিছু পিছু রওনা দিলেন তাঁরা। বাঘটা বেশ সামনে ছিল। একপর্যায়ে বাঘ মল ত্যাগ করতে বসল। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ওটার কাছাকাছি চলে গেলেন তাঁরা। ওই অবস্থায় ওটার ছবি তুললেন। বাঘটা তারপর ঘন জঙ্গলের দিকে রওনা হলো। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দেখেন আর কেবল একটি ছবি তোলা যাবে। উত্তেজনার বশে করলেন দুঃসাহসিক এক কাজ। বাঘের দিকে ক্যামেরা তাক করে লেন্স ফোকাস করে জোরে শিস দিলেন। বাঘটি ধীরেসুস্থে মাথা তুলে তাঁর দিকে তাকাল। তিনিও ঝটপট ছবি তুলে ফেললেন। আর ছবি তোলার সুযোগ ছিল না, তাই ক্যামেরা নামিয়ে বাঘটির দিকে তাকালেন। বাঘের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা যে কতটা কঠিন, তা হাড়ে হাড়ে বুঝলেন। বাঘ একবার তাঁর দিকে তাকাল। তারপর বড় বড় কয়েক লাফে গভীর জঙ্গলে ঢুকল। 

ছবি তোলার সময় বাঘটা যেন সরাসরি আলোকচিত্রীর দিকেই তাকিয়ে ছিল।পরদিন ১৯ অক্টোবর আবার বাঘ দেখলেন। মনিরুল খানদের ছোট্ট লঞ্চটি বাঁধা ছিল কটকা নদীর ঘাটে। সকালে ঘুম ভাঙল বাঘের ডাকে। গোটা এলাকা কাঁপছে দুটি বাঘের ডাকে। নদীর দুই পাড় থেকে একটু বিরতি দিয়ে ডেকেই যাচ্ছে বাঘ দুটি। লঞ্চের ওপর গেলেন টেপরেকর্ডার নিয়ে। উদ্দেশ্য, বাঘের ডাক রেকর্ড করা। 

কুয়াশার কারণে কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ কিছু দূরে নদীর পাড় ঘেঁষে কিছু একটাকে সাঁতরাতে দেখলেন। প্রথমে ভাবলেন কুমির। হঠাৎ কাছের জেলে নৌকা থেকে ভেসে আসা চিৎকার শুনতে পেলেন, ‘বাঘ, বাঘ’। বাইনোকুলার বের করে চোখে লাগাতেই, কুমিরটা হয়ে গেল বাঘ। ততক্ষণে সাঁতরে কটকা নদীর অন্য পাড়ে চলে গেছে বাঘটা। ঝটপট লঞ্চ স্টার্ট দিয়ে সেদিকে রওনা হলেন। বাঘটি পাড়ের কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরে লঞ্চের দিকে তাকাল। 

এভাবেই বারবার সুন্দরবনে বাঘের দেখা পেয়েছেন মনিরুল খান। প্রতিবার যে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাঘের দেখা পেয়েছেন তা নয়। কখনো কখনো খুব সামান্য সময়ের জন্যও ধরা দেয় বনের মহাপরাক্রমশালী প্রাণীটি তাঁর চোখের সামনে। কিন্তু তাঁর এতবার বাঘ দেখার রহস্য কী? মনিরুল খানের মতে, এর একটি কারণ বেশি সময় দেওয়া। আরেকটি বাঘের আচরণ সম্পর্কে জানা—অর্থাৎ কোথায়, কীভাবে সময় দিলে বাঘ দেখা যেতে পারে সেটা বোঝা।

একজন বন্যপ্রাণীপ্রেমী বা পর্যটকের বাঘ দেখার সম্ভাবনা বাড়াবে কখন প্রশ্ন করা হলে মনিরুল খান জানান, কম পর্যটক যখন থাকে, তখন। অর্থাৎ বর্ষাকাল বাঘ দেখার জন্য ভালো সময় হতে পারে। তখন এমনকি দিনের বেলায়ও বাঘ খোলামেলা জায়গায় চলে আসে। অন্যদিকে পর্যটক বেশি থাকলে তাদের বিচরণটা হয় মূলত রাতেই। বাঘ দেখার জন্য কোনো একটা জায়গায় রেকি করাটাও জরুরি মনে করেন তিনি। জঙ্গলের যে অংশে তাজা পায়ের ছাপ মিলবে, সেখানে সময় দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় তাপমাত্রা ১৬.৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসে সকালবেলা রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তাপমাত্রাও গতকাল শনিবারের চেয়ে বেড়েছে। আগের দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯ থেকে সামান্য বেড়ে আজ সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।

বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।

‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র‌্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র‌্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র‌্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।

দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।

শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’

ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।

জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর-পূর্ব জাপান, সুনামি সতর্কতা জারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, দিল্লির অবস্থা বিপজ্জনক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।

আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

চার গুণ বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানি দৈনিক ৬ হাজার টন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত