Ajker Patrika

কোটি টাকার খননেও মৃতপ্রায় লবলঙ্গ নদী

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ১০: ০৮
কোটি টাকার খননেও মৃতপ্রায় লবলঙ্গ নদী

‘লবলঙ্গ নদী খননকাজের শুরুতে আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু খননকাজের কিছুই হয়নি। কোদাল দিয়ে শুধু কিছু ময়লা পাড়ে উঠানো হয়েছে। এতে খনন যেমন হয়নি, তেমনি হয়নি কৃষকদের কোনো উপকার।’ কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বেরাইদের চালা এলাকার কৃষক আলী হোসেন।

শুধু আলী হোসেনই নন, এমন অভিযোগ লবলঙ্গ নদীপারের বাসিন্দাদেরও। সম্প্রতি সরেজমিনেও এমনটি দেখা গেছে। উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলা লবলঙ্গ নদী দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। দেখে বোঝার উপায় নেই, গত বছরের নভেম্বরেই এই নদীর খননকাজ শেষ হয়েছে।

নদীপারের বাসিন্দারা জানান, মৃতপ্রায় লবলঙ্গকে বাঁচাতে ১১ কিলোমিটার এলাকা খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। খননও শুরু হয়। কিছুদিন একটি এক্সকাভেটর দিয়ে সামান্য কিছু জায়গার ময়লা সরানো হলেও ফের সেগুলো নদীতে এসে আগের অবস্থায় ভরাট হয়েছে। পরে কোদাল দিয়েও মাটি সরানোর অভিনয় করা হয়।

মূলত দুই দফায় মাত্র চার কিলোমিটার এলাকার ময়লা সরানো হয়। সে জন্য নদীর বিভিন্ন অংশ এখনো ঝোপঝাড়ে ভরে রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্ট ভরাট হওয়ার কারণে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে নদীর। সবচেয়ে বড় কথা, নদী খননের নামে সরকারি অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী এলাকার বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, যে কাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে পারে, সেই কাজ তারা বছরের পর বছর করেছে। এত সময় নিয়েও নয়ছয় করে সরকারি অর্থের অপচয় করেছে। এক্সকাভেটর দিয়ে নদী খননের কথা থাকলেও কোদাল দিয়ে কিছু অংশ খনন করা হয়েছে। পাড় বাঁধা হয়নি, হয়নি নদীর ময়লা-বর্জ্য পরিষ্কার। তাহলে কী খনন হয়েছে? নদী খনন হলে তো এত তাড়াতাড়ি ভরাট হওয়ার কথা নয়।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো অফিস নেই গাজীপুরে। তাই গাজীপুরে নদীকেন্দ্রিক সব কাজ হয় নরসিংদী পাউবোর আওতায়। নরসিংদী পাউবোর তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে শ্রীপুরে লবলঙ্গ নদীর ১১ কিলোমিটার খননকাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য বরাদ্দ ধরা হয় ৯৪ লাখ টাকা। এসিএল ডেজার্সের তত্ত্বাবধানে সাধারণ এক্সকাভেটর দিয়ে গত বছরের নভেম্বরে খননকাজ শেষ হয়।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতা খোরশেদ আলম বলেন, সলিং মোড় বিলাইঘাটা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এসে শেষ হয় প্রথম পর্যায়ের খনন। এরপর দীর্ঘদিন খননকাজ বন্ধ থাকে। পরবর্তী সময়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ২০২৩ সালে লিথি গ্রুপের অংশে খনন শুরু করে দোখলা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার খনন করা হয়। বাকি অংশে হাত দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, কয়েক দিন কোদাল দিয়ে খনন করে পাউবো।

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘খনন শেষ না করেই দুবার কাজ শেষ করতে দেখেছি। শেষে এসে কোদাল দিয়ে খনন করা হয়েছে। অনেকাংশে লবলঙ্গের সীমানা চিহ্নিত হয়নি। দখল উচ্ছেদ করে খনন না করলে লবলঙ্গের মৃত্যুই নিশ্চিত করা হবে।’ তাই খননের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

নরসিংদী পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১১ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ৯৪ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে পুরোপুরি খনন করা যায়নি, ৭৫ শতাংশ খনন করা হয়েছে। সে মোতাবেক বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে। দখল-দূষণের কারণে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ময়লা-বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে সুফল পাওয়া খুবই কঠিন।

কোদাল দিয়ে ২৫ শতাংশ খননের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত কাদার কারণে যেখানে এক্সকাভেটর নেওয়া সম্ভব হয়নি, সেসব স্থানে কোদাল ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থের অপচয়ের বিষয়টি সঠিক নয়।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কাজে কোনো ধরনের গাফিলতি থাকলে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লবলঙ্গ নদীকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে সব ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সারা দেশেই শীত বাড়ছে, ১৬ ডিগ্রিতে নামল তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সারা দেশেই শীত বাড়ছে, ১৬ ডিগ্রিতে নামল তাপমাত্রা

উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশেই শীত পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। রাজশাহীতে আজ সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন ঘণ্টা আগে ভোর ৬টায় যা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৯টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দিন ও রাতে তাপমাত্রা আর কমতে পারে। এর মধ্যে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমলেও রাতের বেলা কমতে পারে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ অবস্থায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশেই শীত বাড়বে। তবে আপাতত আরও দুই-তিন তাপমাত্রা কমবে। এর পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে, দিল্লির অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ সোমবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।

রাজধানী শহর ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। আজ বায়ুদূষণে বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শহরটির বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।

আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২৬২। যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৪৯০, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৩৯৪), ভারতের কলকাতা (১৯৯) ও বসনিয়া হার্জেগোভিনার সারাজেভো (১৭৭)।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যে কয়টি এলাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণ রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলো হলো— আইসিডিডিআরবি ৩০৬, দক্ষিণ পল্লবী ২৭৪, ইস্টার্ন হাউজিং ২৭১, বেচারাম দেউড়ি ২৬৩, বেজ এজওয়াটার আউটডোর ২৬২, কল্যাণপুর ২৫৫, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ২৩৫ ও গোড়ান ২৩২।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সারা দেশে বাড়ছে শীতের অনুভূতি, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজশাহী ও তেঁতুলিয়ায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সারা দেশের প্রায় সব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি বাড়ছে। আজ সোমবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সারা দেশে আজকের আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এদিকে সোমবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ সকাল ৬টায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৯ শতাংশ। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৬টা ১১ মিনিটে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারা দেশের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশেই শীত বাড়বে। তবে আপাতত আরও দুই-তিন তাপমাত্রা কমবে। এর পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস, মহানগরীর ৮ এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৬
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকা দীর্ঘস্থায়ী এবং বিপজ্জনক বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।

আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।

অবশ্য শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ রোববার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২১৩। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ চতুর্থ স্থানে আছে ঢাকা।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৬৮৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৩৫৪), কুয়েতের কুয়েত সিটি (২৮৬), ভারতের কলকাতা (১৯৬), পাকিস্তানের করাচি (১৬১) এবং ইরাকের বাগদাদ (১৫৬)।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যে কয়টি এলাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণ রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলো হলো ইস্টার্ন হাউজিং ২২৬, দক্ষিণ পল্লবী ২২৭, কল্যাণপুর ২১৩, বেজ এজওয়াটার ২২৭, আইসিডিডিআরবি ২৫০, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ১৯৬, গোরান ১৯৪ এবং বেচারাম দেউড়ি ২২৯।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত