Ajker Patrika

বায়ুদূষণ: বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এক অদৃশ্য বিপদ

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আমাদের জীবনের মৌলিক ও অপরিহার্য উপাদান হলো বায়ু। তবে শ্বাসের মাধ্যমে আমরা যে বাতাস টেনে নিচ্ছি, তা ততটা বিশুদ্ধ নয়। বিশ্বের প্রায় ৯৯ শতাংশ জনসংখ্যা কোনো না কোনো সময় এমন বায়ুর সংস্পর্শে আসে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করে না। বাংলাদেশে, বিশেষত ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য বড় শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা অতিমাত্রায় বেড়েছে, যা এক মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সংস্থাটির মতে, প্রতিবছর ৭ মিলিয়ন মানুষের অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী হলো বায়ুদূষণ। বিশ্বব্যাপী এক অব্যাহত স্বাস্থ্যসংকটের দিকে ইঙ্গিত করে।

বিশ্বের সবচেয়ে ধোঁয়াচ্ছন্ন এবং দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই এশিয়ায় অবস্থিত, যার মধ্যে ঢাকা একটি। এ ছাড়া নিউ দিল্লি, ব্যাংকক ও জাকার্তার বায়ুও অনেক খারাপ। এসব দেশে দূষিত বায়ু থেকে মুক্তি পাওয়া যেন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে স্মগ (ধোঁয়া) এবং দূষিত বায়ু বারবার ছড়িয়ে পড়ছে, যা মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের তনুশ্রী গাঙ্গুলি বলেন, ‘নীল আকাশ বায়ুর বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’ অর্থাৎ বায়ুদূষণের মাত্রা কেবল দৃশ্যমান ধোঁয়াই নয়, নীরব এবং অদৃশ্য অবস্থায়ও হতে পারে।

সাধারণত মানুষ কিছু পোড়ালে বায়ু দূষিত হয়। যেমন: কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল ও পেট্রল। এগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং যানবাহনে ব্যবহৃত হয়। কৃষিকাজের জন্য ফসল বা গাছ পোড়ালে, এমনকি দাবানলের ফলেও বাতাস দূষিত হতে পারে।

শ্বাসনালিতে প্রবেশযোগ্য বাতাসের সূক্ষ্ম কণিকাগুলোকে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) বলা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণিকাগুলো ‘পিএম ২ দশমিক ৫’ নামে পরিচিত। কারণ এগুলোর আকার ২ দশমিক ৫ মাইক্রনের কম। এগুলো মানুষের ফুসফুসে গভীরভাবে প্রবেশ করতে পারে এবং মূলত জ্বালানি পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন হয়। এর কারণে শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোকসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে। এই ক্ষুদ্র কণিকাগুলো ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ অনুমিতা রায়চৌধুরী জানান, আরও বিপজ্জনক দূষক গ্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড এবং সালফার ডাইঅক্সাইড। এগুলোও জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্টি হয়।

বায়ুদূষণের উৎস এবং তার তীব্রতা বিভিন্ন শহর ও মৌসুম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় পুরোনো মোটরবাইক ও শিল্প বয়লারগুলো খারাপ বায়ুর প্রধান কারণ। আবার থাইল্যান্ড ও ভারতের শহরগুলোতে কৃষিবর্জ্য পোড়ানোই বায়ুদূষণের প্রকোপ বাড়ানোর অন্যতম কারণ। ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানীতে, কয়লা পোড়ানো ইটভাটাগুলো দূষণের মাত্রা বাড়ায়। ব্রাজিল ও উত্তর আমেরিকায় ঋতুভিত্তিক দাবানলও বায়ুদূষণের সমস্যা সৃষ্টি করে।

স্বল্প মেয়াদে দূষিত বায়ু সেবনে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক বা ইতিমধ্যে অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আর দীর্ঘ মেয়াদে দূষিত বায়ু সেবনে গুরুতর হৃদ্‌রোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা (সিওপিডি) এবং ফুসফুসের সংক্রমণের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইউনিসেফের একটি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি শিশু অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে এবং এই দূষণ পাঁচ বছরের নিচে প্রতিদিন ১০০ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত।

ইউনিসেফের পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক জুন কুনুগি বলেছেন, দূষিত বায়ু শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে, ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাদের মেধাগত সক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিশ্বের ১১৭টি দেশে বর্তমানে ৬ হাজারেরও বেশি শহরে বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করছে এবং অনেক আবহাওয়া মোবাইল অ্যাপেও বায়ুমানের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এই সংখ্যাগুলো দেখে বায়ুর মান কতটা খারাপ তা অনেক সময় বোঝা যায় না।

বায়ুমানের স্তর আরও সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করার জন্য অনেক দেশ ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ব্যবহার করছে। এটি একটি সংখ্যাসূচক স্কেল, যেখানে বড় সংখ্যা মানে বায়ু আরও দূষিত তা বোঝায়। একিউআই স্কেলের পাশাপাশি বিভিন্ন রংও দেওয়া হয়, যা বায়ুর বিশুদ্ধতা নির্দেশ করে।

তবে, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বায়ুমানের মানদণ্ড রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের দৈনিক পিএম ২ দশমিক ৫ সীমা থাইল্যান্ডের চেয়ে ১ দশমিক ৫ গুণ বেশি এবং ডব্লিউএইচওর মান থেকে ৪ গুণ বেশি।

এটি বোঝায় যে, বিভিন্ন দেশ নিজেদের বায়ুমান ইনডেক্সের হিসাব আলাদাভাবে করে থাকে এবং তাই এস্ব সংখ্যা একে অপরের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এ ছাড়া, কখনো কখনো বেসরকারি কোম্পানিগুলোর দেওয়া একিউআই স্কোর জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর হিসাব থেকে আলাদা হতে পারে। কারণ তারা আরও কঠোর মানদণ্ড ব্যবহার করে।

এ ছাড়া, মানুষকে মাস্ক পরা, ঘরে থাকা এবং এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে কাজের জন্য মানুষকে ঘর থেকে বের হতেই হয়।

মানুষকে ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে, যা প্রায়ই সাধারণ গৃহস্থালি কাজ যেমন রান্না বা ধূপের স্তম্ভ জ্বালানোর ফলে তৈরি হতে পারে।

ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে এয়ার পিউরিফায়ার বা বায়ু পরিশোধক। এগুলো ঘরের বায়ু শুষে নিয়ে একটি ফিল্টারের মাধ্যমে দূষকগুলো আটকে রেখে শুদ্ধ বায়ু আবার ঘরেও পাঠায়। তবে এগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এয়ার পিউরিফায়ার সাধারণত ছোট জায়গায় এবং যখন মানুষ কাছে থাকে তখনই সবচেয়ে কার্যকর। যদি বড় রুমে একটি ছোট এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা হয়, তবে এটি কার্যকর হবে না। এ ছাড়া, অনেক উন্নয়নশীল দেশের মানুষের পক্ষে এয়ার পিউরিফায়ার কেনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত