Ajker Patrika

‘মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতে পারত’

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২১, ১৪: ১৪
‘মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতে পারত’

এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৪০ বছরের। কিশোর চলে যাওয়ায় আমার যেন অঙ্গহানি হয়েছে। ইত্যাদি মানেই ছিল এন্ড্রু কিশোরের গান। তার বাসা ছিল আমার অফিসের পাশে। আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। সে শুধু আমার বন্ধু নয়, আমার সব কাজের সহযোগী। নিঃসন্দেহে এন্ড্রু কিশোর অনেক বড়মাপের একজন শিল্পী। অথচ এ নিয়ে কখনোই তার অহংকার ছিল না। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই তার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো।

‘ইত্যাদি’তে গান শুরুর আগের কথা। প্রায়ই আমরা একসঙ্গে খেতে যেতাম রেস্টুরেন্টে। আমাকে দেখে লোকজন সালাম দিত, কেউ অটোগ্রাফ নিত, কেউ করমর্দন করত। কিশোরের দিকে কেউ খেয়ালই করত না। আমি ইতস্তত বোধ করতাম। মনে মনে ভাবতাম, এই ভক্তরা যদি জানত আমার পাশে যে লোকটি বসে আছে, সে হচ্ছে দেশসেরা সংগীতশিল্পী। কিন্তু কিশোরের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকে বোঝাতাম, ‘ভক্তরা তোকে দেখতে চায়। তাদের বঞ্চিত করা ঠিক না।’ আমার পীড়াপীড়িতেই একসময় বলল, যদি টিভিতে গাই, তোর অনুষ্ঠানেই গাইব।’

এন্ড্রু কিশোরের সমাধির সামনে হানিফ সংকেতকিশোর টিভিতে গাইতে রাজি হলো। ১৯৯৯ সালে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’তে কিশোরের নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটল দর্শকের সামনে। গাইল ‘পদ্ম পাতার পানি নয়, দিন যাপনের গ্লানি নয়’। তিন পর্বে গাওয়ার পর কিশোর বলল, ‘আমি নিয়মিত হয়ে যাচ্ছি, অন্যদের সুযোগ দে।’ সে এমনই ছিল।

তার সঙ্গে স্মৃতি বলে শেষ করা যাবে না। গান করতে গেলে চিন্তা করি কাকে দিয়ে গাওয়াব। কিশোর ছিল আমার নিশ্চিত ভরসা। সে গাইলে সব সময়ই শতভাগ পারফেক্ট। এখনো হাজারো ব্যস্ততার মাঝে যখন একা হই, ভীষণ মিস করি তাকে।

হানিফ সংকেত আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রিয় বন্ধু এন্ড্রু কিশোরকে স্মরণ করেছেন।

দেখতে দেখতে একটি বছর হয়ে গেল কিশোর নেই। বিশ্বাস করতে মন চায় না, অথচ এটাই সত্যি। এন্ড্রু কিশোর বাংলা গানের ঐশ্বর্য। যার খ্যাতির চেয়ে কণ্ঠের দ্যুতি ছিল বেশি। যার কাছে গানই ছিল জীবন-মরণ, গানই ছিল প্রাণ। এই গানের জন্যই কিশোর পেয়েছে প্লেব্যাক সম্রাটের উপাধি। গানের জন্যই মানুষ তাকে ভালোবাসত। অবশেষে মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে গত বছরের এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেয় সবার প্রিয় এন্ড্রু কিশোর।

এন্ড্রু কিশোরের সমাধিকিশোর যেমন প্রাণ খুলে দরাজ গলায় গাইতে পারত, তেমনি মানুষের সঙ্গেও প্রাণ খুলে মিশতে পারত। সব সময় নিজের সুবিধার চেয়ে অন্যের সুবিধার দিকেই দৃষ্টি ছিল তার বেশি। কিশোরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৪০ বছরের। একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি, বহুবার বিদেশে গিয়েছি, একসঙ্গে থেকেছি। কিশোর ছিল ‘ইত্যাদি’র প্রায় নিয়মিত সংগীতশিল্পী। কিশোর নেই মনে হলেই ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। এন্ড্রু কিশোর ছিল একজন আদর্শ শিল্পী, একজন মানবিক মানুষ, যার তুলনা সে নিজেই।

কিশোর তার গানের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বন্ধু, যেখানে থাকো, ভালো থেকো। শান্তিতে থেকো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত