Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

ড. মো. সবুর খান।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। বরেণ্য এই শিক্ষা উদ্যোক্তা বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিরও সভাপতি। দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি, বৈশ্বিক মান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনসহ নানা বিষয় নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিভাগের ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক খান

আব্দুর রাজ্জাক খান
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৬

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অগ্রগতি বেশি হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে? এখনো কোন ক্ষেত্রগুলোতে উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন?

বেশি অগ্রগতি হয়েছে আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে। যেমন টাইমস হায়ার এডুকেশন এবং কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে স্থান অর্জন। এর পাশাপাশি দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা, ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সংযোগ এবং প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষা, যেমন এলএমএস, স্মার্ট ক্লাসরুম, মাইক্রো-ক্রেডেনশিয়ালে উন্নয়ন ঘটেছে। চাকরিমুখী প্রোগ্রাম, ইন্টার্নশিপ এবং গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্টের সুযোগ বৃদ্ধি করেছে। একই সঙ্গে এসডিজি-ভিত্তিক কার্যক্রম, সবুজ ক্যাম্পাস এবং গবেষণা পরিমণ্ডলেও অগ্রগতি হয়েছে।

তবে এখনো কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রয়োজন। যেমন গবেষণা ও বিশেষায়িত ল্যাব-সুবিধা, আন্তর্জাতিক ফ্যাকাল্টি এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা, যৌথ গবেষণার জন্য তহবিল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা-উদ্ভাবন সংস্কৃতি বৃদ্ধি। সব বিশ্ববিদ্যালয় সমানভাবে এগোয়নি। তাই কাঠামোগত সহায়তা ও নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে এগুলোকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

বাংলাদেশে বৈশ্বিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন—

* স্বতন্ত্র হায়ার এডুকেশন কমিশন: বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, মান, গবেষণা, র‍্যাঙ্কিং এবং আন্তর্জাতিকীকরণের বিষয়গুলো দেখবে।

* নিয়মকানুনের সরলীকরণ: প্রতিটি অনুমোদনপ্রক্রিয়া ডিজিটাল ও সময়নিষ্ঠ হতে হবে।

* জাতীয় গবেষণা তহবিল: বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক নয়, জাতীয় পর্যায়ে তহবিল গঠন প্রয়োজন।

* ইন্ডাস্ট্রি-লিংকেজ বাধ্যতামূলক: প্রতিটি বিভাগে ইন্টার্নশিপ, ক্যাপস্টোন এবং শিল্পভিত্তিক প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকা।

* আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: ডিগ্রি, কারিকুলাম এবং গবেষণায় যৌথ উন্নয়ন।

* ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট: বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, পোস্ট-ডক স্কলারশিপ।

নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও গবেষণায় বেসরকারি অগ্রগতির জন্য আপনার পরামর্শ কী?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বিগ ডেটা, IoT, ক্লাউড—এসব বিষয়ে বাস্তবমুখী ল্যাব স্থাপন জরুরি। এ ছাড়া ক্যাপস্টোন-ভিত্তিক শিক্ষা চালু করা উচিত, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধানভিত্তিক প্রকল্প সম্পন্ন করবে। স্টার্টআপ ইনকিউবেটর এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো দরকার। এ ক্ষেত্রে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) নলেজভেল, ডিবিআই এবং বিভিসিএল মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগিতা এবং যৌথ প্রকাশনা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষকদের জন্য ইন্ডাস্ট্রি ট্রেনিং এবং গ্লোবাল সার্টিফিকেশন। গবেষণায় এআই টুল ব্যবহারের প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন জরুরি।

আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ও সম্পর্ক কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শক্তিশালী করছে?

এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান এবং সক্ষমতা শক্তিশালী করে। এর মাধ্যমে যৌথ গবেষণা ও কো-অথরড প্রকাশনার সুযোগ তৈরি হয়, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিনিময় সম্ভব হয় এবং গ্লোবাল কারিকুলাম স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা যায়। এ ছাড়া, ডাবল বা জয়েন্ট ডিগ্রির সুযোগ, আন্তর্জাতিক ফ্যাকাল্টি ও স্কলারের আকর্ষণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের সম্পর্ক কার্যকর ভূমিকা রাখে।

উদাহরণস্বরূপ, ডিআইইউ ইতিমধ্যে ৪৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা স্থাপন করেছে। এটি বৈশ্বিক সংযোগ শিক্ষার মান উন্নয়নের সবচেয়ে দ্রুত এবং কার্যকর মাধ্যম হতে পারে।

আশুলিয়াকে ‘উচ্চশিক্ষার শহর’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এই উদ্যোগ কত দূর এগিয়েছে?

পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় যৌথ পরিকল্পনা, গবেষণা—ক্লাস্টার গঠন, যৌথ ল্যাব স্থাপন, স্টুডেন্ট ও ফ্যাকাল্টি শেয়ারিং মডেল এবং বড় পরিসরের ইনোভেশন পার্ক তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আশুলিয়া হবে দেশের প্রথম হায়ার এডুকেশন হাব। এখানে শিক্ষা, প্রযুক্তি, গবেষণা এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম একসঙ্গে বিকশিত হবে।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার মান ও সুযোগ বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা কী?

বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত, বিভাগীয় শহরে দক্ষতা-ভিত্তিক ক্যাম্পাস স্থাপন এবং টিভেট ও মাইক্রো-ক্রেডেনশিয়াল শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম যেমন গোএডু ও আইওইউ সম্প্রসারণ। এর মাধ্যমে শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করা যাবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় শিল্প ও কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা। এ ছাড়া, গ্রামপর্যায়ে উদ্যোক্তা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা। আমাদের লক্ষ্য শুধু ঢাকাকে শিক্ষার কেন্দ্র বানানো নয় বরং পুরো বাংলাদেশকে শিক্ষার শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করা।

শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে তুলতে কী কর্মপরিকল্পনা আছে?

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক উদ্যোক্তা শিক্ষা, স্টার্টআপ ইনকিউবেটর এবং সিড ফান্ড সহযোগিতা। এ ছাড়া, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড মডেল এবং আন্তর্জাতিক স্টার্টআপ ইভেন্ট যেমন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ উইক, হ্যাকাথন এবং পিচিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ৩৬০ ডিগ্রি প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা উদ্যোক্তা দক্ষতা, নেতৃত্ব ও ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনায় সমন্বিত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। আমাদের বিশ্বাস, শিক্ষার্থীরা শুধু চাকরিপ্রার্থী নয়, বরং চাকরি সৃষ্টিকারী ও উদ্ভাবনী তরুণ হিসেবে গড়ে উঠবে।

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কী পরামর্শ দেবেন?

প্রতিষ্ঠান শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে মানকেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করা উচিত। ডিজিটাল উপস্থিতি, যেমন এলএমএস, ইআরপি ও অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহারে জোর দিতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি-সংযুক্ত কারিকুলামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা। পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা ইথিকস ও একাডেমিক ইনটিগ্রিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার মান ধরে রাখা সম্ভব। এ ছাড়া, এসডিজিবেইজড কার্যক্রমকে বাধ্যতামূলক করা উচিত। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা হলো দেশের ভবিষ্যৎ এবং এখানে কোনো আপস করা যাবে না।

আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কোথায় দেখতে চান?

অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস এবং টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৫০০-তে পৌঁছাক। দেশজুড়ে গবেষণা ক্লাস্টার এবং শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি-ইনোভেশন ক্যাম্পাস তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া, এআই ও পঞ্চম শিল্পবিপ্লবচালিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা অন্যতম লক্ষ্য। এ ছাড়া দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থনীতিতে দক্ষ মানবসম্পদের মূল উৎস হিসেবে কাজ করবে। সবশেষে, আশা করা যায়, বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হায়ার এডুকেশন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার মান, গবেষণা ও উদ্ভাবনে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

পরীক্ষা নিয়ে স্কুলে মুখোমুখি শিক্ষক-অভিভাবকেরা

  • পিরোজপুর, পাবনায় শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের সংঘর্ষ।
  • অনেক জায়গায় স্কুলের তালা ভেঙে পরীক্ষা নেন অভিভাবকেরা।
  • শিক্ষকনেতাদের বদলি। প্রতিবাদে আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৫
তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের জেরে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার নেছারাবাদে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের জেরে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার নেছারাবাদে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন সহকারী শিক্ষকেরা। পরীক্ষা বন্ধ রাখায় শিক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে আন্দোলন করায় পিরোজপুর, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন অভিভাবকেরা। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জামালপুর সদর, শেরপুরের শ্রীবরদী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যালয়ের তালা ভেঙে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরও কোনো কাজ না হওয়ায় গতকাল শিক্ষকনেতা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, খাইরুন নাহার লিপিসহ একাধিক শিক্ষককে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ও আন্দোলনের গতিপথ ঠিক করতে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষকনেতারা। গতকাল রাত ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁদের বৈঠক চলছিল।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি রাত ৯টার দিকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছি, তাঁদের হয়রানি করার জন্য ঢালাওভাবে বদলি করা হচ্ছে। আমরা সার্বিক বিষয়ে বৈঠক করছি। আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।’

এদিকে চতুর্থ দিনের মতো গতকাল বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। তিন দফা দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মবিরতির কারণে দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন অভিভাবকেরা।

পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় পরীক্ষা না নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন এক শিক্ষক। এ ছাড়াও অনেক জায়গায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে পরীক্ষার দায়িত্ব নিলেন অভিভাবকেরা।

বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে গতকাল পিরোজপুরের নেছারাবাদে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে শিক্ষকেরা আন্দোলন করতে গেলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি করার জেরে পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় এক অভিভাবকের ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন এক সহকারী শিক্ষক। রাজিব সরকার নামের ওই শিক্ষক বনওয়ারিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান জানান, যৌক্তিক দাবিতে চলমান আন্দোলনে পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন রাজিব ও তাঁর সহকর্মীরা। অভিভাবক পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের মারধর করেন। এতে সহকারী শিক্ষক রাজিবের মাথা ফেটে গেছে। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।

এ ছাড়াও কোনো কোনো জায়গায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা তালা ভেঙে স্কুলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলার ১৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র দু-তিনটি ছাড়া কোনোটিতেই হয়নি পরীক্ষা। গতকাল সকালে সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকদের পরীক্ষা নিতে বাধা দেন এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন স্কুলের কক্ষে তালা মেরে তাঁরা উপজেলা চত্বরে সমাবেশে যোগ দেন। উপজেলার ষাটমা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেন অভিভাবকেরা।

একইভাবে কুষ্টিয়া শহরতলির ১৮ নম্বর লাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষার আয়োজন করেন। প্রশ্ন বিতরণ, খাতা সংগ্রহ, শৃঙ্খলা রক্ষা সবকিছুই সামলান তাঁরা। একপর্যায়ে অভিভাবকদের তীব্র চাপ ও বিক্ষোভের মুখে প্রায় এক ঘণ্টা পর বার্ষিক পরীক্ষা নিতে বাধ্য হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

জামালপুর সদর উপজেলার গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বিদ্যালয়ে তালা ভেঙে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন অভিভাবকেরা। কোনো কোনো জায়গায় উপজেলা প্রশাসন এ কাজে সহযোগিতা করে।

জামালপুরের গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক রেনুকা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সারা বছরের পর এই বার্ষিক পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকি। যখন বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তখন সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এটা কোনো শিক্ষকের কাজ হতে পারে? তাঁদের এই কর্মবিরতি অন্য সময়ও করতে পারতেন। তাই আমরা সব অভিভাবক মিলে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করেছি।’

সার্বিক বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পে-কমিশনের সুপারিশ লাগবে। সেটিও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের অপেক্ষা করা দরকার ছিল।’

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন গত ৮ নভেম্বর। এই আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষকেরা। পরদিন ৯ নভেম্বর থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। আন্দোলনের তৃতীয় দিন (১০ নভেম্বর) সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নির্ধারণের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা।

সরকারের এই আশ্বাসের পর নভেম্বরের শেষ নাগাদ সহকারী শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় নতুন করে গত ৩০ নভেম্বর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাবিপ্রবির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন শুরু ৮ ডিসেম্বর

শিক্ষা ডেস্ক
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গত রোববার (৩০ নভেম্বর) ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘এ-১’ (বিজ্ঞান) ইউনিটের আবেদন ফি ১ হাজার ২৫০, ‘এ-২’ (আর্কিটেকচার) ফি ১ হাজার ৪০০ এবং ‘বি’ (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) ইউনিটের আবেদন ফি ১ হাজার ২০০ টাকা।

২০২৪ অথবা ২০২৫ সালের এইচএসসি (সাধারণ বা কারিগরি) বা আলিমবা ডিপ্লোমা ইন কমার্স বা সমমান, ২০২২ অথবা ২০২৩ সালের এসএসসি (সাধারণ বা কারিগরি) বা দাখিল বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের প্রক্রিয়া শেষে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৩ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা, ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা ১৪ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আবেদন করার নিয়ম, বিস্তারিত তথ্য, আবেদন ফি এবং জমা দেওয়ার পদ্ধতি ভর্তি-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট-এর ভর্তি নির্দেশিকায় পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকে ব্যবহৃত ১০টি ইংরেজি বাক্য: (পর্ব-১)

শিক্ষা ডেস্ক
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

ব্যাংকিং খাতে কাজ করতে আগ্রহীদের শুধু আর্থিক জ্ঞানই নয়, প্রয়োজনীয় ইংরেজি জানাও জরুরি। নিয়মিত ব্যবহৃত ইংরেজি জানা থাকলে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়। গ্রাহকদেরও কিছু সাধারণ ব্যাংকিং ইংরেজি জানা থাকলে সুবিধা হয়। আজ থাকছে ব্যাংকে নিয়মিত ব্যবহৃত এমন ১০টি ইংরেজি বাক্য। চলুন শিখে নিই—

  • Welcome to our bank. – আমাদের ব্যাংকে স্বাগতম।
  • May I have your name, please?– দয়া করে আপনার নাম বলবেন?
  • How can I assist you? – কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
  • Please fill out this form. – দয়া করে এই ফরমটি পূরণ করুন।
  • Do you have an account with us? – আপনার আমাদের সঙ্গে কোনো অ্যাকাউন্ট আছে কি?
  • I would like to open a new account. – আমি একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে চাই।
  • What type of account would you like to open? – আপনি কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে চান?
  • I’d like a savings account, please.– সেভিংস অ্যাকাউন্ট, অনুগ্রহ করে।
  • I want to deposit money. – আমি টাকা জমা দিতে চাই।
  • How much would you like to deposit? – কত টাকা জমা দিতে চান?
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনের চংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অর্থায়িত বৃত্তি

শিক্ষা ডেস্ক
চংকিং বিশ্ববিদ্যালয়, চীন। ছবি: সংগৃহীত
চংকিং বিশ্ববিদ্যালয়, চীন। ছবি: সংগৃহীত

চীনের সিকিউইউ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশটির চংকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। বৃত্তিটি ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রযোজ্য। চংকিং বিশ্ববিদ্যালয় চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ গবেষণাবান্ধব ও সমৃদ্ধ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ১৯২৯ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আধুনিক ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক ল্যাব-সুবিধা, আন্তর্জাতিক বিনিময় কর্মসূচি এবং বৈশ্বিক মানের গবেষণা সুযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বজুড়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে।

সুযোগ-সুবিধা

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিটি সম্পূর্ণ অর্থায়িত। বৃত্তিটিতে আবেদন করতে কোনো ফি লাগবে না। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। ক্যাম্পাসের ভেতরে বিনা মূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এটা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বড় স্বস্তির বিষয়। জীবনযাপনের ব্যয় হিসেবে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের ৩ হাজার আর পিএইচডি শিক্ষার্থীদের সাড়ে ৩ হাজার চায়নিজ ইউয়ান দেওয়া হবে।

আবেদনের যোগ্যতা

আবেদনকারীর অবশ্যই চীনের নাগরিকত্ব থাকা যাবে না। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। একাডেমিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে, মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে হলে আবেদনকারীর স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে এবং বয়স ৩৫ বছরের নিচে হতে হবে। আর পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য থাকতে হবে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৪০ বছর। ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রেও নির্ধারিত মানদণ্ড রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের প্রয়োজন অনুযায়ী পূরণ করতে হবে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

প্রথমে প্রয়োজন হবে ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ অ্যাপলিকেশন ফরম, বিস্তারিত সিভি, নোটারাইজড করা সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট। সঙ্গে যুক্ত করতে হবে স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি), রিচার্জ প্রপোজাল এবং দুজন অধ্যাপকের পক্ষ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার। নন-ক্রিমিনাল সার্টিফিকেট, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্রসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

অধ্যয়নের ক্ষেত্রসমূহ

বিশ্ববিদ্যালয়টি ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের অধীনে রয়েছে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে অর্থনীতি, ভাষা, সাংবাদিকতা, আইন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ বিস্তৃত বিষয়ের সমাহার। পাশাপাশি ফ্যাকাল্টি অব দ্য বিল্ড এনভায়রনমেন্টের শিক্ষার্থীদের জন্য আর্কিটেকচার, আরবান প্ল্যানিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবেশবিজ্ঞান এবং রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্টের মতো পেশাদারি ক্ষেত্রের সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তিমুখী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধিশালী বিভিন্ন বিষয়।

আবেদন পদ্ধতি

আগ্রহী প্রার্থীরা ক্লিক করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের শেষ সময়: আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত