Ajker Patrika

নিলয়ের স্বপ্নপূরণ

মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার
নিলয় বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত
নিলয় বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের তরুণ শিক্ষার্থী নিলয় বড়ুয়া তাঁর স্বপ্ন ছোঁয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ছোটবেলায় বিমানের প্রতি আগ্রহ থেকে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ জয়ের অবিশ্বাস্য যাত্রা। হাঙ্গেরির ইউনিভার্সিটি অব নিয়িরেঘাজাতে বিএসসি ইন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেলেন তিনি, যা শুধু তাঁর নিজের নয়, দেশের জন্যও এক গর্বের মুহূর্ত।

নিলয় বড়ুয়ার এই যাত্রা অত সহজ ছিল না। ২৫৬ দিনের অপেক্ষা, ৮টি আবেদন এবং ৪টি প্রত্যাখ্যানের পর অবশেষে এই অর্জন। শুধু তা-ই নয়, নিলয় আরও তিনটি আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ পেয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার সমমূল্যের এই সুযোগ টিউশন ফি, আবাসন, চিকিৎসাবিমা ও মাসিক ভাতা—সবই কভার করবে।

নিজের স্বপ্নপূরণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে নিলয় বলেন, ‘হাজারো আবেদনকারীর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে বেছে নিয়েছিল ১০৫ জনকে। আমি ছিলাম ৯০তম। ভেবেছিলাম, আর কোনো সুযোগ নেই। তবু লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ইউনিভার্সিটি অব নিয়িরেঘাজার ভাইভার শেষে অধ্যাপক বললেন, “নিলয়, ওয়েলকাম টু হাঙ্গেরি”। তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, আমি কি সত্যিই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।’

নিলয় আরও যোগ করেন, ‘এ যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। অনেকে বলেছিল, অবৈধ পথে বিদেশ পাঠাও, আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু বাবা-মা বলেছিলেন, তুমি তোমার মতো এগিয়ে যাও। তাঁদের বিশ্বাসই আমাকে আজকের জায়গায় এনেছে। আমার বিশ্বাস, স্বপ্ন দেখার সাহস থাকলে এবং পাশে যদি থাকে বাবা-মায়ের আস্থা, তাহলে কোনো সমাজ, কোনো নিয়ম, কোনো বাধাই কাউকে থামাতে পারে না।’

নিলয় ছোটবেলা থেকে আকাশ ও বিমানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী হলেও কখনো হাল ছাড়েননি। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর যোগ দেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরে (বিএনসিসি)। দিনে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো ছেলে হয়ে ওঠেন ভোর ৬টায় সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া ক্যাডেট। তিনি ছিলেন বিএনসিসিতে অ্যাক্টিং করপোরাল ও কালচারাল ইনস্ট্রাক্টর, যেখানে শত শত ক্যাডেটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া ছিলেন রেজিমেন্ট কালচারাল সার্জেন্ট। কাজ করেছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে ফার্স্ট এইড অফিসার হিসেবে। জাতীয় পর্যায়ে তবলা প্রতিযোগিতায়ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। আইইএলটিএসে অর্জন করেছেন ৭.৫ স্কোর। এ ছাড়া তৈরি করেছেন ফিজিকসট্রি নামের অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ৭০০-এর বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মধ্যম আধারমানিক গ্রামের সন্তান নিলয়। ২০১৯ সালে প্রথম এই স্কলারশিপের কথা শোনেন তিনি। জানতেন, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ। কিন্তু তিনি সরকারি স্কুলের ছাত্র। পড়েছেন চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সরকারি স্কুল-কলেজ থেকে পড়াশোনা করে হাজারো আবেদনকারীর মধ্যে তিনি হয়ে উঠেছেন বিজয়ী।

নিলয়ের মা লাকি বড়ুয়া বলেন, ‘মা-বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো সন্তানের স্বপ্ন পূরণ হতে দেখা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাকে ৩৬ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিচ্ছেন মির্জা আব্বাসের ছেলে

বিশ্বের প্রথম ‘বিটকয়েন জাতি’ এল সালভাদরের ভাগ্যে কী আছে

‘ঘুষ’ নেওয়ার পরও গ্রেপ্তার, হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে হাতকড়াসহ ছিনতাই

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের পক্ষে একমত সব রাজনৈতিক দল: আলী রীয়াজ

সংসদ নির্বাচনের দিন আলাদা ব্যালটে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব বিএনপির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত