Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই কোটি টাকার বৃত্তি পেলেন জোবায়ের

কুমিল্লার মুরাদনগর থানার একটি গ্রাম দড়ানীপাড়া। ক্ষিরাই নদের তীরে গড়ে ওঠা এই গ্রামের সবুজ প্রকৃতিতে শৈশব কেটেছে এক স্বপ্নবাজ তরুণের। নাম জোবায়ের আহমেদ। তিনি বিতর্কের মঞ্চ থেকে ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড, মানবিক সংগঠন থেকে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আগ্রহ তাঁকে পরিচয় করিয়েছে প্রযুক্তির সীমাহীন সম্ভাবনার সঙ্গে। সেই আগ্রহ আর অধ্যবসায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বেলোয়েট কলেজে পেলেন আড়াই কোটি টাকার প্রেসিডেনশিয়াল বৃত্তি। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

আনিসুল ইসলাম নাঈম
যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই কোটি টাকার বৃত্তি পেলেন জোবায়ের

পড়াশোনা

প্রথমে মায়ের হাতেই জোবায়েরের শিক্ষার হাতেখড়ি। এরপর মক্তবে ইসলামিক শিক্ষা। এরপর বাবুটিপাড়া

শিশু শিক্ষালয়ে ভর্তি

হন। ইংরেজিতে দুর্বলতা থাকায় তা কাটিয়ে উঠতে তৃতীয় শ্রেণিতে তাঁকে ভর্তি করানো হয় দাউদকান্দির আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের ইংরেজি ভার্সনে। হোস্টেলের অচেনা পরিবেশ হয়ে ওঠে জোবায়েরের দ্বিতীয় পরিবার। সেখান থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন জোবায়ের। এরপর রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন জোবায়ের আহমেদ।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

শুধু পড়াশোনায় নয়, সহশিক্ষা কার্যক্রমেও জোবায়ের ছিলেন সক্রিয়। ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াতে ল্যাঙ্গুয়েজ ও বিতর্ক ক্লাবে যুক্ত হয়ে দুবার চ্যাম্পিয়ন এবং একবার সেরা বিতার্কিক হন। তাঁর নেতৃত্বে স্কুল ও কলেজের দল অর্জন করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে আগ্রহ থেকে অংশ নেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। বাংলাদেশ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে নবম স্থান এবং কুইন্স কমনওয়েলথে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। এ ছাড়া ক্লাইমেট সায়েন্স অলিম্পিয়াড, নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জসহ নানা প্রতিযোগিতায় অর্জন রয়েছে তাঁর। করোনাকালে গ্রামের তরুণদের সঙ্গে মিলে দড়ানীপাড়া ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। সংগঠনটি বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠা করেন দড়ানীপাড়া পাঠাগার, যেখানে গ্রামের মানুষ বই ও পত্রিকা পড়ে উপকৃত হচ্ছে।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়েও তাঁর আগ্রহ দীর্ঘদিনের। ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্টসহ নানা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেন স্বীকৃতি।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার স্বপ্ন

সহপাঠীরা যখন ভার্চুয়াল গেমস খেলায় ব্যস্ত, জোবায়ের তখন ভাবতেন, এসব গেম বানানো হয় কীভাবে? ধীরে ধীরে প্রোগ্রামিং ভাষার সঙ্গে পরিচিত হন। হোস্টেলে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তিনি ‘পাইথন দিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং’ বই থেকে খাতায় কোড লিখে নিজেই আউটপুট অনুমান করার চেষ্টা করতেন। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন গড়ে ওঠে তাঁর।

যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সুযোগ পেলেন

একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থেকে প্রোফাইলকে শক্তিশালী করেন জোবায়ের। ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিশিয়েন্সি টেস্ট এবং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিশিয়েন্সি টেস্টের প্রস্তুতি নেন। প্রকাশ করেন একটি গবেষণাপত্র, ‘জেনারেটিভ ইন্টেলিজেন্স কি মানব মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?’। সবকিছু গুছিয়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নেন জোবায়ের। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমন অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করেন। শিক্ষকদের সুপারিশপত্র ও নিজের গল্পভিত্তিক প্রবন্ধ সংযুক্ত করে আবেদন জমা দেন। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের বেলোয়েট কলেজ তাঁকে চার বছরের জন্য আড়াই কোটি টাকার প্রেসিডেনশিয়াল বৃত্তি দেয়। জোবায়ের আহমেদ মনে করেন, এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাঁর পরিশ্রম, পরিবারের সমর্থন এবং শিক্ষকদের একান্ত সহযোগিতা।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার আবেদনপ্রক্রিয়া

আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদনের জন্য কমন অ্যাপ্লিকেশন বা কমন অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। এ জন্য প্রথমে কমন অ্যাপের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়া, ব্যক্তিগত তথ্য ও শিক্ষাগত যোগ্যতা জমা দেওয়া, প্রবন্ধ লেখা, ট্রান্সক্রিপ্ট, সুপারিশপত্র ও ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষার ফলাফল সংযুক্ত করতে হয়। সবশেষে আবেদন ফিসহ জমা দিতে হয়।

ভর্তি নিশ্চিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো হয় I-20 ফরম। এরপর DS-160 ফরম পূরণ করে ভিসা সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করতে হয়। সফল হলে শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ পান।

নতুনদের জন্য পরামর্শ

জোবায়ের আহমেদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে চাইলে ধৈর্য, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। আগে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ করতে হবে, ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াতে হবে। একাডেমিক নথি, রিজিউম ও পার্সোনাল স্টেটমেন্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে। এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে যুক্ত থেকে প্রোফাইল শক্তিশালী করতে হবে। ভিসা ইন্টারভিউর সময় আত্মবিশ্বাসী থাকা জরুরি। সবশেষে জোবায়ের বলেন, ‘নিষ্ঠা, অধ্যবসায় আর সঠিক প্রস্তুতি—তিনটি আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত