ছোটবেলা থেকে ভাষা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মো. রবিউল আলম। চাঁদপুরের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি)। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হন এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে যান। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি রিসার্চার ও ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে কর্মরত। শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান।
আব্দুর রাজ্জাক খান
প্রশ্ন: আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: আমি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার দৈয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে সম্পন্ন করেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা আমার একাডেমিক যাত্রার ভিত্তি তৈরি করেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভর্তি হই এবং ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করি। এই সাফল্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং একাডেমিক জীবনের প্রতি আমাকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। পড়াশোনা শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি।
প্রশ্ন: আপনার বর্তমান অবস্থান কী?
উত্তর: বর্তমানে আমি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত পিএইচডি গবেষক হিসেবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টিইএসওএল শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা করছি; পাশাপাশি ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি কোর্সে টিউটরিং দিচ্ছি—টিইএসওএল কারিকুলাম অ্যান্ড পেডাগজি, ক্রিটিক্যাল পারস্পেকটিভস অন টিইএসওএল এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন এডুকেশন প্ল্যানিং।
এ ছাড়া শিক্ষা অনুষদের উচ্চতর গবেষণা (এইচডিআর) প্রতিনিধি (২০২৫) এবং স্নাতকোত্তর গবেষণা সম্মেলনের আয়োজনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ কেন?
উত্তর: শিক্ষকতা করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করি, বিশ্বমানের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। উন্নত গবেষণা, আন্তসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি আমাকে বিদেশে পড়াশোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া বেছে নিই এবং ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় টিইএসওএল বিষয়ে মাস্টার অব এডুকেশন করার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকে কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: মূল কারণ ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এবং টিইএসওএল বিষয়ে বিশেষভাবে শক্তিশালী। সেখানে ভর্তি হওয়া আমার আন্তর্জাতিক একাডেমিক যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশে পড়াশোনা করে আন্তসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছি। উন্নত গ্রন্থাগার, আধুনিক গবেষণার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে গবেষণায় দক্ষ করেছে।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়ায় গবেষণা ও পড়াশোনায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
উত্তর: প্রথম দিকে ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য এবং নতুন একাডেমিক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি এটিকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমার ব্যক্তিগত ও একাডেমিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (জিআরএ) হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: আমি তিনটি গবেষণা প্রজেক্টে জিআরএ হিসেবে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতায় গবেষণা পরিকল্পনা, ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং একাডেমিক রিপোর্ট লেখার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেছি, যা পরবর্তী সময়ে গবেষণায় অমূল্য সহায়তা দিয়েছে।
প্রশ্ন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য কীভাবে বৃত্তি পেয়েছিলেন?
উত্তর: ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ডিসটিংকশন নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ
করে ২০২১ সালের শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসি। ২০২২ সালে পিএইচডি বৃত্তির জন্য আবেদন শুরু করি। প্রথমে সম্ভাব্য সুপারভাইজরদের চিহ্নিত করি, যাঁদের গবেষণা আমার আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁদের কাছে সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল পাঠাই। কয়েকজন সুপারভাইজরের সঙ্গে জুমের মাধ্যমে ইন্টারভিউতে যোগদান করি। এরপর সেখানে আমার গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরি। শেষ পর্যন্ত আমি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রস্তাব গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের পরামর্শ কী দেবেন?
উত্তর: পরিকল্পিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত থাকে। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বলা যায়, সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো ধৈর্য ও অধ্যবসায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: টিইএসওএল শিক্ষাই দীর্ঘদিন ধরে আমার একাডেমিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিইএসওএল গবেষণায় বিশ্বমানের স্বীকৃত। অভিজ্ঞ সুপারভাইজরদের দিকনির্দেশনা আমার আগ্রহের সঙ্গে মিলেছে। সে কারণে এখানে আবেদন করি এবং পূর্ণ স্কলারশিপে ভর্তি হই।
প্রশ্ন: শিক্ষাদান কীভাবে উপভোগ করেন?
উত্তর: শিক্ষকতা আমার পেশা নয়; বরং আগ্রহ। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্ন, আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমার নিজস্ব জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। বহু সাংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যও উপলব্ধি করি।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও আছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও আন্তরিক করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নীতি প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন ও গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের টিপস কী দেবেন?
উত্তর: বৃত্তি পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতি অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে, এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত, প্রফেশনাল ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গবেষণা আগ্রহ এবং সুপারভাইজরের সঙ্গে কাজ করার যুক্তি তুলে ধরা থাকবে। মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত করা জরুরি। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ ও সহশিক্ষা কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আমি মালয়েশিয়ায় স্নাতকোত্তরের সময় ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই বৃত্তি অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে গিয়ে কী কী নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর: এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে তাদের চিন্তার বহুমাত্রিকতা, প্রশ্ন করার ধরন এবং গবেষণামুখী আলোচনায় অংশগ্রহণ আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
প্রশ্ন: পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় আইলা সলিডারিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সের রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করছি। এ স্বীকৃতিগুলো আমার গবেষণাকে বৈশ্বিকভাবে দৃশ্যমান করেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি গবেষকেরা কীভাবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেতে পারেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে মানসম্পন্ন গবেষণা অপরিহার্য। নিয়মিত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আনতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় কী ধরনের পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষা এখনো মূলত শিক্ষককেন্দ্রিক, যেখানে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সীমিত এবং গবেষণার সুযোগ কম। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করার সময় আমি গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে সুপারভাইজরের সঙ্গে নিবিড় কাজ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এখানে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, স্বাধীন গবেষণা এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং অবকাঠামো নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ায় সুপারভাইজররা মেন্টরের ভূমিকা পালন করেন। গবেষণার রিসোর্স, অবকাঠামো এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক—সবকিছু অত্যন্ত গবেষকবান্ধব। মালয়েশিয়ায়ও অবকাঠামো ভালো, তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সংস্কৃতি সত্যিই অনন্য। বাংলাদেশে সুযোগ সীমিত হলেও শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা শক্তিশালী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবং প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে আরও আন্তরিক করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে আগ্রহীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর: স্পষ্ট গবেষণা লক্ষ্য নির্ধারণ, উপযুক্ত সুপারভাইজর খুঁজে বের করা, প্রফেশনাল ই-মেইল লেখা, মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করা এবং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন?
উত্তর: আমি যেখানে থাকতাম ব্রিসবেনে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক গড় খরচ প্রায় ১৫০০-২০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। সঠিক পরিকল্পনা এবং বৃত্তি থাকলে এই খরচ চালানো সম্ভব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?
উত্তর: উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে এটি কাজে লাগাতে দক্ষতা, গবেষণামূলক প্রকাশনা এবং কার্যকর নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর: পড়াশোনা শেষে পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে স্থায়ী চাকরি পেলে স্থায়ী বসবাস বা পিআরের জন্য আবেদন করা যায়। কয়েক বছর পিআর ধরে রাখার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। ধৈর্য এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম যখন পা রাখলেন সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান; কোনটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজির উচ্চারণ এবং আবহাওয়ার ভিন্নতা প্রথম দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি, বর্তমানে আর সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন?
উত্তর: প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে হয়। সম্ভাব্য সুপারভাইজরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে আগ্রহ নিশ্চিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউতে ভালো পারফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি প্রদানকারী কমিটি আবেদন পর্যালোচনা করে। পুরো প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে আমি টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন এবং গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
আপনাকে ধন্যবাদ, স্যার।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: আমি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার দৈয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে সম্পন্ন করেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা আমার একাডেমিক যাত্রার ভিত্তি তৈরি করেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভর্তি হই এবং ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করি। এই সাফল্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং একাডেমিক জীবনের প্রতি আমাকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। পড়াশোনা শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি।
প্রশ্ন: আপনার বর্তমান অবস্থান কী?
উত্তর: বর্তমানে আমি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত পিএইচডি গবেষক হিসেবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টিইএসওএল শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা করছি; পাশাপাশি ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি কোর্সে টিউটরিং দিচ্ছি—টিইএসওএল কারিকুলাম অ্যান্ড পেডাগজি, ক্রিটিক্যাল পারস্পেকটিভস অন টিইএসওএল এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন এডুকেশন প্ল্যানিং।
এ ছাড়া শিক্ষা অনুষদের উচ্চতর গবেষণা (এইচডিআর) প্রতিনিধি (২০২৫) এবং স্নাতকোত্তর গবেষণা সম্মেলনের আয়োজনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ কেন?
উত্তর: শিক্ষকতা করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করি, বিশ্বমানের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। উন্নত গবেষণা, আন্তসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি আমাকে বিদেশে পড়াশোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া বেছে নিই এবং ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় টিইএসওএল বিষয়ে মাস্টার অব এডুকেশন করার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকে কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: মূল কারণ ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এবং টিইএসওএল বিষয়ে বিশেষভাবে শক্তিশালী। সেখানে ভর্তি হওয়া আমার আন্তর্জাতিক একাডেমিক যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশে পড়াশোনা করে আন্তসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছি। উন্নত গ্রন্থাগার, আধুনিক গবেষণার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে গবেষণায় দক্ষ করেছে।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়ায় গবেষণা ও পড়াশোনায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
উত্তর: প্রথম দিকে ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য এবং নতুন একাডেমিক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি এটিকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমার ব্যক্তিগত ও একাডেমিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (জিআরএ) হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: আমি তিনটি গবেষণা প্রজেক্টে জিআরএ হিসেবে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতায় গবেষণা পরিকল্পনা, ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং একাডেমিক রিপোর্ট লেখার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেছি, যা পরবর্তী সময়ে গবেষণায় অমূল্য সহায়তা দিয়েছে।
প্রশ্ন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য কীভাবে বৃত্তি পেয়েছিলেন?
উত্তর: ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ডিসটিংকশন নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ
করে ২০২১ সালের শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসি। ২০২২ সালে পিএইচডি বৃত্তির জন্য আবেদন শুরু করি। প্রথমে সম্ভাব্য সুপারভাইজরদের চিহ্নিত করি, যাঁদের গবেষণা আমার আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁদের কাছে সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল পাঠাই। কয়েকজন সুপারভাইজরের সঙ্গে জুমের মাধ্যমে ইন্টারভিউতে যোগদান করি। এরপর সেখানে আমার গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরি। শেষ পর্যন্ত আমি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রস্তাব গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের পরামর্শ কী দেবেন?
উত্তর: পরিকল্পিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত থাকে। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বলা যায়, সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো ধৈর্য ও অধ্যবসায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: টিইএসওএল শিক্ষাই দীর্ঘদিন ধরে আমার একাডেমিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিইএসওএল গবেষণায় বিশ্বমানের স্বীকৃত। অভিজ্ঞ সুপারভাইজরদের দিকনির্দেশনা আমার আগ্রহের সঙ্গে মিলেছে। সে কারণে এখানে আবেদন করি এবং পূর্ণ স্কলারশিপে ভর্তি হই।
প্রশ্ন: শিক্ষাদান কীভাবে উপভোগ করেন?
উত্তর: শিক্ষকতা আমার পেশা নয়; বরং আগ্রহ। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্ন, আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমার নিজস্ব জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। বহু সাংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যও উপলব্ধি করি।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও আছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও আন্তরিক করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নীতি প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন ও গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের টিপস কী দেবেন?
উত্তর: বৃত্তি পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতি অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে, এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত, প্রফেশনাল ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গবেষণা আগ্রহ এবং সুপারভাইজরের সঙ্গে কাজ করার যুক্তি তুলে ধরা থাকবে। মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত করা জরুরি। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ ও সহশিক্ষা কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আমি মালয়েশিয়ায় স্নাতকোত্তরের সময় ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই বৃত্তি অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে গিয়ে কী কী নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর: এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে তাদের চিন্তার বহুমাত্রিকতা, প্রশ্ন করার ধরন এবং গবেষণামুখী আলোচনায় অংশগ্রহণ আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
প্রশ্ন: পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় আইলা সলিডারিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সের রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করছি। এ স্বীকৃতিগুলো আমার গবেষণাকে বৈশ্বিকভাবে দৃশ্যমান করেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি গবেষকেরা কীভাবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেতে পারেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে মানসম্পন্ন গবেষণা অপরিহার্য। নিয়মিত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আনতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় কী ধরনের পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষা এখনো মূলত শিক্ষককেন্দ্রিক, যেখানে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সীমিত এবং গবেষণার সুযোগ কম। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করার সময় আমি গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে সুপারভাইজরের সঙ্গে নিবিড় কাজ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এখানে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, স্বাধীন গবেষণা এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং অবকাঠামো নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ায় সুপারভাইজররা মেন্টরের ভূমিকা পালন করেন। গবেষণার রিসোর্স, অবকাঠামো এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক—সবকিছু অত্যন্ত গবেষকবান্ধব। মালয়েশিয়ায়ও অবকাঠামো ভালো, তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সংস্কৃতি সত্যিই অনন্য। বাংলাদেশে সুযোগ সীমিত হলেও শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা শক্তিশালী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবং প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে আরও আন্তরিক করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে আগ্রহীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর: স্পষ্ট গবেষণা লক্ষ্য নির্ধারণ, উপযুক্ত সুপারভাইজর খুঁজে বের করা, প্রফেশনাল ই-মেইল লেখা, মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করা এবং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন?
উত্তর: আমি যেখানে থাকতাম ব্রিসবেনে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক গড় খরচ প্রায় ১৫০০-২০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। সঠিক পরিকল্পনা এবং বৃত্তি থাকলে এই খরচ চালানো সম্ভব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?
উত্তর: উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে এটি কাজে লাগাতে দক্ষতা, গবেষণামূলক প্রকাশনা এবং কার্যকর নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর: পড়াশোনা শেষে পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে স্থায়ী চাকরি পেলে স্থায়ী বসবাস বা পিআরের জন্য আবেদন করা যায়। কয়েক বছর পিআর ধরে রাখার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। ধৈর্য এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম যখন পা রাখলেন সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান; কোনটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজির উচ্চারণ এবং আবহাওয়ার ভিন্নতা প্রথম দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি, বর্তমানে আর সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন?
উত্তর: প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে হয়। সম্ভাব্য সুপারভাইজরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে আগ্রহ নিশ্চিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউতে ভালো পারফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি প্রদানকারী কমিটি আবেদন পর্যালোচনা করে। পুরো প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে আমি টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন এবং গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
আপনাকে ধন্যবাদ, স্যার।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
নিয়াজ আহমদ খান বলেন, সব নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। নির্ধারিত পরিমাণ ব্যালট ছাপানোর স্বার্থে আমাদের মূল ভেন্ডরের সঙ্গে আলোচনা করে সমযোগ্য একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে একই টেন্ডারের অধীনে কাজে সম্পৃক্ত করার...
১ ঘণ্টা আগেমাত্র এক বছর বয়সে মা-বাবাকে হারান আমানুর রহমান। শৈশব কেটেছে নানাবাড়িতে, কিন্তু সেই কোমল হৃদয়জুড়ে ছিল এক অস্বাভাবিক অন্তর্দহন। ছোটবেলা থেকে জীবনের বেদনা তাঁকে তাড়িত করত। আর সেই বেদনাই তাঁকে এগিয়ে দেয় মানবিকতার পথে, ফটোগ্রাফির পথে।
৬ ঘণ্টা আগেগ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (জিইউবি) অনুষ্ঠিত হ্যাক দ্য এআই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনব্যাপী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
৭ ঘণ্টা আগেঝিকরগাছা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নাফিসা বিনতে হাসান। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও স্কাউটসে অসাধারণ পারদর্শিতা প্রদর্শন করছে সে। এই বয়সে তার অর্জনের ঝুলিতে পুরেছে কৃতিত্বের বেশ কয়েকটি সনদ।
৮ ঘণ্টা আগে