
ছোটবেলা থেকে ভাষা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মো. রবিউল আলম। চাঁদপুরের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি)। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হন এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে যান। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি রিসার্চার ও ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে কর্মরত। শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান।
আব্দুর রাজ্জাক খান

প্রশ্ন: আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: আমি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার দৈয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে সম্পন্ন করেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা আমার একাডেমিক যাত্রার ভিত্তি তৈরি করেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভর্তি হই এবং ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করি। এই সাফল্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং একাডেমিক জীবনের প্রতি আমাকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। পড়াশোনা শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি।
প্রশ্ন: আপনার বর্তমান অবস্থান কী?
উত্তর: বর্তমানে আমি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত পিএইচডি গবেষক হিসেবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টিইএসওএল শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা করছি; পাশাপাশি ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি কোর্সে টিউটরিং দিচ্ছি—টিইএসওএল কারিকুলাম অ্যান্ড পেডাগজি, ক্রিটিক্যাল পারস্পেকটিভস অন টিইএসওএল এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন এডুকেশন প্ল্যানিং।
এ ছাড়া শিক্ষা অনুষদের উচ্চতর গবেষণা (এইচডিআর) প্রতিনিধি (২০২৫) এবং স্নাতকোত্তর গবেষণা সম্মেলনের আয়োজনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ কেন?
উত্তর: শিক্ষকতা করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করি, বিশ্বমানের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। উন্নত গবেষণা, আন্তসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি আমাকে বিদেশে পড়াশোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া বেছে নিই এবং ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় টিইএসওএল বিষয়ে মাস্টার অব এডুকেশন করার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকে কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: মূল কারণ ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এবং টিইএসওএল বিষয়ে বিশেষভাবে শক্তিশালী। সেখানে ভর্তি হওয়া আমার আন্তর্জাতিক একাডেমিক যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশে পড়াশোনা করে আন্তসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছি। উন্নত গ্রন্থাগার, আধুনিক গবেষণার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে গবেষণায় দক্ষ করেছে।

প্রশ্ন: মালয়েশিয়ায় গবেষণা ও পড়াশোনায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
উত্তর: প্রথম দিকে ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য এবং নতুন একাডেমিক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি এটিকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমার ব্যক্তিগত ও একাডেমিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (জিআরএ) হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: আমি তিনটি গবেষণা প্রজেক্টে জিআরএ হিসেবে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতায় গবেষণা পরিকল্পনা, ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং একাডেমিক রিপোর্ট লেখার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেছি, যা পরবর্তী সময়ে গবেষণায় অমূল্য সহায়তা দিয়েছে।
প্রশ্ন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য কীভাবে বৃত্তি পেয়েছিলেন?
উত্তর: ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ডিসটিংকশন নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ
করে ২০২১ সালের শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসি। ২০২২ সালে পিএইচডি বৃত্তির জন্য আবেদন শুরু করি। প্রথমে সম্ভাব্য সুপারভাইজরদের চিহ্নিত করি, যাঁদের গবেষণা আমার আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁদের কাছে সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল পাঠাই। কয়েকজন সুপারভাইজরের সঙ্গে জুমের মাধ্যমে ইন্টারভিউতে যোগদান করি। এরপর সেখানে আমার গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরি। শেষ পর্যন্ত আমি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রস্তাব গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের পরামর্শ কী দেবেন?
উত্তর: পরিকল্পিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত থাকে। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বলা যায়, সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো ধৈর্য ও অধ্যবসায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: টিইএসওএল শিক্ষাই দীর্ঘদিন ধরে আমার একাডেমিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিইএসওএল গবেষণায় বিশ্বমানের স্বীকৃত। অভিজ্ঞ সুপারভাইজরদের দিকনির্দেশনা আমার আগ্রহের সঙ্গে মিলেছে। সে কারণে এখানে আবেদন করি এবং পূর্ণ স্কলারশিপে ভর্তি হই।
প্রশ্ন: শিক্ষাদান কীভাবে উপভোগ করেন?
উত্তর: শিক্ষকতা আমার পেশা নয়; বরং আগ্রহ। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্ন, আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমার নিজস্ব জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। বহু সাংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যও উপলব্ধি করি।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও আছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও আন্তরিক করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নীতি প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন ও গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের টিপস কী দেবেন?
উত্তর: বৃত্তি পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতি অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে, এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত, প্রফেশনাল ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গবেষণা আগ্রহ এবং সুপারভাইজরের সঙ্গে কাজ করার যুক্তি তুলে ধরা থাকবে। মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত করা জরুরি। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ ও সহশিক্ষা কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আমি মালয়েশিয়ায় স্নাতকোত্তরের সময় ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই বৃত্তি অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে গিয়ে কী কী নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর: এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে তাদের চিন্তার বহুমাত্রিকতা, প্রশ্ন করার ধরন এবং গবেষণামুখী আলোচনায় অংশগ্রহণ আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
প্রশ্ন: পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় আইলা সলিডারিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সের রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করছি। এ স্বীকৃতিগুলো আমার গবেষণাকে বৈশ্বিকভাবে দৃশ্যমান করেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি গবেষকেরা কীভাবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেতে পারেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে মানসম্পন্ন গবেষণা অপরিহার্য। নিয়মিত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আনতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় কী ধরনের পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষা এখনো মূলত শিক্ষককেন্দ্রিক, যেখানে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সীমিত এবং গবেষণার সুযোগ কম। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করার সময় আমি গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে সুপারভাইজরের সঙ্গে নিবিড় কাজ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এখানে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, স্বাধীন গবেষণা এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং অবকাঠামো নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ায় সুপারভাইজররা মেন্টরের ভূমিকা পালন করেন। গবেষণার রিসোর্স, অবকাঠামো এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক—সবকিছু অত্যন্ত গবেষকবান্ধব। মালয়েশিয়ায়ও অবকাঠামো ভালো, তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সংস্কৃতি সত্যিই অনন্য। বাংলাদেশে সুযোগ সীমিত হলেও শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা শক্তিশালী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবং প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে আরও আন্তরিক করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে আগ্রহীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর: স্পষ্ট গবেষণা লক্ষ্য নির্ধারণ, উপযুক্ত সুপারভাইজর খুঁজে বের করা, প্রফেশনাল ই-মেইল লেখা, মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করা এবং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন?
উত্তর: আমি যেখানে থাকতাম ব্রিসবেনে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক গড় খরচ প্রায় ১৫০০-২০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। সঠিক পরিকল্পনা এবং বৃত্তি থাকলে এই খরচ চালানো সম্ভব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?
উত্তর: উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে এটি কাজে লাগাতে দক্ষতা, গবেষণামূলক প্রকাশনা এবং কার্যকর নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর: পড়াশোনা শেষে পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে স্থায়ী চাকরি পেলে স্থায়ী বসবাস বা পিআরের জন্য আবেদন করা যায়। কয়েক বছর পিআর ধরে রাখার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। ধৈর্য এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম যখন পা রাখলেন সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান; কোনটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজির উচ্চারণ এবং আবহাওয়ার ভিন্নতা প্রথম দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি, বর্তমানে আর সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন?
উত্তর: প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে হয়। সম্ভাব্য সুপারভাইজরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে আগ্রহ নিশ্চিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউতে ভালো পারফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি প্রদানকারী কমিটি আবেদন পর্যালোচনা করে। পুরো প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে আমি টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন এবং গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
আপনাকে ধন্যবাদ, স্যার।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: আমি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার দৈয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে সম্পন্ন করেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা আমার একাডেমিক যাত্রার ভিত্তি তৈরি করেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভর্তি হই এবং ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করি। এই সাফল্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং একাডেমিক জীবনের প্রতি আমাকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। পড়াশোনা শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি।
প্রশ্ন: আপনার বর্তমান অবস্থান কী?
উত্তর: বর্তমানে আমি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত পিএইচডি গবেষক হিসেবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টিইএসওএল শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা করছি; পাশাপাশি ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি কোর্সে টিউটরিং দিচ্ছি—টিইএসওএল কারিকুলাম অ্যান্ড পেডাগজি, ক্রিটিক্যাল পারস্পেকটিভস অন টিইএসওএল এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন এডুকেশন প্ল্যানিং।
এ ছাড়া শিক্ষা অনুষদের উচ্চতর গবেষণা (এইচডিআর) প্রতিনিধি (২০২৫) এবং স্নাতকোত্তর গবেষণা সম্মেলনের আয়োজনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ কেন?
উত্তর: শিক্ষকতা করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করি, বিশ্বমানের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। উন্নত গবেষণা, আন্তসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি আমাকে বিদেশে পড়াশোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া বেছে নিই এবং ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় টিইএসওএল বিষয়ে মাস্টার অব এডুকেশন করার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকে কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: মূল কারণ ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এবং টিইএসওএল বিষয়ে বিশেষভাবে শক্তিশালী। সেখানে ভর্তি হওয়া আমার আন্তর্জাতিক একাডেমিক যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশে পড়াশোনা করে আন্তসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছি। উন্নত গ্রন্থাগার, আধুনিক গবেষণার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে গবেষণায় দক্ষ করেছে।

প্রশ্ন: মালয়েশিয়ায় গবেষণা ও পড়াশোনায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
উত্তর: প্রথম দিকে ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য এবং নতুন একাডেমিক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি এটিকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমার ব্যক্তিগত ও একাডেমিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (জিআরএ) হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: আমি তিনটি গবেষণা প্রজেক্টে জিআরএ হিসেবে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতায় গবেষণা পরিকল্পনা, ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং একাডেমিক রিপোর্ট লেখার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেছি, যা পরবর্তী সময়ে গবেষণায় অমূল্য সহায়তা দিয়েছে।
প্রশ্ন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য কীভাবে বৃত্তি পেয়েছিলেন?
উত্তর: ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ডিসটিংকশন নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ
করে ২০২১ সালের শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসি। ২০২২ সালে পিএইচডি বৃত্তির জন্য আবেদন শুরু করি। প্রথমে সম্ভাব্য সুপারভাইজরদের চিহ্নিত করি, যাঁদের গবেষণা আমার আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁদের কাছে সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল পাঠাই। কয়েকজন সুপারভাইজরের সঙ্গে জুমের মাধ্যমে ইন্টারভিউতে যোগদান করি। এরপর সেখানে আমার গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরি। শেষ পর্যন্ত আমি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রস্তাব গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের পরামর্শ কী দেবেন?
উত্তর: পরিকল্পিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত থাকে। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বলা যায়, সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো ধৈর্য ও অধ্যবসায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: টিইএসওএল শিক্ষাই দীর্ঘদিন ধরে আমার একাডেমিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিইএসওএল গবেষণায় বিশ্বমানের স্বীকৃত। অভিজ্ঞ সুপারভাইজরদের দিকনির্দেশনা আমার আগ্রহের সঙ্গে মিলেছে। সে কারণে এখানে আবেদন করি এবং পূর্ণ স্কলারশিপে ভর্তি হই।
প্রশ্ন: শিক্ষাদান কীভাবে উপভোগ করেন?
উত্তর: শিক্ষকতা আমার পেশা নয়; বরং আগ্রহ। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্ন, আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমার নিজস্ব জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। বহু সাংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যও উপলব্ধি করি।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও আছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও আন্তরিক করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নীতি প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন ও গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের টিপস কী দেবেন?
উত্তর: বৃত্তি পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতি অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে, এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত, প্রফেশনাল ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গবেষণা আগ্রহ এবং সুপারভাইজরের সঙ্গে কাজ করার যুক্তি তুলে ধরা থাকবে। মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত করা জরুরি। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ ও সহশিক্ষা কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আমি মালয়েশিয়ায় স্নাতকোত্তরের সময় ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই বৃত্তি অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে গিয়ে কী কী নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর: এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে তাদের চিন্তার বহুমাত্রিকতা, প্রশ্ন করার ধরন এবং গবেষণামুখী আলোচনায় অংশগ্রহণ আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
প্রশ্ন: পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় আইলা সলিডারিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সের রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করছি। এ স্বীকৃতিগুলো আমার গবেষণাকে বৈশ্বিকভাবে দৃশ্যমান করেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি গবেষকেরা কীভাবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেতে পারেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে মানসম্পন্ন গবেষণা অপরিহার্য। নিয়মিত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আনতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় কী ধরনের পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষা এখনো মূলত শিক্ষককেন্দ্রিক, যেখানে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সীমিত এবং গবেষণার সুযোগ কম। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করার সময় আমি গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে সুপারভাইজরের সঙ্গে নিবিড় কাজ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এখানে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, স্বাধীন গবেষণা এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং অবকাঠামো নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ায় সুপারভাইজররা মেন্টরের ভূমিকা পালন করেন। গবেষণার রিসোর্স, অবকাঠামো এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক—সবকিছু অত্যন্ত গবেষকবান্ধব। মালয়েশিয়ায়ও অবকাঠামো ভালো, তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সংস্কৃতি সত্যিই অনন্য। বাংলাদেশে সুযোগ সীমিত হলেও শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা শক্তিশালী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবং প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে আরও আন্তরিক করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে আগ্রহীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর: স্পষ্ট গবেষণা লক্ষ্য নির্ধারণ, উপযুক্ত সুপারভাইজর খুঁজে বের করা, প্রফেশনাল ই-মেইল লেখা, মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করা এবং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন?
উত্তর: আমি যেখানে থাকতাম ব্রিসবেনে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক গড় খরচ প্রায় ১৫০০-২০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। সঠিক পরিকল্পনা এবং বৃত্তি থাকলে এই খরচ চালানো সম্ভব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?
উত্তর: উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে এটি কাজে লাগাতে দক্ষতা, গবেষণামূলক প্রকাশনা এবং কার্যকর নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর: পড়াশোনা শেষে পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে স্থায়ী চাকরি পেলে স্থায়ী বসবাস বা পিআরের জন্য আবেদন করা যায়। কয়েক বছর পিআর ধরে রাখার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। ধৈর্য এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম যখন পা রাখলেন সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান; কোনটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজির উচ্চারণ এবং আবহাওয়ার ভিন্নতা প্রথম দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি, বর্তমানে আর সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন?
উত্তর: প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে হয়। সম্ভাব্য সুপারভাইজরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে আগ্রহ নিশ্চিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউতে ভালো পারফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি প্রদানকারী কমিটি আবেদন পর্যালোচনা করে। পুরো প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে আমি টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন এবং গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
আপনাকে ধন্যবাদ, স্যার।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

ছোটবেলা থেকে ভাষা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মো. রবিউল আলম। চাঁদপুরের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি)। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হন এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে যান। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি রিসার্চার ও ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে কর্মরত। শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান।
আব্দুর রাজ্জাক খান

প্রশ্ন: আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: আমি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার দৈয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে সম্পন্ন করেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা আমার একাডেমিক যাত্রার ভিত্তি তৈরি করেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভর্তি হই এবং ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করি। এই সাফল্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং একাডেমিক জীবনের প্রতি আমাকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। পড়াশোনা শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি।
প্রশ্ন: আপনার বর্তমান অবস্থান কী?
উত্তর: বর্তমানে আমি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত পিএইচডি গবেষক হিসেবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টিইএসওএল শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা করছি; পাশাপাশি ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি কোর্সে টিউটরিং দিচ্ছি—টিইএসওএল কারিকুলাম অ্যান্ড পেডাগজি, ক্রিটিক্যাল পারস্পেকটিভস অন টিইএসওএল এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন এডুকেশন প্ল্যানিং।
এ ছাড়া শিক্ষা অনুষদের উচ্চতর গবেষণা (এইচডিআর) প্রতিনিধি (২০২৫) এবং স্নাতকোত্তর গবেষণা সম্মেলনের আয়োজনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ কেন?
উত্তর: শিক্ষকতা করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করি, বিশ্বমানের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। উন্নত গবেষণা, আন্তসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি আমাকে বিদেশে পড়াশোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া বেছে নিই এবং ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় টিইএসওএল বিষয়ে মাস্টার অব এডুকেশন করার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকে কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: মূল কারণ ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এবং টিইএসওএল বিষয়ে বিশেষভাবে শক্তিশালী। সেখানে ভর্তি হওয়া আমার আন্তর্জাতিক একাডেমিক যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশে পড়াশোনা করে আন্তসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছি। উন্নত গ্রন্থাগার, আধুনিক গবেষণার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে গবেষণায় দক্ষ করেছে।

প্রশ্ন: মালয়েশিয়ায় গবেষণা ও পড়াশোনায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
উত্তর: প্রথম দিকে ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য এবং নতুন একাডেমিক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি এটিকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমার ব্যক্তিগত ও একাডেমিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (জিআরএ) হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: আমি তিনটি গবেষণা প্রজেক্টে জিআরএ হিসেবে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতায় গবেষণা পরিকল্পনা, ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং একাডেমিক রিপোর্ট লেখার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেছি, যা পরবর্তী সময়ে গবেষণায় অমূল্য সহায়তা দিয়েছে।
প্রশ্ন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য কীভাবে বৃত্তি পেয়েছিলেন?
উত্তর: ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ডিসটিংকশন নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ
করে ২০২১ সালের শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসি। ২০২২ সালে পিএইচডি বৃত্তির জন্য আবেদন শুরু করি। প্রথমে সম্ভাব্য সুপারভাইজরদের চিহ্নিত করি, যাঁদের গবেষণা আমার আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁদের কাছে সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল পাঠাই। কয়েকজন সুপারভাইজরের সঙ্গে জুমের মাধ্যমে ইন্টারভিউতে যোগদান করি। এরপর সেখানে আমার গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরি। শেষ পর্যন্ত আমি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রস্তাব গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের পরামর্শ কী দেবেন?
উত্তর: পরিকল্পিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত থাকে। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বলা যায়, সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো ধৈর্য ও অধ্যবসায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: টিইএসওএল শিক্ষাই দীর্ঘদিন ধরে আমার একাডেমিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিইএসওএল গবেষণায় বিশ্বমানের স্বীকৃত। অভিজ্ঞ সুপারভাইজরদের দিকনির্দেশনা আমার আগ্রহের সঙ্গে মিলেছে। সে কারণে এখানে আবেদন করি এবং পূর্ণ স্কলারশিপে ভর্তি হই।
প্রশ্ন: শিক্ষাদান কীভাবে উপভোগ করেন?
উত্তর: শিক্ষকতা আমার পেশা নয়; বরং আগ্রহ। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্ন, আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমার নিজস্ব জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। বহু সাংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যও উপলব্ধি করি।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও আছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও আন্তরিক করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নীতি প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন ও গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের টিপস কী দেবেন?
উত্তর: বৃত্তি পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতি অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে, এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত, প্রফেশনাল ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গবেষণা আগ্রহ এবং সুপারভাইজরের সঙ্গে কাজ করার যুক্তি তুলে ধরা থাকবে। মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত করা জরুরি। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ ও সহশিক্ষা কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আমি মালয়েশিয়ায় স্নাতকোত্তরের সময় ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই বৃত্তি অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে গিয়ে কী কী নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর: এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে তাদের চিন্তার বহুমাত্রিকতা, প্রশ্ন করার ধরন এবং গবেষণামুখী আলোচনায় অংশগ্রহণ আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
প্রশ্ন: পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় আইলা সলিডারিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সের রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করছি। এ স্বীকৃতিগুলো আমার গবেষণাকে বৈশ্বিকভাবে দৃশ্যমান করেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি গবেষকেরা কীভাবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেতে পারেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে মানসম্পন্ন গবেষণা অপরিহার্য। নিয়মিত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আনতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় কী ধরনের পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষা এখনো মূলত শিক্ষককেন্দ্রিক, যেখানে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সীমিত এবং গবেষণার সুযোগ কম। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করার সময় আমি গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে সুপারভাইজরের সঙ্গে নিবিড় কাজ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এখানে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, স্বাধীন গবেষণা এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং অবকাঠামো নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ায় সুপারভাইজররা মেন্টরের ভূমিকা পালন করেন। গবেষণার রিসোর্স, অবকাঠামো এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক—সবকিছু অত্যন্ত গবেষকবান্ধব। মালয়েশিয়ায়ও অবকাঠামো ভালো, তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সংস্কৃতি সত্যিই অনন্য। বাংলাদেশে সুযোগ সীমিত হলেও শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা শক্তিশালী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবং প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে আরও আন্তরিক করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে আগ্রহীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর: স্পষ্ট গবেষণা লক্ষ্য নির্ধারণ, উপযুক্ত সুপারভাইজর খুঁজে বের করা, প্রফেশনাল ই-মেইল লেখা, মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করা এবং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন?
উত্তর: আমি যেখানে থাকতাম ব্রিসবেনে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক গড় খরচ প্রায় ১৫০০-২০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। সঠিক পরিকল্পনা এবং বৃত্তি থাকলে এই খরচ চালানো সম্ভব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?
উত্তর: উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে এটি কাজে লাগাতে দক্ষতা, গবেষণামূলক প্রকাশনা এবং কার্যকর নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর: পড়াশোনা শেষে পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে স্থায়ী চাকরি পেলে স্থায়ী বসবাস বা পিআরের জন্য আবেদন করা যায়। কয়েক বছর পিআর ধরে রাখার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। ধৈর্য এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম যখন পা রাখলেন সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান; কোনটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজির উচ্চারণ এবং আবহাওয়ার ভিন্নতা প্রথম দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি, বর্তমানে আর সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন?
উত্তর: প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে হয়। সম্ভাব্য সুপারভাইজরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে আগ্রহ নিশ্চিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউতে ভালো পারফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি প্রদানকারী কমিটি আবেদন পর্যালোচনা করে। পুরো প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে আমি টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন এবং গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
আপনাকে ধন্যবাদ, স্যার।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: আমি চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার দৈয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে সম্পন্ন করেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা আমার একাডেমিক যাত্রার ভিত্তি তৈরি করেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভর্তি হই এবং ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করি। এই সাফল্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং একাডেমিক জীবনের প্রতি আমাকে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। পড়াশোনা শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি।
প্রশ্ন: আপনার বর্তমান অবস্থান কী?
উত্তর: বর্তমানে আমি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত পিএইচডি গবেষক হিসেবে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে টিইএসওএল শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা করছি; পাশাপাশি ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি কোর্সে টিউটরিং দিচ্ছি—টিইএসওএল কারিকুলাম অ্যান্ড পেডাগজি, ক্রিটিক্যাল পারস্পেকটিভস অন টিইএসওএল এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন এডুকেশন প্ল্যানিং।
এ ছাড়া শিক্ষা অনুষদের উচ্চতর গবেষণা (এইচডিআর) প্রতিনিধি (২০২৫) এবং স্নাতকোত্তর গবেষণা সম্মেলনের আয়োজনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ কেন?
উত্তর: শিক্ষকতা করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করি, বিশ্বমানের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। উন্নত গবেষণা, আন্তসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি আমাকে বিদেশে পড়াশোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া বেছে নিই এবং ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় টিইএসওএল বিষয়ে মাস্টার অব এডুকেশন করার সিদ্ধান্ত নিই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকে কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: মূল কারণ ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এবং টিইএসওএল বিষয়ে বিশেষভাবে শক্তিশালী। সেখানে ভর্তি হওয়া আমার আন্তর্জাতিক একাডেমিক যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশে পড়াশোনা করে আন্তসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছি। উন্নত গ্রন্থাগার, আধুনিক গবেষণার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে গবেষণায় দক্ষ করেছে।

প্রশ্ন: মালয়েশিয়ায় গবেষণা ও পড়াশোনায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
উত্তর: প্রথম দিকে ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য এবং নতুন একাডেমিক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি এটিকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমার ব্যক্তিগত ও একাডেমিক উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব মালায়ায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (জিআরএ) হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: আমি তিনটি গবেষণা প্রজেক্টে জিআরএ হিসেবে কাজ করেছি। এই অভিজ্ঞতায় গবেষণা পরিকল্পনা, ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং একাডেমিক রিপোর্ট লেখার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেছি, যা পরবর্তী সময়ে গবেষণায় অমূল্য সহায়তা দিয়েছে।
প্রশ্ন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য কীভাবে বৃত্তি পেয়েছিলেন?
উত্তর: ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ডিসটিংকশন নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ
করে ২০২১ সালের শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসি। ২০২২ সালে পিএইচডি বৃত্তির জন্য আবেদন শুরু করি। প্রথমে সম্ভাব্য সুপারভাইজরদের চিহ্নিত করি, যাঁদের গবেষণা আমার আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁদের কাছে সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল পাঠাই। কয়েকজন সুপারভাইজরের সঙ্গে জুমের মাধ্যমে ইন্টারভিউতে যোগদান করি। এরপর সেখানে আমার গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরি। শেষ পর্যন্ত আমি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রস্তাব গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের পরামর্শ কী দেবেন?
উত্তর: পরিকল্পিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর প্রফেশনাল, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত থাকে। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বলা যায়, সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো ধৈর্য ও অধ্যবসায়।
প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি কেন বেছে নিলেন?
উত্তর: টিইএসওএল শিক্ষাই দীর্ঘদিন ধরে আমার একাডেমিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিইএসওএল গবেষণায় বিশ্বমানের স্বীকৃত। অভিজ্ঞ সুপারভাইজরদের দিকনির্দেশনা আমার আগ্রহের সঙ্গে মিলেছে। সে কারণে এখানে আবেদন করি এবং পূর্ণ স্কলারশিপে ভর্তি হই।
প্রশ্ন: শিক্ষাদান কীভাবে উপভোগ করেন?
উত্তর: শিক্ষকতা আমার পেশা নয়; বরং আগ্রহ। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্ন, আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমার নিজস্ব জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। বহু সাংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যও উপলব্ধি করি।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও আছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও আন্তরিক করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নীতি প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন ও গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জনের টিপস কী দেবেন?
উত্তর: বৃত্তি পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতি অপরিহার্য। প্রথমে গবেষণার সঙ্গে মিল রয়েছে, এমন সুপারভাইজর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত, প্রফেশনাল ও স্পষ্ট ই-মেইল পাঠাতে হবে, যেখানে আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গবেষণা আগ্রহ এবং সুপারভাইজরের সঙ্গে কাজ করার যুক্তি তুলে ধরা থাকবে। মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল সংযুক্ত করা জরুরি। জুম ইন্টারভিউয়ে গবেষণার জ্ঞান ও মোটিভেশন প্রদর্শন করতে হবে। নেতৃত্বগুণ ও সহশিক্ষা কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আমি মালয়েশিয়ায় স্নাতকোত্তরের সময় ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই বৃত্তি অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন: ক্যাজুয়াল একাডেমিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে গিয়ে কী কী নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর: এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে তাদের চিন্তার বহুমাত্রিকতা, প্রশ্ন করার ধরন এবং গবেষণামুখী আলোচনায় অংশগ্রহণ আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমার মোট ২৬টি প্রকাশনা রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি স্কোপাস ও ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সড জার্নাল আর বইয়ের অধ্যায়। গুগল স্কলারে সাইটেশন প্রায় ৯০০। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায় লেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
প্রশ্ন: পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: আমি ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় আইলা সলিডারিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ইন্দোনেশিয়ায় বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফারেন্সের রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করছি। এ স্বীকৃতিগুলো আমার গবেষণাকে বৈশ্বিকভাবে দৃশ্যমান করেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি গবেষকেরা কীভাবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেতে পারেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে মানসম্পন্ন গবেষণা অপরিহার্য। নিয়মিত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আনতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় কী ধরনের পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
উত্তর: বাংলাদেশের শিক্ষা এখনো মূলত শিক্ষককেন্দ্রিক, যেখানে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ সীমিত এবং গবেষণার সুযোগ কম। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করার সময় আমি গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে সুপারভাইজরের সঙ্গে নিবিড় কাজ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এখানে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, স্বাধীন গবেষণা এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং অবকাঠামো নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ায় সুপারভাইজররা মেন্টরের ভূমিকা পালন করেন। গবেষণার রিসোর্স, অবকাঠামো এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক—সবকিছু অত্যন্ত গবেষকবান্ধব। মালয়েশিয়ায়ও অবকাঠামো ভালো, তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সংস্কৃতি সত্যিই অনন্য। বাংলাদেশে সুযোগ সীমিত হলেও শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা শক্তিশালী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
উত্তর: গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার জরুরি। শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবং প্রবলেম সলভিং দক্ষতায় গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে আরও আন্তরিক করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে আগ্রহীদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর: স্পষ্ট গবেষণা লক্ষ্য নির্ধারণ, উপযুক্ত সুপারভাইজর খুঁজে বের করা, প্রফেশনাল ই-মেইল লেখা, মানসম্পন্ন সিভি ও রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করা এবং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন?
উত্তর: আমি যেখানে থাকতাম ব্রিসবেনে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক গড় খরচ প্রায় ১৫০০-২০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। সঠিক পরিকল্পনা এবং বৃত্তি থাকলে এই খরচ চালানো সম্ভব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?
উত্তর: উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে এটি কাজে লাগাতে দক্ষতা, গবেষণামূলক প্রকাশনা এবং কার্যকর নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর: পড়াশোনা শেষে পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে স্থায়ী চাকরি পেলে স্থায়ী বসবাস বা পিআরের জন্য আবেদন করা যায়। কয়েক বছর পিআর ধরে রাখার পর নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। ধৈর্য এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম যখন পা রাখলেন সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান; কোনটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উত্তর: অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজির উচ্চারণ এবং আবহাওয়ার ভিন্নতা প্রথম দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি, বর্তমানে আর সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন?
উত্তর: প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে হয়। সম্ভাব্য সুপারভাইজরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে আগ্রহ নিশ্চিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউতে ভালো পারফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি প্রদানকারী কমিটি আবেদন পর্যালোচনা করে। পুরো প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার গবেষণার মূল বিষয় হলো ল্যাঙ্গুয়েজ ম্যানেজমেন্ট ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি। ভবিষ্যতে আমি টিইএসওএল এডুকেশন ও ল্যাঙ্গুয়েজ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন এবং গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। লক্ষ্য হলো, গবেষণাকে শিক্ষানীতি ও সমাজে বাস্তব প্রয়োগে রূপান্তর করা।
আপনাকে ধন্যবাদ, স্যার।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই আমাদের এ নতুন বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’ আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের
৩৫ মিনিট আগে
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
২ ঘণ্টা আগে
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দিনটি শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি প্রতিফলিত করে একতার শক্তি, ন্যায্যতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য মনোভাব।
৪ ঘণ্টা আগে
ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুম ভাঙে রাবিউল ইসলামের। ঘরের কোণে টেবিলে রাখা বই-খাতার দিকে চোখ পড়ে। ইচ্ছে হয় পড়তে বসতে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন হাত তাঁকে টেনে নেয় বাইরে, রাজমিস্ত্রির কাজে।
৫ ঘণ্টা আগেজবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই আমাদের এ নতুন বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’ আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
জবি উপাচার্য বলেন, ‘একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্নে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু ৫৪ বছরে আমরা সেই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, যার মূল্য দিতে হয়েছে ২৪-এর জুলাই–আগস্টে বহু ছাত্র–জনতাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি বৈষম্যহীন সমাজ এবং বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে শহীদদের স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশ একটু একটু করে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছিলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই আমাদের এ নতুন বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’ আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
জবি উপাচার্য বলেন, ‘একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্নে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু ৫৪ বছরে আমরা সেই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, যার মূল্য দিতে হয়েছে ২৪-এর জুলাই–আগস্টে বহু ছাত্র–জনতাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি বৈষম্যহীন সমাজ এবং বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে শহীদদের স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশ একটু একটু করে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছিলেন।

ছোটবেলা থেকে ভাষা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মো. রবিউল আলম। চাঁদপুরের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি)। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হন এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
২ ঘণ্টা আগে
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দিনটি শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি প্রতিফলিত করে একতার শক্তি, ন্যায্যতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য মনোভাব।
৪ ঘণ্টা আগে
ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুম ভাঙে রাবিউল ইসলামের। ঘরের কোণে টেবিলে রাখা বই-খাতার দিকে চোখ পড়ে। ইচ্ছে হয় পড়তে বসতে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন হাত তাঁকে টেনে নেয় বাইরে, রাজমিস্ত্রির কাজে।
৫ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
এআইইউবির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু মিয়া আকন্দ তুহিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ সাহাবুদ্দিনের সম্মতিক্রমে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন এবং গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
এআইইউবির ২৩তম সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের মোট ১৭৬৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এবারের সমাবর্তনে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পেয়েছেন ৩ জন; সুম্মা কাম লাউড পেয়েছেন ৪৩ জন; ম্যাগনা কাম লাউড পেয়েছেন ৭৪ জন; কাম লাউড পেয়েছেন ২৬ জন; ডা. আনোয়ারুল আবেদীন লিডারশিপ পদক পেয়েছেন ১৯ জন এবং ভাইস-চ্যান্সেলর পদক পেয়েছেন ২১ জন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এআইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাদিয়া আনোয়ার, উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম এবং উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান।
সমাবর্তনের প্রধান অতিথি ড. আবেদ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্ব বর্তমানে এক বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংকট হলো ঝুঁকি এবং সম্ভাবনার সমন্বয়। স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকি পরিমাপ এবং সম্ভাবনা বিবেচনায় দেখা যায়, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সেই শিক্ষা প্রতিফলিত হয়। সংকট শনাক্ত এবং অতিক্রম করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের এবং সংকটের বাইরে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যই দেশের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ আপনারাই।’
স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তটি কেবল একটি সমাবর্তন নয়; এটি আপনার বহু বছরের পরিশ্রমের স্বীকৃতি। পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের চাপ, নির্ঘুম রাত, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অটল থাকা, অভিভাবকদের কষ্টার্জিত টিউশন ফি আর আপনার নিজের নিষ্ঠা ও ত্যাগ, সবকিছুরই সম্মিলিত স্বীকৃতি এটি।’
স্বাগত বক্তব্যে এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার বলেন, ‘যখন আমি আপনাদের দিকে তাকাই, তখন শত শত গল্প ভেসে ওঠে। নীরবে লড়ে যাওয়া সংগ্রামের গল্প, হৃদয়ের গভীরে লালিত স্বপ্নের গল্প। সংশয়ে ভরা অসংখ্য রাত পেরিয়ে নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠা সকালের গল্প। আপনারা এই মুহূর্তে পৌঁছেছেন কোনো কাকতালীয়তায় নয়; পৌঁছেছেন নিজের শক্তি, আশার আলো এবং ভবিষ্যতের প্রতি অটল অঙ্গীকারের পথ ধরে।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে নাদিয়া আনোয়ার বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, সম্মান ও কৃতজ্ঞতা—এসব শুধু শব্দ নয়; এগুলো আমাদের অন্তরের গভীর অনুভূতির প্রকাশ। আপনারা নীরবে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, হয়তো নিজের স্বপ্ন পিছিয়ে দিয়েছেন, হয়তো নিজের ইচ্ছাগুলো সংযত রেখেছেন, সেই ত্যাগই আজকের এই সাফল্যের প্রকৃত ভিত্তি।’
সমাবর্তন বক্তা ব্রাসেলসের আইআরইজি অবজারভেটরি অন একাডেমিক র্যাংকিং অ্যান্ড এক্সিলেন্সের এক্সিকিউটিভ কমিটি মেম্বার অধ্যাপক ড. হাবিব ফারদৌন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এআইইউবি’র মূলমন্ত্র ‘হোয়্যার লিডারস আর ক্রিয়েটেড’ কেবল একটি বাক্য নয়; এটি শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এবং সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। যেকোনো র্যাংকিংয়ের চেয়েও বড় বিষয় হলো, বিশ্ব আপনাকে চিনে নেওয়ার আগেই এআইইউবি আপনার সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেছে। আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো শিখতে থাকা, আবার নতুনভাবে শিখতে পারা। এই চলমান শিক্ষণ-প্রক্রিয়ায় একজন কৌতূহলী মানুষ সেখানে সেতু নির্মাণ করেন, যেখানে অন্যরা কেবল দেয়াল দেখতে পান। ভবিষ্যৎ হবে তাদেরই, যারা এই সেতুগুলো গড়ে তুলতে সক্ষম।
শিক্ষার্থীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে এআইইউবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি এই স্তরে পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। তবে এখনো আপনাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে এবং জীবনে সফল হতে আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে। মনে রাখবেন, এটি কোনো শেষ নয়, বরং সম্ভাবনাময় একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুরু।’
গ্র্যাজুয়েট, অভিভাবক ও সম্মানিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এআইইউবি’র উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘এআইইউবি’র পক্ষ থেকে আমরা সকল গ্রাজুয়েট, অভিভাবক ও অতিথিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনাদের উপস্থিতি আজকের অনুষ্ঠানে বিশেষ মর্যাদা ও গৌরব যুক্ত করেছে।’
অনুষ্ঠানে এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. হাসানুল এ. হাসান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইশতিয়াক আবেদীন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরা, আমন্ত্রিত অতিথিরা, এআইইউবির কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, ডিন, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
এআইইউবির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু মিয়া আকন্দ তুহিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ সাহাবুদ্দিনের সম্মতিক্রমে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন এবং গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
এআইইউবির ২৩তম সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের মোট ১৭৬৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এবারের সমাবর্তনে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পেয়েছেন ৩ জন; সুম্মা কাম লাউড পেয়েছেন ৪৩ জন; ম্যাগনা কাম লাউড পেয়েছেন ৭৪ জন; কাম লাউড পেয়েছেন ২৬ জন; ডা. আনোয়ারুল আবেদীন লিডারশিপ পদক পেয়েছেন ১৯ জন এবং ভাইস-চ্যান্সেলর পদক পেয়েছেন ২১ জন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এআইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাদিয়া আনোয়ার, উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম এবং উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান।
সমাবর্তনের প্রধান অতিথি ড. আবেদ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্ব বর্তমানে এক বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংকট হলো ঝুঁকি এবং সম্ভাবনার সমন্বয়। স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকি পরিমাপ এবং সম্ভাবনা বিবেচনায় দেখা যায়, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সেই শিক্ষা প্রতিফলিত হয়। সংকট শনাক্ত এবং অতিক্রম করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের এবং সংকটের বাইরে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যই দেশের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ আপনারাই।’
স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তটি কেবল একটি সমাবর্তন নয়; এটি আপনার বহু বছরের পরিশ্রমের স্বীকৃতি। পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের চাপ, নির্ঘুম রাত, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অটল থাকা, অভিভাবকদের কষ্টার্জিত টিউশন ফি আর আপনার নিজের নিষ্ঠা ও ত্যাগ, সবকিছুরই সম্মিলিত স্বীকৃতি এটি।’
স্বাগত বক্তব্যে এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার বলেন, ‘যখন আমি আপনাদের দিকে তাকাই, তখন শত শত গল্প ভেসে ওঠে। নীরবে লড়ে যাওয়া সংগ্রামের গল্প, হৃদয়ের গভীরে লালিত স্বপ্নের গল্প। সংশয়ে ভরা অসংখ্য রাত পেরিয়ে নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠা সকালের গল্প। আপনারা এই মুহূর্তে পৌঁছেছেন কোনো কাকতালীয়তায় নয়; পৌঁছেছেন নিজের শক্তি, আশার আলো এবং ভবিষ্যতের প্রতি অটল অঙ্গীকারের পথ ধরে।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে নাদিয়া আনোয়ার বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, সম্মান ও কৃতজ্ঞতা—এসব শুধু শব্দ নয়; এগুলো আমাদের অন্তরের গভীর অনুভূতির প্রকাশ। আপনারা নীরবে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, হয়তো নিজের স্বপ্ন পিছিয়ে দিয়েছেন, হয়তো নিজের ইচ্ছাগুলো সংযত রেখেছেন, সেই ত্যাগই আজকের এই সাফল্যের প্রকৃত ভিত্তি।’
সমাবর্তন বক্তা ব্রাসেলসের আইআরইজি অবজারভেটরি অন একাডেমিক র্যাংকিং অ্যান্ড এক্সিলেন্সের এক্সিকিউটিভ কমিটি মেম্বার অধ্যাপক ড. হাবিব ফারদৌন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এআইইউবি’র মূলমন্ত্র ‘হোয়্যার লিডারস আর ক্রিয়েটেড’ কেবল একটি বাক্য নয়; এটি শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এবং সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। যেকোনো র্যাংকিংয়ের চেয়েও বড় বিষয় হলো, বিশ্ব আপনাকে চিনে নেওয়ার আগেই এআইইউবি আপনার সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেছে। আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো শিখতে থাকা, আবার নতুনভাবে শিখতে পারা। এই চলমান শিক্ষণ-প্রক্রিয়ায় একজন কৌতূহলী মানুষ সেখানে সেতু নির্মাণ করেন, যেখানে অন্যরা কেবল দেয়াল দেখতে পান। ভবিষ্যৎ হবে তাদেরই, যারা এই সেতুগুলো গড়ে তুলতে সক্ষম।
শিক্ষার্থীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে এআইইউবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি এই স্তরে পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। তবে এখনো আপনাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে এবং জীবনে সফল হতে আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে। মনে রাখবেন, এটি কোনো শেষ নয়, বরং সম্ভাবনাময় একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুরু।’
গ্র্যাজুয়েট, অভিভাবক ও সম্মানিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এআইইউবি’র উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘এআইইউবি’র পক্ষ থেকে আমরা সকল গ্রাজুয়েট, অভিভাবক ও অতিথিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনাদের উপস্থিতি আজকের অনুষ্ঠানে বিশেষ মর্যাদা ও গৌরব যুক্ত করেছে।’
অনুষ্ঠানে এআইইউবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. হাসানুল এ. হাসান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইশতিয়াক আবেদীন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরা, আমন্ত্রিত অতিথিরা, এআইইউবির কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, ডিন, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।

ছোটবেলা থেকে ভাষা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মো. রবিউল আলম। চাঁদপুরের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি)। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হন এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই আমাদের এ নতুন বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’ আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের
৩৫ মিনিট আগে
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দিনটি শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি প্রতিফলিত করে একতার শক্তি, ন্যায্যতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য মনোভাব।
৪ ঘণ্টা আগে
ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুম ভাঙে রাবিউল ইসলামের। ঘরের কোণে টেবিলে রাখা বই-খাতার দিকে চোখ পড়ে। ইচ্ছে হয় পড়তে বসতে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন হাত তাঁকে টেনে নেয় বাইরে, রাজমিস্ত্রির কাজে।
৫ ঘণ্টা আগেক্যাম্পাস ডেস্ক

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দিনটি শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি প্রতিফলিত করে একতার শক্তি, ন্যায্যতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য মনোভাব। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে জীবন বাজি রেখেছিলেন। বিজয় দিবস স্মরণ করিয়ে দেয়—ঐক্য, সাহস ও ন্যায্যতা কখনো হারায় না। ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাঁদের মতামত ও ভাবনার কথা।

বিজয় শুধু স্মৃতিতে নয়, চাই বাস্তব রূপ
জোলেখা আক্তার জিনিয়া
শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ।
মহান বিজয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশিরা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। কিন্তু ৫৪ বছর পরও দেশের অগ্রযাত্রায় বহিরাগত চাপ, দুর্নীতি, বৈষম্য ও দমন-পীড়ন বড় বাধা। আজকের তরুণেরা বিজয়কে শুধু স্মৃতিতে নয়, চায় বাস্তব রূপ দিতে। তাদের প্রত্যাশা স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক, আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ। চায় বাক্স্বাধীনতা, সমান অধিকার আর গুম-খুনহীন বাংলাদেশ। বিজয় মানে যুক্তি, মূল্যবোধ, সুশাসন, মানসম্মত শিক্ষা ও সমান সুযোগ। দেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে সবাই বিজয়ের চেতনাকে সাহস ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে বহন করলে। ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই।

শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ে তুলব
তানজিল কাজী
শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির সাহস, একতা আর অদম্য প্রেরণার প্রতীক। ১৯৭১ সালে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও শিক্ষকেরা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। তাঁদের অদম্য সাহস ও দেশপ্রেম আধুনিক অস্ত্রকেও পরাজিত করেছিল। বিজয় শুধু আনন্দের নয়, দায়িত্বেরও। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিকতায় সমৃদ্ধ সমাজ গড়া। নেতৃত্ব, যোগাযোগ ও সমালোচনামূলক চিন্তা হোক জাতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি। আজ আমরা শহীদদের স্মরণ করি, মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতজ্ঞতা জানাই এবং শপথ করি—দেশকে ভালোবাসব, সত্যের পথে অবিচল থাকব, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারিনি
সাজিয়া রহমান ঈশি
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বিজয়ের আগেই পাকিস্তানি বাহিনী জানত, এই জাতিকে কোনোভাবেই দমানো যাবে না। তারা চেষ্টা করেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে নেতৃত্বহীন বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র প্রমাণ করল, বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ন্যায়ের সাহসে দাঁড়িয়েছে। ৫৪ বছর পরও আমরা স্বপ্নের ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাঝে এখনো লেগে আছে বৈষম্য, অন্যায় ও সুযোগের অসম বণ্টন। তবু আশা আছে—যদি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি, ন্যায়কে প্রতিদিনের অভ্যাস করি, তাহলে একদিন আমরা গড়ে তুলতে পারব আমাদের স্বপ্নের, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।

এবারের বিজয়ের মাস যেন এক নতুন আলোয় ভাসছে
এস এম রেদোয়ানুল হাসান রায়হান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস আমরা এত দিন ইতিহাসের পাতায় পাতায় দেখেছি, এবার সেটি বাস্তবের রঙে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। দমবন্ধ অন্ধকার ভেদ করে যে মুক্তির হাওয়া বইছে চারদিকে; মনে হচ্ছে, জাতি আবার নতুন করে শ্বাস নিতে শিখছে। ব্যক্তিগত অনুভূতিতে এ যেন এক গভীর স্বস্তি—ভয় আর হুমকির দিন শেষ হয়ে যাওয়া আর সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর শক্তি ফিরে পাওয়া। বিজয়ের লাল-সবুজ এবার শুধু স্মৃতির প্রতীক নয়, আমাদের আশার অঙ্গীকার।

বিজয় কি আজও পরম আরাধ্য, নাকি অপ্রাপ্তির শিকল
সামিহা সিরাজী লাজ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাঙালির অস্তিত্ব, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়ানো ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় আজও বহু অপ্রাপ্তির সঙ্গী। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, আইনশৃঙ্খলা ও নীতির অভাব নাগরিকদের পরম স্বাধীনতার আনন্দে বাধা। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা, রাজনৈতিক দলগুলোর অদূরদর্শিতা দেশের অগ্রগতিকে সীমিত করেছে। তবু নতুন প্রজন্ম ও ছাত্র-জনতা নতুন রাজনৈতিক উপাখ্যানের সূচনা করছে। সমাজের অবহেলার মাঝে বিজয় দিবস মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা অর্জন শুধুই ইতিহাস নয়, প্রাপ্তির আনন্দে প্রত্যেক মানুষের প্রাণে রাঙানো এক চলমান সংগ্রাম।

নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও দায়িত্বের প্রতীক
মো. আবুজার গিফারী
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
আর এক দিন পর মহান মুক্তিযুদ্ধ ৫৫ বছরে পা দেবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ পথচলায় আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা অর্জন করেছি। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, আমাদের আকাঙ্ক্ষার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি? নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান রাজনৈতিক নেতৃত্বে সংঘটিত হলেও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার বিস্ময়কর জাগরণের ফল। ছাত্রসমাজের এই ভূমিকা দেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ মুখ্য হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ ও সংসদীয় নেতৃত্বে তরুণেরা এগিয়ে আসবে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মহান বিজয় দিবস শুধু উদ্যাপন নয়, এটি নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও দায়িত্বের প্রতীক।

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দিনটি শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি প্রতিফলিত করে একতার শক্তি, ন্যায্যতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য মনোভাব। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে জীবন বাজি রেখেছিলেন। বিজয় দিবস স্মরণ করিয়ে দেয়—ঐক্য, সাহস ও ন্যায্যতা কখনো হারায় না। ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাঁদের মতামত ও ভাবনার কথা।

বিজয় শুধু স্মৃতিতে নয়, চাই বাস্তব রূপ
জোলেখা আক্তার জিনিয়া
শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ।
মহান বিজয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশিরা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। কিন্তু ৫৪ বছর পরও দেশের অগ্রযাত্রায় বহিরাগত চাপ, দুর্নীতি, বৈষম্য ও দমন-পীড়ন বড় বাধা। আজকের তরুণেরা বিজয়কে শুধু স্মৃতিতে নয়, চায় বাস্তব রূপ দিতে। তাদের প্রত্যাশা স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক, আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ। চায় বাক্স্বাধীনতা, সমান অধিকার আর গুম-খুনহীন বাংলাদেশ। বিজয় মানে যুক্তি, মূল্যবোধ, সুশাসন, মানসম্মত শিক্ষা ও সমান সুযোগ। দেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে সবাই বিজয়ের চেতনাকে সাহস ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে বহন করলে। ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই।

শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ে তুলব
তানজিল কাজী
শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির সাহস, একতা আর অদম্য প্রেরণার প্রতীক। ১৯৭১ সালে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও শিক্ষকেরা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। তাঁদের অদম্য সাহস ও দেশপ্রেম আধুনিক অস্ত্রকেও পরাজিত করেছিল। বিজয় শুধু আনন্দের নয়, দায়িত্বেরও। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিকতায় সমৃদ্ধ সমাজ গড়া। নেতৃত্ব, যোগাযোগ ও সমালোচনামূলক চিন্তা হোক জাতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি। আজ আমরা শহীদদের স্মরণ করি, মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতজ্ঞতা জানাই এবং শপথ করি—দেশকে ভালোবাসব, সত্যের পথে অবিচল থাকব, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারিনি
সাজিয়া রহমান ঈশি
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বিজয়ের আগেই পাকিস্তানি বাহিনী জানত, এই জাতিকে কোনোভাবেই দমানো যাবে না। তারা চেষ্টা করেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে নেতৃত্বহীন বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র প্রমাণ করল, বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ন্যায়ের সাহসে দাঁড়িয়েছে। ৫৪ বছর পরও আমরা স্বপ্নের ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাঝে এখনো লেগে আছে বৈষম্য, অন্যায় ও সুযোগের অসম বণ্টন। তবু আশা আছে—যদি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি, ন্যায়কে প্রতিদিনের অভ্যাস করি, তাহলে একদিন আমরা গড়ে তুলতে পারব আমাদের স্বপ্নের, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।

এবারের বিজয়ের মাস যেন এক নতুন আলোয় ভাসছে
এস এম রেদোয়ানুল হাসান রায়হান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস আমরা এত দিন ইতিহাসের পাতায় পাতায় দেখেছি, এবার সেটি বাস্তবের রঙে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। দমবন্ধ অন্ধকার ভেদ করে যে মুক্তির হাওয়া বইছে চারদিকে; মনে হচ্ছে, জাতি আবার নতুন করে শ্বাস নিতে শিখছে। ব্যক্তিগত অনুভূতিতে এ যেন এক গভীর স্বস্তি—ভয় আর হুমকির দিন শেষ হয়ে যাওয়া আর সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর শক্তি ফিরে পাওয়া। বিজয়ের লাল-সবুজ এবার শুধু স্মৃতির প্রতীক নয়, আমাদের আশার অঙ্গীকার।

বিজয় কি আজও পরম আরাধ্য, নাকি অপ্রাপ্তির শিকল
সামিহা সিরাজী লাজ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাঙালির অস্তিত্ব, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়ানো ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় আজও বহু অপ্রাপ্তির সঙ্গী। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, আইনশৃঙ্খলা ও নীতির অভাব নাগরিকদের পরম স্বাধীনতার আনন্দে বাধা। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা, রাজনৈতিক দলগুলোর অদূরদর্শিতা দেশের অগ্রগতিকে সীমিত করেছে। তবু নতুন প্রজন্ম ও ছাত্র-জনতা নতুন রাজনৈতিক উপাখ্যানের সূচনা করছে। সমাজের অবহেলার মাঝে বিজয় দিবস মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা অর্জন শুধুই ইতিহাস নয়, প্রাপ্তির আনন্দে প্রত্যেক মানুষের প্রাণে রাঙানো এক চলমান সংগ্রাম।

নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও দায়িত্বের প্রতীক
মো. আবুজার গিফারী
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
আর এক দিন পর মহান মুক্তিযুদ্ধ ৫৫ বছরে পা দেবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ পথচলায় আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা অর্জন করেছি। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, আমাদের আকাঙ্ক্ষার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি? নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান রাজনৈতিক নেতৃত্বে সংঘটিত হলেও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার বিস্ময়কর জাগরণের ফল। ছাত্রসমাজের এই ভূমিকা দেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ মুখ্য হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ ও সংসদীয় নেতৃত্বে তরুণেরা এগিয়ে আসবে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মহান বিজয় দিবস শুধু উদ্যাপন নয়, এটি নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও দায়িত্বের প্রতীক।

ছোটবেলা থেকে ভাষা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মো. রবিউল আলম। চাঁদপুরের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি)। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হন এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই আমাদের এ নতুন বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’ আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের
৩৫ মিনিট আগে
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
২ ঘণ্টা আগে
ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুম ভাঙে রাবিউল ইসলামের। ঘরের কোণে টেবিলে রাখা বই-খাতার দিকে চোখ পড়ে। ইচ্ছে হয় পড়তে বসতে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন হাত তাঁকে টেনে নেয় বাইরে, রাজমিস্ত্রির কাজে।
৫ ঘণ্টা আগেআজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট)

ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুম ভাঙে রাবিউল ইসলামের। ঘরের কোণে টেবিলে রাখা বই-খাতার দিকে চোখ পড়ে। ইচ্ছে হয় পড়তে বসতে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন হাত তাঁকে টেনে নেয় বাইরে, রাজমিস্ত্রির কাজে। সংসারের দায় আর অর্থকষ্টের চাপে দিনে বই পড়ার সময় পান না রাবিউল। সকাল ৬টায় কনকনে ঠান্ডায় উঠে তাঁকে যেতে হয় কাজে। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে ইট, বালু ও সিমেন্ট নিয়ে শুরু হয় তাঁর জীবনসংগ্রাম। দিনের শেষে ক্লান্ত হাতে ধরতে হয় কলম ও খাতা। এই সংগ্রামের মধ্যেই দেখতে হয় জীবনের স্বপ্ন।
মাত্র ১৯ বছর বয়সী রাবিউল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার সোহাগপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সাহিদুল ইসলামের ছেলে। তিন মাস বয়সে বাবাকে হারান। মা রাবেয়া বেগম একাকী সংসার চালানোর তাগিদে অন্যের ঘরবাড়িতে কাজ করে পরিবারকে টানতে থাকেন। পঞ্চম শ্রেণির পর থেকে সংসারের দায় রাবিউলের কাঁধে এসে পড়ে। এরপর তিনি রাজমিস্ত্রি, টাইলসের মিস্ত্রি ও রংমিস্ত্রির কাজ করতে করতে বড় হয়েছেন।
রাবিউল দিনের বেলা দেয়াল, ইট, সিমেন্ট দিয়ে ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ান, আবার রাতে পড়তে বসেন। পরিবারের তিন প্রজন্মের জীবন কেটে যাচ্ছে টিনের চালা ও ঝুপড়ি ঘরে, যেখানে বর্ষায় ঘরের ভেতরে পানি পড়ে, শীতে ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে ফাঁকফোকর দিয়ে। তবু রাবিউল ও তাঁর পরিবার আশ্রয় খুঁজে নেন ভাঙাচোরা এই ঘরে।
কষ্টের মাঝেও তিনি স্বপ্ন দেখেন। ২০২৪ সালে পাটগ্রাম বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চলতি বছর অনার্সে ভর্তি হওয়ার আশায় পুরোনো বই জোগাড় করেছেন। তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে এখনো ভর্তি হতে পারিনি। আমার স্বপ্ন—একদিন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাব।’
মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই ২০ বছর। অনেক কষ্টে সন্তানকে বড় করেছি। ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। টাকার অভাবে ঘরও ঠিক করতে পারছি না।’ প্রতিবেশী আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘রাবিউল ছোটবেলা থেকে মিস্ত্রির কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে। তারা খুব অসহায়, থাকার জায়গা নেই।’
রাবিউল বলেন, ‘ইট, সিমেন্ট আর রং করার সময়ও আমি আলোর স্বপ্ন দেখি। ইচ্ছা—একদিন প্রতিষ্ঠিত হয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটানো।’

ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুম ভাঙে রাবিউল ইসলামের। ঘরের কোণে টেবিলে রাখা বই-খাতার দিকে চোখ পড়ে। ইচ্ছে হয় পড়তে বসতে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন হাত তাঁকে টেনে নেয় বাইরে, রাজমিস্ত্রির কাজে। সংসারের দায় আর অর্থকষ্টের চাপে দিনে বই পড়ার সময় পান না রাবিউল। সকাল ৬টায় কনকনে ঠান্ডায় উঠে তাঁকে যেতে হয় কাজে। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে ইট, বালু ও সিমেন্ট নিয়ে শুরু হয় তাঁর জীবনসংগ্রাম। দিনের শেষে ক্লান্ত হাতে ধরতে হয় কলম ও খাতা। এই সংগ্রামের মধ্যেই দেখতে হয় জীবনের স্বপ্ন।
মাত্র ১৯ বছর বয়সী রাবিউল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার সোহাগপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সাহিদুল ইসলামের ছেলে। তিন মাস বয়সে বাবাকে হারান। মা রাবেয়া বেগম একাকী সংসার চালানোর তাগিদে অন্যের ঘরবাড়িতে কাজ করে পরিবারকে টানতে থাকেন। পঞ্চম শ্রেণির পর থেকে সংসারের দায় রাবিউলের কাঁধে এসে পড়ে। এরপর তিনি রাজমিস্ত্রি, টাইলসের মিস্ত্রি ও রংমিস্ত্রির কাজ করতে করতে বড় হয়েছেন।
রাবিউল দিনের বেলা দেয়াল, ইট, সিমেন্ট দিয়ে ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ান, আবার রাতে পড়তে বসেন। পরিবারের তিন প্রজন্মের জীবন কেটে যাচ্ছে টিনের চালা ও ঝুপড়ি ঘরে, যেখানে বর্ষায় ঘরের ভেতরে পানি পড়ে, শীতে ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে ফাঁকফোকর দিয়ে। তবু রাবিউল ও তাঁর পরিবার আশ্রয় খুঁজে নেন ভাঙাচোরা এই ঘরে।
কষ্টের মাঝেও তিনি স্বপ্ন দেখেন। ২০২৪ সালে পাটগ্রাম বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চলতি বছর অনার্সে ভর্তি হওয়ার আশায় পুরোনো বই জোগাড় করেছেন। তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে এখনো ভর্তি হতে পারিনি। আমার স্বপ্ন—একদিন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাব।’
মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই ২০ বছর। অনেক কষ্টে সন্তানকে বড় করেছি। ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। টাকার অভাবে ঘরও ঠিক করতে পারছি না।’ প্রতিবেশী আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘রাবিউল ছোটবেলা থেকে মিস্ত্রির কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে। তারা খুব অসহায়, থাকার জায়গা নেই।’
রাবিউল বলেন, ‘ইট, সিমেন্ট আর রং করার সময়ও আমি আলোর স্বপ্ন দেখি। ইচ্ছা—একদিন প্রতিষ্ঠিত হয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটানো।’

ছোটবেলা থেকে ভাষা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মো. রবিউল আলম। চাঁদপুরের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি ভর্তি হন বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি)। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম হন এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই আমাদের এ নতুন বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’ আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের
৩৫ মিনিট আগে
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
২ ঘণ্টা আগে
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দিনটি শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি প্রতিফলিত করে একতার শক্তি, ন্যায্যতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য মনোভাব।
৪ ঘণ্টা আগে