Ajker Patrika

ডিআইইউ মাতাচ্ছে ‘সাদাকালা ব্যান্ড’

তানজিল কাজী
ডিআইইউ মাতাচ্ছে ‘সাদাকালা ব্যান্ড’

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) এক কোণে ক্লাস শেষে তিন তরুণ হাতে তুলে নিয়েছিলেন গিটার, কণ্ঠে তুলেছিলেন গান। সেদিন হয়তো তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি সেই আড্ডার সুর একদিন অতিক্রম করবে ক্যাম্পাসের সীমানা, ছড়িয়ে পড়বে টিভি, রেডিও আর বড় বড় মঞ্চে। বন্ধুত্ব আর সংগীতপ্রেম থেকে জন্ম নেওয়া সেই দলই আজ ‘সাদাকালা ব্যান্ড’। শুধু গান নয়, ঐতিহ্যবাহী বাউল-ফোকের ধারা নতুন রূপে পরিবেশন করে তারা ছুঁয়ে যাচ্ছে মানুষের হৃদয়। নিজেদের তারা দেখছে কেবল একটি ব্যান্ড হিসেবেই নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে।

যেভাবে শুরু

ক্লাস শেষে বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই গান গাইতেন তাঁরা। শুধু মনের টানে শুরু হয়েছিল সংগীতচর্চা। একসময় সেই নেশা পরিণত হয় ভালোবাসায়। ধীরে ধীরে যোগ হয় ইউকেলেলে, খোমক, হাতের বায়া। প্রথম মঞ্চ ছিল ক্যাম্পাসের ক্যানটিন আর বাগান। সেখান থেকে যাত্রা শুরু ‘সাদাকালা’র। তাদের বিশ্বাস, ‘সাদামনের মানুষের মধ্যে কোনো ছলচাতুরী নেই।’ তাই নামকরণ হয় ‘সাদাকালা’। অচিরেই ডিআইইউর যেকোনো অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি হয়ে ওঠে অপরিহার্য।

ক্যাম্পাস মাতিয়ে বড় মঞ্চে

তিনজন দিয়ে শুরু হলেও এখন মূল দলে সাতজন—মেহেদী, সিয়াম, মুরাদ, সাজন, সৈকত ও এলিন আশিক। শুধু গান নয়, নাচ ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও যুক্ত হয়েছে। ক্যাম্পাসের বাইরের অনুষ্ঠানেও সমান উৎসাহে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। বর্তমানে প্রায় ৫০ জনের সাংস্কৃতিক পরিবারকে ঘিরে বিস্তার ঘটিয়েছে সাদাকালা।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রথম ক্যাম্পাস-বহির্ভূত পারফর্ম করেন তাঁরা। সরল গানের আবেগেই তাঁরা জয় করে নেন শ্রোতাদের মন।

অর্জন আর ভালোবাসা

শ্রোতাদের ভালোবাসাই সাদাকালার বড় সাফল্য। পাশাপাশি মিলেছে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও। ড্যাফোডিলের আয়োজিত সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান এবং সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরস্কার পায় তারা। ২০২৩ সালে সময় টেলিভিশনে তাদের প্রথম সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। পরবর্তী সময়ে অ্যাপল রেডিও ৯১.২, নেক্সাস টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আরও পরিচিতি পায়। সামাজিক মাধ্যমেও তাঁদের গান দারুণ সাড়া ফেলেছে।

প্রশংসা ও দর্শন

ডিআইইউর সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, ‘সাদাকালা গানের দল একটি সমকালীন সংগীতধারা প্রচারকারী দল, যারা বাংলা গানের ভেতরে সমাজ, সংস্কৃতি ও মানবিকতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে বিশেষভাবে কাজ করছে।’

দলের এক সদস্য মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলা লোকগানের মাধুর্য তুলে ধরার স্বপ্ন থেকে। ঐতিহ্য ও নতুনত্বের সমন্বয়ে আমরা নিজেরাই গড়ে তুলছি সুরের ভুবন। চ্যালেঞ্জ থাকলেও শ্রোতাদের ভালোবাসাই আমাদের শক্তি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অতীশ চাকমা মনে করেন, সাদাকালা কেবল জনপ্রিয় হওয়ার জন্য গান করে না, বরং বিশ্বাস করে, সংগীত দিয়ে সমাজ বদলানো যায়, মানুষকে ভাবানো যায়। তাদের গানে যেমন আছে প্রতিবাদের সুর, তেমনি মেলে আশার আলো।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথে

সাদাকালা ব্র্যান্ডের প্রতিটি পরিবেশনায় থাকে বাংলার মাটির গন্ধ আর মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। তরুণ থেকে প্রৌঢ়—সব বয়সী শ্রোতার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে তাদের গান। ভবিষ্যতে আরও বড় মঞ্চে নিজেদের সুরের জাদু ছড়িয়ে দিতে চায় তারা। সাদাকালার যাত্রা প্রমাণ করছে—সত্যিকারের শিল্প মানেই সময়ের সঙ্গী হওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার পতনের আগের দিন ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়: নাহিদ

ডিএমপি কমিশনারের বার্তা: ঝটিকা মিছিল হলে ওসি ও পরিদর্শক প্রত্যাহার

শেষ ওভারে নবির ছক্কাবৃষ্টি, বাংলাদেশের সমীকরণ কী দাঁড়াল

কুমিল্লায় ৪ মাজারে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

দিয়াবাড়ির কাশবনে নারীর অর্ধগলিত লাশ, মৃত্যু ১০-১২ দিন আগে: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত