Ajker Patrika

‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার মূল ভিত্তি’—ডিআইইউর উপাচার্য ড. জাহিদুল ইসলাম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান অতিথি এ এস এম সালেহ আহমেদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন ডিআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান অতিথি এ এস এম সালেহ আহমেদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন ডিআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বে গণমাধ্যম কেবল খবরের বাহক নয়, এটি নীতিনির্ধারণ, জবাবদিহিতা ও সামাজিক পরিবর্তনের এক শক্তিশালী মাধ্যম। প্রযুক্তিনির্ভর এ যুগে গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সংস্কার, স্বচ্ছতা ও আধুনিক নীতিমালা। সেই লক্ষ্যেই ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘গণমাধ্যম সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও নীতি প্রস্তাবনা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগ।

শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় রাজধানীর বাড্ডায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ক্যাম্পাসে এ নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ডিআইইউর উপাচার্য ড. জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এ ছাড়া ঢাকা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (উপসচিব) জুলকার নায়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন, সেটি একটি জাতির গণতান্ত্রিক পরিমাপের প্রতিফলন। আমরা এমন একটি পরিবর্তিত গণমাধ্যম দেখতে চাই, যেখানে সাংবাদিক কোনো পক্ষের চাপ ছাড়াই ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য তুলে ধরতে পারবেন। অনুসন্ধান হবে সত্যের সমাহার, আর দায়িত্ববোধ হবে সাংবাদিকতার মূল শক্তি।’

সালেহ আহমেদ আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান অর্জনের স্থান নয়, এটি নতুন জ্ঞান সৃষ্টির প্রাণকেন্দ্র। গবেষণার মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র ও গণমানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে নীতিনির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। গণমাধ্যম নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিস্তর গবেষণার সুযোগ আছে। কারণ, গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। এর স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যম আজ দেশের তথ্যপ্রবাহের মূল স্রোতে পরিণত হয়েছে। তবে এ খাতটি যেমন দ্রুত বিস্তার করেছে, তেমনি একাধিক চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তথ্যের সত্যতা ও যাচাই নিশ্চিত করা। প্রথমে প্রকাশের প্রতিযোগিতায় যাচাই না করেই খবর প্রকাশ করলে গণবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া আর্থিক টেকসইও বড় চ্যালেঞ্জ। বিজ্ঞাপনের কাঠামো আগের মতো কাজ করছে না, তাই বিকল্প রাজস্ব উৎস খুঁজে বের করা জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব—সব মিলিয়ে এখন একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা প্রয়োজন, যাতে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, আবার জবাবদিহির আওতায় থাকে।’

সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা টিকে থাকতে পারে না। গণমাধ্যমের টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (উপসচিব) জুলকার নায়ন।

ডিআইইউ সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পলিসি ডায়ালগ। ছবি: সংগৃহীত
ডিআইইউ সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পলিসি ডায়ালগ। ছবি: সংগৃহীত

অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পূর্বশর্ত। ভয় বা চাপের মধ্যে থেকে কখনো সত্যিকারের সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। সরকারকে বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ডিফেন্স জার্নালিজমকে একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। সাংবাদিকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইসলামে সত্য প্রকাশ ও ন্যায়ের প্রতি প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমও যদি এই নীতিকে অনুসরণ করে, তাহলে সমাজে জবাবদিহি, ন্যায্যতা ও মানবিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করা সম্ভব। গণমাধ্যমকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, আবার জনগণের জানার অধিকারও সংরক্ষিত থাকে। দায়িত্বশীল ও তথ্যনির্ভর ডিফেন্স জার্নালিজম পেশাদার গণমাধ্যম সংস্কৃতির প্রতীক।’

সমাপনী বক্তব্যে ডিআইইউর উপাচার্য ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার মূল ভিত্তি। সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মত, রাজনৈতিক ঝোঁক বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ কখনো সংবাদ উপস্থাপনে প্রভাব ফেলতে পারে না। সত্য যাচাই করে নিরপেক্ষভাবে তা উপস্থাপন করাই পেশাদার সাংবাদিকতার মূল নীতি। সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে আমাদের সবাইকে এই বস্তুনিষ্ঠতার মানদণ্ডে অটল থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা রাজিউর রহমান, সভাপতি কালাম মুহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম পরশসহ সাবেক সদস্য ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক

লন্ডনে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছিলেন রোজিনা

তেল আবিবে মহাসমাবেশ: নেতানিয়াহুর নাম বলতেই মার্কিন দূতকে থামিয়ে দুয়োধ্বনি, ট্রাম্পের নামে স্লোগান

সায়েন্স ল্যাবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ভোগান্তি

গাজায় অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে হামাস, ইসরায়েলপন্থীদের দিচ্ছে শাস্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত