Ajker Patrika

মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একসঙ্গে সুযোগ পেলেন যমজ বোন

মো. নূর-এ-আলম নুহাশ
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ০৯: ৫৪
যমজ বোন নুসরাত বিনতে জামান ও ইসরাত বিনতে জামান তাঁদের সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন মা-বাবাকে। ছবি: সংগৃহীত
যমজ বোন নুসরাত বিনতে জামান ও ইসরাত বিনতে জামান তাঁদের সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন মা-বাবাকে। ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্ন, সাধনা আর বন্ধুত্বে ভর করে উচ্চশিক্ষার নতুন অধ্যায়ে পা রেখেছেন যমজ বোন নুসরাত বিনতে জামান ও ইসরাত বিনতে জামান। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় নুসরাত সুযোগ পেয়েছেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে। আর ইসরাত ভর্তি হয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) কোর্সে।

যমজ হলেও দেখতে আলাদা, আগ্রহেও রয়েছে কিছুটা পার্থক্য। তবে তাঁদের মধ্যে আছে নিবিড় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা, যা এই অর্জনের পেছনে অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

দুই বোনের মধ্যে নুসরাত বড় আর ইসরাত ছোট। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের মেলবন্ধন এই সাফল্যে বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। কারণ, যেকোনো প্রয়োজনে তাঁরা একে অপরের পাশে থেকেছেন। শুধু বোনের মতো নয়, বন্ধুর মতো একসঙ্গে এগিয়েছেন। যেকোনো সমস্যায় একে অন্যের সঙ্গী হয়েছেন। তবে এই দুই বোন তাঁদের সব অর্জনের কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁদের মা-বাবাকে।

নুসরাত-ইসরাতের বাবা মো. নুরুজ্জামান একজন কলেজশিক্ষক এবং মা মোসা. ইসমত আরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এই দুই সন্তান ছাড়াও তাঁদের ছোট আরেকটি ছেলেসন্তান রয়েছে। সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের পরিশ্রম ও ত্যাগ কম নয়। তাঁদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় হলেও থাকেন রাজশাহী জেলা শহরে।

দুই বোনের বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা একসঙ্গে হলেও পঞ্চম শ্রেণি শেষে আলাদা হয়ে যান। কারণ, দুই বোন একই স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাননি। নুসরাত ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আর ইসরাত শহীদ নজমুল হক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। স্কুল আলাদা হলেও প্রাইভেট টিউশন ও পড়াশোনার অন্যান্য কার্যক্রমে তাঁরা ছিলেন একসঙ্গেই।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় দুজনেই পেয়েছেন জিপিএ-৫। এসএসসিতে নুসরাত পেয়েছেন ১২৫৩ এবং ইসরাত ১২৩২ নম্বর। এইচএসসিতে নুসরাত পান ১২২৭ আর ইসরাতের নম্বর ১২০৭।

মা-বাবা চাইতেন, দুই মেয়েই চিকিৎসক হোক। কিন্তু এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কারও সুযোগ হয়নি। তবু পুরোপুরি বিফল হয়নি। পরে ডেন্টালে ইসরাত ৫৭১তম অবস্থানে থেকে সুযোগ পান। অন্যদিকে নুসরাত এমআইএসটি, শাবিপ্রবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পান। মা-বাবার ইচ্ছা চিকিৎসক হলেও তাঁর আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। শেষ পর্যন্ত নুসরাত এমআইএসটির সিএসইতে ভর্তি হন।

নুসরাত বলেন, ‘যখন আমার শাবিপ্রবি ও এমআইএসটিতে সিএসই এল, তখন খুব খুশি হই। তবে বেশি খুশি হয়েছি ইসরাতের ডেন্টালে সুযোগ হওয়ায়। ডেন্টালের ফল প্রকাশের দিনও ইসরাত ধরে নিয়েছিল, তার হবে না। সে ফলাফল দেখতেও চায়নি। আমি নিজেই ইসরাতের রোল নম্বর দিয়ে খুঁজি। নাম দেখে কান্না করে ফেলি—আমার চেয়ে ওর সাফল্য আমাকে বেশি আনন্দ দিয়েছে।’

ইসরাত বলেন, ‘নুসরাতের একের পর এক সুযোগ হচ্ছিল দেখে খুব খুশি ছিলাম। তবে নিজের কোথাও হচ্ছিল না বলে খারাপ লাগছিল।’ পড়াশোনা নিয়ে ইসরাত বলেন, ‘আমার কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে নুসরাতের কাছে বুঝে নিতাম। আমাদের মধ্যে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের চেহারায় না মিললেও মন-মগজে মিল খুব বেশি। নুসরাত না থাকলে হয়তো অনেক কিছু বুঝতেই পারতাম না।’

দুই বোনই তাঁদের সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন মা-বাবাকে। তাঁরা জানান, তাঁদের মা-বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসা, যত্ন আর স্বপ্ন দেখানোর জন্য তাঁরা এত দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। রংপুর মেডিকেলের ডেন্টালে ভর্তি হওয়া ইসরাত বলেন, ‘আমার মা-বাবা কখনোই আমাকে চান্স না পাওয়ার কারণে কিছু বলেননি, বরং আমি ভেঙে পড়লেও তাঁরা সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছেন এবং আমার থেকে তাঁরা বেশি আশাবাদী ছিলেন।’

নুসরাত ভর্তি পরীক্ষার সময় তাঁর বাবার সঙ্গে তাঁর স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘অনেক সময় গাড়িতে পর্যাপ্ত টিকিট বা সিট পেতাম না। আমাকে সিটে বসিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বাইরে থাকতেন বাবা। আমাদের জন্য তিনি অনেক কষ্ট করেছেন।’

নুসরাত আরও বলেন, ‘আমরা যখন মেডিকেলে চান্স পেলাম না, তখন মা-বাবাকে অনেকের নানা ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। অনেকে বলেছে, এত টাকাপয়সা আর শ্রম দিয়ে কী লাভ হয়েছে, মেয়েরা তো কোনো কিছু করতে পারল না।’

নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তাঁরা। ইসরাত জানান, ভবিষ্যতে তিনি ডেন্টাল সার্জন হতে চান। তিনি বলেন, ‘মহান সৃষ্টিকর্তা আমার সাদা অ্যাপ্রোনের স্বপ্ন পূরণ করেছেন এবং আমার এই স্বপ্নও তিনি পূরণ করবেন।’ এ ছাড়া সিএসইতে পড়া নুসরাত কাজ করতে চান সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে এবং অবদান রাখতে চান দেশের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত