Ajker Patrika

ক্যামেরার ফ্রেমে অসহায় চিত্র

সামিন ইয়াসার
ক্যামেরার ফ্রেমে অসহায় চিত্র

মাত্র এক বছর বয়সে মা-বাবাকে হারান আমানুর রহমান। শৈশব কেটেছে নানাবাড়িতে, কিন্তু সেই কোমল হৃদয়জুড়ে ছিল এক অস্বাভাবিক অন্তর্দহন। ছোটবেলা থেকে জীবনের বেদনা তাঁকে তাড়িত করত। আর সেই বেদনাই তাঁকে এগিয়ে দেয় মানবিকতার পথে, ফটোগ্রাফির পথে।

অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি যুক্ত হন ইউনিসেফ, বিদ্যানন্দ, বিডি ক্লিনসহ বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে। তিনি বলেন, ‘খুব ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারানোর কারণে মানুষের কষ্ট খুব কাছ থেকে বুঝতাম। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা শুরু করি।’

প্রথম ছবি, প্রথম আলোড়ন

২০১৫ সালের দিকে একদিন আমানুর দেখেন, রাস্তার পাশে দুটি শিশু প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। হাড়গোড় দেখা যায়। ভেতরে ঢুকে গেছে পেট। দৃশ্যটি তাঁর হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে সেই মুহূর্ত বন্দী করেন তিনি। পরে ছবিটির নাম দেন ‘দেশের পথে দেশের ভবিষ্যৎ’।

তরুণ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় ছবিটি প্রথম স্থান অর্জন করে এবং এক দর্শক সেটি ৫,০০০ টাকায় কিনে নেন। তখনই তিনি বুঝতে পারেন, ফটোগ্রাফি শুধু ছবি নয়, এটি এক জীবন্ত ভাষা, যা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত ছুঁয়ে যেতে পারে। এরপর সেই দুই শিশুকে খুঁজে বের করে সংগঠনের সহায়তায় তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেন আমানুর রহমান।

ক্যামেরার ফ্রেমে সমাজ

এর পর থেকে ফটোগ্রাফির মূল বিষয় হিসেবে আমানুর রহমান বেছে নেন রাস্তার ঘুমন্ত মানুষদের। অনাহারে, অবহেলায় পড়ে থাকা জীবনের নির্মম মুহূর্তগুলো তিনি তুলে আনেন ক্যামেরায়। ২০১৫ সালে শহীদ মিনারে ঝাড়ু দিতে থাকা এক মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের ছবি তোলেন। ‘পাগলের চিত্তে পরিচ্ছন্ন দেশের অঙ্গীকার’ ক্যাপশন দিয়ে ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন তিনি। ছবিটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়, ছড়িয়ে পড়ে সমাজে এক গভীর বার্তা।

গত এক দশকে তিনি এমন অসংখ্য ছবি তুলেছেন। অর্জন করেছেন ৬০টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সাওমি ফটো অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ (স্পেশাল মেনশন)’, ফটোজেনিক ফটোগ্রাফি কনটেস্ট ২০২৪ (গ্র্যান্ড জুরি উইনার)’, ‘কেপিআর ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশন ২০২৫ অ্যাওয়ার্ড’, ‘ফোনিক্স ন্যাশনাল প্ল্যানেট অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ (স্বর্ণপদক)’, ‘সানসগ্রাফি বর্ষসেরা আলোকচিত্র পুরস্কার ২০১৮’, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি আর্থ ক্লাব ইকো ফেস্ট ২০২৫ (উইনার ইন ফটোগ্রাফি সেগমেন্ট)।

WhatsApp-Image-2025-09-27-at-9.20

সংগ্রামের গল্প

এই অর্জনের পথ মোটেই সহজ ছিল না। পুরস্কারের অর্থ ও টিউশনি করে জমানো টাকা দিয়ে কেনা ‘ক্যানন ইউএস ২০০ডি মার্ক’ ক্যামেরাটি একদিন তাঁর মামা পাঁচতলা থেকে ফেলে দেন। মুহূর্তেই যেন ভেঙে যায় আমানুর রহমানের স্বপ্ন। তবু হাল ছাড়েননি। তিনি বিশ্বাস করেন, ফটোগ্রাফিতে দরকার মনের চোখ, দামি ক্যামেরা নয়। এর পর থেকে মোবাইল ফোন দিয়েই পথচলা শুরু করেন, এখনো তাই করছেন। আমানুর বলেন, ‘ফটোগ্রাফি করে যখন পুরস্কার বা অর্থ পাই, তখন সেই অর্থ অসহায় মানুষের জন্য দিই। মানুষের কষ্ট যদি ভাগ করে নিতে না পারি, তবে আমার আলোকচিত্র অর্থহীন।’

জীবনদর্শন

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করছেন আমানুর রহমান। হাবীবুল্লাহ্ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজে অনার্সের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন এবং পাশাপাশি একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। পড়াশোনা, শিক্ষকতা ও ফটোগ্রাফি —সবই চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে।

তরুণদের জন্য বার্তা

তরুণদের উদ্দেশে আমানুর রহমান বলেন, ‘ফটোগ্রাফি মানেই সংগ্রাম। বাধা আসবে, মানুষ অবহেলা করবে, কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ছবির মধ্যে থাকতে হবে একটি গল্প, যা মানুষের হৃদয়কে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গাপূজায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে বিএনপি নেতার বিতর্কিত মন্তব্য

হজের খরচ কমছে, সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৪ লাখ ৬৭ হাজার

গ্যালারিতে বসে দেখার দিন শেষ, আমরা এখন নিজে খেলব: প্রধান উপদেষ্টা

ভারত-পাকিস্তান ‘হাইভোল্টেজ’ ফাইনাল নিয়ে সুপার কম্পিউটার কী বলে

নেছারাবাদে ছেলের গলায় দাও ধরে গরু ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত