Ajker Patrika

জাবি শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

প্রতিনিধি, জাবি
জাবি শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শুরু করেন। পরে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। 

এ সময় তাঁরা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, আহতের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা। দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কার করা। স্মৃতিসৌধে চলমান অনৈতিক কাজ বন্ধ করা এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা। 

আহত শিক্ষার্থী নূর হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ৪৬ তম ব্যাচের ছাত্র। গতকাল সোমবার বিকেলে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সাতজন আনসার সদস্য নূর হোসেনকে অবরুদ্ধ করে নির্যাতন করেন।

মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের ৪৬ ব্যাচের ছাত্র ইমরান শাহারিয়ার বলেন, 'সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও মারধরের শিকার হতে হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আনসার সদস্যরা একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে গুরুতর আহত করার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাসায় বসে তামাশা দেখেছে। তাঁরা একবারের জন্যও আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে যায়নি। তাদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বিরুদ্ধে না গিয়ে ছাত্রবান্ধব হওয়া। অবিলম্বে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।' 

প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী এম জিল্লুর রহমান বলেন, 'নূর হোসেনকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পরেও নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।' 

এদিকে মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান। পরে তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ স্থগিত করেন। 

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘অবরোধের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি শুনেছি, দোষী আনসারদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আনসারদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জেনেছি। আহত শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

এ বিষয়ে আনসার ও ভিডিপি ঢাকা জেলা কমান্ড্যান্ট আফজাল হোসেন বলেন, 'আমরা এরই মধ্যে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করেছি। পাশাপাশি তাদের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাতে পরবর্তীতে অন্য কোথাও চাকরি না করতে পারে। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।' 

মারধরের ব্যাপারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে কর্তব্যরত গণপূর্ত বিভাগের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, 'ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত, আনসার সদস্যের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চারজন আনসার সদস্য তাঁকে মারধর করে। পরে আমি সেখানে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ আসে। সেখানে সাময়িক আলোচনার পর তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।' 

এ বিষয়ে নূর হোসেন বলেন, 'আমি বিকেলে আমার দুজন ভাগনেসহ স্মৃতিসৌধ ঘুরতে যাই। সেখানে অনেককেই টাকা ছাড়া প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না ডিউটিরত আনসার সদস্যরা। আমি এটার প্রতিবাদ করলে তার আমাকে রুমে নিয়ে আবদ্ধ করে। পরে অত্যন্ত নারকীয় কায়দায় সাত-আট জন আনসার সদস্য আমার ঠোঁট, গলা এবং তলপেটে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। এমনকি মাথাতেও মারাত্মক আঘাত করে। এ ছাড়া তাদের ব্যবহৃত লাঠি দিয়ে আমার পা থেঁতলে দিয়েছে।' 

আহত শিক্ষার্থী নূর হোসেন বর্তমানে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা আহত শিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্ণ আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।’ 

এদিকে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়ন। এক যৌথ বিবৃতিতে জাবি সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তুষার ধর ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, 'স্মৃতিসৌধে টাকার বিনিময়ে দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা নূর হোসেনকে মারধর করেছেন। প্রথমত তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এবং দুর্নীতিপরায়ণ, দ্বিতীয়ত তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে তাঁরা বেধড়ক পিটিয়েছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।' 

নেতারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কেবলই সার্টিফিকেট অর্জন করতে আসি না, নৈতিক শিক্ষার চর্চাও হয় এখানে। সেই নৈতিকতার জোরেই নূর হোসেন আনসার সদস্যদের দুর্নীতিপরায়ণতা ও অনিয়মের প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন করা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত