Ajker Patrika

জুডিশিয়াল পরীক্ষায় দেশসেরা রাবির ৩ ছাত্রী

রাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ৩২
জুডিশিয়াল পরীক্ষায় দেশসেরা রাবির ৩ ছাত্রী

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) ১৪তম সহকারী জজ পরীক্ষার ফলাফলে চমক দেখিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একই বর্ষের তিন ছাত্রী। যথাক্রমে তাঁরা প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন। মেধাবী এই তিন ছাত্রীর এমন সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করেছেন বিভাগের শিক্ষকেরা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে বিজেএসের ১৪তম ফল প্রকাশ করা হয়। সহকারী জজ পদে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ১০২ জনকে মনোনীত করে নিয়োগের সুপারিশ করে। ১০২ জনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন রাবির আইন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া নাসরিন শামা। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেন একই ব্যাচের জান্নাতুন নাঈম মিতু ও ইশরাত জাহান আশা। এই তিনজনই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত। 

জানা গেছে, ১০২ জনের মধ্যে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই ২৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। 

সহকারী জজ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করা সুমাইয়ার গ্রামের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে। তিনি বড়াইগ্রাম হাইস্কুল থেকে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক এবং রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ২০১৫-১৬ সেশনে রাবির আইন বিভাগে ভর্তি হন। 

জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হওয়া জান্নাতুন নাইম মিতুর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়ন-শুকা এলাকায়। মো. নাইমুল ইসলাম ও নাহিদা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে জান্নাতুন নাইম মিতু নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও পরবর্তীতে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। 
 
জাতীয় মেধায় চতুর্থ হওয়া ইশরাত জাহান আশার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটে। তিনি জয়পুরহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ২০১৫-১৬ সেশনে রাবির আইন বিভাগে ভর্তি হন। 

ঈর্ষণীয় এই ফলাফলের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করে সুমাইয়া বলেন, ‘আমার এই ফলাফলের জন্য আমার পরিবার ও বিভাগের শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সত্যি বলতে, আমি প্রথম হব এমনটা প্রত্যাশা ছিল না।’ 

পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় একাডেমিকে যা পড়ানো হয়, অধিকাংশই সেখান থেকে আসে। ফলে ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করায় প্রস্তুতি অনেকটাই কাভার হয়ে গিয়েছিল। সার্কুলার দেওয়ার পর কোর্সগুলো ফের ভালোভাবে পড়ি। এ ছাড়া বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান—এগুলো পড়েছি। সব মিলিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে হয়ে গেছে।’ 

প্রথমবার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জাতীয় মেধায় প্রথম হওয়া সুমাইয়া আরও বলেন, ‘আমার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। আমি বড় হয়ে এই হব বা ওই হব। আমি সব সময় সময়ের কাজটা সময়ে করার চেষ্টা করেছি।’ জুডিশিয়ারি দিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্লাসগুলো মনোযোগসহকারে করার পরামর্শ দেন তিনি।মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হওয়া একই ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম মিতু বলেন, ‘আমার পরিবার ও বিভাগের শিক্ষকেরা আমাকে অনেক বেশি হেল্প করেছেন।’

প্রথম বর্ষ থেকে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। একাডেমিক রেজাল্টও ভালো ছিল। বন্ধুরা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিত। আমি চেষ্টা করলে ডিপার্টমেন্টের মতো জুডিশিয়ারিতেও প্রথম হতে পারব এই বিশ্বাস ছিল। যা হোক, প্রথম হতে না পারলেও দ্বিতীয় হয়েছি। এছাড়া প্রথম ও চতুর্থ হওয়া দুজনই আমার বান্ধবী। সব মিলিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের সামনে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি।’ 

পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় মিতু। তিনি ছাত্রলীগের আইন বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন। মিতু জানান, ছোট থেকে তাঁর ইচ্ছা ছিল বিসিএস ক্যাডার হবেন। কিন্তু একদিন ক্লাসে তাঁর এক শিক্ষক একটি কেস পড়িয়েছিলেন। যার কাহিনিটা বেশ মর্মান্তিক ছিল। জাজমেন্ট ছিল চমৎকার। 

মিতু বলেন, ‘রায় শুনে আমার মনে হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার পরে একজন জজ ছাড়া এ ধরনের জাজমেন্ট কেউ দিতে পারে না। সেখান থেকে আমি জজ হওয়ার জন্য উৎসাহ পাই।’ 

প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফার্স্ট ইয়ার থেকে স্যাররা যা পড়াতেন সেগুলো খুঁটিনাটি পড়ার চেষ্টা করতাম। এ ছাড়া আলাদাভাবে প্রস্তুতি বলতে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান পড়েছি।’ 

চতুর্থ স্থান অর্জন করা ইশরাত জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও তাঁর জুডিশিয়ারি সম্পর্কে খুব একটা জানাশোনা ছিল না। কিছুদিন যাওয়ার পর যখন জানলেন বিভাগের ভাইয়া ও আপুরা জজ হচ্ছেন, তখন থেকে তিনিও স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। 

ইশরাত বলেন, ‘আমার টার্গেট ছিল প্রথমবারেই জজ হব। আমাদের ফোর্থ ইয়ারে কোর্সের সঙ্গে জুডিশিয়ারির বেশ মিল রয়েছে। আমি বেশ ভালোভাবেই পড়েছি। প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফল হয়েছে। এই সাফল্যের জন্য পরিবার ও বিভাগের অবদান সবচেয়ে বেশি।’ 

এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন ঈর্ষান্বিত ফলাফলে আনন্দিত বিভাগের শিক্ষকেরাও। আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, ‘এই দিনটি আইন বিভাগের জন্য অশেষ আনন্দ ও গর্বের। ১৪তম বিজেএস পরীক্ষায় আমাদের একই ব্যাচের তিন ছাত্রী যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। এই ফলাফল প্রমাণ করে রাবির আইন বিভাগই সেরা। আমাদের বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচ থেকে আরও অনেকেই সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদেরও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।’ 

দেশসেরা সম্পর্কে আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত