Ajker Patrika

কৃষির কোন অনুষদে কেন পড়বেন

মো. রিয়াজ হোসাইন
কৃষির কোন অনুষদে কেন পড়বেন

সম্প্রতি কৃষি গুচ্ছভুক্ত ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এখন মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভাবনায় পড়েছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন? কোন অনুষদ আমার জন্য উপযোগী? এই অনুষদে পড়লে আমি ভবিষ্যতে বিদেশে যেতে পারব কি না? এই বিষয়ে ক্যারিয়ার কেমন? এমন হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ভর্তি-ইচ্ছুকদের মনে।

বলা বাহুল্য, দেশে মাত্র ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিষয়ক উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কুকৃবি)। এ ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাধারণত মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পছন্দের অনুষদে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়। তাই অনুষদ পছন্দ করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:

ভেটেরিনারি অনুষদে কেন পড়ব: যদি সাদা অ্যাপ্রোন পরে প্রাণীদের সেবা করার প্রবল ইচ্ছা থাকে, তাহলে এই অনুষদ আপনার জন্য আদর্শ। এখানে পড়াশোনা করে আপনি পশুপাখিদের দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করে তাদের সেবা করার সুযোগ পাবেন—যা নিঃসন্দেহে মানবিক ও পুণ্যস্বরূপ একটি কাজ। এই অনুষদের ডিগ্রি শেষ করার পর আপনার নামের আগে ‘ডা.’ উপাধি যুক্ত হবে।

এই অনুষদে ৫ বছরমেয়াদি শিক্ষা গ্রহণের পর সরকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), ইন্টারন্যাশনাল ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (এলআরআই) প্রভৃতিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীতে রিমাউন্ট

ভেটেরিনারি অ্যান্ড ফার্ম কোর (আরভিএফসি), আড়ং, মিল্ক ভিটা, আলতাফ, কাজীফার্মস প্রভৃতিতে রয়েছে চাকরির সুবর্ণ সুযোগ।

কৃষি অনুষদে কেন পড়ব: বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। আপনার যদি ফসলের বেশি উৎপাদন, রোগপ্রতিরোধ প্রযুক্তি, উন্নত জৈব সার তৈরি বা জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে কাজ করার আগ্রহ থাকে, তাহলে এই অনুষদ হবে আপনার জন্য সঠিক পথ।

এই অনুষদ থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর আপনি হতে পারেন সরকারি কৃষি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রিরি), ব্র্যাক, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) প্রভৃতিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। সুযোগ রয়েছে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও ও উন্নয়ন সংস্থার কৃষি বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন অ্যাগ্রি ফার্ম, ফুড কোম্পানি, সিড কোম্পানিতে চাকরির।

মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে কেন পড়ব: বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নদী ও উপনদী। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে প্রধান ভূমিকা পালন করে মাছ। প্রাকৃতিকভাবে মাছ আহরণ ছাড়াও মাছ চাষে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। যদি আপনার তীব্র আগ্রহ থাকে নতুন জাতের মাছ উদ্ভাবন এবং প্রিয় মাছের জিনোম আবিষ্কারে—তাহলে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ হতে পারে আপনার জন্য সঠিক পথ।

এই অনুষদে চার বছরমেয়াদি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা দেওয়া হয়। পড়াশোনা শেষে আপনি হতে পারেন মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ব্র্যাক, রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস (আরডিআরএস),

বাঁচতে শেখা, আশা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

পশুপালন অনুষদে কেন পড়ব: বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হলো পশুপালন। অনেক সময় বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পশুপালন না করার কারণে লোকসান গুনতে হয়। এই অনুষদে পড়াশোনার মাধ্যমে জানতে পারবেন বিজ্ঞানসম্মতভাবে লালন-পালন, খামার পরিচালনা, পশুর প্রজনন, খাদ্য, কৌলীতত্ত্ব, পশুর রোগবালাই ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান। উন্নত নতুন সংকরণ প্রাণী উদ্ভাবনে অংশীদার হতে পারেন।

বর্তমানে এই অনুষদে সাড়ে চার বছরমেয়াদি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। শিক্ষাজীবন শেষে প্রাণী উন্নয়ন কর্মকর্তা, চিড়িয়াখানার কিউরেটর, মিল্ক ভিটা, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গো-প্রজননকেন্দ্র, বিপিএআরআই এবং সিলেট ছাগল প্রজননকেন্দ্র ইত্যাদিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন।

মো. রিয়াজ হোসাইন, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত