Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে
নাদিম মজিদ

বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন আইএটিএর ডেটা কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন রাহাত ইয়াসির। তাঁর প্রোগ্রামিংয়ে আসা, আইএটিএর নিয়োগপ্রক্রিয়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বাংলাদেশিদের সফল হওয়ার উপায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন রাহাত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ

প্রশ্ন: বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন হলো ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। এ প্রতিষ্ঠানে ডেটা কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস বিভাগের প্রধান হিসেবে আছেন। কী কী কাজ করছেন?
উত্তর: ১৯৪৫ সালে আইএটিএ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর প্রধান কার্যালয় কানাডার মনট্রিলে। এখানে আমার টিমকে বলা হয় গ্লোবাল এভিয়েশন ডেটা ম্যানেজমেন্ট। আমরা ফ্লাইটের সেফটি, সিকিউরিটি এবং অপারেশনের জন্য বিশ্বের তথ্য বিনিময় প্রোগ্রামগুলোকে হোস্ট করে থাকি। আমার প্রধান কাজ হলো বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্মের ডেটা কোয়ালিটি, ডেটা লাইনেজ এবং তাদের ফাংশনগুলো নিশ্চিত করা। আমি এভিয়েশন ডেটার অ্যাডভান্স অ্যানালাইটিকস দেখাশোনা করি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফ্লাইট অপারেশন, সেফটি এবং সিকিউরিটি-সংক্রান্ত বিভিন্ন কেস স্টাডি সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে থাকি।

প্রশ্ন: আইএটিএর নিয়োগপদ্ধতি সম্পর্কে বলুন।
উত্তর: একটি বৈশ্বিক অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে আইএটিএ আন্তর্জাতিক নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সব ধরনের খালি পদ লিংকডইনে দেওয়া হয়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ আবেদন করতে পারে। নিয়োগকারী ব্যবস্থাপকেরা সব সিভি সতর্কতার সঙ্গে রিভিউ করে থাকেন। তাঁরা ফোনকল, বাড়িতে করার জন্য একটি কাজ, টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ এবং ম্যানেজারিয়েল কলের মাধ্যমে তাঁদের সেরা আবেদনকারীকে নিয়োগ করে থাকেন।

প্রশ্ন: আপনি কীভাবে প্রোগ্রামিংয়ে এলেন?
উত্তর: আমি ২০১০ সালে প্রোগ্রামিং শুরু করি। তখন আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করছিলাম। আমি ভাবতাম, প্রোগ্রামিং শিখলে সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে বিশ্বের সমস্যাগুলো ম্যাজিকের মতো সমাধান করতে পারব। সে লক্ষ্যে প্রোগ্রামিংয়ে আসা।
 
প্রশ্ন: আপনি স্নাতক করার সময় সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। এ অভিজ্ঞতা আপনার ক্যারিয়ার গঠনে কীভাবে কাজে লেগেছে?
উত্তর: স্নাতক শুরুর সময় নিশ্চিত ছিলাম না যে আমার জন্য কোনটা ভালো? প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, নাকি সফটওয়্যার প্রকল্প প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ছোট ছোট বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা যায়, আর সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বজনীন যেকোনো সমস্যার সফটওয়্যারভিত্তিক সমাধান করা যায়। কিছুদিন ভাবার পর বুঝতে পারি, প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চেয়ে সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতা আমাকে বেশি টানে। আমি স্ক্র্যাচ (শূন্য) থেকে যেকোনো কিছু তৈরি এবং উন্নত করতে পছন্দ করতাম এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ব্যবহারকারীরা কী করছেন, সে পর্যন্ত যুক্ত থাকতে চাইতাম। ফলে আমি আমার স্নাতক পড়ার সময়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম এবং অনেক পুরস্কার জিতেছিলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন হলো ২০১২ সালে মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপের বাংলাদেশ রাউন্ডে রানারআপ হয়েছিলাম, একই বছরে প্যানাসনিক আইডিয়াস চেঞ্জ লাইভস প্রতিযোগিতায় সেরা আটটি আইডিয়ার একটি ছিল আমাদের আইডিয়া, ২০১৩ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত হওয়া নকিয়া ফিউচার ক্যাপচার হ্যাকাথনের ফাইনালিস্ট ছিলাম, ২০১৭ সালে কানাডা থেকে ইমার্জিং অ্যাগ্রিকালচার বেস্ট প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলাম এবং ২০১৬ সালে কানাডার উসাক রিসার্চ ফেস্টে দ্বিতীয় বেস্ট রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম।

২০১৮ সালে আমি কানাডার টপ সফটওয়্যার ডেভেলপার ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হই। আমার এসব অর্জনের মূল কারণ ছিল, আমি প্রথম দিক থেকে একটি সফটওয়্যারের সিস্টেম বোঝার চেষ্টা করতাম। আমি সব সময় যেকোনো সফটওয়্যারের ইউজার ইন্টারফেস থেকে ডেটাবেইস, সিস্টেম ডিজাইন থেকে ডেটা কম্পোন্যান্ট বোঝার চেষ্টা করতাম, যা আমাকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন: আপনি দশমবারের মতো মাইক্রোসফট মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্রফেশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। কোনো ব্যক্তির কী যোগ্যতা থাকলে মাইক্রোসফট এ পুরস্কার দিয়ে থাকে?
উত্তর: এ বছর দশমবারের মতো মাইক্রোসফট এমভিপি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। সাত বছর ধরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্যাটাগরিতে এমভিপি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। মাইক্রোসফট বিশ্বব্যাপী টপ টেকনোলজি প্রফেশনালদের মধ্যে তাদের জ্ঞান, কমিউনিটি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার ভিত্তিতে এ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। আমি বিগত কয়েক বছরে শতাধিক অফলাইন ও অনলাইন কনফারেন্সে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বক্তব্য দিয়েছি। বিনা মূল্যে ব্লগ লিখি, ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করি, ই-বুক রিলিজ দিই এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে মেন্টরিং করে থাকি। এসব কার্যক্রমের কারণে মাইক্রোসফট আমাকে এই অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে।

প্রশ্ন: আমাদের জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা নিয়ে বলুন।
উত্তর: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে। এখন আর এটি হাইপের মধ্যে নেই। স্মার্টফোনের মাধ্যমে রাইডশেয়ারিংয়ে রাইড অর্ডার দেওয়া, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, খবর, ওয়েব, মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবস্থার ব্যবহার রয়েছে। আমরা বর্তমানে দুই ধরনের এআই দেখতে পাই—প্রথাগত মেশিন লার্নিং এবং জিপিটিভিত্তিক লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল।

আমি বিশ্বাস করি, অদূর ভবিষ্যতে জিপিটিভিত্তিক আইওটি ডিভাইস এবং রোবোটিক সিস্টেমের ট্রেন্ড বৃদ্ধি পাবে। এলএলএম মডেলের সাহায্যে হার্ডওয়্যার ব্যবস্থা আরও স্মার্ট হবে। হার্ডওয়্যার মানুষের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করবে, মানুষের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে এবং আরও ভালো কমান্ড দিতে পারবে। আশা করছি, আমাদের জীবদ্দশায় এ পরিবর্তন দেখে যেতে পারব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী হতে পারবে?
উত্তর: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সামনে অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিশাল এবং এখানে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল ট্রেন্ডস থেকে শিখতে পারবে এবং স্থানীয় মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তারা স্থানীয় মার্কেট থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে পারবে এবং এআই ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইন টুলস ও প্ল্যাটফর্ম থেকে শিখতে পারবে এবং অনলাইন কোর্স করতে পারবে। আমি শিক্ষার্থীদের সব সময় উৎসাহ দেব, তারা যেন এআই ল্যাব ব্যবহার করে এবং বাস্তব সমস্যার সমাধান এআই দিয়ে করে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিক্ষার্থীদের বিজয় দিবসের ভাবনা

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
শিক্ষার্থীদের বিজয় দিবসের ভাবনা

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। দিনটি শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি প্রতিফলিত করে একতার শক্তি, ন্যায্যতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য মনোভাব। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে জীবন বাজি রেখেছিলেন। বিজয় দিবস স্মরণ করিয়ে দেয়—ঐক্য, সাহস ও ন্যায্যতা কখনো হারায় না। ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাঁদের মতামত ও ভাবনার কথা।

জোলেখা আক্তার জিনিয়া।
জোলেখা আক্তার জিনিয়া।

বিজয় শুধু স্মৃতিতে নয়, চাই বাস্তব রূপ

জোলেখা আক্তার জিনিয়া

শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ।

মহান বিজয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশিরা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। কিন্তু ৫৪ বছর পরও দেশের অগ্রযাত্রায় বহিরাগত চাপ, দুর্নীতি, বৈষম্য ও দমন-পীড়ন বড় বাধা। আজকের তরুণেরা বিজয়কে শুধু স্মৃতিতে নয়, চায় বাস্তব রূপ দিতে। তাদের প্রত্যাশা স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক, আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ। চায় বাক্‌স্বাধীনতা, সমান অধিকার আর গুম-খুনহীন বাংলাদেশ। বিজয় মানে যুক্তি, মূল্যবোধ, সুশাসন, মানসম্মত শিক্ষা ও সমান সুযোগ। দেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে সবাই বিজয়ের চেতনাকে সাহস ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে বহন করলে। ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই।

তানজিল কাজী।
তানজিল কাজী।

শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ে তুলব

তানজিল কাজী

শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির সাহস, একতা আর অদম্য প্রেরণার প্রতীক। ১৯৭১ সালে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও শিক্ষকেরা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। তাঁদের অদম্য সাহস ও দেশপ্রেম আধুনিক অস্ত্রকেও পরাজিত করেছিল। বিজয় শুধু আনন্দের নয়, দায়িত্বেরও। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিকতায় সমৃদ্ধ সমাজ গড়া। নেতৃত্ব, যোগাযোগ ও সমালোচনামূলক চিন্তা হোক জাতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি। আজ আমরা শহীদদের স্মরণ করি, মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতজ্ঞতা জানাই এবং শপথ করি—দেশকে ভালোবাসব, সত্যের পথে অবিচল থাকব, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

সাজিয়া রহমান ঈশি।
সাজিয়া রহমান ঈশি।

ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারিনি

সাজিয়া রহমান ঈশি

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিজয়ের আগেই পাকিস্তানি বাহিনী জানত, এই জাতিকে কোনোভাবেই দমানো যাবে না। তারা চেষ্টা করেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে নেতৃত্বহীন বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র প্রমাণ করল, বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ন্যায়ের সাহসে দাঁড়িয়েছে। ৫৪ বছর পরও আমরা স্বপ্নের ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাঝে এখনো লেগে আছে বৈষম্য, অন্যায় ও সুযোগের অসম বণ্টন। তবু আশা আছে—যদি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি, ন্যায়কে প্রতিদিনের অভ্যাস করি, তাহলে একদিন আমরা গড়ে তুলতে পারব আমাদের স্বপ্নের, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।

এস এম রেদোয়ানুল হাসান রায়হান।
এস এম রেদোয়ানুল হাসান রায়হান।

এবারের বিজয়ের মাস যেন এক নতুন আলোয় ভাসছে

এস এম রেদোয়ানুল হাসান রায়হান

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস আমরা এত দিন ইতিহাসের পাতায় পাতায় দেখেছি, এবার সেটি বাস্তবের রঙে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। দমবন্ধ অন্ধকার ভেদ করে যে মুক্তির হাওয়া বইছে চারদিকে; মনে হচ্ছে, জাতি আবার নতুন করে শ্বাস নিতে শিখছে। ব্যক্তিগত অনুভূতিতে এ যেন এক গভীর স্বস্তি—ভয় আর হুমকির দিন শেষ হয়ে যাওয়া আর সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর শক্তি ফিরে পাওয়া। বিজয়ের লাল-সবুজ এবার শুধু স্মৃতির প্রতীক নয়, আমাদের আশার অঙ্গীকার।

সামিহা সিরাজী লাজ।
সামিহা সিরাজী লাজ।

বিজয় কি আজও পরম আরাধ্য, নাকি অপ্রাপ্তির শিকল

সামিহা সিরাজী লাজ

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাঙালির অস্তিত্ব, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়ানো ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় আজও বহু অপ্রাপ্তির সঙ্গী। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, আইনশৃঙ্খলা ও নীতির অভাব নাগরিকদের পরম স্বাধীনতার আনন্দে বাধা। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা, রাজনৈতিক দলগুলোর অদূরদর্শিতা দেশের অগ্রগতিকে সীমিত করেছে। তবু নতুন প্রজন্ম ও ছাত্র-জনতা নতুন রাজনৈতিক উপাখ্যানের সূচনা করছে। সমাজের অবহেলার মাঝে বিজয় দিবস মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা অর্জন শুধুই ইতিহাস নয়, প্রাপ্তির আনন্দে প্রত্যেক মানুষের প্রাণে রাঙানো এক চলমান সংগ্রাম।

মো. আবুজার গিফারী।
মো. আবুজার গিফারী।

নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও দায়িত্বের প্রতীক

মো. আবুজার গিফারী

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

আর এক দিন পর মহান মুক্তিযুদ্ধ ৫৫ বছরে পা দেবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ পথচলায় আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা অর্জন করেছি। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, আমাদের আকাঙ্ক্ষার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি? নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান রাজনৈতিক নেতৃত্বে সংঘটিত হলেও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার বিস্ময়কর জাগরণের ফল। ছাত্রসমাজের এই ভূমিকা দেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ মুখ্য হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ ও সংসদীয় নেতৃত্বে তরুণেরা এগিয়ে আসবে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মহান বিজয় দিবস শুধু উদ্‌যাপন নয়, এটি নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও দায়িত্বের প্রতীক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ রাতে পড়াশোনা

আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) 
রাবিউল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাবিউল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুম ভাঙে রাবিউল ইসলামের। ঘরের কোণে টেবিলে রাখা বই-খাতার দিকে চোখ পড়ে। ইচ্ছে হয় পড়তে বসতে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন হাত তাঁকে টেনে নেয় বাইরে, রাজমিস্ত্রির কাজে। সংসারের দায় আর অর্থকষ্টের চাপে দিনে বই পড়ার সময় পান না রাবিউল। সকাল ৬টায় কনকনে ঠান্ডায় উঠে তাঁকে যেতে হয় কাজে। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে ইট, বালু ও সিমেন্ট নিয়ে শুরু হয় তাঁর জীবনসংগ্রাম। দিনের শেষে ক্লান্ত হাতে ধরতে হয় কলম ও খাতা। এই সংগ্রামের মধ্যেই দেখতে হয় জীবনের স্বপ্ন।

মাত্র ১৯ বছর বয়সী রাবিউল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার সোহাগপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সাহিদুল ইসলামের ছেলে। তিন মাস বয়সে বাবাকে হারান। মা রাবেয়া বেগম একাকী সংসার চালানোর তাগিদে অন্যের ঘরবাড়িতে কাজ করে পরিবারকে টানতে থাকেন। পঞ্চম শ্রেণির পর থেকে সংসারের দায় রাবিউলের কাঁধে এসে পড়ে। এরপর তিনি রাজমিস্ত্রি, টাইলসের মিস্ত্রি ও রংমিস্ত্রির কাজ করতে করতে বড় হয়েছেন।

রাবিউল দিনের বেলা দেয়াল, ইট, সিমেন্ট দিয়ে ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ান, আবার রাতে পড়তে বসেন। পরিবারের তিন প্রজন্মের জীবন কেটে যাচ্ছে টিনের চালা ও ঝুপড়ি ঘরে, যেখানে বর্ষায় ঘরের ভেতরে পানি পড়ে, শীতে ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে ফাঁকফোকর দিয়ে। তবু রাবিউল ও তাঁর পরিবার আশ্রয় খুঁজে নেন ভাঙাচোরা এই ঘরে।

কষ্টের মাঝেও তিনি স্বপ্ন দেখেন। ২০২৪ সালে পাটগ্রাম বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চলতি বছর অনার্সে ভর্তি হওয়ার আশায় পুরোনো বই জোগাড় করেছেন। তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে এখনো ভর্তি হতে পারিনি। আমার স্বপ্ন—একদিন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাব।’

মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই ২০ বছর। অনেক কষ্টে সন্তানকে বড় করেছি। ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। টাকার অভাবে ঘরও ঠিক করতে পারছি না।’ প্রতিবেশী আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘রাবিউল ছোটবেলা থেকে মিস্ত্রির কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে। তারা খুব অসহায়, থাকার জায়গা নেই।’

রাবিউল বলেন, ‘ইট, সিমেন্ট আর রং করার সময়ও আমি আলোর স্বপ্ন দেখি। ইচ্ছা—একদিন প্রতিষ্ঠিত হয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটানো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশ দল

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

১৭ থেকে ২১ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে (আইআরও) বাংলাদেশ দল অংশ নিচ্ছে। ১০ সদস্যের এই দল ১৪ ডিসেম্বর দেশ থেকে রওনা হবে। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তর এই দলের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের আয়োজনে এ বছর ২৯ থেকে ৩০ আগস্ট অনলাইন বাছাই পর্ব ও ১২ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পর্বে ক্রিয়েটিভ মুভি, ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি এবং ফিজিক্যাল কম্পিউটিং ক্যাটাগরির বিজয়ীদের আন্তর্জাতিক দল নির্বাচনী ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা, পারফরম্যান্স এবং নানা মানদণ্ডে বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের জন্য দল নির্বাচন করা হয়।

বাংলাদেশ দলের সদস্যরা হলেন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জুবাইদাহ জাফরিন ও নাফিয়া বাসার সুহানী; ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জারিফ বিন সালেক, খোন্দকার মুশফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ মাশরুর আরেফিন ভূঞা; ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসাইবা তাজরিন তানিশা; উইলিয়াম কেরি একাডেমির শিক্ষার্থী জাইমা যাহিন ওয়ারা; স্কলাসটিকা স্কুলের শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী দাস; আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিদোয়ান রাব্বানী; আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল টিটু।

দলের সঙ্গে কোচ থাকবেন মিশাল ইসলাম, সহকারী কোচ এম তানজিম আল ইসলাম দিবস এবং দলনেতা হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সভাপতি এ এ মুনির হাসান। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অংশ নেবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। গত সাত বছরে বাংলাদেশ দল আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ১৪টি গোল্ড মেডেলসহ মোট ৮৩টি পদক অর্জন করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে আইইইই এসটিআই ৫.০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে আইইইই এসটিআই ৫.০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন

গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (জিইউবি) স্থায়ী ক্যাম্পাসে দুদিনব্যাপী সপ্তম আইইইই এসটিআই—সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি (এসটিআই-২০২৫) ৫.০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. এম সাইদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আইইইই বাংলাদেশ সেকশন চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ এবং আইইইই কম্পিউটার সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ার অধ্যাপক ড. কে এম আজহারুল হাসান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্মেলনের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আজাদ।

এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘এআই যুগে প্রযুক্তিগত বিপ্লব এবং কর্মহীনতার আশঙ্কা’। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এম সাইদুর রহমান বলেন, ‘এসটিআই-২০২৫ সম্মেলন আমাদের দেখিয়েছে, প্রযুক্তি ও পরিবেশ একসঙ্গে এগোলে টেকসই শিল্পায়ন সম্ভব। এখানে উপস্থাপিত গবেষণাগুলো আগামী দিনের শিল্প খাতে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে।’

গ্রিন ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম শিহাব উদ্দিন জানান, এবারের সম্মেলনে সাতটি কি-নোট সেশন, তিনটি ওয়ার্কশপ, একটি প্যানেল আলোচনা এবং ২৪টি টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মোট ৪৩৪টি গবেষণা প্রবন্ধ জমা পড়ে। এগুলোর মধ্যে ১১৮টি প্রবন্ধ উপস্থাপনার জন্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত সেরা গবেষণা প্রবন্ধগুলো আইইইই এক্সপ্লোর ও স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত