Ajker Patrika

দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন যা যা করলেন ঢাবি উপাচার্য

ঢাবি প্রতিনিধি
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন যা যা করলেন ঢাবি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩–এর আর্টিকেল ১১ (২) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানকে উপাচার্য হিসেবে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) নিয়োগ দেওয়া হয়। 

নিয়োগ লাভের পর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষক ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

যোগদানের পরপরই ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সচিবালয়ে আনসার–শিক্ষার্থী সংঘর্ষের সময় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে দেখতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান উপাচার্য। 

যোগদানের পর এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ তম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার প্রাক্কালে আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। হাজারো ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের শুভ সূচনা হলো তার ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী আদর্শ ও মূল্যবোধ মাথায় রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করি এবং আমাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি। 

অধ্যাপক নিয়াজ বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) উপ–উপাচার্য ছিলেন এবং সর্বশেষ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ১০ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকা উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ৪ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ নিয়েছিলেন তিনি।

যোগদানের পর উপাচার্যের লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে করেন ড. নিয়াজ। আলাপকালে তিনি বলেন, বিগত সরকারের অপশাসনের কারণে মানুষের মধ্যে একধরনের ক্ষোভ কাজ করছে। তবে দাবির অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ হলে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আছে। তবে দাবির অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ হলে কাজ করা যাবে না। একটা বড় সময় অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হলে আমার কার্যকর সময় কমে যাবে। আমাদের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সবার সম্পর্ককে একটা মোটামুটি সহনশীল পর্যায়ে সম্পর্কগুলো এনে কাজ চালু করতে হবে।

একাডেমিক কার্যক্রম কবে নাগাদ চালু হবে জানতে চাইলে নবনিযুক্ত উপাচার্য বলেন, আমরা একটু পরিস্থিতি দেখি। উঠে–পড়ে চেষ্টা করতে থাকব। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অপশাসনের কারণে আমাদের সমাজ–জাতি চূড়ান্তভাবে বিভাজিত হয়ে গেছে। এখান থেকে একত্রিত হওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু কঠিন। যেসব ফৌজদারি অপরাধ সেগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হবে। তবে যতটুকু পারা যায়, আমরা সহনশীলতার মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব।

গবেষণায় গুরুত্বের বিষয়ে ড. নিয়াজ বলেন, গবেষণার উদ্যোগ বাড়ানো দরকার। এ ক্ষেত্রে আগের প্রশাসন কিছু ভালো কাজ করেছে। এই ধারাবাহিকতা আমরা যেন বাড়াতে পারি। ইন্ডাস্ট্রি এবং প্র্যাকটিসিং জগতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরি জরুরি। এটা বাড়াতে হবে। 

নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, আমি কখনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিইনি। দলকেন্দ্রিক রাজনীতিতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। এটি আমার জায়গা না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে ড. নিয়াজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আমাদের সমাজের এবং রাষ্ট্রের বৃহত্তর সিদ্ধান্তের একটি প্রভাব থাকবে। তবে মূল যে আদর্শ, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’–এর মধ্যেই তা রয়েছে: মানবিক দুর্বলতা বাদ দিয়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করা। বড় মাপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সময় লাগবে। তা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সমাজের একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজ কী চাচ্ছে, তাও বড় বিষয়।’ 

কখনো রাজনীতি করেছেন কিনা, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. নিয়াজ বলেন, আমি কখনো রাজনীতি করিনি। বুড়ো বয়সে রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে চাই না। 

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নতুন উপাচার্য আরও বলেন, আমি খামখেয়ালি বা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। এ ধরনের পরিসরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব না। কিন্তু যুক্তির ভিত্তিতে আমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় লুকোচুরি করব না। চেষ্টা করতে থাকব। যখন মনে হবে চেষ্টার ফলেও আমি তেমন কিছু করতে পারছি না, তখন আমি বিদায় নেব। আমি (চেয়ারে থাকার) কোনো লম্বা-চওড়া পরিকল্পনা নিয়ে আসিনি।

তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আসছে। ট্রমা মোকাবিলা করে পড়াশোনায় থিতু হওয়া এখন কাজ। এই প্রক্রিয়ায় সবার সহযোগিতা দরকার। 

হল খোলা এবং পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য ড. নিয়াজ বলেন, হলের বিষয়ে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বড় পরামর্শদাতা। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তবে ‘নিখুঁত’ বলে কিছু নেই। মোটামুটি গ্রহণযোগ্য কাউকে দিয়ে আমি কাজ শুরু করতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত