Ajker Patrika

এইচএসসি পরীক্ষার ফল: মূল্যায়নে কড়াকড়ি ছাড়াও নানা সমস্যায় খারাপ ফল

  • এইচএসসিতে দুই দশকে সবচেয়ে খারাপ ফল
  • ৫ লাখ ফেল, কমেছে জিপিএ-৫
  • পাসে শীর্ষে মাদ্রাসা, নিচে কুমিল্লা বোর্ড
  • তারপরও সাফল্যে এগিয়ে মেয়েরা
রাহুল শর্মা, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১১
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

এবারের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ১১টি বোর্ড মিলিয়ে ২০০৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। তখন থেকে এইচএসসিতে পাসের হার আর কখনো ৫৯ শতাংশের নিচে নামেনি। এর আগে অবশ্য ২০০৪ সালে ফল আরও খারাপ হয়। তখন পাসের হার ছিল মাত্র ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। এবারের গড় পাসের হার গত বছরের চেয়ে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এবারের পাসের হার এত নিচু হওয়ার কারণ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

ফল ও সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত তিনটি কারণে এবার পাসের হার এবং জিপিএ-৫ কমেছে। প্রথমত, এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে কলেজে ক্লাস কম পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান ও আইসিটিতে পাসের হার ছিল তুলনামূলক কম। তৃতীয়ত, উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘কড়াকড়ি’; যাকে কেউ কেউ বলছেন ‘যথাযথ মূল্যায়ন’। এ ছাড়া শিক্ষকসংকটসহ নানা সমস্যা গ্রামাঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ফলের এই অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই ফলকে বাস্তবতার প্রতিফলন বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার সময় দেখি, যে পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মাত্রার দক্ষতা থাকা উচিত, তা নেই। এর কারণ হলো, শিক্ষায় নানা সংকট রয়েছে। যেমন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের যে ধরনের একাডেমিক যোগ্যতা থাকার কথা, তা নেই। মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসছেন না। শিক্ষা নিয়ে সরকারের নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’

এবারের ফল শিক্ষার প্রকৃত চিত্র বলে মনে করেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারও। গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি, যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল; পাসের হারই যেন সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ-৫-এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড। ফল “ভালো” দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শিক্ষার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।’

ফল ধসের কয়েকটি কারণ

২০০৫ সালের এইচএসসির মাত্র ৫৯ দশমিক ০৭ শতাংশ গড় হারের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই পাসের হার বেড়েছে। কখনো সামান্য কমবেশি হয়েছে। কিন্তু এবার এসেছে বড় ধাক্কা। গড় পাস এবার গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বিপুলভাবে কমেছে। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১।

ফল খারাপের পেছনের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা বরাবরই খারাপ করে। হিসাববিজ্ঞানও কঠিন বিষয়। এসব বিষয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো শিক্ষক নেই। শিক্ষকের অভাবসহ কিছু কারণ রয়েছে। আমরা এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’

একই সুরে কথা বলেছেন সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে খারাপ ফলের প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে। এ ছাড়া দুর্গম হাওরাঞ্চল ও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞান, আইসিটি বিষয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে ভালো করতে পারেনি। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিতিশীল সময়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না হওয়া ফল খারাপের অন্যতম কারণ।’

মানবিক ও বাণিজ্যে ধরাশায়ী শিক্ষার্থীরা

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মতো এবারও তুলনামূলক ভালো করেছে। তার তুলনায় মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ফল এবার বেশ খারাপ হয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগে এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেখানে বাণিজ্য বিভাগে পাসের হার মাত্র ৫৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ আর মানবিকে মাত্র ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ইংরেজিতেই বেশি খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা।

৫ লাখ ফেল, কমেছে জিপিএ-৫

এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেল করেছে ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলের সংখ্যা বেশি। তথ্য বলছে, মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ১১ হাজার ৪৪৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। আর মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন। সব মিলিয়ে এবার ফেল করেছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন।

এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৯ হাজার ৯৭ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী।

এবারও এগিয়ে মেয়েরা

সার্বিক ফল অনুযায়ী এবারও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। এবার মেয়েদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ছেলেদের ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও এগিয়ে মেয়েরা। জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৬৯ হাজার ৯৭ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন।

২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই ফেল

চলতি বছর দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৫। আর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার মোট ৩৪৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮৮টি।

পাসে শীর্ষে মাদ্রাসা, নিচে কুমিল্লা বোর্ড

৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডে, ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

ফলের তথ্য বলছে, ঢাকা বোর্ডে ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ পাস করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবসর ভাতায় অনিয়ম, ক্ষতি ১২৫০ কোটি

রাহুল শর্মা, ঢাকা 
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
অবসর ভাতায় অনিয়ম, ক্ষতি ১২৫০ কোটি
ছবি: সংগৃহীত

অবসর ভাতার আবেদন করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই ইনডেক্স (পরিচয় শনাক্তকারী নম্বর) থাকতে হবে। এই শর্ত ঠিক রেখেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ইনডেক্সধারীদের অবসর ভাতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আবেদন না করেও অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অর্থ ব্যয় এবং পরিচালনায় এমন অনেক অনিয়ম ও অসংগতি পেয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর।

শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অনিয়মে প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আইন লঙ্ঘন করে বেসরকারি ব্যাংকে রাখা আমানত ফেরত না পাওয়ায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি ৬৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (নিরীক্ষা ও আইন অনুবিভাগ) জহিরুল ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি এখনো হাতে পাননি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অবসর সুবিধা দেওয়া শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে। এই দুই সুবিধা বাবদ শিক্ষকেরা চাকরিকাল অনুযায়ী এককালীন অর্থ পান। সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ৫ লাখের বেশি।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭৭৫টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর মধ্যে স্কুলপর্যায়ের ২৭ হাজার ৮৬২টি, কলেজের ১৭ হাজার ২৭৮টি, মাদ্রাসার ১২ হাজার ৯৬৮টি এবং কারিগরির শিক্ষকদের ৬ হাজার ৬৬৭টি।

আইন অনুযায়ী, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) থেকে চাঁদা হিসেবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়। এর মধ্যে অবসর সুবিধা বোর্ড ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্ট ৪ শতাংশ পায়। এর বাইরে বিশেষ বা থোক বরাদ্দ এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেওয়া সিড মানি বা গচ্ছিত অর্থের লভ্যাংশ পায় সংস্থা দুটি।

শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১৮ জন ভুয়া ইনডেক্সধারীকে বোর্ড তহবিল থেকে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬৭ টাকা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা পরিশোধের আগে ইনডেক্স যাচাই আবশ্যক। অথচ ইনডেক্স যাচাই না করে ভুয়া ইনডেক্সের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এসব অর্থ আদায় করে বোর্ডের তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা দল।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর ভাতা প্রাপ্তির আবেদন না করলেও এবং বোর্ড থেকে ব্যাংকে কোনো অ্যাডভাইস না পাঠালেও তাঁদের অনুকূলে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৭ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ইনডেক্সধারীকে একাধিকবার অবসর সুবিধা দেওয়ায় বোর্ডের ১ কোটি চার লাখ ৭২ হাজার ৮৬১ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাল আবেদনপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন হিসাবে ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮ টাকা এবং ভুয়া ইনডেক্স নম্বর ব্যবহার করে সফটওয়্যার ভেন্ডরের মাধ্যমে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৭৭৫ টাকা পরিশোধের তথ্যও উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোর্ডের আইন লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে না রেখে বেসরকারি ব্যাংকে রাখা আমানতের টাকা ফেরত না পাওয়ায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি ৬৩৯ কোটি ৬০ লাখ ৬১ হাজার ৭২৫ টাকা। এসব টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা করা আবশ্যক বলে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য আদায় করা ২৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৪০ টাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তহবিল থেকে অবসর সুবিধা বোর্ডের তহবিলে জমা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপিওর চেক নগদায়নপূর্বক নির্ধারিত সময়ে ৫২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৩ টাকা জমা হয়নি। স্থায়ী তহবিলের প্রাপ্ত সুদ চলতি তহবিলে জমা না দেওয়ায় ৫৬ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৫২৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া তহবিল যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় ৯১ লাখ ৩৫ হাজার, যথাযথ নিয়মে হিসাবভুক্ত না করায় ২৯ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ১৫৭ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

পরামর্শক বাবদ বিল পরিশোধ করায় অনিয়মিত ব্যয় ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৪৮০ টাকা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাপ্যতা না থাকলেও সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮০ টাকা পারিতোষিক দেওয়া হয়েছে। আবার অতিরিক্ত অবসর সুবিধা পরিশোধ করায় ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৪ টাকা, ভ্যাট না কাটায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫৩ টাকা, চেকের ব্যবহার না থাকলেও এ খাতে ব্যয় দেখিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৫ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এসব ব্যয়কে প্রতিবেদনে আর্থিক ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে এসব অর্থ আদায় করে বোর্ড তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে উৎসে কর না কাটায় ১ লাখ ৬ হাজার ১১ টাকা, ক্রয় সিলিং না মেনে ২৬ লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়, বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা না মেনে ১ কোটি ৮ লাখ ২৮ হাজার ৭০৭ টাকা ব্যয় এবং আর্থিক ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৪১ টাকা ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অবসর সুবিধা বোর্ডের তহবিল ব্যবস্থাপনা ও সম্পাদিত কার্যাবলির প্রতিবেদন প্রণয়ন না করা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন বোর্ডের আইন ও প্রবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বোর্ড কর্তৃক ক্যাশবই ও স্টক রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়নি। তহবিল প্রাপ্তি নিশ্চিত না করে অধিক হারে পরিশোধের অঙ্গীকার করার অবসর সুবিধা বোর্ডের দায় উত্তরোত্তর বাড়ছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আপত্তিগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরীক্ষার আপত্তিগুলোর জবাব দেওয়া হয়েছে। সে আলোকে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনের পর রমজান, আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা কবে?

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।  ছবি: আজকের পত্রিকা
এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী বছরের (২০২৬) মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণভোট ও পবিত্র রমজান মাস বিবেচনায় নিয়ে আগামী এপ্রিল বা মে মাসে এই পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া গেছে। এর আগে একসময় ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা শুরুর রেওয়াজ থাকলেও করোনা মহামারি ও পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপঞ্জিতে পরিবর্তন আসে।

২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষাকে আবারও ফেব্রুয়ারিতে ফিরিয়ে আনা হয়। সে বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এরপর ২০২৪ সালের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর রমজানের কারণে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি শুরু করতে পারেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরে ঈদুল ফিতরের পর ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা।

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে। তবে অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের প্রশ্নে এ পরীক্ষায় বসতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির আজ বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি, যাতে সরকার যেকোনো সময় বললে পরীক্ষা নিতে পারি। পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু চিন্তাভাবনা, কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিলে আমরা পরীক্ষা নেব।’

এহসানুল কবির আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এর মধ্যে কীভাবে পরীক্ষা হবে। এরপর রমজান। এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা কোন সময় আয়োজিত হবে, সে সিদ্ধান্ত সরকারের। তাই পরীক্ষা কবে শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না।’

এ বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও আন্তশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘গত বছর এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এপ্রিলে। এবার এপ্রিলেও শুরু হতে পারে, মে মাসেও শুরু হতে পারে। আবার এপ্রিল-মে মাসে ঘূর্ণিঝড়-বন্যার একটা বিষয় আছে। এসএসসি পরীক্ষা কবে হবে, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা প্রস্তুতি রাখছি, সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে পরীক্ষার আনুষ্ঠিকতা শুরু হবে।’

গত বছর ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় পরীক্ষা এবং ১৫ থেকে ২২ মে ব্যবহারিক পরীক্ষা আয়োজনের পরিল্পনা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ১৪ ও ১৫ মের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। পরে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হয় ২৮ মে। আর ২৯ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। এরপর ২৬ জুন থেকে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা।

এদিকে, ৩১ ডিসেম্বর থেকে এসএসসির ফরম পূরণ শুরু হবে। বিলম্ব ফি ছাড়া ফরম পূরণ চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফি জমা দেওয়া যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরীক্ষার্থীপ্রতি ১০০ টাকা হারে বিলম্ব ফিসহ অনলাইনে ফরম পূরণ করা যাবে ২০২৬ সালের ১২ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিলম্বসহ অনলাইনে ফি জমা দেওয়া যাবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৫ টাকা। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বিষয়সহ ফরম পূরণে এ ফি দিতে হবে। আর ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বিষয়সহ ফরম পূরণের ফি ২ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন

ক্যাম্পাস ডেস্ক 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৮
শহীদ শরিফ ওসমান হাদীর হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা: ছবি সংগৃহীত
শহীদ শরিফ ওসমান হাদীর হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা: ছবি সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে গতকাল দুপুর ১২টায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির প্রোক্টর অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক শিহাব উদ্দিন, সহকারী প্রোক্টর মনিরুল ইসলামসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে বক্তারা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তাঁরা বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ন্যায়বিচার, ইনসাফ ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই আদর্শ ধারণ করেই শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যেতে হবে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে একটি সুন্দর, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তাঁরা দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। কর্মসূচি শেষে উপস্থিত সবাই শহীদ শরিফ ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তিন দিনে ৫ পরীক্ষা বিপাকে শিক্ষার্থীরা

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের স্থগিত ভর্তি পরীক্ষা ২৭ ডিসেম্বর
  • একই দিন এমআইএসটির ‘এ’ ও ‘বি’ ইউনিটেরও পরীক্ষা আছে
  • ২৬ ডিসেম্বর হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষা
  • অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভর্তি পরীক্ষা ২৬ ডিসেম্বর
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

তিন দিনের ব্যবধানে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, একই সময়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পড়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে একটি বা একাধিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান ইউনিটের স্থগিত ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায়। একই দিনে সকালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভর্তি পরীক্ষা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলেছে, ২৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এটি বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা না হলেও একই দিনে এমআইএসটির ‘এ’ ও ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা থাকায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সকালে এমআইএসটির পরীক্ষা দিয়ে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেকের পক্ষেই কঠিন হবে। এই দিনে এমআইএসটির আর্কিটেকচার বিভাগের বিকেলের শিফটে যাঁদের পরীক্ষা রয়েছে, তাঁদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

এর আগের দিন ২৬ ডিসেম্বর হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান এবং লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা। এই দিনে বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগেও ভর্তি পরীক্ষা হবে। উভয় পরীক্ষাই বিজ্ঞান বিভাগের হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পরপর দুই দিনে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া ২৮ ডিসেম্বর হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-জেইউ ভর্তি পরীক্ষা। এতে বিজ্ঞান বিভাগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, টানা তিন দিন পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা তাঁদের ওপর বাড়তি মানসিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি করবে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার্থী মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ‘একই দিনে একাধিক ভর্তি পরীক্ষা কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার তারিখ আগে থেকে নির্ধারিত ছিল, তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানাচ্ছি।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হক বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে আমাদের তেমন সমস্যা নেই। শুধু এমআইএসটির পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করেছি।’

উল্লেখ্য, জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার কারণে ২০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে কর্তৃপক্ষ ২৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত