Ajker Patrika

কারারক্ষী ও নারী কয়েদির অনৈতিক সম্পর্ক, দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে মারধরের অভিযোগ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ০৬
কারারক্ষী ও নারী কয়েদির অনৈতিক সম্পর্ক, দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে মারধরের অভিযোগ

গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতরে কারারক্ষী ও এক নারী কয়েদির অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় এক নারী হাজতিকে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই হাজতির মায়ের অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানি এবং নারী ইউনিটে পুরুষ ঢুকে মারধর করেছে। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা মোছা. করিমন নেছা। 

১৬ এপ্রিল এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা। বিষয়টি আজ বুধবার জানাজানি হলে জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী পাঁচ বছর যাবৎ গাইবান্ধা জেলা কারাগারে হাজতি হিসেবে রয়েছেন। তাঁর হাজতি নং ৫০৮। ভুক্তভোগী ওই হাজতির মা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, জেলা কারাগারে কর্মরত প্রধান কারারক্ষী মো. আশরাফুল ইসলাম এবং নারী কয়েদি (রাইটার) মোছা. মেঘলা খাতুনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাঁদের অনৈতিক কার্যকলাপ আমার মেয়ে দেখে ফেলায় তাঁর প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ও রাইটার মেঘলা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ কথা কাউকে বললে মেয়েকে মেরে ফেলে ‘হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু’ হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। 

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আশরাফুল ইসলাম তাঁর মেয়েকে বিভিন্ন সময় কারাগারের ভেতরে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন। একাধিকবার হাত ও পোশাক ধরে টানাটানি করেছেন। মেয়েকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছেন। 

এ নিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেওয়ার কথা বললে আশরাফুল প্রকাশ্যে ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘জেলার সাহেব তাঁর লোক। তিনি নিজের টাকা খরচ করে জেলারকে বদলি করে নিয়ে এসেছেন। জেলার তাঁর কোনো বিচার করতে পারবেন না।’ 

চলতি বছরের ২০ মার্চ দুপুরে আশরাফুলের নেতৃত্বে কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা, আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা, শাবানা গং কারাগারের নারী ইউনিটের বারান্দায় ভুক্তভোগীকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারেন। একপর্যায়ে আশরাফুল, সিআইডি কর্মকর্তা আনিছ এবং হাবিলদার মোস্তফা কারাগারের নারী ইউনিটে প্রবেশ করে মেয়েকে টেনেহিঁচড়ে সেলের ভেতর নিয়ে যান। মেয়ের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে, রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে লাঠি দিয়ে ঊরু ও পায়ের পাতায় বেদম মারধর করেন। কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে বিবস্ত্র করেন। এ ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। 

অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামের ব্যবহৃত ফোনে নম্বর কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থতার কথা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কারারক্ষী মো. আশরাফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীতঅভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেল সুপার মো. জাবেদ মেহেদী বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না।’ 

কারাগারের ভেতরে সব অবৈধ কার্যকলাপ, কয়েদিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আপনি জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জেল সুপার বলেন, ‘আমার অনেক আত্মীয়স্বজন সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনারাই তো আমাকে সহযোগিতা করবেন।’ এই বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার কারাগারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মশিউর রহমানকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত