Ajker Patrika

স্কুল কর্মচারীর হাতে যৌন হয়রানি শিকার ছাত্রী, ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১৬: ৩৩
স্কুল কর্মচারীর হাতে যৌন হয়রানি শিকার ছাত্রী, ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ

রাজশাহীর একটি স্কুলে কর্মচারীর হাতে এক ছাত্রী যৌন হয়রানি শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। স্কুলটির পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাম মালির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।

গতকাল রোববার সকালে রাজশাহী মহানগরীর ছোটবনগ্রাম প্রফেসরপাড়া এলাকায় অবস্থিত ইউসেপ ছোটবনগ্রাম সিটি করপোরেশন টেকনিক্যাল স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে। ইউসেপ বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থা স্কুলটি পরিচালনা করে থাকে। 

ঘটনার পর আজ সোমবার স্কুলে যায়নি ওই ছাত্রী। অভিযুক্ত কর্মচারীর নাম আবদুল হাকিম। রোববার ঘটনার পর ওই ছাত্রী বাড়ি গিয়ে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। এরপর তাঁর বাবা থানায় গিয়ে মামলা করেন। পরে দুপুরেই পুলিশ হাকিমকে স্কুল থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। 

তবে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, ঘটনার পর স্কুলটির সেন্টার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল কামাল অভিযুক্ত আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। তাই সেন্টার ইনচার্জকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

ভুক্তভোগীর বাবা জানান, রোববার সকালে সবার আগে স্কুলে যায় তাঁর মেয়ে। এ সময় একা পেয়ে হাকিম তাঁর মেয়েকে জাপটে ধরে যৌন হয়রানি করেন। পরে সেন্টার ইনচার্জ এলে ওই ছাত্রী বিষয়টি তাঁকে জানায়। এ সময় সেন্টার ইনচার্জ আবদুল হাকিমের কাছ থেকে একটি মুচলেকা নেন। সেখানে হাকিম নিজের দোষ স্বীকার করে লেখেন, নোংরা ঘটনার জন্য তিনি অনুতপ্ত। তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। পরবর্তীতে এ ধরনের কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে অফিস কর্তৃপক্ষ তাঁকে যে শাস্তি দেবে তিনি তা মাথা পেতে নিতে বাধ্য থাকবেন। 

সাক্ষী হিসেবে এই মুচলেকায় সাক্ষর করেন সেন্টার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল কামাল ও ইনস্ট্রাক্টর শাহানাজ বেগম, মো. শফিকুজ্জামান, হাসান হাফিজুর রহমান এবং শহিদুল ইসলাম। 

শিশুটির বাবা বলছেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়নি। বরং, অভিযুক্তের একটি মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করায় তিনি ইউসেপ বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক শাহীনুল ইসলামের কাছে সেন্টার ইনচার্জকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন। শাহীনুল ইসলাম সে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার শুনছেন সেন্টার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল কামালকে বরখাস্ত করা হয়নি। অভিযুক্ত হাকিম ও ইনচার্জ কামালের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অভিভাবকেরা আন্দোলনে নামবেন। 

সোমবার সকালে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেন্টার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল কামাল নেই। আসেনি ভুক্তভোগী ছাত্রীও। সেন্টার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পাশের আরেকটি ইউসেপ স্কুলের সেন্টার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন শিকদার। তিনি জানান, আব্দুল্লাহ আল কামালকে সোমবার থেকে আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাই তিনি এসেছেন। 

মুচলেকা নিয়ে অভিযুক্ত হাকিমকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, ‘গতকাল আমি ছিলাম না। তাই জানি না। এটা করা হয়ে থাকলে সেটা ঠিক হয়নি।’ 

পরে মোবাইলে কথা হয় আব্দুল্লাহ আল কামালের সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি হাকিমকে ছাড় দেননি। সে জন্যই ঘটনার প্রমাণ রাখতে মুচলেকা নিয়ে রেখেছেন। 

এ নিয়ে ইউসেপ বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক শাহীনুল ইসলামকে মোবাইল করা হলে তিনি ধরেননি। 

এ বিষয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান হোসেন বলেন, ‘একা পেয়ে হাকিম শিশুটির যৌন হয়রানি করেছে। জাপটে ধরে স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দেওয়া হয়েছে। তাই যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত