Ajker Patrika

ভারতে পুলিশের কাছ থেকে চুরির প্রশিক্ষণ, গুরু–শিষ্য গ্রেপ্তার

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ২১: ৫২
ভারতে পুলিশের কাছ থেকে চুরির প্রশিক্ষণ, গুরু–শিষ্য গ্রেপ্তার

চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের মালামাল চুরির তদন্তে নেমে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরুর রেল পুলিশ। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে চোখ ছানাবড়া তদন্ত কর্মকর্তাদের। কারণ সুনিপুণভাবে চুরি করার জন্য তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ঠিক যেন ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’! 

পরে সেই প্রশিক্ষক পুলিশ কর্মকর্তা বা গুরুকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।  

ঘটনার শুরু যেভাবে
বেঙ্গালুরু রেল পুলিশের এসপি এসকে সুমনলথা জানান, গত অক্টোবর মাসে চুরির শিকার এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষাপটে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরপরই এই চাঞ্চল্যকর ‘চোর-পুলিশ’ জুটির ঘটনা বেরিয়ে আসে। 

তিনি জানান, গত মাসের ২৩ তারিখ বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এক নারী ত্রিশূর থেকে ফিরছিলেন। ট্রেনটি বায়াপ্পানাহাল্লি স্টেশনের কাছে কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছিল। ওই নারীর ব্যাগ রাখা ছিল আসনের ওপরে। সেটাই এক লোক টেনে নিয়ে পালিয়ে যায়। 

ওই নারীর দায়ের করা অভিযোগে জানানো হয় যে, তার ব্যাগে প্রায় ১০ লাখ টাকার জিনিসপত্র ছিল। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে সাবান্না নামে এক চোরকে গ্রেপ্তার করে। 

এসপি সুমনলথা বলেন, এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ট্রেনে চুরি-ছিনতাই করে আসছিলেন। এর আগে ২০১২,২০১৬ ও সবশেষ ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। 

সাম্প্রতিকতম অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ বিভিন্ন রেলস্টেশনে নজরদারি শুরু করে। একদিন ভোরের দিকে সন্দেহজনকভাবে স্টেশনে ঘোরাফেরা করতে দেখে সাবান্নাকে আটক করে পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, ওই নারীর ব্যাগ তিনিই চুরি করেছিলেন। 

যেভাবে মিলল চোরের ‘গুরু’
সাবান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, তার একজন গুরু রয়েছেন, যিনি রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘চুরিবিদ্যা’ শিখিয়েছেন। কীভাবে হাতসাফাইয়ের কাজ করতে হবে আর কীভাবে ধরা না পড়ে বেরিয়ে যেতে হবে-সব হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছেন ওই গুরু। 

কোনো ধরনের জিনিস নেওয়া উচিত আর কোনটি ফেলে দিতে হবে—শিখন তালিকায় ছিল সেটিও। তিনি শিষ্যকে হালনাগাদ তথ্য দিয়েও সহায়তা করতেন। যেমন: কোনো বগিতে কে ঘুমাচ্ছে, কার ব্যাগ চুরি করা যেতে পারে ইত্যাদি। 

আর এসব তথ্য নিখুঁতভাবে দিতে পারতেন গুরু। কারণ তার কাজই ছিল চলন্ত ট্রেনে ঘুরে ঘুরে যাত্রীদের ওপরে নজর রাখা। পেশায় তিনি রেল পুলিশের হেড কনস্টেবল! চোর ‘শিষ্য’ সাবান্নার স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে এরপর ধরা পড়েন গুরু সিদ্দারামা রেড্ডি। 

রেল পুলিশের এসপি জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়ার পরে ওই হেড কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

যেভাবে সাহায্য করতেন ‘গুরু’ 
সুমনলথা বলেছেন, চলন্ত ট্রেনে প্রহরার দায়িত্বে থাকতে হেড কনস্টেবল রেড্ডি খেয়াল করতেন, কোনো যাত্রী ঘুমাচ্ছেন, কে অসতর্কভাবে ব্যাগ রেখেছেন কোলে বা পায়ের নিচে কিংবা মাথার ওপরে। সুযোগ বুঝে সেই খবর তিনি দিয়ে দিতেন সাবান্নাকে। আর মূল কাজটা হাসিল করতেন সাবান্না। 

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, কাজের পদ্ধতি এবং চুরির মালামাল ভাগাভাগিতেও তারা ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। এরা ব্যাগ চুরি করে কেবল টাকাপয়সা, গয়না আর জামাকাপড়ই নিতেন। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক গেজেট তারা নিজেদের কাছে রাখতেন না। 

ফেলে দিত মোবাইল-ল্যাপটপ
পুলিশে কাজ করার সূত্রে রেড্ডি ভালো করেই জানতেন, বৈদ্যুতিক যন্ত্র খুব সহজেই অবস্থান নির্ণয় করা যায়। তাই সেসব না রেখে ফেলে দিত গুরু-শিষ্যের দল। 

এসপি সুমনলথা বলেন, চলন্ত ট্রেনে ব্যাগ ছিনতাই করার সময়ে তো আর ব্যাগে কী রয়েছে তা জানতেন তারা। খুঁজে দেখার সুযোগও নেই। ফলে ছিনতাই করার পরে কোনো ব্যাগে যদি কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র পেত, সেগুলো ঝোপ-জঙ্গলে ফেলে দিত চোরের দল, যাতে এদের ট্র্যাক করা না যায়। এই বুদ্ধিটা গুরু রেড্ডিই দিয়েছিলেন তাঁর শিষ্যকে। 

ছিনতাইয়ের শেষে টাকা পয়সা, গয়নাগাটি সব দুজনে ভাগ করে নিতেন গুরু-শিষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত