Ajker Patrika

মাফিয়া ডন থেকে যেভাবে রাজনীতিবিদ হয়েছিলেন আতিক আহমেদ

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ৫০
মাফিয়া ডন থেকে যেভাবে রাজনীতিবিদ হয়েছিলেন আতিক আহমেদ

ভারতের সর্বমহলে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম ‘আতিক আহমেদ’। তিনি ভারতের সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য। গত শনিবার তাঁকে ও তাঁর ভাই আশরাফকে জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। 

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আতিক আহমেদ উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে সাংবাদিকদের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে কথা বলছিলেন। তখন ক্যামেরার সামনেই এই দুই ভাইকে গুলি করা হয়। দুর্বৃত্তরা সাংবাদিক সেজে তাঁদের সামনে গিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। 

এ ঘটনার পর তিন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের নাম আগে থেকেই পুলিশের অপরাধীর তালিকায় ছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। 

এক মিনিটেরও কম সময়ে হত্যাকাণ্ড
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আতিক আহমেদ প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতালের কাছে একটি পুলিশের গাড়ির পেছন থেকে বের হচ্ছেন। তাঁর হাতে হাতকড়া পরা। সঙ্গে রয়েছেন পুলিশ সদস্য ও আতিকের ভাই আশরাফ। 

উল্লেখ্য, আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই ২০০৬ সালের এক অপহরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। শনিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। 

 আতিক আহমেদ এবং তাঁর ভাই সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেনপুলিশবেষ্টিত হয়ে দুই ভাই যখন হাঁটতে শুরু করেন, তখন স্থানীয় টেলিভিশন সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তখন সাংবাদিকদের ভিড়ে হামলাকারীরাও সাংবাদিক বেশে ঢুকে পড়েন। এর মাত্র এক সেকেন্ড পরেই একটি বন্দুক আতিকের মাথার কাছে নিয়ে গুলি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথা থেকে পাগড়ি ছিটকে পড়ে। তিনিও মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ভাই আশরাফও গুলিবিদ্ধ হন। 

এরপর ঘটনাস্থলেই দুই বন্দুকধারী ও আরও একজন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। 

উত্তর প্রদেশ রাজ্য পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক বিক্রম সিং বলেছেন, ‘আহমেদের হত্যাকাণ্ড কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু অবশ্যই খারাপ, তার চেয়েও বেশি খারাপ পুলিশের হেফাজতে হত্যাকাণ্ড।’ 

যেভাবে মাফিয়া ডন থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন আতিক আহমেদ
প্রয়াগরাজের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আতিক আহমেদের রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর। তিনি স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। কিন্তু জীবদ্দশায় প্রভূত সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। 

ধারণা করা হয়, তিনি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও ক্ষমতা ব্যবহার করে এসব সম্পদ গড়েছেন। তাঁর জন্ম-শহরের বাইরেও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন আতিক। 

আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ১৯৮৯ সালে রাজনীতিতে নাম লেখান আতিক আহমেদ। বেঁচে থাকতে পাঁচবার রাজ্যের বিধানসভার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৪ সালে তিনি ফুলপুর আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

রাজ্য পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক বিক্রম সিং বলেন, ‘আতিক ছিলেন রবিন হুড ও ডা. জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইডের মতো একটি আকর্ষণীয় চরিত্র। তিনি গরিব মানুষদের প্রচুর সাহায্য করতেন। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাদের মেয়েকে বিয়ের জন্য অর্থ দিতেন। ঈদের সময় গরিবদের মধ্যে প্রচুর সাহায্য বিলাতেন। গরিব ঘরের মেয়েদের স্কুলের পোশাক ও বই কিনে দিতেন।’ 

কিন্তু এই মহান চরিত্রের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ অসংখ্য অভিযোগও ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। 

বিক্রম সিং বলেন, ‘এসবের বাইরে আরও অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ভুক্তভোগীরা প্রাণ ভয়ে মামলা করত না।’ 

বিভিন্ন মেয়াদে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আতিক আহমেদ কারাগারে ছিলেন। তাতে অবশ্য তাঁর আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। তিনি কারাগারে বসেই তাঁর মাফিয়া সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

আতিক ছিলেন আঞ্চলিক সমাজবাদী পার্টির নেতা। একটা সময়ে গিয়ে সমাজবাদী পার্টি তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। পরে বিজেপি রাজ্য ক্ষমতায় এলে আতিক আহমেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কিছুটা কমতে শুরু করেছিল। 

আতিক আহমেদের চার ছেলে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে দুজন কারাবন্দী ছিলেন। বাকি দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় সরকারি সুরক্ষা কেন্দ্রে রয়েছে। তাঁর স্ত্রী পলাতক। 

তবে গত বৃহস্পতিবার তাঁর ১৯ বছর বয়সী ছেলে আসাদ ও তাঁর এক সহযোগী পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন। 

সূত্র: বিবিসি ও এনডিটিভি অবলম্বনে মারুফ ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

আক্কেলপুরে ‘একঘরে’ করে রাখা দিনমজুরকে মারধর, থানায় মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত