Ajker Patrika

এক বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন: বন্ধুদের প্রতিশোধের বলি কিশোর

প্রতিনিধি
এক বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন: বন্ধুদের প্রতিশোধের বলি কিশোর

গাজীপুর: নিখোঁজ হওয়ার ২৮ দিন পর গাজীপুরের শ্রীপুরে ময়লার স্তূপ থেকে উদ্ধার কিশোর সোহানের কঙ্কাল–রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। কঙ্কালের পাশে পড়ে থাকা কাপড় দেখে স্বজনরা তার পরিচয় শনাক্ত করে। এ ঘটনার প্রায় আট মাস পর জানা গেল, বন্ধুদের প্রতিশোধের বলি হয়েছে সোহান। সোহানের বাবা তার বন্ধু সাগরকে মারপিট ও আজিজুলকে মাদক দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এর প্রতিশোধ নিতেই সাগর সোহানকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লোমহর্ষক এই ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। বর্ণনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানিয়েছেন, পিবিআই গাজীপুরে ময়লার স্তূপ থেকে মানুষের কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় পরিচয় শনাক্ত এবং মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করার পর সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, ২০২০ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সোহান নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় সোহানের মা শ্রীপুর থানায় ৬ আগস্ট সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এ ঘটনার ২৮ দিনপর গত বছরের ৩১ আগস্ট সকাল ১১টায় সোহানের স্বজনরা সংবাদ পান, শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি খালের ব্রিজ সংলগ্ন ময়লার স্তূপের মধ্যে একটি কঙ্কাল পড়ে আছে। পরে সোহানের বাবা–মা ও আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিন্ন পোশাক ও জুতা দেখে কঙ্কালটি সোহানের (১৪) বলে শনাক্ত করেন।

পরে সোহানের মা মোছা নাজমা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি শ্রীপুর থানা-পুলিশ প্রায় দুই মাস তদন্তকালে আসামি মো. আজিজুল, মো. সাগর, হৃদয় ও সবুজ নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার ওপর ন্যস্ত হয়। পিবিআই গাজীপুর জেলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. সুমন মিয়া মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তকাজে পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

এরপর আসামি মো. সাগরকে (২০) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ হেফাজতে আসামি সাগর হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ছাড়া সাগর জিজ্ঞাসাবাদে সোহান হত্যায় ব্যবহৃত চাকুর সন্ধান দেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ২৩ মে চাকুটি উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করলে তিনি অপর আসামিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেন।

সাগর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, সোহান ও ঘটনায় জড়িত আসামিরা পরস্পর বন্ধু। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে তিনি সোহানকে মারধর করেন। সোহান তার বাবাকে সে কথা বলে দেন। এরপর সোহানের বাবা সাগরকে ময়মনসিংহ মহাসড়কের আইল্যান্ডের গাছের সঙ্গে বেঁধে জুতা ও লাঠি দিয়ে পেটান। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত আসামি আজিজুলকে সোহানের বাবা ২০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশকে ধরিয়ে দেন আজিজুল তিন মাস জেল খাটেন। এই ক্ষোভ থেকেই আসামিরা সোহানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহানকে ডেকে জঙ্গলে নিয়ে প্রথমে সাগর মাথায় বাঁশ দিয়ে বাড়ি মারেন। পরে আজিজুল বুকে চাকু মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে ময়লার স্তূপে চাপা দিয়ে চলে যান তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত