Ajker Patrika

ভিডিও ধারণ করে ৫ বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ, আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২, ২০: ৫৫
ভিডিও ধারণ করে ৫ বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ, আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ধর্ষণের অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে পাঁচ বছর ধরে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে আসছেন তিনি।

এ ঘটনায় মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আজ বৃহস্পতিবার আদালত মামুনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা হাসনাতের আদালতে ভুক্তভোগির জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন নকরেককে। এরপর ওই দিন রাতেই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মামুন নকরেকের সঙ্গে ওই তরুণীর সঙ্গে পাঁচ বছর আগে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। এ সময় অজান্তে সেই দৃশ্য ধারণ করেন মামুন। এরপর থেকে ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পাঁচ বছর থেকে ধর্ষণ করে আসছেন মামুন। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ ছাড়া বিষয়টি প্রকাশ করলে ওই তরুণীকে হত্যার এবং ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দেন তিনি। সম্প্রতি মেয়ের শরীরের গড়ন দেখে সন্দেহ হয় ভুক্তভোগীর মায়ের। এরপর বিষয়টি জানার জন্য মেয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন মা। মায়ের চাপে বাধ্য হয়ে হত্যার হুমকি উপেক্ষা করে মুখ খোলেন মেয়েটি।

ভুক্তভোগীর মা জানান, অনেক কষ্টে দিনমজুরি করে টাকা উপার্জন করে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে মেয়েটি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর শরীরের গড়নে পরিবর্তন দেখে মেয়েকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করলে মেয়েটি মুখ খোলে। তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি ২০১৭ সালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তাদের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে মেয়েকে জিম্মি করে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে মেয়েকে ধর্ষণ করেন তিনি। বর্তমানে মেয়েটি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে অনেকেই মীমাংসার চেষ্টা করেছে। এরপর আইনের দ্বারস্থ হন তিনি।

ভুক্তভোগি ওই তরুণী বলেন, ‘মামুন পাঁচ বছর আগে আমাকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে একদিন আমাদের বাড়িতে কেউ ছিল না। ওই দিন সে এসে আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করেছে। পরে ওই ভিডিও দেখিয়ে আমাকে ব্লাক মেইল করে। ভিডিও ফেইসবুকে দেওয়ার হুমকি দেয়। এইভাবে জিম্মি করে আমাকে মাঝে মধ্যেই ধর্ষণ করত। কাউকে জানালে আমাকে হত্যা করবে বলেও হুমকি দিত মামুন।’

সত্যজিৎ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মামুন নকরেক বিবাহিত। এক ছেলে ও এক মেয়ের আছে তাঁর। তিনি আগে ছিলেন দিনমজুর। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে দিনমজুরি ছেড়ে দেন। সারা দিন সামাজিক-রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, সালিসি বৈঠকসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটান। তার মতো ব্যক্তির ন্যক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যুক্ত থেকে মামুন নকরেক স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে থাকেন। এর আগেও অন্য নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। যার সালিসি বৈঠকও হয়েছে।

এ ব্যাপারে অরণখোলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফিলিপ মৃ বলেন, মামুন নকরেক অরণখোলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি আগে দিনমজুর থাকলেও বর্তমানে তিনি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের যুক্ত থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে একজন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ শুনেছি। সত্যতা জানি না।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা মামুন নকরেককে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর মোবাইলটি জব্দ করা হয়েছে। তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট মোবাইল পাঠানো হবে। ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত