Ajker Patrika

‘পুকুরে ঝাঁপ দিয়েও বাঁচতে পারল না আমার নয়ন’

‘পুকুরে ঝাঁপ দিয়েও বাঁচতে পারল না আমার নয়ন’

‘আওয়ামী লীগ অফিসে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিল নয়ন। আমার ছেলেকে খায়রুল বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মেম্বার, নেতা কতজনের পায়ে ধরে আহাজারি করে কেঁদেছি আমি আর আমার বড় ছেলে মানিক! কেউ আমার ছেলেকে বাঁচাতে আসেনি। নিরুপায় হয়ে নয়ন নিজেই অফিসের পিছন দিয়ে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় দেখে ফেলে খায়রুল বাহিনীর লোকজন। খায়রুল বাহিনীর প্রায় ২০ জন লোক নয়নকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে পুকুরের মধ্যে মেরে ফেলে!’ 

আজ শুক্রবার দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শেখের বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগম এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা নয়নকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নয়ন গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেইলদিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল শেখের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালে কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় আরিফ হোসেন নামে এক ফুটবল খেলোয়াড়ের মৃত্যু হয়। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন নয়ন শেখ। 

নয়নের মা বলেন, ‘আমার ছেলে নয়নকে আওয়ামী লীগ অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখছে খায়রুল ইসলাম মীর। এমন খবর পাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বড় ছেলে মানিককে সঙ্গে নিয়ে চলে যাই কাওরাইদ বাজারে। আওয়ামী লীগ অফিসের কাছে আমি যেতে পারিনি। কারণ খায়রুল বাহিনীর লোকজন অফিসের চারপাশে ঘিরে রেখেছে। এরপর দৌড়ে পাশের দোকানে বসে থাকা ইউপি সদস্যসহ একাধিক নেতার পায়ে ধরে আহাজারি করে কেঁদেছি আমার সোনা মানিককে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু কেউ আমার কথায় কান দেয়নি। একটু পরে শুনতে পারি আমার ছেলেকে ওরা খুন করে চলে গেছে।’ 

ছাত্রলীগ নেতা নয়নের ভাই মানিক শেখ বলেন, ‘আজ কত মানুষ নয়নের লাশের খবর নিচ্ছে! অথচ গতকাল কত মানুষকে ফোন করেছি, কেউ একটু সাহায্য করতে আসেনি। বিকাল থেকে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ অফিসে।’ 

ফুটবলে খেলা নিয়ে খুন হওয়া আরিফের বড় ভাই রতন শেখ বলেন, ‘আজ মাগরিবের নামাজের পর নয়নের জানাজা শেষে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’ 

শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জাকিরুল হাসান জিকো বলেন, ‘ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করছি।’ 

ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শেখকাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজিজ বলেন, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারোর নেই। প্রকাশ্যে এ ধরনের নিন্দনীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।’ 

শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা প্রক্রিয়াধীন। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত