Ajker Patrika

চাঁদপুরের বস্তাবন্দী মরদেহের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরের বস্তাবন্দী মরদেহের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন

চাঁদপুর শহরের বিপণীবাগ বাজারে ব্যবসায়ী নারায়ন ঘোষকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত রাজুকে আটক করেছে ঢাকার সিআইডি। একাধিক প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার করে সোমবার সিআইডি এর বিশেষ টিম তাঁকে সিলেট শহর থেকে আটক করে। আটকের পর হত্যা রহস্যও উন্মোচন করেছে সিআইডি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত রাজু জানিয়েছে, পাওনা টাকার লেনদেনের জেরে এই হত্যাকাণ্ড করেছেন তিনি। 

চাঁদপুর সদর মডেল থানা-পুলিশ সূত্র তাঁর আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার প্রধান আসামি রাজু চন্দ্র শীলকে (৩০) আটকের পর হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে। আটককৃত রাজু চাঁদপুর শহরের বিপণীবাগ বাজারের টিপটপ সেলুনের কর্মচারী ছিল। সেই সেলুনেই গত ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ব্যবসায়ী নারায়ন ঘোষকে হত্যা করা হয়। 

গত বৃহস্পতিবার নারায়ন ঘোষের লাশ বিপণীবাগ বাজারের পাবলিক টয়লেটের পাশ থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নিহত নারায়ন ঘোষ চাঁদপুরের বিভিন্ন দোকানে দীর্ঘদিন ধরে দই-মিষ্টি বিক্রয় করে আসছিলেন। ঘটনার দিন রাতে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য তিনি অভিযুক্ত রাজু চন্দ্র শীলের কাছে যান। এরপরই তাঁকে হত্যা করা হয়। 

বিপণীবাগ বাজারের নৈশপ্রহরী মো. ইসমাইল জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাজারের টিপটপ সেলুনের কর্মচারী রাজু চন্দ্র শীলকে রাত ১টায় সাটার খুলে পানি দিয়ে দোকান পরিষ্কার করতে দেখা যায়। তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ধর্মীয় উৎসব থাকার কারণে দোকান পরিষ্কার করে পুরোনো জামা-কাপড়সহ অন্যান্য ময়লা জিনিসপত্র বস্তায় করে নিয়ে যাচ্ছেন।

 এরপর সেই বস্তাটি আসামি বিপনীবাগ মার্কেটের পশ্চিম পাশে শরীফ স্টিল ও পানির পাম্পের স্টাফ রুমের পূর্ব পাশের গলির ভেতর (পাবলিক টয়লেট সংলগ্ন) ফেলে রেখে পুনরায় দোকানে ফিরে আসেন। এরপর আসামি পানি দিয়ে সেলুন পরিষ্কার করতে থাকেন। সেলুন থেকে লাশ ফেলার স্থান পর্যন্ত রক্তের দাগ দেখা যায়। 

পরবর্তী সময়ে সেলুনের মালিক শ্রীকৃষ্ণ দোকান খুলে সেলুনের মেঝেতে রক্ত মাখা পানি দেখতে পান। এ ছাড়া সেলুনের দেয়ালে, চেয়ারের কভারে, মেঝেতে, বালতির মধ্যে রক্তের দাগ দেখা যায়। এই ঘটনার পর আসামি রাজু চন্দ্র শীল পলাতক ছিলেন। 

ব্যবসায়ী নারায়ণ ঘোষ নিহতের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার তাঁর ছোট ছেলে রাজীব ঘোষ রাজু বাদী হয়ে টিপটপ সেলুন কর্মচারী রাজুকে ১ নম্বর এবং অজ্ঞাতনামা আরও বেশকজনকে আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলার নম্বর-৩০) দায়ের করেন। এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব রয়েছেন মডেল থানার ইন্সপেক্টর ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অপারেশন মো. এনামুল হক। 

চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. আবদুর রশিদ বলেন, ‘ঢাকার সিআইডি সিলেট থেকে আসামি রাজুকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আসামি রাজুকে চাঁদপুর আনার পর প্রেস ব্রিফিং করে আমরা গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানাব।’ 

এর আগে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন রোববার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যে যে কোন সময় রাজুকে আটক করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে পুলিশের বিভিন্ন টিম রাজুকে আটক করতে মাঠে কাজ করছে।’ 

সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর আজ সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সিআইডি নজরে আসে। এরপর ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তিনি বলেন, সিআইডি অভিযুক্তের সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। অবশেষে সিলেট শহর হতে অভিযুক্তকে সিআইডির একটি টিম গ্রেপ্তার করে। 

আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, আসামি স্বীকার করেছে টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করেই সে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত