Ajker Patrika

পটিয়ায় অপহরণ-আতঙ্ক

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ১১: ২০
পটিয়ায় অপহরণ-আতঙ্ক

চট্টগ্রামের পটিয়ার পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে অপহরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দুই মাসে দুই শতাধিক শ্রমিককে আটকে রেখে কয়েক লাখ টাকার মুক্তিপণ আদায় করেছে সন্ত্রাসীরা। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা ও পটিয়ার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের পূর্বপাহাড়ে অন্তত ২০ শ্রমিককে আটকে মুক্তিপণ আদায় করেছে সন্ত্রাসীরা। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার পাহাড়ি এলাকার লোকজন। দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনকে পাহাড়ে ধরে নিয়ে পরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছে বলেও জানান এলাকাবাসী।

প্রায় সময় উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, শ্রীমাই পাহাড় ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বোয়ালখালী ও চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মহড়া চলছে বলে স্থানীয় দিনমজুর ও কাঠুরিয়ারা জানান।

পাহাড়ে যাঁরা গাছবাগান, লেবুবাগানে দিনমজুরের কাজ করেন, এমন লোকজনকে ধরে নিয়ে জিম্মি করে তাঁদের পরিবার এবং মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে পটিয়া, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ এলাকার গহিন বনে এসব সন্ত্রাসীর আনাগোনা বেড়েছে। পটিয়া, বোয়ালখালী ও রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল ঘিরে কৃষি অর্থনীতিতে বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। নানা ধরনের ফলমূল থেকে শুরু করে গাছের বাগান সৃজন করে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা ও বাগানমালিকেরা। নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন দেশের কয়েকটি শিল্প গ্রুপও।

সম্ভাবনাময়ী কৃষি অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এসব পাহাড়ে এখন নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে পাহাড়ি সীমান্ত এলাকায় অপহরণ-বাণিজ্য। এসব গহিন পাহাড়ে আস্তানা গেড়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। শ্রমিক ও বাগানমালিকদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে চলেছে।

একাধিক বাগানমালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পটিয়া, বোয়ালখালী ও রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে লেবু, পেয়ারা, মাল্টা, লিচু, আম ছাড়াও নানা ধরনের ফলদ বাগান রয়েছে। রয়েছে সেগুনসহ নানা ধরনের গাছের বাগান। এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।

আরও জানা যায়, বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা মৌলভীবাজার, পটিয়ার কেলিশহর, রতনপুর, ধলঘাট অংশ এবং রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলের দূরত্ব ৬-৮ কিলোমিটার। এর ফলে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া ও বোয়ালখালীর বিশাল পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গহিন বনে।

গত ১২ এপ্রিল পটিয়া উপজেলার ১৪ লেবুবাগান শ্রমিক অপহৃত হন। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান সাত শ্রমিক। ৭০ হাজার টাকার মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে জানান অপহৃতরা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করা হয়। একই দিনে বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা থেকেও ১০-১৫ জন অপহৃত হয়েছিলেন।

এদিকে অপহৃত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গহিন অরণ্যের চাইলত্যাছড়ি ঢালাইর মুখ এলাকা থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়।

এ ঘটনার পর ১৮ এপ্রিল পটিয়া অংশে পুলিশ ও র‍্যাবের যৌথ অভিযান পরিচালিত হয় পাহাড়ি এলাকায়। কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভীবাজার হয়ে গহিন পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে পুলিশ-র‍্যাবের এ অভিযান ছিল অনেকটা নিষ্ফল। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, পুলিশি তৎপরতার খবর পেয়ে সন্ত্রাসীরা অপহৃতদের ছেড়ে দেয়। শিগগির র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

রেজাউল করিম আরও জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এলাকার কৃষক ও সাধারণ লোকজনকে অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়টির প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। যার কারণে র‍্যাব, পুলিশ ও পটিয়া সীমান্তের বান্দরবানের ডলু ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর টিম একই সময় যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে কিছুদিন আগে। তবে সন্ত্রাসীদের আস্তানা খুঁজে পায়নি। অভিযান চলমান রাখা হবে এবং অপহরণকারীদের অবস্থান জানা ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাগানমালিক ও কাঠ ব্যবসায়ীরা জানান, তিন মাস আগে বাগান থেকে গাছ কেটে আনার সময় দুই গাড়িচালককে আটকে রাখেন সন্ত্রাসীরা। এক লাখ টাকার চাঁদা দাবি করে তারা। তাদের সঙ্গে রফা-দফা করে এক চালককে দিয়ে ৭০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পরে মুক্তি পায় দুই চালক।

স্থানীয় ও অপহৃত একাধিক ব্যক্তি বলেন, গত বৃহস্পতিবার কড়লডেঙ্গার শতাধিক লোক বিভিন্ন পাহাড়ে কাজ করতে যান। সমতল ভূমি থেকে ১০-১২ কিলোমিটার গহিনে ওত পেতে থাকে সন্ত্রাসীরা। পাহাড়ি ঢাল ও ছড়া ধরে গহিন পাহাড়ে যাওয়ার সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর ও গাছে বেঁধে ফেলা হয়। একে একে ৭০-৮০ জন শ্রমিককে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে স্থানীয় ৮-১০ জনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদের কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত