Ajker Patrika

ই–অরেঞ্জের সোহেল রানা কোথায়, জামিনদার ভারতে গ্রেপ্তার

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
ই–অরেঞ্জের সোহেল রানা কোথায়, জামিনদার ভারতে গ্রেপ্তার

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার ভারতের জামিনদারকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। সোহেল রানা ভারতে জামিন নেওয়ার পর থেকে পলাতক। আদালতে ভারতীয় দুই নাগরিক তাঁর জামিনদার হয়েছিলেন। তাঁদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অপরদিকে, পলাতক থাকায় সোহেল রানার জামিন বাতিল করেছে কলকাতার উচ্চ আদালত। সোহেল রানার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশের আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার বিচার চলছে। মানিলন্ডারিংসহ আরো কয়েকটি মামলা তদন্তাধীন। এই মামলার কারণেই পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ৩৪ কোটি টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ই-অরেঞ্জের গ্রাহকেরা। 

সোহেল রানা কলকাতার হাইকোর্টে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জামিন নিয়েছেন তার কিছু তথ্যপ্রমাণ ও হাসপাতালের কাগজপত্র আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। আদালতের কাগজপত্রে দেখা গেছে, সোহেল রানা অসুস্থতার কথা বলে কলকাতার হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে জামিনের আবেদন করেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর তিনি জামিন পান। আদালতে দুজন ভারতীয় নাগরিক তাঁর জামিনদার ছিলেন। তাঁরা হলেন—কোচবিহার মেখলিগঞ্জ থানার ইসমাইল হোসেনের ছেলে নূর আলম এবং একই থানার চৌরঙ্গীবাজারের রফিকুল রহমান।

সোহেল রানা জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে পালানোর পর গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জামিনদার নূর আলমকে গ্রেপ্তার করে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ। তিনি ওই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে মেখলিগঞ্জের থানা পুলিশ। 

মেখলিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাহুল তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোহেল রানার জামিনদার নূর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধ মামলা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে সোহেল রানা কোথায় পালিয়েছেন তা তিনি জানাতে পারেননি।’

এই জামিনদার দুজন সোহেল রানার পূর্ব পরিচিত বলে জানিয়েছে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ।

২২ হাজার রুপি জামানতে সোহেল রানার জামিন হয়। তিনি সেটি পরিশোধ করেছেন। আর ছয় মাস কারভোগ করলেই তাঁর সাজার মেয়াদ সম্পন্ন হতো বলে জানিয়েছেন কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালতের একজন বেঞ্চসহকারী। 

সোহেল রানাকে প্রতি সপ্তাহে সশরীরে মেখলিগঞ্জ থানায় হাজির হওয়ার শর্তে কলকাতার হাইকোর্ট জামিন দেয়। কিন্তু সোহেল রানা আর ধরা দেননি। তাঁর আইনজীবী মেখলিগঞ্জের ওসিকে গত ৫ জানুয়ারি ফোনে জানান, সোহেল অসুস্থ, থানায় আসা সম্ভব না। ওসি অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে থানায় যেতে বলেন। কিন্তু আইনজীবী সেটি করেননি। ওসি রাহুল তালুকদার বলেন, ‘আমাকে ই–মেইলে হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র ও একটি হাতে লেখা আবেদন পাঠিয়েছে। এরপর আর কোনো খবর নেই।’

মেখলিগঞ্জের ওসির কাছে সোহেল রানার আইনজীবী ইংরেজিতে ১৩ লাইনের একটি আবেদনে অসুস্থতার জন্য থানায় আসতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেছেন। হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়েবেটিসের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

শর্ত অনুযায়ী থানায় হাজিরা না দেওয়ার বিষয়টি আদালতকে গত ফেব্রুয়ারিতে লিখিত ভাবে জানায় মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর আদালত জামিন বাতিল করেন। 

২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএসএফের হাতে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে গ্রেপ্তার হন সোহেন রানা। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁর তিন বছরের জেল হয়। তিনি নেপথ্যে থেকে ই-অরেঞ্জ পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সোহেল রানা এখন কোথায়?
এদিকে সোহেল রানার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানানো হলেও কোচবিহার পুলিশের সূত্র বলছে, তিনি পালিয়ে প্রথমে নেপালে গিয়েছেন। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে গিয়ে থাকতে পারেন। 

সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ। ওই থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সোহেল রানার দেশ–বিদেশে অনেক যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর নেপাল, থাইল্যান্ড, পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে বন্ধুবান্ধব রয়েছে। 

পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানিয়েছিলেন, তিনি ভারত হয়ে নেপালে যেতে চেয়েছিলেন। নেপাল থেকে ব্যাংকক হয়ে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। নেপালে তাঁর পরিচিত লোকজন রয়েছে। পর্তুগালে সোহেলের ছোটভাই শেখ সাইফ থাকেন। 

এদিকে সোহেলকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সোহেল তখন কারাগারে ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারত। গত ডিসেম্বরে জামিন পেলে তথ্য চেয়ে ফের চিঠি দেয় পুলিশ। কিন্তু ভারত থেকে এখনো উত্তর আসেনি।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর আহমেদ বলেন, ‘ভারত আমাদের এখনো কিছু জানায়নি। সোহেল রানা কোথায় আছে, তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

গেটওয়েতে আটকা ৩৪ কোটি টাকা
বিভিন্ন গেটওয়ে ই-অরেঞ্জের ৩৪ কোটি ৬২ লাখ ১৭ হাজার ৪৮৯ টাকা আটকা। অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আটকে থাকা টাকা ফেরত দিলেও ই-অরেঞ্জের টাকা ফেরত দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ই-অরেঞ্জের ঘটনায় উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে মামলা চলছে। এসব কারণে তাদের গেটওয়ের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি তাদের টাকাটা দ্রুত দেওয়ার জন্য।’

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। একটি মানিলন্ডারিং, দুটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এবং বাকিগুলো প্রতারণা করে অর্থআত্মসাতের অভিযোগ। মামলায় আসামিরা হলেন— ই–অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান, মালিক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ এবং সাবেক সিও নাজমুল রাসেল। 

তাঁদের মধ্যে সোহেল রানা, বীথি আকতার ও কাওসার পলাতক। নাজমুল রাসেল গত ফেব্রুয়ারি জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। অধিকাংশ প্রতারণা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থপাচারের মামলা সিআইডি এখনও তদন্ত করছে।

অর্থপাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেক আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত