Ajker Patrika

ই–অরেঞ্জের সোহেল রানা কোথায়, জামিনদার ভারতে গ্রেপ্তার

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
ই–অরেঞ্জের সোহেল রানা কোথায়, জামিনদার ভারতে গ্রেপ্তার

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার ভারতের জামিনদারকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। সোহেল রানা ভারতে জামিন নেওয়ার পর থেকে পলাতক। আদালতে ভারতীয় দুই নাগরিক তাঁর জামিনদার হয়েছিলেন। তাঁদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অপরদিকে, পলাতক থাকায় সোহেল রানার জামিন বাতিল করেছে কলকাতার উচ্চ আদালত। সোহেল রানার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশের আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার বিচার চলছে। মানিলন্ডারিংসহ আরো কয়েকটি মামলা তদন্তাধীন। এই মামলার কারণেই পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ৩৪ কোটি টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ই-অরেঞ্জের গ্রাহকেরা। 

সোহেল রানা কলকাতার হাইকোর্টে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জামিন নিয়েছেন তার কিছু তথ্যপ্রমাণ ও হাসপাতালের কাগজপত্র আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। আদালতের কাগজপত্রে দেখা গেছে, সোহেল রানা অসুস্থতার কথা বলে কলকাতার হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে জামিনের আবেদন করেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর তিনি জামিন পান। আদালতে দুজন ভারতীয় নাগরিক তাঁর জামিনদার ছিলেন। তাঁরা হলেন—কোচবিহার মেখলিগঞ্জ থানার ইসমাইল হোসেনের ছেলে নূর আলম এবং একই থানার চৌরঙ্গীবাজারের রফিকুল রহমান।

সোহেল রানা জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে পালানোর পর গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জামিনদার নূর আলমকে গ্রেপ্তার করে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ। তিনি ওই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে মেখলিগঞ্জের থানা পুলিশ। 

মেখলিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাহুল তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোহেল রানার জামিনদার নূর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধ মামলা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে সোহেল রানা কোথায় পালিয়েছেন তা তিনি জানাতে পারেননি।’

এই জামিনদার দুজন সোহেল রানার পূর্ব পরিচিত বলে জানিয়েছে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ।

২২ হাজার রুপি জামানতে সোহেল রানার জামিন হয়। তিনি সেটি পরিশোধ করেছেন। আর ছয় মাস কারভোগ করলেই তাঁর সাজার মেয়াদ সম্পন্ন হতো বলে জানিয়েছেন কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালতের একজন বেঞ্চসহকারী। 

সোহেল রানাকে প্রতি সপ্তাহে সশরীরে মেখলিগঞ্জ থানায় হাজির হওয়ার শর্তে কলকাতার হাইকোর্ট জামিন দেয়। কিন্তু সোহেল রানা আর ধরা দেননি। তাঁর আইনজীবী মেখলিগঞ্জের ওসিকে গত ৫ জানুয়ারি ফোনে জানান, সোহেল অসুস্থ, থানায় আসা সম্ভব না। ওসি অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে থানায় যেতে বলেন। কিন্তু আইনজীবী সেটি করেননি। ওসি রাহুল তালুকদার বলেন, ‘আমাকে ই–মেইলে হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র ও একটি হাতে লেখা আবেদন পাঠিয়েছে। এরপর আর কোনো খবর নেই।’

মেখলিগঞ্জের ওসির কাছে সোহেল রানার আইনজীবী ইংরেজিতে ১৩ লাইনের একটি আবেদনে অসুস্থতার জন্য থানায় আসতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেছেন। হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়েবেটিসের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

শর্ত অনুযায়ী থানায় হাজিরা না দেওয়ার বিষয়টি আদালতকে গত ফেব্রুয়ারিতে লিখিত ভাবে জানায় মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর আদালত জামিন বাতিল করেন। 

২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএসএফের হাতে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে গ্রেপ্তার হন সোহেন রানা। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁর তিন বছরের জেল হয়। তিনি নেপথ্যে থেকে ই-অরেঞ্জ পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সোহেল রানা এখন কোথায়?
এদিকে সোহেল রানার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানানো হলেও কোচবিহার পুলিশের সূত্র বলছে, তিনি পালিয়ে প্রথমে নেপালে গিয়েছেন। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে গিয়ে থাকতে পারেন। 

সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ। ওই থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সোহেল রানার দেশ–বিদেশে অনেক যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর নেপাল, থাইল্যান্ড, পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে বন্ধুবান্ধব রয়েছে। 

পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানিয়েছিলেন, তিনি ভারত হয়ে নেপালে যেতে চেয়েছিলেন। নেপাল থেকে ব্যাংকক হয়ে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। নেপালে তাঁর পরিচিত লোকজন রয়েছে। পর্তুগালে সোহেলের ছোটভাই শেখ সাইফ থাকেন। 

এদিকে সোহেলকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সোহেল তখন কারাগারে ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারত। গত ডিসেম্বরে জামিন পেলে তথ্য চেয়ে ফের চিঠি দেয় পুলিশ। কিন্তু ভারত থেকে এখনো উত্তর আসেনি।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর আহমেদ বলেন, ‘ভারত আমাদের এখনো কিছু জানায়নি। সোহেল রানা কোথায় আছে, তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

গেটওয়েতে আটকা ৩৪ কোটি টাকা
বিভিন্ন গেটওয়ে ই-অরেঞ্জের ৩৪ কোটি ৬২ লাখ ১৭ হাজার ৪৮৯ টাকা আটকা। অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আটকে থাকা টাকা ফেরত দিলেও ই-অরেঞ্জের টাকা ফেরত দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ই-অরেঞ্জের ঘটনায় উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে মামলা চলছে। এসব কারণে তাদের গেটওয়ের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি তাদের টাকাটা দ্রুত দেওয়ার জন্য।’

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। একটি মানিলন্ডারিং, দুটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এবং বাকিগুলো প্রতারণা করে অর্থআত্মসাতের অভিযোগ। মামলায় আসামিরা হলেন— ই–অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান, মালিক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ এবং সাবেক সিও নাজমুল রাসেল। 

তাঁদের মধ্যে সোহেল রানা, বীথি আকতার ও কাওসার পলাতক। নাজমুল রাসেল গত ফেব্রুয়ারি জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। অধিকাংশ প্রতারণা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থপাচারের মামলা সিআইডি এখনও তদন্ত করছে।

অর্থপাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেক আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত