Ajker Patrika

রাবারবাগানে ধর্ষণ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ মে ২০২২, ০৮: ৫৩
রাবারবাগানে ধর্ষণ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় একটি রাবারবাগানে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। স্কুল ছুটির পর মেয়েটি তার বন্ধুর সঙ্গে এই বাগানে বেড়াতে গিয়েছিল, সেখানেই ধর্ষকেরা ভয় দেখিয়ে হাত-মুখ বেঁধে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।

খুবই দুঃখজনক এ ঘটনাটিতে পরে চারজনের নাম উল্লেখ করে মেয়েটির বাবা থানায় মামলা করেছেন। তাদের দুজন ধরা পড়েছে এবং ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে।

আমাদের দেশে ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাগুলোর মধ্যে যেকোনো আর্থিক শ্রেণির মানুষের অবদমিত যৌন তৃষ্ণার বহিঃপ্রকাশ যেমন দেখা যায়, তেমনি ক্ষমতার শক্তিতে বলীয়ান পেশিশক্তির প্রতিভূদেরও দেখা যায়। কেউ কেউ ক্ষমতার চৌহদ্দির মধ্যে বাস করে যা ইচ্ছে তা-ই ঘটানোর মতো শক্তিমান হয়ে ওঠে।

ঘটনার গভীরে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে, সামাজিক যে বন্ধনগুলো ছিল, পরিবারে ভালো-মন্দ নির্ণয়ের যে প্রয়াস ছিল, মূল্যবোধের জয়গান ছিল, সেগুলো এখন অনেকের জীবনেই কোনো অর্থ বহন করে না। মহল্লা, সমাজে গুরুজনদের কথা মেনে নেওয়ার চেয়ে স্থানীয় পেশিশক্তির কাছেই নতজানু হচ্ছে মানুষ। পৃথিবীজুড়েই এখন যাদের আদর্শ মানুষ বলা হচ্ছে, তারা হলো কোটি কোটি টাকা কামানো মানুষ। মানবতার জন্য তারা কিছু করছে কি না, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, বিবেচ্য বিষয় হলো, তারা টাকা কামিয়ে কীভাবে নিজেদের রাজত্ব গড়ে তুলছে। তাদের বিশাল সম্পদের ছিটেফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে সমাজের নানা গলিতে, আর তাতেই যেন সিদ্ধিলাভ হচ্ছে আমজনতার। এ কারণেই বিল গেটস, জাকারবার্গ, ইলন মাস্ক এই যুগের হিরো।

এ রকম একটা পরিবেশে একজন সৎ শিক্ষক আদর্শস্থানীয় হয়ে উঠতে পারেন না, কিংবা যেভাবে সময় বদলে যাচ্ছে তাতে শিক্ষকদের মধ্যেও টাকাপয়সায় বড় হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়া অসম্ভব কিছু নয়। অর্থই মানুষের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে। সেখানে নীতিকথা, সততার চেয়ে ক্ষমতাই হয়ে উঠতে পারে শক্তিমান। হয়ে উঠছেও।

সামাজিক সম্মানবোধ লুপ্ত হওয়ার পথে। ‘ঘুষখোর’ এখন আর বড় গাল নয়। এই গাল খেয়ে কারও গায়ে ফোসকা পড়ে যায় না; বরং চাকরিতে উপরি আছে কি না, সেই প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তরও অভিভাবকদের মনে আনন্দ দিতে পারে। এহেন অবস্থায় ধর্ষকেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মদদ পাবে, সে আর বলতে! পরিবারে এবং সমাজে এই যে নীতিবোধের অভাব, এই যে গুরুজনদের অবজ্ঞা করা, এই যে শর্টকাট খুঁজে নিয়ে নিজেকে জাহির করা—এসবই একটা নীতিহীন পথের দিকে মানুষকে ঠেলে দেয়। যারা ধর্ষণকারী, তারা তো এই সমাজেরই মানুষ। কী শিক্ষা পাচ্ছে তারা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে, সে প্রশ্ন কি এড়ানো যাবে?

সামাজিক প্রতিরোধ আর দ্রুত বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে এ ধরনের খবর আরও বেশি দেখা যাবে আর তখন এ ধরনের সম্পাদকীয়গুলোকে ‘অরণ্যে রোদন’ বলে মনে হবে। আমরা কেউ নিশ্চয়ই সেটা চাই না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পোশাকের পর অস্ত্র প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত এডিরা

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত