Ajker Patrika

লোভ-দারিদ্র্যের বলি মাতৃস্নেহ

কামরুল হাসান
লোভ-দারিদ্র্যের বলি মাতৃস্নেহ

আমার অবস্থা তখন জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো, ‘অতিদূর সমুদ্রের ’পর হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা’। দিনভর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো কূলকিনারা করতে পারছি না। স্থানীয় লোকজন আমাকে সাহায্য না করে উল্টো সন্দেহ করতে শুরু করেছে। এ রকম অবস্থায় তথ্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তাতে সমূহ আশঙ্কা থাকে। একবার ভাবছি ফিরে যাব। এভাবে ফিরে যাওয়াকে বলে ‘রণে ভঙ্গ দেওয়া’, মানে পরাজিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানো। কিন্তু আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। শেষমেশ চন্দ্রবিন্দুর ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ গাইতে গাইতে রাজ্যের ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম।

পরদিন সিআইডির এএসপি মোহাম্মদ মুসলিমকে (বর্তমানে চট্টগ্রাম সিআইডির প্রধান) পুরো ঘটনা খুলে বলতেই তিনি মৃদৃ ভর্ৎসনা করে বললেন, একলা গেলেন কেন, আপনার কি মাথা খারাপ! মুসলিমের কথা শুনেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, খুব সহজেই সবকিছু জানতে পারব। কিন্তু গিয়ে দেখলাম, পুলিশি অভিযানের কারণে সবাই সেখানে সতর্ক। অচেনা লোক দেখলেই সন্দেহ করছে।

যে গ্রামের কথা বলছি, তার নাম মিজমিজি। আলোঝলমলে রাজধানীর অদূরে তখন এক অজগাঁ। ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে কয়েক মাইল গেলেই শেষ হয়ে যায় মহানগরীর সীমানা। এর প্রান্তসীমার গ্রামই মিজমিজি। জেলার তালিকায় পড়েছে নারায়ণগঞ্জে। পুলিশ প্রশাসনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা। পাশেই একসময় ছিল দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল। নদীশিকস্তি এই গ্রামের মাঝ দিয়ে একসময় অনেক নদী প্রবহমান ছিল। যখন গেলাম, দেখলাম নদী আর নেই; শুকিয়ে মরা খাল হয়ে পড়ে আছে। গ্রামটি আরেকটি কারণে বিখ্যাত, শহীদ সাংবাদিকের কন্যা শারমিন রীমা খুন হয়েছিলেন এই গ্রামের রাস্তায়।

দুই দিন আগে সিআইডির এএসপি মুসলিমের টিম এই গ্রাম থেকে কয়েকটি শিশুকে উদ্ধার করে, সঙ্গে কয়েকজন নারী-পুরুষ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানতে পারেন, দুবাইয়ে উটের দৌড়ে ব্যবহার করা শিশুদের পাচার করা হয় এই গ্রাম থেকে। এখানে একটি শক্তিশালী চক্র আছে, যারা শত শত মাকে প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের কোলের শিশুকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে।

মুসলিম আমাকে বলেছিলেন, এটা একটি আজব গ্রাম, অদ্ভুত এখানকার মা-বাবা। গ্রামের প্রায় ঘরেই আছে উটের জকি। পিতামাতার আয়ের স্বপ্নপূরণে সেই গ্রামের শিশুদের পাঠানো হয়েছে সুদূর মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে। সেখানে উটের দৌড়ের জুয়ায় জকি হতে গিয়ে কেউ কেউ অকালে প্রাণ হারিয়েছে, কেউবা চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। কেউ ফিরে এসেছে আঁতকে ওঠার মতো স্মৃতি নিয়ে। আবার দু-একজন আছে, যারা প্রচুর টাকা কামিয়ে মা-বাবার স্বপ্নপূরণে সক্ষম হয়েছে। 

প্রথম দিন আমি একাই সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের লোক আমাকে বিশ্বাস করেনি। মুসলিম আমাকে বলেছিলেন তাঁদের লোকের সঙ্গে যেতে। কিন্তু পুলিশের লোকদের সঙ্গে গেলে যা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে ভালো কোনো প্রতিবেদন হবে না। তাই একাই গেলাম। ফিরে আসার পর আমার মাথায় এল খলিলের কথা।

জনকণ্ঠের সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। প্রথমে ভেবেছিলাম, খলিল এলাকার ছেলে, তাঁকে বাদ দিয়ে নিজের মতো করে অনুসন্ধান করব। কিন্তু হালে পানি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত খলিলের দ্বারস্থ হলাম। তিনি আমাকে পথের দিশা দিলেন। তাঁর সাহায্য নিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম। যত কথা বলি তত বিস্মিত হই।

এই গ্রামের তরুণ ঠিকাদার ফজলুল হক আমাকে বললেন, একসময় এই গ্রামের মানুষের কাজই ছিল আদমজী পাটকলকেন্দ্রিক নানা ধরনের ব্যবসা করা। এরপর আদমজীতে ধস নামতে শুরু করলে অনেক লোক বেকার হয়ে পড়েন। বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য শুরু হয় বিদেশ যাওয়া। অনেকে ঢাকার ট্রাভেল এজেন্টদের দালালের হাত ধরে বিদেশ যেতে থাকেন। গ্রামে গড়ে ওঠে আদম পাচারের দালাল চক্র। একপর্যায়ে শুরু হয় উটের জকি পাচার। গ্রামে প্রথম এই কারবারের সূচনা করেন মোতালেব নামের এক প্রকৌশলী। তিনি একসময় আদমজীতে চাকরি করতেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর ট্রাভেল ব্যবসার নামে দুবাই, সৌদি আরবে লোক পাঠাতে শুরু করেন। সেই লোক পাঠানোর সঙ্গে তিনি কয়েকটি শিশুকে দুবাই পাঠান। অল্প দিনেই এটি যে লাভজনক, সে খবর গ্রামে তা রটে যায়। এরপর অনেকে এই কারবারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে সেখানে একটা চক্র গড়ে ওঠে। এদের কেউ মুদিদোকানি, কেউ পাইকারি ফড়িয়া আবার কেউ বেকার। শুরু হয় গ্রামের দরিদ্র মানুষকে দ্রুত বড় লোক হওয়ার লোভ দেখানো। সেই লোভে অনেক মা-বাবা তাঁদের বাচ্চাদের তুলে দেন চক্রের হাতে।

আমি সেখানে খোঁজ করতে গিয়ে অনেককে পেয়েছিলামও। যেমন সর্দারপাড়ার জহির আহমেদের পুত্র মহিউদ্দিন। তাকে পাচার করেছিল এলাকার আলাউদ্দিন নামের এক যুবক। কয়েক বছর পর ফিরে এসেছিল জহির। দুবাই যাওয়ার সুবাদে তার পরিবার উঠে যায় পাকা বাড়িতে। মহিউদ্দিনের মতো আরেকজন আজিবপুরের সুবেদ আলীর ছেলে হোসেন তখন মিজমিজির বেতিমোহন স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। সাত-আট বছর আগে তাকে পাঠানো হয়েছিল উটের জকি হিসেবে।

গ্রামের আরেক পিতা নূর মোহাম্মদ আব্দুলের পুলপাড়ে বাড়ি। তাঁর দুই সন্তান শাহাবুদ্দিন ও মহিউদ্দিন। এই দুই সন্তানকে নিয়ে নূর মোহাম্মদ দুবাই গিয়েছিলেন। নিজের সন্তানকে লাগিয়েছিলেন জকির কাজে। একদিন উটের পিঠ থেকে পড়ে এক ছেলে মারা যায়। আমি নূর মোহাম্মদের স্ত্রী জমিলার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জমিলা বলেছিলেন, আমার ছেলে গেছে, কিন্তু ভাগ্য তো ফিরেছে। এখন তাঁদের অনেক আয়-রোজগার। বাড়িও পাকা হয়েছে। নূর মোহাম্মদ বঙ্গবাজারে টুপির কারবার করেন। তাঁর ছেলে শাহাবুদিন তখন কলেজে পড়ত। সে আমাকে বলেছিল, সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাকে তাড়া করে ফেরে।

সে সময় ওই গ্রামের লোকদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল, মিজমিজি থেকে উটের জকি হিসেবে শিশু পাচারের ঘটনা সেখানে ওপেন সিক্রেট। গ্রামের সাধারণ মানুষ যেমন জানে বিষয়টি, তেমনি জানেন পুলিশ-প্রশাসনসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তখন ওসি ছিলেন ইসমাইল হোসেন খন্দকার। তিনি বলেছিলেন, কিছুই জানেন না। নারায়ণগঞ্জের এসপি ছিলেন শফিকুল ইসলাম। তিনিও একই সুরে কথা বললেন। কিন্তু আমি মাত্র তিন দিনে সে গ্রাম থেকে দুই শতাধিক শিশু পাচারের তথ্য পেয়েছিলাম।

গ্রামের অনেকে আমাকে বলেছিলেন, চিটাগাং রোডের দুই কসাই চান মিয়া আর কুব্বতের স্ত্রীরাও দুবাইতে থাকেন। প্রতিবছর তাঁরা দেশে এসে একটি করে বাচ্চা নিয়ে যান। পুলপাড়ের বেগমের ছেলে গ্রামে বসে এ কাজ করেন। গ্রামের আরেকজন ইসমাইলের ভাই নাসির দুটি বাচ্চা নিয়ে দুবাই যান। একটি বাচ্চা ফেরত এসেছে, অন্যটি এখনো আসেনি। পাচার হওয়া অনেক বাচ্চার মতো সেই বাচ্চাও উটের পায়ের তলায় পড়ে মারা যায়।

পাচারকারী চক্রের সদস্য আলিম মুনশির দুই ছেলে ইবরা ও হোসেন এমন একটি মরা বাচ্চা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। পরে এ নিয়ে গ্রামে সালিস হয়। এরপর তিন লাখ টাকায় মিটমাট হয়ে যায়। গ্রাম থেকে পাচার হওয়া আরেক শিশু নাজমুল উটের দৌড়ের সময় পড়ে গিয়ে আহত হলে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।

তখনকার পিজি হাসপাতালে শিশুটি মারা যায় ২০০১ সালের ১১ এপ্রিল। শিশু পাচার নিয়ে আমার সিরিজ প্রতিবেদনটি ছাপা শুরু হয়েছিল ২০০২ সালের ২০ মে থেকে। এই প্রতিবেদন করতে গিয়ে মানুষের যে ভয়াবহ রূপ দেখেছি, তা আমাকে ব্যথিত করেছিল।

শিশু নাজমুল মারা যাওয়ার পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস মনিটরিং সেলের আইনজীবী দিলরুবা আফতাবী ও ইসরাত ফাতেমা একটি মামলাও করেন আদালতে। প্রথম প্রথম সবকিছু ভালোই চলছিল। একদিন ফলোআপ করতে গিয়ে শুনি, দিলরুবার মন খারাপ। নাজমুলের মা নাজমা আর মামলা চালাতে চান না। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সব মিটমাট করে ফেলেছেন। এরপর পাচারকারীদের পরামর্শে নাজমুলের মা অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। দিলরুবা একটি টানা নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, দারিদ্র্য, লোভ ও হুমকির কাছে হার মেনে গেল মাতৃস্নেহ। আমাদের জীবন বোধ হয় এ রকমই ভাই।

দিলরুবার কথায় আমারও খুব মন খারাপ হলো। তাঁর কথার কোনো জবাব না দিয়েই ফিরে এলাম।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত