Ajker Patrika

হীরকের দেশে সোনার মুলুক

কামরুল হাসান
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৪৭
হীরকের দেশে সোনার মুলুক

থাইএয়ারের উড়োজাহাজে আসা দুই বিদেশিকে নিয়ে গাড়িটা সোজা চলে গেল ঢাকা বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের ভেতরে। দুই যাত্রীর একজন অ্যান্থনি সকার, আরেকজন বার্নার্ড রুডিগার। একজন ব্রিটিশ, অন্যজন জার্মান। দুজনই বিজনেস ক্লাসের যাত্রী, তাঁদের হাতে চামড়ার তৈরি চোখধাঁধানো স্যুটকেস।

ভিআইপি যাত্রীরা যেভাবে বিমানবন্দর অতিক্রম করেন, তাঁরাও সেভাবে কোনো কিছু ডিক্লারেশন না দিয়েই চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুজনের গতিবিধি দেখে সন্দেহ করে কাস্টমস। তল্লাশির পর দুজনের স্যুটকেস থেকে পাওয়া যায় ৩৮ কেজি সোনার বার।

শুরু হয় হইচই। গণমাধ্যমকর্মীরা খবর পেয়ে পৌঁছে যান বিমানবন্দরে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম ধরা পড়া সবচেয়ে বড় সোনার চালান।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন ক্ষমতায়। সবকিছু এমনভাবে রটতে শুরু করে যে সবাই ধরে নেয়, এই সোনা পাচারের সঙ্গে এরশাদ ও তাঁর স্ত্রী রওশনের হাত আছে। কম করে হলেও ১০ বছর ধরে সংবাদপত্রে এ খবরের ফলোআপ ছাপা হয়। তবে মূল ঘটনা কাভার করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমি সাংবাদিকতায় এসে ফলোআপ করতে শুরু করি। কারণ, এ ঘটনার শুরুটা ছিল ১৯৯০ সালের ২৪ জুলাই।

এটুকু পর্যন্ত পড়ে মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, এত পুরোনা ঘটনার কথা শুনে লাভ কী? লাভ একটা আছে। সেটা হলো, সোনা চোরাচালানের মতো একটি ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রব্যবস্থা, প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং রাজনীতি কীভাবে জড়িয়ে যায়, এ ঘটনা তার অন্যতম বড় প্রমাণ। আবার একটি ঘটনা থেকে রাজনীতিকেরা কীভাবে ফায়দা লুটে নেন, এ ঘটনা তারও বড় উদাহরণ। তবে এটাও বলে রাখি, এই গল্পের অনেক উপাদান বিভিন্ন নথিপত্র আর সাবেক পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা সফিক উল্লাহর বই ‘এক পুলিশের ডায়েরি’ থেকে নেওয়া।

গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শকমাত্রই জানেন, বিমানবন্দর দিয়ে সোনা পাচারের ঘটনা নতুন নয়। পাচারের সময় ধরাও পড়ছে হরহামেশা। মাদক পাচার নিয়ে ইউএনওডিসির একটি ‘মেথড’ আছে, যত পাচার হয়, ধরা পড়ে তার মাত্র ১০ শতাংশ। অর্থাৎ মোট হিসাবের ৯০ শতাংশই পাচার হয়ে যায়। সোনার ক্ষেত্রে যদি সেই হিসাব কষা হয়, তাহলে মাথা ভনভন করে ঘুরবে।

যাক এসব, এবার আসল গল্পে ফিরি।

তো সেই দুই বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে তুলে দেওয়া হয় ডিবির হাতে। মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই বেরিয়ে পড়ে বিষধর সাপ। দুজনেই স্বীকার করেন, ঢাকা বিমানবন্দরের সিকিউরিটি অফিসার তাহের নিজের গাড়িতে করে তাঁদের উড়োজাহাজ থেকে ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে আসেন। তাহেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর তাহের স্বীকার করেন, এয়ারপোর্ট ম্যানেজার মেজর সেকান্দার তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল, দুই বিদেশিকে তিনি ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে পার করে দেবেন। ঢাকা কাস্টমসে তখন কমিশনার ছিলেন মঞ্জুর মান্নান।

পানি নিচের দিকে না গড়িয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। আটক করা হয় এয়ারপোর্ট ম্যানেজার মেজর সেকান্দারকে। তিনি স্বীকার করেন, সিভিল এভিয়েশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর মইনুল ইসলাম তাঁকে এ কাজে লাগিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশ তিনি তাহেরকে বলেন। কালে কালে ঘটনা বড় হতে থাকে।

ডিবি হেফাজতে দুই বিদেশি জানান, সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী হাজি ইয়াকুব এই সোনার মালিক। ইয়াকুবের প্রতিনিধি হয়ে তাঁরা বিভিন্ন দেশে সোনা পাচার করেন। তবে তাঁরা জানেন না, এই সোনার আসল মালিক কে। হাজি ইয়াকুব সময়মতো টেলিফোনে তাঁদের সংকেত দেন। সেই সংকেত অনুসারে তাঁরা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাছে সোনা পৌঁছে দেন। এবার কথা ছিল, কালো রঙের একটি মার্সিডিজ বিমানবন্দর থেকে তাঁদের সোনারগাঁও হোটেলে নিয়ে যাবে।

মামলটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসি আবদুল বাতেন। এদিকে মার্সিডিজের কথা শুনেই পুলিশের দল সেই গাড়ির খোঁজে নেমে পড়ে। তারা ধরে নিয়েছিল, এ গাড়িতেই মামলার ক্লু আছে। সে সময় কালো মার্সিডিজ ছিল শিল্পপতি আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং চিত্রনায়িকা রোজিনার স্বামী ফজলুর রশীদ ঢালির। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গাড়িটি ডিবিতে আনা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটা মাত্র দেড় মাস আগে কুয়েত দূতাবাস থেকে কেনা। সন্দেহ এবার চলে যায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু ভিডিও কানেকশনের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের দিকে। তিনি ছিলেন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান কমোডর মইনুলের ঘনিষ্ঠ। বান্টির বনানীর বাড়ি তল্লাশি হয়। গাড়ি না মিললেও সেখানে পাওয়া যায় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং তাঁদের স্ত্রী ও বান্ধবীদের আপত্তিকর ছবি।
বান্টির বাড়িতে একটি আনরেজিস্টার্ড ফোর্ড গাড়ি ছিল। বান্টির বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় প্রথম জেলে গেলেন বান্টি ইসলাম।

এদিকে সোনা চোরাচালানের ঘটনা নিয়ে পত্রপত্রিকা গরম হয়ে ওঠে। তখনকার উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি এই ঘটনায় জড়িত বলে খবর প্রকাশিত হয়। কেউ কেউ লেখেন, ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদও জড়িত। কেউ আরও একধাপ এগিয়ে এরশাদকেও দুষতে থাকেন। দিন দিন এ প্রচার বাড়তেই থাকে। এরশাদ এতে খুবই বিব্রত হন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানকে ডেকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দিতে বলেন।

তখন সিআইডির ডিআইজি ছিলেন এ এস এম শাহজাহান (পরে তিনি আইজিপি হন)। তিনি ডিবির তদন্ত প্রতিবেদন পরীক্ষা করে চার্জশিট দিতে বলেন।

কিন্তু ডিবি দাবি করে, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মইনুলকে গ্রেপ্তার করা না গেলে তদন্ত শেষ করা যাবে না। এ সময় স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন আজিম উদ্দিন, তিনি সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ। তিনি এ গ্রেপ্তারের বিপক্ষে মত দেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেন। তখন পত্রিকায় রিপোর্ট হতে থাকে, তদন্ত ধামাচাপা দিচ্ছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি এরশাদ। অবস্থা বেগতিক দেখে এরশাদ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেন।

সিদ্ধান্ত হয়, মইনুল ইসলামকে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে ওএসডি করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার পরই গ্রেপ্তার করা হবে। মইনুল ইসলামের কাছে সে খবর আগেই চলে যায়। ওএসডি হওয়ার পরপরই তিনি পালিয়ে যান। ডিবি মামলাটি তদন্ত করে বার্নার্ড রুডিগার্ড, অ্যান্থনি সকার, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর মইনুল ইসলাম, তাঁর পিএস, এয়ারপোর্ট ম্যানেজার মেজর সেকান্দার ও সিকিউরিটি অফিসার আবু তাহেরকে আসামি করে চার্জশিট দেয়।

এই চার্জশিটের কিছুদিন পর এরশাদ সরকারের পতন হয়। দেশে তখন বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সোনা নিয়ে আবার লেখালেখি শুরু হয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ একদিন তদন্তকারী দলকে ডেকে পাঠান। তখনকার আইজিপি তৈয়ব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পুলিশের দলটি তাঁকে ব্রিফ করেন। এবার তিনি দ্রুত বিচার শেষ করতে বলেন।

ক্ষমতার আবার পালাবদল হয়। এবার আসে বিএনপি। বিএনপির এমপিরা প্রথম অধিবেশনেই সোনা চোরাচালান মামলার প্রসঙ্গ তোলেন। সংসদে তাঁরা বলেন, সোনা চোরাচালানের সঙ্গে এরশাদ, রওশন ও মওদুদ জড়িত। বলা হয়, এয়ার কমোডর মইনুল ইসলামকে রাজসাক্ষী করা হলে সব বেরিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বর্ধিত তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। আবার তদন্ত শুরু হয়। মইনুল শেষ পর্যন্ত আর রাজসাক্ষী হননি। কারণ, রাজসাক্ষী হতে হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে হয়। মইনুল বুদ্ধিমান, তিনি সেটা করতে চাননি।

সিআইডিতে আসার পর গোলাম মোস্তফা মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি এরশাদ ও রওশনের নাম যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। পরে নিম্ন আদালত রওশন এরশাদকে খালাস দিয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেন। এরশাদ হাইকোর্টে গেলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। তখনই শোনা যাচ্ছিল, কমোডর মইনুল ছিলেন তৎকালীন বিএনপি সরকারের কৃষিমন্ত্রী মাজেদুল হকের আত্মীয়। তাঁদের আরেক আত্মীয় ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান।

তাঁরাই সোনা চোরাচালানের মামলায় এরশাদকে ফাঁসানোর চেষ্টায় উৎসাহী ছিলেন। তবে অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলতে থাকে। বিচারে শুধু দুই বিদেশির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তা ছাড়া সেকেন্দারের ১০ বছর এবং তাহেরের ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়।

কথায় আছে, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। ২০০০ সালে এরশাদের বিরুদ্ধে আবার এ মামলা চালু হয়। শেষ পর্যন্ত এবারেও এরশাদ খালাস পান।

এবার ভাবুন, একটি ঘটনার জাল কত দূর বিস্তৃত হতে পারে। দেশে এখনো সোনা পাচার হচ্ছে, ধরাও পড়ছে বটে। কিন্তু তদন্ত আগের মতোই, তল আর পায় না।

কোথায় গিয়ে সবকিছু যেন আটকে যায়। কেন আটকে যায়, প্রিয় পাঠক, তা কি আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর দরকার আছে?

আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত