কামরুল হাসান
ঢাকার নিউ বেইলি রোডে সুইস বেকারির পেছনের যে ভবনে এখন আর্টিসান আর অঞ্জন’স ফ্যাশন, সেখানেই ছিল শুল্ক গোয়েন্দার কার্যালয়। একদিন বিকেলে সেই অফিসে এক সহকারী পরিচালকের রুমে বসে গল্প করছি। হঠাৎ সেই কর্মকর্তার ল্যান্ডফোন বেজে উঠল। যথারীতি তিনি ফোন ধরলেন, কিন্তু ফোনটা রাখতে গিয়ে তাঁকে খুবই চিন্তিত মনে হলো। তাঁর অবস্থা দেখে জানতে চাইলাম, খারাপ কোনো খবর? ভদ্রলোক অনেক দিনের চেনা, তারপরও কাউকে না বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, এক কাস্টমস কমিশনারের বাসায় ‘অঘটন’ হয়েছে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। কী হয়েছে–প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ডাকাতির মতো বড় কোনো ঘটনা।
‘ডাকাতি’ শব্দটি ক্রাইম রিপোর্টারদের কাছে পানি থেকে মাছকে ডাঙায় তুলে আবার পানিতে ছেড়ে দেওয়ার মতো। মাথায় উত্তেজনা, আমাকে আর পায় কে। খুঁটে খুঁটে জানতে চাইলাম পুরো ঘটনা। নাছোড়বান্দার মতো অবস্থা দেখে ভদ্রলোক বললেন, যে কমিশনারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে, তাঁর নাম জহিরুল হক। তিনি তখন শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক। কাস্টমসের কমিশনাররাই ওই পদে নিয়োগ পেতেন। জহিরুল হক তখন থাকতেন সিদ্ধেশ্বরী রোডে ইস্টার্ন ফ্লাওয়ার অ্যাপার্টমেন্টে। ঘটনা সে বাসায়ই। সেটা ছিল ২০০৩ সালের ২৬ মে।
বেইলি রোডের শুল্ক গোয়েন্দার কার্যালয় থেকে জহিরুল হকের বাসা হাঁটা দূরত্বে। সেই কর্মকর্তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম ইস্টার্ন ফ্লাওয়ার অ্যাপার্টমেন্টে। সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যেতে মনোয়ারা হাসপাতালের আগে যে বিশাল কমপ্লেক্সটি, তারই নাম ইস্টার্ন ফ্লাওয়ার কমপ্লেক্স। এর উল্টো দিকে হাফিজ এস্টেট নামের আরেকটি বড় কমপ্লেক্স। কিন্তু এত আশা নিয়ে সেখানে গিয়ে কোনো লাভ হলো না। কমপ্লেক্সটির নিরাপত্তাকর্মীরা কোনোভাবেই ভেতরে ঢুকতে দিলেন না। অনেক অনুরোধের পর একজন বললেন, রমনা থানা-পুলিশ পাঁচ নিরাপত্তারক্ষীকে ধরে নিয়ে গেছে, যা বলার পুলিশই বলবে। কমিশনার জহিরুল হকের অফিস ও বাসার সব নম্বর বন্ধ, তাঁকেও পেলাম না।
গেলাম রমনা থানায়। তখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন মাহবুবুর রহমান, দেখতে যেমন সুদর্শন, তেমনি ভালো ব্যবহার। গিয়ে দেখি, অনেক লোক থানার ভেতরে, ওসি তাঁদের নিয়ে কথা বলছেন। আমাকে দেখে একটু অপেক্ষা করতে বললেন। ঘণ্টাখানেক পর ওসি আমাকে তাঁর কামরায় ডেকে নিয়ে বললেন, জহিরুল হকের বাসায় একদল ডাকাত ঢুকেছিল। জহিরুল হক নিজেও তখন বাসায় ছিলেন। ডাকাত দল তাঁকেসহ পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে একটি রুমে আটকে রাখে। এরপর তিনটা বড় স্যুটকেস নিয়ে চলে যায়। তারা এত দ্রুত সরে পড়ে যে কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ডাকাত দল এসেছিল একটি বড় গাড়ি নিয়ে। তবে বাসায় ঢোকার সময় সবাই মুখোশ পরে ছিল। সে সময় অবশ্য সিসি ক্যামেরার এত প্রচলন ছিল না। ওসি আরও বললেন, জহিরুল হক তাঁর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন; কিন্তু লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি।
আমার প্রশ্ন, সেই তিন স্যুটকেসে কী ছিল? ওসি মাহবুব বললেন, সেই ব্যাগে সম্ভবত টাকার বান্ডিল ছিল। কত টাকা হবে? বললেন, তিন-চার কোটি হতে পারে। এত টাকা কোনো মানুষের বাসায় থাকতে পারে, তখন পর্যন্ত সেটা আমার ধারণায় ছিল না। তবে ওসি মাহবুব বারবার অনুরোধ করলেন, মামলা না হওয়া পর্যন্ত আমি যেন টাকার কথা না লিখি। কারণ, বাদী তখন পর্যন্ত থানায় টাকার কথা লিখিতভাবে জানাননি।
পরের দিন সব পত্রিকায় কাস্টমস কমিশনারের বাসায় ডাকাতির খবর ছাপা হলো, তবে ততটা জোরালো নয়। রিপোর্টে যা ছিল, সবই ভাসা ভাসা। কাস্টমস কর্মকর্তা কারও সঙ্গে কোনো কথাও বলেননি। রমনা থানায় ডাকাতির মামলা হলো, তাতেও টাকার কথা নেই। সে খবর ঢাকায় অবস্থানরত কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে চাউর হয়ে গেল। এক কর্মকর্তা আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে বললেন, তাঁর কাছে পাকা খবর ছিল, ভ্যাট প্রত্যর্পণের এই কমিশনার একটি কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। সেই টাকা কোম্পানিটি তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দেয়। এরপর কোনো এক সন্ত্রাসীর কানে সে খবর পৌঁছে যায়। সেই সন্ত্রাসীই ডাকাত সেজে টাকাগুলো নিয়ে যায়। ওই কর্মকর্তা মজা করে বলেছিলেন, এখন কাস্টমস কমিশনার মামলায় সেই টাকার কথা আর উল্লেখ করতে পারবেন না। কারণ, মামলায় টাকা উল্লেখ করলে তাঁকে টাকার বৈধতা দেখাতে হবে। টাকার অঙ্ক ছাড়াই মামলা করতে হবে, হলোও তা-ই।
পরের দিন ফলোআপ করতে হবে। গেলাম মহাখালীতে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরে। ঘণ্টাখানেক বসে থাকলাম। কমিশনারের ব্যক্তিগত সহকারী চন্দনা মণ্ডল বললেন, ‘স্যার মিটিংয়ে।’ মিটিং আর শেষ হয় না। আরও কিছুক্ষণ পর চন্দনা বললেন, কমিশনার আসলে কথা বলতে চান না। নিরাশ হয়ে ফিরে এলাম। আবার গেলাম রমনা থানায়। এবারও ওসি মাহবুব একই কথা বললেন। তবে এবার তিনি বললেন, আটক করা নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে বলেছেন, তাঁরা তিনজনকে ভারী ব্যাগ নামাতে দেখেছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চিনতে পারেননি। সেই ব্যাগে কী ছিল, সেটা তাঁরা জানেন না।
ওসি আরও বললেন, ব্যাগে যে টাকা ছিল, তা বিভিন্ন সূত্রে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, কিন্তু লিখিত কিছু তাঁর কাছে নেই। তারপর অনেক দিন তক্কে তক্কে থেকেছি, কিন্তু কমিশনার সেই টাকার কথা আর উল্লেখ করেননি। অনেক দিন পর পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলাটির তদন্ত শেষ করে।
ওই ঘটনার পর কাস্টমস কর্মকর্তাদের অফিসে গেলেই নানা কথা শোনা যেত। কেউ বলতেন, সেই স্যুটকেসে শুধু টাকা না, সোনাও ছিল। কেউ টাকার পরিমাণ আরও বেশি করে বলতেন। কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করে বলতেন, ‘কারুনের ধন এভাবেই বালুতে মিশে যায়।’ আমি নিজেও অনেকবার জহিরুল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি; কিন্তু কেন জানি, তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
জহিরুল হকের এই ঘটনা লিখতে গিয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কয়েক বছর আগের একটি কথা মনে পড়ে গেল। ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অমর্ত্য সেন এসেছিলেন ঢাকায় ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক প্রগতি’ বিষয়ে একক বক্তৃতা করতে। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সেই বক্তৃতা শুনতে হল উপচে পড়েছিল মানুষে। সে সময় টানা চার দিন আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। একদিন কথার ফাঁকে জানতে চেয়েছিলাম, অর্থ কেন অনর্থের মূল হতে গেল? অর্থনীতির এই পণ্ডিত সেদিন বলেছিলেন, ‘যে অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয় না, সেটাই তো অনর্থ।’
আজ মনে হলো, জহিরুল হকদের মতো লোকদের কারণেই হয়তো বাংলা ভাষায় এই প্রবাদটির জন্ম হয়েছিল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
ঢাকার নিউ বেইলি রোডে সুইস বেকারির পেছনের যে ভবনে এখন আর্টিসান আর অঞ্জন’স ফ্যাশন, সেখানেই ছিল শুল্ক গোয়েন্দার কার্যালয়। একদিন বিকেলে সেই অফিসে এক সহকারী পরিচালকের রুমে বসে গল্প করছি। হঠাৎ সেই কর্মকর্তার ল্যান্ডফোন বেজে উঠল। যথারীতি তিনি ফোন ধরলেন, কিন্তু ফোনটা রাখতে গিয়ে তাঁকে খুবই চিন্তিত মনে হলো। তাঁর অবস্থা দেখে জানতে চাইলাম, খারাপ কোনো খবর? ভদ্রলোক অনেক দিনের চেনা, তারপরও কাউকে না বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, এক কাস্টমস কমিশনারের বাসায় ‘অঘটন’ হয়েছে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। কী হয়েছে–প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ডাকাতির মতো বড় কোনো ঘটনা।
‘ডাকাতি’ শব্দটি ক্রাইম রিপোর্টারদের কাছে পানি থেকে মাছকে ডাঙায় তুলে আবার পানিতে ছেড়ে দেওয়ার মতো। মাথায় উত্তেজনা, আমাকে আর পায় কে। খুঁটে খুঁটে জানতে চাইলাম পুরো ঘটনা। নাছোড়বান্দার মতো অবস্থা দেখে ভদ্রলোক বললেন, যে কমিশনারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে, তাঁর নাম জহিরুল হক। তিনি তখন শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক। কাস্টমসের কমিশনাররাই ওই পদে নিয়োগ পেতেন। জহিরুল হক তখন থাকতেন সিদ্ধেশ্বরী রোডে ইস্টার্ন ফ্লাওয়ার অ্যাপার্টমেন্টে। ঘটনা সে বাসায়ই। সেটা ছিল ২০০৩ সালের ২৬ মে।
বেইলি রোডের শুল্ক গোয়েন্দার কার্যালয় থেকে জহিরুল হকের বাসা হাঁটা দূরত্বে। সেই কর্মকর্তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম ইস্টার্ন ফ্লাওয়ার অ্যাপার্টমেন্টে। সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যেতে মনোয়ারা হাসপাতালের আগে যে বিশাল কমপ্লেক্সটি, তারই নাম ইস্টার্ন ফ্লাওয়ার কমপ্লেক্স। এর উল্টো দিকে হাফিজ এস্টেট নামের আরেকটি বড় কমপ্লেক্স। কিন্তু এত আশা নিয়ে সেখানে গিয়ে কোনো লাভ হলো না। কমপ্লেক্সটির নিরাপত্তাকর্মীরা কোনোভাবেই ভেতরে ঢুকতে দিলেন না। অনেক অনুরোধের পর একজন বললেন, রমনা থানা-পুলিশ পাঁচ নিরাপত্তারক্ষীকে ধরে নিয়ে গেছে, যা বলার পুলিশই বলবে। কমিশনার জহিরুল হকের অফিস ও বাসার সব নম্বর বন্ধ, তাঁকেও পেলাম না।
গেলাম রমনা থানায়। তখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন মাহবুবুর রহমান, দেখতে যেমন সুদর্শন, তেমনি ভালো ব্যবহার। গিয়ে দেখি, অনেক লোক থানার ভেতরে, ওসি তাঁদের নিয়ে কথা বলছেন। আমাকে দেখে একটু অপেক্ষা করতে বললেন। ঘণ্টাখানেক পর ওসি আমাকে তাঁর কামরায় ডেকে নিয়ে বললেন, জহিরুল হকের বাসায় একদল ডাকাত ঢুকেছিল। জহিরুল হক নিজেও তখন বাসায় ছিলেন। ডাকাত দল তাঁকেসহ পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে একটি রুমে আটকে রাখে। এরপর তিনটা বড় স্যুটকেস নিয়ে চলে যায়। তারা এত দ্রুত সরে পড়ে যে কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ডাকাত দল এসেছিল একটি বড় গাড়ি নিয়ে। তবে বাসায় ঢোকার সময় সবাই মুখোশ পরে ছিল। সে সময় অবশ্য সিসি ক্যামেরার এত প্রচলন ছিল না। ওসি আরও বললেন, জহিরুল হক তাঁর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন; কিন্তু লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি।
আমার প্রশ্ন, সেই তিন স্যুটকেসে কী ছিল? ওসি মাহবুব বললেন, সেই ব্যাগে সম্ভবত টাকার বান্ডিল ছিল। কত টাকা হবে? বললেন, তিন-চার কোটি হতে পারে। এত টাকা কোনো মানুষের বাসায় থাকতে পারে, তখন পর্যন্ত সেটা আমার ধারণায় ছিল না। তবে ওসি মাহবুব বারবার অনুরোধ করলেন, মামলা না হওয়া পর্যন্ত আমি যেন টাকার কথা না লিখি। কারণ, বাদী তখন পর্যন্ত থানায় টাকার কথা লিখিতভাবে জানাননি।
পরের দিন সব পত্রিকায় কাস্টমস কমিশনারের বাসায় ডাকাতির খবর ছাপা হলো, তবে ততটা জোরালো নয়। রিপোর্টে যা ছিল, সবই ভাসা ভাসা। কাস্টমস কর্মকর্তা কারও সঙ্গে কোনো কথাও বলেননি। রমনা থানায় ডাকাতির মামলা হলো, তাতেও টাকার কথা নেই। সে খবর ঢাকায় অবস্থানরত কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে চাউর হয়ে গেল। এক কর্মকর্তা আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে বললেন, তাঁর কাছে পাকা খবর ছিল, ভ্যাট প্রত্যর্পণের এই কমিশনার একটি কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। সেই টাকা কোম্পানিটি তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দেয়। এরপর কোনো এক সন্ত্রাসীর কানে সে খবর পৌঁছে যায়। সেই সন্ত্রাসীই ডাকাত সেজে টাকাগুলো নিয়ে যায়। ওই কর্মকর্তা মজা করে বলেছিলেন, এখন কাস্টমস কমিশনার মামলায় সেই টাকার কথা আর উল্লেখ করতে পারবেন না। কারণ, মামলায় টাকা উল্লেখ করলে তাঁকে টাকার বৈধতা দেখাতে হবে। টাকার অঙ্ক ছাড়াই মামলা করতে হবে, হলোও তা-ই।
পরের দিন ফলোআপ করতে হবে। গেলাম মহাখালীতে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরে। ঘণ্টাখানেক বসে থাকলাম। কমিশনারের ব্যক্তিগত সহকারী চন্দনা মণ্ডল বললেন, ‘স্যার মিটিংয়ে।’ মিটিং আর শেষ হয় না। আরও কিছুক্ষণ পর চন্দনা বললেন, কমিশনার আসলে কথা বলতে চান না। নিরাশ হয়ে ফিরে এলাম। আবার গেলাম রমনা থানায়। এবারও ওসি মাহবুব একই কথা বললেন। তবে এবার তিনি বললেন, আটক করা নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে বলেছেন, তাঁরা তিনজনকে ভারী ব্যাগ নামাতে দেখেছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চিনতে পারেননি। সেই ব্যাগে কী ছিল, সেটা তাঁরা জানেন না।
ওসি আরও বললেন, ব্যাগে যে টাকা ছিল, তা বিভিন্ন সূত্রে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, কিন্তু লিখিত কিছু তাঁর কাছে নেই। তারপর অনেক দিন তক্কে তক্কে থেকেছি, কিন্তু কমিশনার সেই টাকার কথা আর উল্লেখ করেননি। অনেক দিন পর পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলাটির তদন্ত শেষ করে।
ওই ঘটনার পর কাস্টমস কর্মকর্তাদের অফিসে গেলেই নানা কথা শোনা যেত। কেউ বলতেন, সেই স্যুটকেসে শুধু টাকা না, সোনাও ছিল। কেউ টাকার পরিমাণ আরও বেশি করে বলতেন। কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করে বলতেন, ‘কারুনের ধন এভাবেই বালুতে মিশে যায়।’ আমি নিজেও অনেকবার জহিরুল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি; কিন্তু কেন জানি, তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
জহিরুল হকের এই ঘটনা লিখতে গিয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কয়েক বছর আগের একটি কথা মনে পড়ে গেল। ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অমর্ত্য সেন এসেছিলেন ঢাকায় ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক প্রগতি’ বিষয়ে একক বক্তৃতা করতে। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সেই বক্তৃতা শুনতে হল উপচে পড়েছিল মানুষে। সে সময় টানা চার দিন আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। একদিন কথার ফাঁকে জানতে চেয়েছিলাম, অর্থ কেন অনর্থের মূল হতে গেল? অর্থনীতির এই পণ্ডিত সেদিন বলেছিলেন, ‘যে অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয় না, সেটাই তো অনর্থ।’
আজ মনে হলো, জহিরুল হকদের মতো লোকদের কারণেই হয়তো বাংলা ভাষায় এই প্রবাদটির জন্ম হয়েছিল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
ফোনে ওই ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর সোহেল পরিচয় দিয়ে জানায়, কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে তার ভাই বাদ পড়েছে, তবে চাইলে টাকা দিলে চাকরি নিশ্চিত করে দিতে পারবে। এর পর ঢাকার শাহ আলী থানার একটি হোটেলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করে ওই ভুয়া মেজর সোহেল রানা। সঙ্গে ছিল আরেক প্রতারক তৈয়বুর রহমান, যাকে ভুক্তভোগী
৩ দিন আগেচাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলের অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের বেশি নতুন মুখ। অর্থাৎ পুলিশের হাতে ধরা পড়া ব্যক্তিদের অর্ধেকের কিছু বেশির বিরুদ্ধে অতীতে এ ধরনের অপরাধের কোনো অভিযোগ ছিল না। পুলিশ কর্তৃপক্ষের দেওয়া হিসাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
৬ দিন আগেআন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের হোতা আমিনুল ইসলাম (৪৬) ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-২। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-২ ও হাজারীবাগ থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ১১ নম্বর সেক্টর থেকে তাদের
১৭ দিন আগেমেয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে ঘুম থেকে তুলে ধর্ষণ করেন বাবা। ৮ বছর আগের ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল। ওই ঘটনার আগেও আসামি একাধিকবার মেয়েকে ধর্ষণ করেন। ফলে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে যায়। ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছিল।
২৫ দিন আগে