Ajker Patrika

পরিবারের হাল ধরেছেন নারী উদ্যোক্তা সাদিয়া

মহসিন রেজা, দেওয়ানগঞ্জ
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৮
পরিবারের হাল ধরেছেন নারী উদ্যোক্তা সাদিয়া

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অধিকাংশ পরিবারের নারীদের বাবা বা স্বামীর অধীনস্থ থাকতে হয়। সংসারের সচ্ছলতা আনতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অর্থ উপার্জন করবে এমন সাধ্য নেই বেশির ভাগ পরিবারের নারীদের।

তবে বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও পরিবারের হাল ধরছেন। সাদিয়া তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। নারী উদ্যোক্তা হয়ে দূর করতে পেরেছেন সংসারের অভাব-অনটন। নিজের উদ্যোগে হস্তশিল্পের কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। 

জানা যায়, নেত্রকোনার আটপাড়ার পিতা রেজাউল করিম খান ও মা রানু বেগমের মেয়ে সাদিয়া পারভীন রুনা। আটপাড়া টি এস এস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বিয়ের পর দেওয়ানগঞ্জ সরকারি আব্দুল খালেক মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। ২০০২ সাল বিয়ের পর চলে যান দেওয়ানগঞ্জের কালিকাপুর এলাকার শ্বশুরবাড়িতে। স্বামী আলী নেওয়াজ ছানা খুচরা ওষুধ ব্যবসায়ী। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে অভাব কাকে বলে বোঝেননি সাদিয়া। শ্বশুর আব্দুস সালাম পেশায় পল্লি চিকিৎসক। স্বামী ও শ্বশুরের আর্থিক অবস্থা সে সময় ভালো ছিল। সে কারণে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও চাকরি করার চিন্তা করেননি তিনি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ভাগ্যের পালাবদল হয়। 

নারী উদ্যোক্তা সাদিয়ার হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠান ‘দি সান ফ্যাশন হাউজ’ কাজ করছেন নারী কর্মীরা। নারী উদ্যোক্তা সাদিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালের দিকে চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে সাদিয়ার পরিবার। নিজের পরিবার ও দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সে সময় মনস্থির করেন পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করতে কিছু একটা করবেন। ২০১৬ সালের শুরুতে পারভেজ খান ও তাঁর স্ত্রী হাজরা আক্তারের পরামর্শে ও উৎসাহে শুরু করেন হস্তশিল্পের কাজ। প্রথমে বাজার থেকে ৩টি জামার কাপড় কিনে তাতে সুতা দিয়ে নকশি সেলাই করেন। মাত্র ২ হাজার ৭০০ টাকা পুঁজিতে হস্ত শিল্পের ব্যবসা শুরু করেন সাদিয়া। শুরুতে তাঁর নকশি সেলাই করা জামা ৩টি ব্র্যাকের নকশি প্রকল্পের কর্মীরা কিনে নেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাদিয়াকে। 

স্থানীয়ভাবে হস্তশিল্পের ব্যবসা করে ২ বছরে কয়েক লাখ টাকা পুঁজি হয় সাদিয়ার। পরে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির চিন্তা করেন তিনি। এ কারণে জামালপুর ছাড়াও নরসিংদী, বাবুরহাট, ঢাকা ইসলামপুর থেকে কাপড় ও সদরঘাট থেকে সুতা পাইকারি কিনতে শুরু করেন। এ ছাড়া হস্তশিল্পের কাজের জন্য দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলা থেকেও কর্মী নিয়োগ করেন তিনি। বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে নিজেই কাপড়, সুতা কিনে তাতে নিজের ডিজাইন করা নকশি সেলাই করান কর্মীদের দিয়ে। আবার প্রস্তুতকৃত পণ্য চাঁদপুর, নরসিংদী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিক্রি করেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে খুচরা বিক্রির কাজও শুরু করেন। কাজের সুবিধার্থে দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদ আলী মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সামনে গড়ে তোলেন ‘দি সান ফ্যাশন হাউস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। 

উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর গল্পটা সাদিয়ার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি শুরুর দিকে জামালপুর থেকে কাপড় কিনতাম। এ কাপড়ে নকশি ছাপ দিয়ে সেলাই করার জন্য চুক্তিতে এলাকার বেকার নারীদের দিতাম। এ কাজে তারা জন প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করেন। স্বামীর পাশাপাশি নিজেরা অর্থ উপার্জন করে সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত। আর এ কারণে হস্তশিল্পের কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়েছেন তারা।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দি সান ফ্যাশন হাউসের সুপারভাইজার কাজলী বেগম বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানে ওয়ান পিচ, টু পিচ, থ্রি পিচ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ৮ রকমের নকশি কাঁথা, ৭ রকমের বিছানার চাদর, ছোটদের জামা তৈরি ও নকশি সেলাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুচরা ও পাইকারিতে বিক্রয় করা হচ্ছে। এ হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠানে এখন ১ হাজার ২০০ নারী কর্মী কাজ করছেন।’ 

নারী কর্মীদের কাজ দেখছেন সাদিয়া। সাদিয়ার হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাস আয় হয় প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা। এতে আনন্দিত সাদিয়া। চাকরি না করে কেন হস্তশিল্পের কাজে নিযুক্ত হলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আসলে চাই, আমার মতো সবাই আয় করুক। সবার সংসারের অভাব দূর হোক। আমি সব সময় দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে আমার ব্যবসার মুনাফা তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের, এক ভাগ ব্যবসার পুঁজি বৃদ্ধিতে এবং অন্য একভাগ কর্মীদের জন্য ব্যয় করব।’ 

এ বিষয়ে বালুগ্রামের বিধবা নার্গিস বেগম বলেন, ‘সাদিয়া নেওয়াজ আমাদের পথ প্রদর্শক। তাঁর হাত ধরে হস্তশিল্পের কাজ করে আজ আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি। এতে দূর হয়েছে আমাদের সংসারের অভাব-অনটন।’ 

সাদিয়া নেওয়াজর স্বামী আলী নেওয়াজ ছানা বলেন, ‘সাদিয়া কঠোর পরিশ্রম করে আজ স্বাবলম্বী। সাদিয়া শুধু নিজের সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আনেননি। পাশাপাশি ১ হাজার ২০০ কর্মীদের পরিবারের সচ্ছলতা এনেছেন। এমন নারী উদ্যোক্তা পরিবার, সমাজ ও জাতির গর্ব।’ 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূর ফাতেমা বলেন, ‘সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য সীমাহীন। সাদিয়া নেওয়াজ এ বৈষম্যকে পেছনে ফেলে নিজের উদ্যোগে হয়েছেন স্বাবলম্বী এবং স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছেন অবহেলিত দরিদ্র পরিবারের নারীদের। এ কাজে সামান্য পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এত দূর এসেছেন। আমি সাদিয়ার সফলতা কামনা করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বেনাপোলে দুই মাস ধরে আটকা সুপারিবাহী ১৫০ ট্রাক, দৈনিক লোকসান ৩ লাখ টাকা

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি  
বেনাপোল বন্দরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের সুপারির রপ্তানি আটকা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেনাপোল বন্দরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের সুপারির রপ্তানি আটকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে আছে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক রপ্তানিমুখী সুপারির ট্রাক। দীর্ঘ এই অচলাবস্থার কারণে রপ্তানিকারকদের প্রতিদিন ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা হিসেবে প্রায় ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের মান নির্ণয় ও কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টির ফলেই এই রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

বিশ্বে সুপারি উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এবং গুণগত মানের কারণে ভারতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারি ভারতে রপ্তানি হয়। তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের সুপারি আমদানিতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ। এমন রমরমা বাণিজ্যের মধ্যেই দেড় শতাধিক সুপারির ট্রাক প্রায় দুই মাস ধরে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে।

দীর্ঘদিন বন্দরে আটকে থাকায় পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাক চালকদেরও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আটকে থাকা সুপারি বহনকারী ট্রাক চালক মমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১ মাস ২৭ দিন ধরে এখানে আটকে থেকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওপারের ব্যবসায়ীরা সুপারির বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট করে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ট্রাক দেরিতে নিচ্ছেন বলে আমাদের সন্দেহ।’

রপ্তানিকারক পণ্য ছাড়কারী প্রতিষ্ঠান আউলিয়া এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে পরীক্ষাসহ নানা কারণ দেখিয়ে তারা পণ্য নিতে দেরি করছে। আমরা দ্রুত এই পণ্য খালাসের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত সরকার রপ্তানি বাণিজ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও নানা শর্ত আরোপের ফলে বর্তমানে রপ্তানির পরিমাণ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর। এ অবস্থা কাটাতে দ্রুত দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কাঠের আসবাবপত্র, ফলের জুসসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সড়ক পথে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

তবে বন্দর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এই সংকটের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বেনাপোল বন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আবু তালহা জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ১০ হাজার ৬৫০ টন সুপারি রপ্তানি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে সমস্যার কারণে বন্দরে সে সব ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে শুনেছি, সেটা ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যে সব ট্রাকের কাগজপত্র আমাদের কাছে আসছে, সেগুলো ভারতে ঢুকছে।’

তিনি আরও জানান, যেসব সুপারির ট্রাকের কাগজ হাতে পেলে দ্রুত ছাড়করণে সহযোগিতা করা হবে। তবে রপ্তানিকারকেরা বলছেন, এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত