রোকন উদ্দীন, ঢাকা

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে। অগ্রহায়ণ-পৌষের শেষ বিকেলে সূর্যের আলো যখন মিশে যায় পুষ্পমঞ্জরির রঙে, মাঝখানে ছোট কালো বীজগুলো যেন রত্নখচিত মুকুট হয়ে ওঠে। মনে হয়, ফসলের মাঠে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে, আগুন হয়ে ঝলমল করছে। এসব বর্ণিল গল্পের নায়ক সূর্যমুখী ফুল।
সারা দেশের ফসলের মাঠে হরহামেশাই এখন দেখা মেলে সূর্যমুখীর। এর সৌরভ ছড়ানোর নেপথ্যে আছেন গ্রাম-বাংলার কৃষাণেরা। তবে তাঁরা মুগ্ধতার টানে নয়, চাষ করেন মুনাফার টানে—বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের বাড়তি দামের আশায়। গুণের কারণে বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে, দামেও রয়েছে বাড়তি কদর। প্রায় একই খরচে বেশি লাভের হাতছানি কে উপেক্ষা করবে! তাই সূর্যমুখী এখন শুধু শস্য নয়, কৃষকের চোখে এক সম্ভাবনার আলোকময় ক্ষেত্র।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশে সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। সূর্যমুখী তেলের চাষ বৃদ্ধি পেলে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে আসবে, যা শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই করবে না, দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদাও অনেকাংশে স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা—সবাই উপকৃত হবে এবং দেশের কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তাই ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনে সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সূর্যমুখী তেল ছিল শুধু অভিজাত হোটেল বা ধনিক শ্রেণির লোকদের রান্নার অংশ। তবে করোনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এর স্বাস্থ্যকর গুণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের আমদানির পাশাপাশি দেশে এর উৎপাদনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের কৃষাণেরা আগ্রহের সঙ্গে সূর্যমুখীর চাষ করছেন।
কৃষাণেরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের জন্য এক কেজি বীজই যথেষ্ট এবং সারের পরিমাণও খুবই কম লাগে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে শ্রমের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এতে উৎপাদন হয় বেশি এবং লাভও অনেক ভালো।
আছে হরেক উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখী বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক অ্যাসিড ও মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ৬ রয়েছে, যা শতভাগ উপকারী ফ্যাট। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ই, ক এবং মিনারেলও রয়েছে। সূর্যমুখী তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ। তা ছাড়া, সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের খাদ্য এবং গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কারণে দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে।
বাড়ছে আবাদ
একদিকে আছে হরেক রকমের উপকারিতা, অন্যদিকে ফসল হিসেবেও বেশ লাভজনক। এ কারণে কৃষাণেরা এখন সূর্যমুখী চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে প্রতিবছর দেশে সূর্যমুখী চাষের পরিধি বাড়ছে। এই আগ্রহের বৃদ্ধির ফলে সূর্যমুখী আবাদে ফসলি জমির আওতা এবং উৎপাদন দুটোই বেড়ে চলেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশে মাত্র ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল এবং ওই বছর সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ৫২ টন। তবে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সূর্যমুখী চাষের উৎপাদন ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে মোট ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের কৃষির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে দেশে ২ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৭২৫ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন হয়। পরের বছর, ২০২০-২১ সালে এটি বেড়ে ১৫ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৬৫৪ টনে পৌঁছায়। ২০২১-২২ সালে ৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ হাজার টন সূর্যমুখী উৎপাদিত হয় এবং ২০২২-২৩ সালে এই পরিমাণ বেড়ে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৮৪২ টনে দাঁড়ায়।
খরচ কম, আয় বেশি
কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী হালমাঝিপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল হক জানান, আগে তিনি বিভিন্ন মৌসুমি ফসল চাষ করতেন। ২০২৩ সালে কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে সূর্যমুখী বীজ ও সার পেয়ে ২৫ শতক জমিতে চাষ করেন। এতে খরচ হয়েছিল ৮ হাজার টাকা এবং বীজ বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছর বেশি বীজ সংগ্রহ করে ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন, যা থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়।
দেশের বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এসব জায়গায় প্রধানত ডি এস-১ এবং বারি সূর্যমুখী-২ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
থাকছে প্রণোদনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) সরকার শফি উদ্দীন আহমদ জানান, কৃষকদের বীজ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে করে প্রতিবছর আবাদের আওতাও বাড়ছে। সরকারের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে সূর্যমুখীর জমির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা। ভুট্টা, সরিষা ও অন্যান্য ফসলের চাহিদা বাড়ছে, তাই সূর্যমুখীর জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া বীজের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়; যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে কৃষকের জন্য সহজলভ্য ও অধিক আয়ের ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
তবু আমদানি বেশি
যে পরিমাণ সূর্যমুখী তেল দেশের চাহিদা পূরণে উৎপাদিত হয়, তার থেকে অনেক বেশি আমদানি করা হয় প্রতিবছর। চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বন্ডের আওতায় ও বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৩২৭ টন। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১৪ হাজার ৪০০ টনে পৌঁছেছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধিত সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ৬০৭ টন এবং ২০২৩-২৪ সালে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে আমদানি বেড়ে ১৩ হাজার ০৭৯ টন হয়েছে।
বাজারে চাহিদা
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২৩ হাজার ৭১১ টন সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার হয়েছে, যা ওই সময়ের চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কৃষিবিশেষজ্ঞদের মতে, তিন কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে এক কেজি সূর্যমুখী তেল উৎপন্ন হয়। এই হিসাবে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদিত ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী বীজ থেকে ১০ হাজার ৬৩২ টন তেল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই সময় বিদেশ থেকে ১৩ হাজার ৭৯ টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করা হয়। দেশে বর্তমানে মাথাপিছু ৪০ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে, যা মোট ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪১ জনের জন্য যথেষ্ট। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৯৫ শতাংশ।
ব্র্যান্ডনির্ভর বাজার
বাজারে দেশি ও বিদেশি বেশ কিছু ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও পরিশোধিত ফেয়ার গ্রুপের ওলিটালিয়া এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের জনপ্রিয় কিংস ব্র্যান্ড। গ্লোব এডিবল অয়েলও সূর্যমুখী তেলের কারখানা স্থাপন করে শেফ ব্র্যান্ডে তেল বিক্রি করছে। স্কয়ার গ্রুপের রাঁধুনী ব্র্যান্ড এবং বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের ফরচুন ব্র্যান্ডও বাজারে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত সূর্যমুখী তেলের বড় অংশ এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার অধিকাংশ আসে ইতালি থেকে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকেও আসে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যান্ট, বর্গেস, কার্নেল, লা ইস্পানোলা, গোল্ডেন ড্রপ, সানলিকো, অর্কিডসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ড।
দামও নাগালের বাইরে
সূর্যমুখী তেল বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছাচ্ছে। বিশেষত শহরের স্টোরগুলোতে এর উপস্থিতি বেশ স্পষ্ট। তবে এর দাম অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। যাঁদের সূর্যমুখী তেলের প্রতি আগ্রহ আছে, তাঁরা মূলত দামের কারণে তা কিনতে অনীহা প্রকাশ করেন, বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষ। তবু ধনিক শ্রেণির পরিবারগুলোতে এই তেলের ব্যবহার রয়েছে। প্রতি লিটার ফর্টিফায়েড সানফ্লাওয়ার তেল ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর দুই লিটারের বোতল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার বোতল ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার ২৯৫ টাকায় পাওয়া যায়। তুলনা করলে সয়াবিন তেলের দাম অনেক কম, মাত্র ১৭৫ টাকা প্রতি লিটার এবং পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮৯০ টাকায় মেলে, যা সূর্যমুখী তেলের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। তবে দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় উত্থান ঘটায় রুচির পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে সূর্যমুখী তেলে। উচ্চমূল্য সত্ত্বেও এঁদের অনেকেই এখন নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করছেন। ফলে দোকানগুলোতে এই তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে শুধু রাজধানীর সুপারশপে সূর্যমুখী তেল বিক্রি হতো, কিন্তু এখন এটি অভিজাত এলাকার মুদি দোকান, চেইনশপ, সুপারশপ ও মিনিমার্টে বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ জানান, এক-দেড় বছর আগে পর্যন্ত তাঁর দোকানে সূর্যমুখী তেল ছিল না, তবে এখন ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য এটি রাখছেন। অর্ডার দিলে সরবরাহকারীরা সরাসরি দোকানে সরবরাহ করেন এবং লিটারে ২৫ টাকা মুনাফা হয়।
সয়াবিনের বিকল্প সূর্যমুখী!
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের দাম এখন প্রায় একই এবং চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এতে সূর্যমুখী তেল দেশে সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দরকার শুধু সরকারের নীতি সহায়তা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ভোজ্যতেলের এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্য ছিল অপরিশোধিত পাম তেল প্রতি টন ১ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ হাজার ৪৯ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া অপরিশোধিত ক্যানোলা তেল (রেপসিড তেল) ১ হাজার ১২০ মার্কিন ডলার এবং অপরিশোধিত সূর্যমুখী তেল ১ হাজার ১৬৫ মার্কিন ডলার প্রতি টন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যদি সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের ভ্যাট ও ট্যাক্সের হার সমান করে, তবে দামও সমান হতে পারে।
দেশে সূর্যমুখী তেলের অন্যতম আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেহেতু দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, সরকার চাইলে এটি সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন ট্যারিফ ভ্যালু ও শুল্ক হারকে সমান পর্যায়ে রাখা।’
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পাম ও সূর্যমুখী তেলের দাম প্রায় সমান হওয়ায় ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, যদি শুল্ক কাঠামো সমান করা হয়, তবে সূর্যমুখী তেল বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হতে পারে।
ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণ
ট্যারিফ কমিশন তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক কাঠামো পর্যালোচনা করে সূর্যমুখী তেলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে। এতে পরিশোধিত তেলে ২০% এবং অপরিশোধিত তেলে ১৫% শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়। আশার কথা হচ্ছে, এনবিআর এই সুপারিশ গ্রহণ করে, সূর্যমুখী তেলের আমদানিতে ১৫% শুল্ক ও ভ্যাট ৫% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে লিটারপ্রতি দাম প্রায় ৫০ টাকা কমে আসবে। তবে সূর্যমুখী তেল সাধারণের নাগালে আনতে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে। অগ্রহায়ণ-পৌষের শেষ বিকেলে সূর্যের আলো যখন মিশে যায় পুষ্পমঞ্জরির রঙে, মাঝখানে ছোট কালো বীজগুলো যেন রত্নখচিত মুকুট হয়ে ওঠে। মনে হয়, ফসলের মাঠে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে, আগুন হয়ে ঝলমল করছে। এসব বর্ণিল গল্পের নায়ক সূর্যমুখী ফুল।
সারা দেশের ফসলের মাঠে হরহামেশাই এখন দেখা মেলে সূর্যমুখীর। এর সৌরভ ছড়ানোর নেপথ্যে আছেন গ্রাম-বাংলার কৃষাণেরা। তবে তাঁরা মুগ্ধতার টানে নয়, চাষ করেন মুনাফার টানে—বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের বাড়তি দামের আশায়। গুণের কারণে বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে, দামেও রয়েছে বাড়তি কদর। প্রায় একই খরচে বেশি লাভের হাতছানি কে উপেক্ষা করবে! তাই সূর্যমুখী এখন শুধু শস্য নয়, কৃষকের চোখে এক সম্ভাবনার আলোকময় ক্ষেত্র।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশে সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। সূর্যমুখী তেলের চাষ বৃদ্ধি পেলে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে আসবে, যা শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই করবে না, দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদাও অনেকাংশে স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা—সবাই উপকৃত হবে এবং দেশের কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তাই ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনে সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সূর্যমুখী তেল ছিল শুধু অভিজাত হোটেল বা ধনিক শ্রেণির লোকদের রান্নার অংশ। তবে করোনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এর স্বাস্থ্যকর গুণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের আমদানির পাশাপাশি দেশে এর উৎপাদনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের কৃষাণেরা আগ্রহের সঙ্গে সূর্যমুখীর চাষ করছেন।
কৃষাণেরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের জন্য এক কেজি বীজই যথেষ্ট এবং সারের পরিমাণও খুবই কম লাগে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে শ্রমের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এতে উৎপাদন হয় বেশি এবং লাভও অনেক ভালো।
আছে হরেক উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখী বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক অ্যাসিড ও মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ৬ রয়েছে, যা শতভাগ উপকারী ফ্যাট। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ই, ক এবং মিনারেলও রয়েছে। সূর্যমুখী তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ। তা ছাড়া, সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের খাদ্য এবং গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কারণে দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে।
বাড়ছে আবাদ
একদিকে আছে হরেক রকমের উপকারিতা, অন্যদিকে ফসল হিসেবেও বেশ লাভজনক। এ কারণে কৃষাণেরা এখন সূর্যমুখী চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে প্রতিবছর দেশে সূর্যমুখী চাষের পরিধি বাড়ছে। এই আগ্রহের বৃদ্ধির ফলে সূর্যমুখী আবাদে ফসলি জমির আওতা এবং উৎপাদন দুটোই বেড়ে চলেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশে মাত্র ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল এবং ওই বছর সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ৫২ টন। তবে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সূর্যমুখী চাষের উৎপাদন ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে মোট ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের কৃষির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে দেশে ২ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৭২৫ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন হয়। পরের বছর, ২০২০-২১ সালে এটি বেড়ে ১৫ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৬৫৪ টনে পৌঁছায়। ২০২১-২২ সালে ৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ হাজার টন সূর্যমুখী উৎপাদিত হয় এবং ২০২২-২৩ সালে এই পরিমাণ বেড়ে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৮৪২ টনে দাঁড়ায়।
খরচ কম, আয় বেশি
কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী হালমাঝিপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল হক জানান, আগে তিনি বিভিন্ন মৌসুমি ফসল চাষ করতেন। ২০২৩ সালে কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে সূর্যমুখী বীজ ও সার পেয়ে ২৫ শতক জমিতে চাষ করেন। এতে খরচ হয়েছিল ৮ হাজার টাকা এবং বীজ বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছর বেশি বীজ সংগ্রহ করে ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন, যা থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়।
দেশের বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এসব জায়গায় প্রধানত ডি এস-১ এবং বারি সূর্যমুখী-২ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
থাকছে প্রণোদনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) সরকার শফি উদ্দীন আহমদ জানান, কৃষকদের বীজ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে করে প্রতিবছর আবাদের আওতাও বাড়ছে। সরকারের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে সূর্যমুখীর জমির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা। ভুট্টা, সরিষা ও অন্যান্য ফসলের চাহিদা বাড়ছে, তাই সূর্যমুখীর জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া বীজের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়; যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে কৃষকের জন্য সহজলভ্য ও অধিক আয়ের ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
তবু আমদানি বেশি
যে পরিমাণ সূর্যমুখী তেল দেশের চাহিদা পূরণে উৎপাদিত হয়, তার থেকে অনেক বেশি আমদানি করা হয় প্রতিবছর। চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বন্ডের আওতায় ও বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৩২৭ টন। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১৪ হাজার ৪০০ টনে পৌঁছেছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধিত সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ৬০৭ টন এবং ২০২৩-২৪ সালে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে আমদানি বেড়ে ১৩ হাজার ০৭৯ টন হয়েছে।
বাজারে চাহিদা
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২৩ হাজার ৭১১ টন সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার হয়েছে, যা ওই সময়ের চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কৃষিবিশেষজ্ঞদের মতে, তিন কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে এক কেজি সূর্যমুখী তেল উৎপন্ন হয়। এই হিসাবে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদিত ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী বীজ থেকে ১০ হাজার ৬৩২ টন তেল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই সময় বিদেশ থেকে ১৩ হাজার ৭৯ টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করা হয়। দেশে বর্তমানে মাথাপিছু ৪০ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে, যা মোট ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪১ জনের জন্য যথেষ্ট। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৯৫ শতাংশ।
ব্র্যান্ডনির্ভর বাজার
বাজারে দেশি ও বিদেশি বেশ কিছু ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও পরিশোধিত ফেয়ার গ্রুপের ওলিটালিয়া এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের জনপ্রিয় কিংস ব্র্যান্ড। গ্লোব এডিবল অয়েলও সূর্যমুখী তেলের কারখানা স্থাপন করে শেফ ব্র্যান্ডে তেল বিক্রি করছে। স্কয়ার গ্রুপের রাঁধুনী ব্র্যান্ড এবং বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের ফরচুন ব্র্যান্ডও বাজারে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত সূর্যমুখী তেলের বড় অংশ এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার অধিকাংশ আসে ইতালি থেকে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকেও আসে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যান্ট, বর্গেস, কার্নেল, লা ইস্পানোলা, গোল্ডেন ড্রপ, সানলিকো, অর্কিডসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ড।
দামও নাগালের বাইরে
সূর্যমুখী তেল বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছাচ্ছে। বিশেষত শহরের স্টোরগুলোতে এর উপস্থিতি বেশ স্পষ্ট। তবে এর দাম অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। যাঁদের সূর্যমুখী তেলের প্রতি আগ্রহ আছে, তাঁরা মূলত দামের কারণে তা কিনতে অনীহা প্রকাশ করেন, বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষ। তবু ধনিক শ্রেণির পরিবারগুলোতে এই তেলের ব্যবহার রয়েছে। প্রতি লিটার ফর্টিফায়েড সানফ্লাওয়ার তেল ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর দুই লিটারের বোতল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার বোতল ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার ২৯৫ টাকায় পাওয়া যায়। তুলনা করলে সয়াবিন তেলের দাম অনেক কম, মাত্র ১৭৫ টাকা প্রতি লিটার এবং পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮৯০ টাকায় মেলে, যা সূর্যমুখী তেলের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। তবে দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় উত্থান ঘটায় রুচির পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে সূর্যমুখী তেলে। উচ্চমূল্য সত্ত্বেও এঁদের অনেকেই এখন নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করছেন। ফলে দোকানগুলোতে এই তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে শুধু রাজধানীর সুপারশপে সূর্যমুখী তেল বিক্রি হতো, কিন্তু এখন এটি অভিজাত এলাকার মুদি দোকান, চেইনশপ, সুপারশপ ও মিনিমার্টে বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ জানান, এক-দেড় বছর আগে পর্যন্ত তাঁর দোকানে সূর্যমুখী তেল ছিল না, তবে এখন ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য এটি রাখছেন। অর্ডার দিলে সরবরাহকারীরা সরাসরি দোকানে সরবরাহ করেন এবং লিটারে ২৫ টাকা মুনাফা হয়।
সয়াবিনের বিকল্প সূর্যমুখী!
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের দাম এখন প্রায় একই এবং চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এতে সূর্যমুখী তেল দেশে সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দরকার শুধু সরকারের নীতি সহায়তা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ভোজ্যতেলের এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্য ছিল অপরিশোধিত পাম তেল প্রতি টন ১ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ হাজার ৪৯ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া অপরিশোধিত ক্যানোলা তেল (রেপসিড তেল) ১ হাজার ১২০ মার্কিন ডলার এবং অপরিশোধিত সূর্যমুখী তেল ১ হাজার ১৬৫ মার্কিন ডলার প্রতি টন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যদি সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের ভ্যাট ও ট্যাক্সের হার সমান করে, তবে দামও সমান হতে পারে।
দেশে সূর্যমুখী তেলের অন্যতম আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেহেতু দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, সরকার চাইলে এটি সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন ট্যারিফ ভ্যালু ও শুল্ক হারকে সমান পর্যায়ে রাখা।’
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পাম ও সূর্যমুখী তেলের দাম প্রায় সমান হওয়ায় ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, যদি শুল্ক কাঠামো সমান করা হয়, তবে সূর্যমুখী তেল বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হতে পারে।
ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণ
ট্যারিফ কমিশন তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক কাঠামো পর্যালোচনা করে সূর্যমুখী তেলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে। এতে পরিশোধিত তেলে ২০% এবং অপরিশোধিত তেলে ১৫% শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়। আশার কথা হচ্ছে, এনবিআর এই সুপারিশ গ্রহণ করে, সূর্যমুখী তেলের আমদানিতে ১৫% শুল্ক ও ভ্যাট ৫% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে লিটারপ্রতি দাম প্রায় ৫০ টাকা কমে আসবে। তবে সূর্যমুখী তেল সাধারণের নাগালে আনতে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোকন উদ্দীন, ঢাকা

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে। অগ্রহায়ণ-পৌষের শেষ বিকেলে সূর্যের আলো যখন মিশে যায় পুষ্পমঞ্জরির রঙে, মাঝখানে ছোট কালো বীজগুলো যেন রত্নখচিত মুকুট হয়ে ওঠে। মনে হয়, ফসলের মাঠে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে, আগুন হয়ে ঝলমল করছে। এসব বর্ণিল গল্পের নায়ক সূর্যমুখী ফুল।
সারা দেশের ফসলের মাঠে হরহামেশাই এখন দেখা মেলে সূর্যমুখীর। এর সৌরভ ছড়ানোর নেপথ্যে আছেন গ্রাম-বাংলার কৃষাণেরা। তবে তাঁরা মুগ্ধতার টানে নয়, চাষ করেন মুনাফার টানে—বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের বাড়তি দামের আশায়। গুণের কারণে বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে, দামেও রয়েছে বাড়তি কদর। প্রায় একই খরচে বেশি লাভের হাতছানি কে উপেক্ষা করবে! তাই সূর্যমুখী এখন শুধু শস্য নয়, কৃষকের চোখে এক সম্ভাবনার আলোকময় ক্ষেত্র।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশে সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। সূর্যমুখী তেলের চাষ বৃদ্ধি পেলে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে আসবে, যা শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই করবে না, দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদাও অনেকাংশে স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা—সবাই উপকৃত হবে এবং দেশের কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তাই ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনে সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সূর্যমুখী তেল ছিল শুধু অভিজাত হোটেল বা ধনিক শ্রেণির লোকদের রান্নার অংশ। তবে করোনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এর স্বাস্থ্যকর গুণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের আমদানির পাশাপাশি দেশে এর উৎপাদনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের কৃষাণেরা আগ্রহের সঙ্গে সূর্যমুখীর চাষ করছেন।
কৃষাণেরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের জন্য এক কেজি বীজই যথেষ্ট এবং সারের পরিমাণও খুবই কম লাগে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে শ্রমের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এতে উৎপাদন হয় বেশি এবং লাভও অনেক ভালো।
আছে হরেক উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখী বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক অ্যাসিড ও মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ৬ রয়েছে, যা শতভাগ উপকারী ফ্যাট। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ই, ক এবং মিনারেলও রয়েছে। সূর্যমুখী তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ। তা ছাড়া, সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের খাদ্য এবং গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কারণে দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে।
বাড়ছে আবাদ
একদিকে আছে হরেক রকমের উপকারিতা, অন্যদিকে ফসল হিসেবেও বেশ লাভজনক। এ কারণে কৃষাণেরা এখন সূর্যমুখী চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে প্রতিবছর দেশে সূর্যমুখী চাষের পরিধি বাড়ছে। এই আগ্রহের বৃদ্ধির ফলে সূর্যমুখী আবাদে ফসলি জমির আওতা এবং উৎপাদন দুটোই বেড়ে চলেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশে মাত্র ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল এবং ওই বছর সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ৫২ টন। তবে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সূর্যমুখী চাষের উৎপাদন ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে মোট ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের কৃষির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে দেশে ২ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৭২৫ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন হয়। পরের বছর, ২০২০-২১ সালে এটি বেড়ে ১৫ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৬৫৪ টনে পৌঁছায়। ২০২১-২২ সালে ৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ হাজার টন সূর্যমুখী উৎপাদিত হয় এবং ২০২২-২৩ সালে এই পরিমাণ বেড়ে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৮৪২ টনে দাঁড়ায়।
খরচ কম, আয় বেশি
কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী হালমাঝিপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল হক জানান, আগে তিনি বিভিন্ন মৌসুমি ফসল চাষ করতেন। ২০২৩ সালে কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে সূর্যমুখী বীজ ও সার পেয়ে ২৫ শতক জমিতে চাষ করেন। এতে খরচ হয়েছিল ৮ হাজার টাকা এবং বীজ বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছর বেশি বীজ সংগ্রহ করে ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন, যা থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়।
দেশের বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এসব জায়গায় প্রধানত ডি এস-১ এবং বারি সূর্যমুখী-২ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
থাকছে প্রণোদনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) সরকার শফি উদ্দীন আহমদ জানান, কৃষকদের বীজ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে করে প্রতিবছর আবাদের আওতাও বাড়ছে। সরকারের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে সূর্যমুখীর জমির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা। ভুট্টা, সরিষা ও অন্যান্য ফসলের চাহিদা বাড়ছে, তাই সূর্যমুখীর জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া বীজের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়; যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে কৃষকের জন্য সহজলভ্য ও অধিক আয়ের ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
তবু আমদানি বেশি
যে পরিমাণ সূর্যমুখী তেল দেশের চাহিদা পূরণে উৎপাদিত হয়, তার থেকে অনেক বেশি আমদানি করা হয় প্রতিবছর। চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বন্ডের আওতায় ও বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৩২৭ টন। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১৪ হাজার ৪০০ টনে পৌঁছেছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধিত সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ৬০৭ টন এবং ২০২৩-২৪ সালে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে আমদানি বেড়ে ১৩ হাজার ০৭৯ টন হয়েছে।
বাজারে চাহিদা
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২৩ হাজার ৭১১ টন সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার হয়েছে, যা ওই সময়ের চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কৃষিবিশেষজ্ঞদের মতে, তিন কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে এক কেজি সূর্যমুখী তেল উৎপন্ন হয়। এই হিসাবে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদিত ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী বীজ থেকে ১০ হাজার ৬৩২ টন তেল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই সময় বিদেশ থেকে ১৩ হাজার ৭৯ টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করা হয়। দেশে বর্তমানে মাথাপিছু ৪০ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে, যা মোট ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪১ জনের জন্য যথেষ্ট। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৯৫ শতাংশ।
ব্র্যান্ডনির্ভর বাজার
বাজারে দেশি ও বিদেশি বেশ কিছু ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও পরিশোধিত ফেয়ার গ্রুপের ওলিটালিয়া এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের জনপ্রিয় কিংস ব্র্যান্ড। গ্লোব এডিবল অয়েলও সূর্যমুখী তেলের কারখানা স্থাপন করে শেফ ব্র্যান্ডে তেল বিক্রি করছে। স্কয়ার গ্রুপের রাঁধুনী ব্র্যান্ড এবং বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের ফরচুন ব্র্যান্ডও বাজারে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত সূর্যমুখী তেলের বড় অংশ এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার অধিকাংশ আসে ইতালি থেকে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকেও আসে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যান্ট, বর্গেস, কার্নেল, লা ইস্পানোলা, গোল্ডেন ড্রপ, সানলিকো, অর্কিডসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ড।
দামও নাগালের বাইরে
সূর্যমুখী তেল বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছাচ্ছে। বিশেষত শহরের স্টোরগুলোতে এর উপস্থিতি বেশ স্পষ্ট। তবে এর দাম অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। যাঁদের সূর্যমুখী তেলের প্রতি আগ্রহ আছে, তাঁরা মূলত দামের কারণে তা কিনতে অনীহা প্রকাশ করেন, বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষ। তবু ধনিক শ্রেণির পরিবারগুলোতে এই তেলের ব্যবহার রয়েছে। প্রতি লিটার ফর্টিফায়েড সানফ্লাওয়ার তেল ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর দুই লিটারের বোতল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার বোতল ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার ২৯৫ টাকায় পাওয়া যায়। তুলনা করলে সয়াবিন তেলের দাম অনেক কম, মাত্র ১৭৫ টাকা প্রতি লিটার এবং পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮৯০ টাকায় মেলে, যা সূর্যমুখী তেলের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। তবে দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় উত্থান ঘটায় রুচির পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে সূর্যমুখী তেলে। উচ্চমূল্য সত্ত্বেও এঁদের অনেকেই এখন নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করছেন। ফলে দোকানগুলোতে এই তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে শুধু রাজধানীর সুপারশপে সূর্যমুখী তেল বিক্রি হতো, কিন্তু এখন এটি অভিজাত এলাকার মুদি দোকান, চেইনশপ, সুপারশপ ও মিনিমার্টে বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ জানান, এক-দেড় বছর আগে পর্যন্ত তাঁর দোকানে সূর্যমুখী তেল ছিল না, তবে এখন ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য এটি রাখছেন। অর্ডার দিলে সরবরাহকারীরা সরাসরি দোকানে সরবরাহ করেন এবং লিটারে ২৫ টাকা মুনাফা হয়।
সয়াবিনের বিকল্প সূর্যমুখী!
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের দাম এখন প্রায় একই এবং চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এতে সূর্যমুখী তেল দেশে সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দরকার শুধু সরকারের নীতি সহায়তা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ভোজ্যতেলের এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্য ছিল অপরিশোধিত পাম তেল প্রতি টন ১ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ হাজার ৪৯ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া অপরিশোধিত ক্যানোলা তেল (রেপসিড তেল) ১ হাজার ১২০ মার্কিন ডলার এবং অপরিশোধিত সূর্যমুখী তেল ১ হাজার ১৬৫ মার্কিন ডলার প্রতি টন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যদি সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের ভ্যাট ও ট্যাক্সের হার সমান করে, তবে দামও সমান হতে পারে।
দেশে সূর্যমুখী তেলের অন্যতম আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেহেতু দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, সরকার চাইলে এটি সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন ট্যারিফ ভ্যালু ও শুল্ক হারকে সমান পর্যায়ে রাখা।’
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পাম ও সূর্যমুখী তেলের দাম প্রায় সমান হওয়ায় ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, যদি শুল্ক কাঠামো সমান করা হয়, তবে সূর্যমুখী তেল বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হতে পারে।
ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণ
ট্যারিফ কমিশন তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক কাঠামো পর্যালোচনা করে সূর্যমুখী তেলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে। এতে পরিশোধিত তেলে ২০% এবং অপরিশোধিত তেলে ১৫% শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়। আশার কথা হচ্ছে, এনবিআর এই সুপারিশ গ্রহণ করে, সূর্যমুখী তেলের আমদানিতে ১৫% শুল্ক ও ভ্যাট ৫% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে লিটারপ্রতি দাম প্রায় ৫০ টাকা কমে আসবে। তবে সূর্যমুখী তেল সাধারণের নাগালে আনতে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে। অগ্রহায়ণ-পৌষের শেষ বিকেলে সূর্যের আলো যখন মিশে যায় পুষ্পমঞ্জরির রঙে, মাঝখানে ছোট কালো বীজগুলো যেন রত্নখচিত মুকুট হয়ে ওঠে। মনে হয়, ফসলের মাঠে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে, আগুন হয়ে ঝলমল করছে। এসব বর্ণিল গল্পের নায়ক সূর্যমুখী ফুল।
সারা দেশের ফসলের মাঠে হরহামেশাই এখন দেখা মেলে সূর্যমুখীর। এর সৌরভ ছড়ানোর নেপথ্যে আছেন গ্রাম-বাংলার কৃষাণেরা। তবে তাঁরা মুগ্ধতার টানে নয়, চাষ করেন মুনাফার টানে—বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের বাড়তি দামের আশায়। গুণের কারণে বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে, দামেও রয়েছে বাড়তি কদর। প্রায় একই খরচে বেশি লাভের হাতছানি কে উপেক্ষা করবে! তাই সূর্যমুখী এখন শুধু শস্য নয়, কৃষকের চোখে এক সম্ভাবনার আলোকময় ক্ষেত্র।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশে সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। সূর্যমুখী তেলের চাষ বৃদ্ধি পেলে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে আসবে, যা শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই করবে না, দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদাও অনেকাংশে স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা—সবাই উপকৃত হবে এবং দেশের কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তাই ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনে সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে সূর্যমুখী তেল ছিল শুধু অভিজাত হোটেল বা ধনিক শ্রেণির লোকদের রান্নার অংশ। তবে করোনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এর স্বাস্থ্যকর গুণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের আমদানির পাশাপাশি দেশে এর উৎপাদনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের কৃষাণেরা আগ্রহের সঙ্গে সূর্যমুখীর চাষ করছেন।
কৃষাণেরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের জন্য এক কেজি বীজই যথেষ্ট এবং সারের পরিমাণও খুবই কম লাগে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে শ্রমের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এতে উৎপাদন হয় বেশি এবং লাভও অনেক ভালো।
আছে হরেক উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখী বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক অ্যাসিড ও মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ৬ রয়েছে, যা শতভাগ উপকারী ফ্যাট। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ই, ক এবং মিনারেলও রয়েছে। সূর্যমুখী তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ। তা ছাড়া, সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের খাদ্য এবং গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কারণে দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে।
বাড়ছে আবাদ
একদিকে আছে হরেক রকমের উপকারিতা, অন্যদিকে ফসল হিসেবেও বেশ লাভজনক। এ কারণে কৃষাণেরা এখন সূর্যমুখী চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে প্রতিবছর দেশে সূর্যমুখী চাষের পরিধি বাড়ছে। এই আগ্রহের বৃদ্ধির ফলে সূর্যমুখী আবাদে ফসলি জমির আওতা এবং উৎপাদন দুটোই বেড়ে চলেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশে মাত্র ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল এবং ওই বছর সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ৫২ টন। তবে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সূর্যমুখী চাষের উৎপাদন ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে মোট ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের কৃষির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে দেশে ২ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৭২৫ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন হয়। পরের বছর, ২০২০-২১ সালে এটি বেড়ে ১৫ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৬৫৪ টনে পৌঁছায়। ২০২১-২২ সালে ৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ হাজার টন সূর্যমুখী উৎপাদিত হয় এবং ২০২২-২৩ সালে এই পরিমাণ বেড়ে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৮৪২ টনে দাঁড়ায়।
খরচ কম, আয় বেশি
কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী হালমাঝিপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল হক জানান, আগে তিনি বিভিন্ন মৌসুমি ফসল চাষ করতেন। ২০২৩ সালে কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে সূর্যমুখী বীজ ও সার পেয়ে ২৫ শতক জমিতে চাষ করেন। এতে খরচ হয়েছিল ৮ হাজার টাকা এবং বীজ বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছর বেশি বীজ সংগ্রহ করে ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন, যা থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়।
দেশের বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এসব জায়গায় প্রধানত ডি এস-১ এবং বারি সূর্যমুখী-২ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
থাকছে প্রণোদনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) সরকার শফি উদ্দীন আহমদ জানান, কৃষকদের বীজ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে করে প্রতিবছর আবাদের আওতাও বাড়ছে। সরকারের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে সূর্যমুখীর জমির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা। ভুট্টা, সরিষা ও অন্যান্য ফসলের চাহিদা বাড়ছে, তাই সূর্যমুখীর জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া বীজের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়; যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে কৃষকের জন্য সহজলভ্য ও অধিক আয়ের ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
তবু আমদানি বেশি
যে পরিমাণ সূর্যমুখী তেল দেশের চাহিদা পূরণে উৎপাদিত হয়, তার থেকে অনেক বেশি আমদানি করা হয় প্রতিবছর। চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বন্ডের আওতায় ও বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৩২৭ টন। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১৪ হাজার ৪০০ টনে পৌঁছেছে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধিত সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ৬০৭ টন এবং ২০২৩-২৪ সালে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে আমদানি বেড়ে ১৩ হাজার ০৭৯ টন হয়েছে।
বাজারে চাহিদা
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২৩ হাজার ৭১১ টন সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার হয়েছে, যা ওই সময়ের চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কৃষিবিশেষজ্ঞদের মতে, তিন কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে এক কেজি সূর্যমুখী তেল উৎপন্ন হয়। এই হিসাবে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদিত ৩১ হাজার ৮৯৭ টন সূর্যমুখী বীজ থেকে ১০ হাজার ৬৩২ টন তেল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই সময় বিদেশ থেকে ১৩ হাজার ৭৯ টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করা হয়। দেশে বর্তমানে মাথাপিছু ৪০ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে, যা মোট ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪১ জনের জন্য যথেষ্ট। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৯৫ শতাংশ।
ব্র্যান্ডনির্ভর বাজার
বাজারে দেশি ও বিদেশি বেশ কিছু ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও পরিশোধিত ফেয়ার গ্রুপের ওলিটালিয়া এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের জনপ্রিয় কিংস ব্র্যান্ড। গ্লোব এডিবল অয়েলও সূর্যমুখী তেলের কারখানা স্থাপন করে শেফ ব্র্যান্ডে তেল বিক্রি করছে। স্কয়ার গ্রুপের রাঁধুনী ব্র্যান্ড এবং বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের ফরচুন ব্র্যান্ডও বাজারে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত সূর্যমুখী তেলের বড় অংশ এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার অধিকাংশ আসে ইতালি থেকে। পাশাপাশি মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকেও আসে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যান্ট, বর্গেস, কার্নেল, লা ইস্পানোলা, গোল্ডেন ড্রপ, সানলিকো, অর্কিডসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ড।
দামও নাগালের বাইরে
সূর্যমুখী তেল বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছাচ্ছে। বিশেষত শহরের স্টোরগুলোতে এর উপস্থিতি বেশ স্পষ্ট। তবে এর দাম অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। যাঁদের সূর্যমুখী তেলের প্রতি আগ্রহ আছে, তাঁরা মূলত দামের কারণে তা কিনতে অনীহা প্রকাশ করেন, বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষ। তবু ধনিক শ্রেণির পরিবারগুলোতে এই তেলের ব্যবহার রয়েছে। প্রতি লিটার ফর্টিফায়েড সানফ্লাওয়ার তেল ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর দুই লিটারের বোতল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার বোতল ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার ২৯৫ টাকায় পাওয়া যায়। তুলনা করলে সয়াবিন তেলের দাম অনেক কম, মাত্র ১৭৫ টাকা প্রতি লিটার এবং পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮৯০ টাকায় মেলে, যা সূর্যমুখী তেলের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। তবে দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় উত্থান ঘটায় রুচির পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে সূর্যমুখী তেলে। উচ্চমূল্য সত্ত্বেও এঁদের অনেকেই এখন নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করছেন। ফলে দোকানগুলোতে এই তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে শুধু রাজধানীর সুপারশপে সূর্যমুখী তেল বিক্রি হতো, কিন্তু এখন এটি অভিজাত এলাকার মুদি দোকান, চেইনশপ, সুপারশপ ও মিনিমার্টে বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ জানান, এক-দেড় বছর আগে পর্যন্ত তাঁর দোকানে সূর্যমুখী তেল ছিল না, তবে এখন ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য এটি রাখছেন। অর্ডার দিলে সরবরাহকারীরা সরাসরি দোকানে সরবরাহ করেন এবং লিটারে ২৫ টাকা মুনাফা হয়।
সয়াবিনের বিকল্প সূর্যমুখী!
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের দাম এখন প্রায় একই এবং চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এতে সূর্যমুখী তেল দেশে সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দরকার শুধু সরকারের নীতি সহায়তা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ভোজ্যতেলের এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্য ছিল অপরিশোধিত পাম তেল প্রতি টন ১ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ হাজার ৪৯ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া অপরিশোধিত ক্যানোলা তেল (রেপসিড তেল) ১ হাজার ১২০ মার্কিন ডলার এবং অপরিশোধিত সূর্যমুখী তেল ১ হাজার ১৬৫ মার্কিন ডলার প্রতি টন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যদি সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের ভ্যাট ও ট্যাক্সের হার সমান করে, তবে দামও সমান হতে পারে।
দেশে সূর্যমুখী তেলের অন্যতম আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেহেতু দেশে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, সরকার চাইলে এটি সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন ট্যারিফ ভ্যালু ও শুল্ক হারকে সমান পর্যায়ে রাখা।’
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পাম ও সূর্যমুখী তেলের দাম প্রায় সমান হওয়ায় ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, যদি শুল্ক কাঠামো সমান করা হয়, তবে সূর্যমুখী তেল বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হতে পারে।
ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণ
ট্যারিফ কমিশন তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক কাঠামো পর্যালোচনা করে সূর্যমুখী তেলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে। এতে পরিশোধিত তেলে ২০% এবং অপরিশোধিত তেলে ১৫% শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়। আশার কথা হচ্ছে, এনবিআর এই সুপারিশ গ্রহণ করে, সূর্যমুখী তেলের আমদানিতে ১৫% শুল্ক ও ভ্যাট ৫% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে লিটারপ্রতি দাম প্রায় ৫০ টাকা কমে আসবে। তবে সূর্যমুখী তেল সাধারণের নাগালে আনতে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে...
১ ঘণ্টা আগে
দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
৪ ঘণ্টা আগে
সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
৫ ঘণ্টা আগে
পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ...
৫ ঘণ্টা আগেজয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে না কোনো শাখা, অবকাঠামো বা এটিএম বুথ; গ্রাহকেরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময় পাবেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা।
নতুন যুগের আবেদনকারীরা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক-আকিজ এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক। আবেদনের শেষ সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে এই ১২ প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে।
মূলধনে বড় শর্ত
২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন অনুসারে পরিচালিত হতে হবে এবং প্রচলিত ব্যাংকের মতোই সিআরআর (নগদ জমা অনুপাত) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা অনুপাত) বজায় রাখতে হবে।
এই ব্যাংকগুলো বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না এবং কোনো ধরনের ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও পারবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ, খুচরা পর্যায়ের লেনদেন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের সুযোগ থাকবে। অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিও আনতে হবে, যার পরিমাণ উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।
অ্যাপেই পুরো ব্যাংকিং
প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকগুলো হবে সম্পূর্ণ অ্যাপনির্ভর। কোনো শাখা বা এটিএম থাকবে না; বরং গ্রাহকেরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে সব সেবা নিতে পারবেন। প্লাস্টিক কার্ডের পরিবর্তে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল উপায়ে। গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। সব সেবা পরিচালিত হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪-এর আওতায়; যা ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
যোগ্যতার কঠোর মানদণ্ড
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্য এই ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে ব্যাংকিং পেশায় অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্যকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।
ক্যাশলেস সমাজের পথে
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া।’ তিনি জানান, এসব ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ক্যাশলেস সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
যাচাইয়ের পর অনুমোদন
প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর টেকনিক্যাল ও বিজনেস কমিটি নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণরা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পেয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নতুন বছরের প্রথমে শুরু হতে পারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম।
চ্যালেঞ্জ এখন দক্ষতার
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথাগত ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা হালনাগাদ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক সময়ের দাবি। তবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষ জনবল পাওয়া, পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা ও বিপণন কৌশল তথা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্ত রাখা।’

দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে না কোনো শাখা, অবকাঠামো বা এটিএম বুথ; গ্রাহকেরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময় পাবেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা।
নতুন যুগের আবেদনকারীরা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক-আকিজ এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক। আবেদনের শেষ সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে এই ১২ প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে।
মূলধনে বড় শর্ত
২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন অনুসারে পরিচালিত হতে হবে এবং প্রচলিত ব্যাংকের মতোই সিআরআর (নগদ জমা অনুপাত) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা অনুপাত) বজায় রাখতে হবে।
এই ব্যাংকগুলো বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না এবং কোনো ধরনের ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও পারবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ, খুচরা পর্যায়ের লেনদেন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের সুযোগ থাকবে। অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিও আনতে হবে, যার পরিমাণ উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।
অ্যাপেই পুরো ব্যাংকিং
প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকগুলো হবে সম্পূর্ণ অ্যাপনির্ভর। কোনো শাখা বা এটিএম থাকবে না; বরং গ্রাহকেরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে সব সেবা নিতে পারবেন। প্লাস্টিক কার্ডের পরিবর্তে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল উপায়ে। গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। সব সেবা পরিচালিত হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪-এর আওতায়; যা ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
যোগ্যতার কঠোর মানদণ্ড
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্য এই ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে ব্যাংকিং পেশায় অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্যকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।
ক্যাশলেস সমাজের পথে
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া।’ তিনি জানান, এসব ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ক্যাশলেস সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
যাচাইয়ের পর অনুমোদন
প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর টেকনিক্যাল ও বিজনেস কমিটি নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণরা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পেয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নতুন বছরের প্রথমে শুরু হতে পারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম।
চ্যালেঞ্জ এখন দক্ষতার
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথাগত ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা হালনাগাদ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক সময়ের দাবি। তবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষ জনবল পাওয়া, পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা ও বিপণন কৌশল তথা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্ত রাখা।’

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে।
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
৪ ঘণ্টা আগে
সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
৫ ঘণ্টা আগে
পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ...
৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
এ বছর প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১০টি দেশ থেকে ৪৫ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।
এরা মূলত ফ্যাব্রিক মিল (ডেনিম ও নন-ডেনিম), গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক, সুতা উৎপাদক, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ ও ট্রিমস, কেমিক্যালস, মেশিনারি বা প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
এ বছর প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১০টি দেশ থেকে ৪৫ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।
এরা মূলত ফ্যাব্রিক মিল (ডেনিম ও নন-ডেনিম), গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক, সুতা উৎপাদক, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ ও ট্রিমস, কেমিক্যালস, মেশিনারি বা প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে।
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে...
১ ঘণ্টা আগে
সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
৫ ঘণ্টা আগে
পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ...
৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আজ মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৮০ তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১ হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক এবং অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি। মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশীপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে; কিন্তু ব্যাংকটি ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়।
বিএসইসি এও জানায়, এর আগে ৯৬৫ তম কমিশন সভায় ওই বন্ডের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একই অপরাধে এবার ব্যাংকের তৎকালীন এমডি শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন।

সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আজ মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৮০ তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১ হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক এবং অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি। মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশীপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে; কিন্তু ব্যাংকটি ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়।
বিএসইসি এও জানায়, এর আগে ৯৬৫ তম কমিশন সভায় ওই বন্ডের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একই অপরাধে এবার ব্যাংকের তৎকালীন এমডি শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন।

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে।
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে...
১ ঘণ্টা আগে
দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
৪ ঘণ্টা আগে
পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ...
৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরে বিজিএমইএ। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে মার্কিন তুলার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ঘোষিত শুল্ক সুবিধা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা। মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন ইকমের লি ইন, কারগিলের ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসির ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রির ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েন বোসম্যানসহ আরও অনেকে।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নতুন শুল্কছাড় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য এক বড় সুযোগ। কিন্তু এই সুবিধা কার্যকরভাবে পেতে কারখানাগুলোকে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, বর্তমানে আমদানি করা তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা ৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তবে এ জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ। মার্কিন তুলার উচ্চ গুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধার বিষয়ে গবেষণা করে সুতা উৎপাদনকারীদের তথ্য সরবরাহ করা হলে তাঁরা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।

পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে বাংলাদেশের আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বাস্তবায়ন নির্দেশনা না থাকায় দ্রুত স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মার্কিন তুলা রপ্তানিকারক সংগঠন কটন ইউএসএর এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরে বিজিএমইএ। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে মার্কিন তুলার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ঘোষিত শুল্ক সুবিধা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা। মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন ইকমের লি ইন, কারগিলের ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসির ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রির ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েন বোসম্যানসহ আরও অনেকে।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নতুন শুল্কছাড় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য এক বড় সুযোগ। কিন্তু এই সুবিধা কার্যকরভাবে পেতে কারখানাগুলোকে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, বর্তমানে আমদানি করা তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা ৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তবে এ জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ। মার্কিন তুলার উচ্চ গুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধার বিষয়ে গবেষণা করে সুতা উৎপাদনকারীদের তথ্য সরবরাহ করা হলে তাঁরা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।

যখন সবুজের মাঝে হলুদের জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি যেন এক অনন্য কবিতায় রূপ নেয়। সেই দৃশ্য এড়ানো অসম্ভব—মুগ্ধ চোখ সেখানে থেমে যায়, কেউ কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, কেউবা মুহূর্তটিকে ধরে রাখে ছবির ফ্রেমে।
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে...
১ ঘণ্টা আগে
দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
৪ ঘণ্টা আগে
সিকিউরিটিজ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
৫ ঘণ্টা আগে