Ajker Patrika

বাজেট পাসের দিন কলমবিরতির ঘোষণা এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ছবি: সংগৃহীত

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার দিন আগামী সোমবার আবারও কলমবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাঁরা বলেছেন, ঢাকার সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি এবং অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্ব-স্ব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করবেন।

চলতি অর্থবছরের শেষ সময় রাজস্ব আহরণের গুরুত্ব বিবেচনায় এখনই কোনো কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে পরবর্তী কর্মসূচি আগামী সোমবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানাবেন তাঁরা।

আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। কর্মকর্তারা এনবিআরের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিসহ বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলন করছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরোধিতা করে গত ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেন এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।

গত ২৫ মে রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।

এর ফলে ২৬ মে কলমবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এনবিআর। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও তাঁকে অসহযোগিতার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

১৯ জুন এনবিআর কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের জন্য ছয় সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার।

এনবিআর সদস্য (কর, লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে এ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ করে আজ বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা উপস্থিত ছিলেন।

তাঁরা বলেন, ‘এরই মধ্যে সংস্কার কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়নের খড়্গ নেমে এসেছে। আবার সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উসকানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।

‘এ পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, অবিলম্বে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তার মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ বই কিছু নয় বলে মনে করে ঐক্য পরিষদ।’

আগে থেকেই ঐক্য পরিষদ রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এনবিআর গঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

এনবিআর সংস্কারে গঠিত নতুন কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাঁদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনাও করা হয়নি।

এনবিআর উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন জানিয়ে বলা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। যে রাজস্ব অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এত দিন কর্মসূচি চলেছে, তা জারি হওয়ার পর যে বা যারা একে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকায় ও ফেসবুকে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এনবিআরের তেমন সদস্যদেরও গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ থেকে এটি স্পষ্ট যে রাজস্ব-ব্যবস্থা সংস্কারে সরকারের সদিচ্ছাকে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত