Ajker Patrika

টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি: হোসেন জিল্লুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সম্মেলনকক্ষে বৃহস্পতিবার সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সম্মেলনকক্ষে বৃহস্পতিবার সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেখানে ভোক্তার চাহিদা গুরুত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু একটি গোষ্ঠী বিশেষ সুবিধা নিতে তৎপরতা চালায়। তারা প্রকৃত সুবিধাভোগীর দিক নিয়ে যেভাবে ভাবা দরকার, সেভাবে ভাবে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তারা অসহায়ত্ব বোধ করেন। কখনো কখনো তাঁরা দায়িত্ব অস্বীকার করেন। সে ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সম্মেলনকক্ষে ‘আরবানাইজেশন অ্যান্ড বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট: সিলেক্টেড ফাইন্ডিংস ফোরাম বিআইডিএস-পিআরআই রিসার্চ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের জন্য পলিটিক্যাল ইকোনমি খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতির বাইরে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব একটা হওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য অর্থনীতির ওপর রাজনীতির বিশাল প্রভাব রয়েছে। টেকসই পরিকল্পনার জন্য সদিচ্ছার দরকার। যার যে দায়িত্ব, তার বাইরে কিছু করা উচিত না। যদি কেউ করে, তা জুরিসডিকশন অ্যাপ্রোচ হয় না। সেখানে ইন্টারেস্ট গ্রুপের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। বিশেষ মহলের স্বার্থই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারা নানাভাবে প্রভাব খাটাতে অপপ্রয়াস পায়। তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা উচিত না। কিন্তু ঠিকাদার ও সরকারি ডিসি তো অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে সুবিধাভোগী প্রকল্পের সুবিধাবঞ্চিত হন। এই প্রকৃত সুবিধাভোগীর স্বার্থ বিশ্লেষণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বিকেন্দ্রীকরণের উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণ করলে ৬০ শতাংশ সুবিধা বাড়ে এবং চট্টগ্রাম বিকেন্দ্রীকরণ করলে ২০ শতাংশ সুবিধা বাড়ে, সে ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের নানা দিক বিশ্লেষণ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। এটার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব থাকতে হবে। যদিও আর্কিটেক্টরা অনেক সময় তা প্রকাশ করেন না। সে জন্য টেকসই হচ্ছে না পরিকল্পনা। এমনকি ঢাকার জলবায়ুর দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে না। নদী দখল হচ্ছে। খাল ভরাট ও দখল হচ্ছে। এসব ঠিকাদার করতে পারবেন না। পলিটিক্যাল অ্যাপ্রোচ ছাড়া এসব সংকট দূর করা যাবে না।

তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। মফস্বলের উন্নয়ন দরকার। মফস্বলের সঙ্গে কেন্দ্রের বিকেন্দ্রীকরণের সম্পর্ক জড়িত। মফস্বলে সুবিধা বাড়াতে হবে। মফস্বলের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়ি যদি শহরে হয়, তাহলে তিনি মফস্বলের উন্নয়ন চাইবেন না। শহরে সুবিধা পেলে একসময় শহরে ভিড়বেন। আর চেয়ারম্যান তো পলিটিক্যালি ক্ষমতা রাখেন। সে জন্য পলিটিক্যাল সিদ্ধান্ত বিকেন্দ্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ।

হোসেন জিল্লুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তার সঠিক পরিকল্পনা দেন না প্ল্যানাররা। জমির নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। সেটার সঙ্গে ওপেন স্পেশ কতটুতু লাগবে, তা জানাতে হবে। একইভাবে টেকসই স্থাপনার সবকিছু প্ল্যানে থাকা জরুরি।

তিনি বলেন, নগর উন্নয়নে নাগরিক তথা ভোক্তা ও সুবিধাভোগীর চাহিদা বিবেচনায় টেকসই প্রকল্পের মডেল নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স থাকতে হবে। যাদের শহর-নগর নিয়ে ভাবতে হবে। টেকসই বিবেচনা করতে হবে। রোড সাইড ইকোনমি প্ল্যানে থাকতে হবে। তবে তা যেন মূল প্ল্যান বাস্তবায়নে বাধা না হয়। কেন্দ্রের সঙ্গে আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকতে হবে। শুধু একদিকে ভাবলে হবে না। সবকিছুর সমন্বয় করলে মফস্বল, শহর রক্ষা পাবে।

অনুষ্ঠানে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহমদ আহসান বলেন, ঢাকা রক্ষায় আদর্শিকভাবে এখনো প্ল্যান হয়নি। ঠিকমতো প্ল্যান করতে না পারায় অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এটা সহসাই হবে না। এ জন্য প্রচুর বিনিয়োগ লাগবে। বিনিয়োগের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। তখন নাগরিক সুবিধা বাড়বে।

তিনি বলেন, টেকসই প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটা, খাল দখল, নদী ভরাট ও দখল ঠেকাতে হবে। সেখানে যেন জেলা প্রশাসক না বলেন, তাঁর ক্ষমতা নেই। শুধু ঢাকার মতো সিটি দুই ভাগ করলেই হবে না। মূলত পলিটিক্যাল ডিসিশন নিতে হবে, প্ল্যান কেমন হবে এবং কীভাবে বাস্তবায়ন হবে।

অনুষ্ঠানে পিআরআই পরিচালক ড. জি এম খুরশীদ আলম বলেন, পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে কোনো ঘাটতি রাখা উচিত না। যত বাধা থাকুক, নাগরিকদের স্বার্থে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, গ্রাম ও শহরের উন্নয়নে সমানভাবে কাজ করতে হবে। কোনো বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাক টু ব্যাক কাজ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত