Ajker Patrika

একীভূত প্রক্রিয়ায় তদারকি: নগদ সংকটে বিশেষ ছাড় পেল ৫ ইসলামি ব্যাংক

  • প্রি-ফাইন্যান্স, রিফাইন্যান্স ও বিশেষ ফান্ডের ঋণ ৩৬ হাজার কোটি
  • আদায়ের নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কেটে রাখার বাধ্যবাধকতা স্থগিত
  • এতে ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন কাজে নগদ অর্থের সংকটের চাপ কমার আশা
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

একীভূত প্রক্রিয়াধীন শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের তীব্র তারল্যসংকট মোকাবিলায় বিশেষ ছাড়মূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নির্দেশে এসব ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে প্রি-ফাইন্যান্স, রিফাইন্যান্স বা অন্যান্য বিশেষ অর্থায়ন তহবিলের আদায়কৃত অর্থ কেটে রাখার নিয়ম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহ সচল রাখা ও একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রিফাইন্যান্স, প্রি-ফাইন্যান্স ও বিশেষ আবর্তিত ফান্ডের আওতায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছিল পাঁচ ব্যাংক, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকেই নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ছিল বিশেষ অর্থায়ন প্রকল্পের আওতায়। বর্তমানে এসব ঋণের অর্থ আদায় শুরু হয়েছে এবং নিয়ম অনুযায়ী এই আদায়ের অংশ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। তবে ব্যাংকগুলোর নগদ ঘাটতি ও চলতি হিসাবের চাপ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই কর্তনপ্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমানে একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলো হলো এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। একীভূত করার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় এবং ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ব্যাংকগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে এখন রিফাইন্যান্স বা প্রি-ফাইন্যান্সের টাকা কেটে রাখলে তারা দৈনন্দিন লেনদেনও পরিচালনা করতে পারবে না। তাই প্রশাসকদের সুপারিশে গভর্নর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তহবিল কর্তন আপাতত বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এসব ব্যাংকের সম্মিলিত ঋণ পোর্টফোলিও প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই খেলাপি ঋণ। ইউনিয়ন ব্যাংকে খেলাপির হার ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটিতে ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীতে ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীতে ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকে ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্য ঘাটতি সাময়িকভাবে কিছুটা প্রশমিত হবে। তবে প্রশাসকদের ওপর এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব একীভূত ব্যাংকের আর্থিক কাঠামোকে টেকসই করার জন্য সম্পদ ও দায়ের সঠিক হিসাব প্রস্তুত করা।

সরকার ইতিমধ্যে নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক মূলধন কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরাসরি সরকারি অর্থায়নে এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ শেয়ার দেওয়া হবে আমানতকারীদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই ব্যাংক চালু হলে এটি দেশের বৃহত্তম ইসলামী ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যে গভর্নর সরাসরি একীভূতকরণের সব ধাপ নজরদারি করছেন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংস্কার কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ পাঁচ ব্যাংকের অনেক আমানতকারী এখনো জমা অর্থ তুলতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্ভবত মনে করছে, প্রি-ফাইন্যান্স ও রিফাইন্যান্স তহবিলের আদায়কৃত টাকা কর্তন বন্ধ করলে ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ প্রবাহ বাড়বে। এতে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া সহজ হবে এবং ধীরে ধীরে আস্থাও ফিরবে। একই সঙ্গে প্রশাসকদের একীভূতকরণ-সংক্রান্ত আর্থিক বিশ্লেষণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার সুযোগও তৈরি হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিহারে ভূমিধস জয়ের পথে বিজেপির জোট

গাজার শাসনকাঠামো নিয়ে মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া, জাতিসংঘে পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব

আয়ারল্যান্ডকে চার দিনে ইনিংসে হারাল বাংলাদেশ

১ হাজার টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে বিএনপি নেতার ব্যানারে আগুন, যুবক আটক

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগান ক্রিকেটারের অভিনয়ের কারণ কী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ