Ajker Patrika

সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকার ৮ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকার ৮ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদ

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ আটটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭৪ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

আজ রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

সামসুল আরেফিন বলেন, আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৯ তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৫ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কমিটির অনুমোদনের জন্য (টেবিলে ১টি উপস্থাপনসহ) ৪টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩ টি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২ টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ২ টি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ১ টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয়-কমিটির অনুমোদিত ৮টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ২২৬ টাকা।

তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মেঘনাঘাট, জামালদিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পে গ্যাস ব্যবহার করা হলে ২২ বছর মেয়াদে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ট্যারিফ ২ দশমিক ৯৪৩৭ টাকা হিসেবে মোট ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা অথবা আরএলএনজি ব্যবহার করা হলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ দশমিক ৪৩৭৭ টাকা হিসেবে মোট ৬৯ হাজার ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কনসোর্টিয়াম ইডরা পাওয়ার হোল্ডিং এসডিএন, মালয়েশিয়া এবং উইনিএভিশন পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশ।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ-এর কাছ থেকে ৬ষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৬০১ ডলার হিসেবে সর্বমোট খরচ হবে ১ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৫৪ কোটি ২৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা।  বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ৬ষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০ %+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী দাম পড়বে প্রতি টন ৬১৫ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০ %+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫৭ কোটি ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা।

সামসুল আরেফিন বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার টন (১০ %+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌদি আরব থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ হয়েছে। ৭ম লটে ৩০ হাজার টন (১০ %+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি টন ৬১৫ ডলার হিসেবে কেনা হবে। এতে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে প্রায় ১৫৭ কোটি ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা।

এছাড়া বৈঠকে করোনার ভয়াবহতা মোকাবিলার জন্য তিনটি লটে ২০ লাখ নভেল করোনাভাইরাস আরটি-কিউপিসিআর ডায়াগনস্টিক কিট (ভিটিএমও সোয়াবসহ) কেনার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনটি লটে ২৭টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ১০টি দরপত্র কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান লট-১ এর জন্য স্টেরলিং মাল্টি টেকনোলজি লিমিটেড, লট-২ এর জন্য ওএমসি (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং লট-৩ এর জন্য জি. এস বায়োটেকের কাছ থেকে ১১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকায় ২০ লাখ টাকায় কিট কেনার প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কিটের দাম ৫৩৩ টাকা।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি ০৬-এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি কমিটি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৪৭ কোটি ৯৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। অতিরিক্ত সচিব বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দুটি বোলার্ড পুল টাগবোট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড বোলার্ড পুল টাগবোট দুটি সরবরাহ করবে। এজন্য ব্যয় হবে ১৩১ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৬ টাকা।

তিনি বলেন, ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএসএস) ’ প্রকল্পের অতিরিক্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি কমিটি। প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজি সামহি কনসোর্টিয়ামকে ২৭২ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার টাকায় নিয়োগের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ বাস্তবায়নকালে মূল চুক্তির বাইরে কাজ বেড়ে যাওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১০৪ কোটি ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি কমিটি।

এছাড়া ভারতের ত্রিপুরা হতে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং বর্ধিত মেয়াদের জন্য ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ২০১৬ এর ৯ মার্চ সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে এনপিটিসি বিদ্যুৎ বায়পার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) ত্রিপুরা, ভারত হতে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির ৫ বছরের চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের ১৬ মার্চ উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সংস্থাটি বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত মূল চুক্তির সব শর্ত অপরিবর্তিত রেখে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ১৬০ (১৬০ + ২০% সর্বোচ্চ ১৯২) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ (১৭ / ০৩ / ২০২১ থেকে ১৬ / ০৬ / ২০২৬ পর্যন্ত) ৫ বছর বাড়ানোর জন্য এনভিভিএন ত্রিপুরা, ভারত-এর সঙ্গে ট্যারিফ প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৭ দশমিক ১৩৮৫২ টাকা হিসেবে চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৫ বছরে প্রায় ৪ হাজার ১৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে হবে। পুননির্ধারিত ট্যারিফে বাংলাদেশের বর্ধিত মেয়াদে প্রায় ৭০৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে।

অতিরিক্ত সচিব আরো জানান, বৈঠকে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (৩ য়,৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৫টি লটে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ৫টি লটে ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৯৫ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করবে প্রেস লাইন লিমিটেড (২টি লট), লেটার এন কালার (২টি লট) এবং সিডান প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন (১টি লট)। এজন্য ব্যয় হবে ৮ কোটি ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮৩০ টাকা। প্রতি বইয়ের গড় মূল্য ২২.১৬ টাকা।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত