Ajker Patrika

শাড়ি বুননে ব্যস্ত তাঁতপল্লি

মো. লুৎফর রহমান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) 
ঈদ এবং পয়লা বৈশাখের উৎসবকে কেন্দ্র করে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতশ্রমিকেরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার একটি তাঁত কারখানায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঈদ এবং পয়লা বৈশাখের উৎসবকে কেন্দ্র করে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতশ্রমিকেরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার একটি তাঁত কারখানায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তাঁতপল্লিতে ঈদ সামনে রেখে কর্মব্যস্ততা তুঙ্গে। খুটখাট আওয়াজে মুখরিত তাঁতপল্লি যেন এক অনবরত সুরেলা ছন্দ তুলেছে। চলছে পবিত্র মাহে রমজান, এরপরই ঈদ এবং বাঙালির পয়লা বৈশাখের উৎসব। তাঁতমালিকেরা বাহারি ডিজাইনের শাড়ির অর্ডার পাচ্ছেন, আর তাঁতশ্রমিকেরা দিন-রাত ব্যস্ত সেই অর্ডার পূরণে। এক মাসের কঠোর পরিশ্রমেই যেন তাঁরা পরিবারের চাহিদা মেটানোর স্বপ্ন বুনে চলেছেন। তাঁত ব্যবসায়ীরা এবার ঈদ ও পয়লা বৈশাখের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভালো বিক্রি করতে চান, অতীতের লোকসান কাটিয়ে উঠতে চান। তাই সাটুরিয়ার বিভিন্ন তাঁত কারখানায় এখন প্রাণচাঞ্চল্য।

সরেজমিনে গত সোমবার উপজেলার হামজা, সাভার, আগ সাভার, চাচিতারা, জালশুকা ও নতুন ভোয়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, তাঁতপল্লিগুলো খুটখাট আওয়াজে মুখরিত। কেউ হাতে বুনছেন, কেউবা বিদ্যুৎ-চালিত তাঁতে শাড়ির সূক্ষ্ম কারুকাজ ফুটিয়ে তুলছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ। ঈদের বাজার ধরতে অনেকেই অগ্রিম বাহারি ডিজাইনের কাপড় তৈরি করে রেখেছেন, যাতে ভালো দামে বিক্রি করা যায়।

সাভার গ্রামের তাঁতমালিক রজ্জব আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘অন্য কোনো কাজ না থাকায় লোকসানের মধ্যেও পূর্বপুরুষদের এই পেশা ধরে রেখেছি। ঈদ উপলক্ষে কিছু শাড়ির অর্ডার পেয়েছি, যা বিক্রি করে কিছু লাভের মুখ দেখার আশা করছি।’

তবে তাঁত ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জও কম নয়। চাচিতারা গ্রামের তাঁতমালিক পলান বেপারী বলেন, ‘আগের মতো তেমন শাড়ি বিক্রি হয় না, তবে ঈদ এলেই কিছু অর্ডার পাই। সুতা, রং এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় লাভের মুখ তেমন দেখা যায় না। কোনো রকমে টিকে আছি।’

শ্রমিকের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। কাউয়াখেলা গ্রামের তাঁতশ্রমিক কাশেম (৫৪) বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। পাঁচজনের সংসার। ঈদের আগে ব্যস্ততা বাড়ে, তখন যা মজুরি পাই, তা দিয়েই কোনো রকমে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা আর সংসার চলে।’

বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আবদুল হাই জানান, ‘উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাঁতি সম্প্রদায় আমাদের বরাইদ ইউনিয়নে। এখনো শতাধিক তাঁতি এ পেশায় নিয়োজিত। তাঁদের তৈরি শাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়, এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়। কিন্তু রং, সুতা এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় অনেকে তাঁদের তাঁত বন্ধ করে দিচ্ছেন। তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে। সরকার যদি কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে খাতটির প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা বাড়ায়, তাহলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

ঈদ আর বৈশাখের বাজার ঘিরে তাঁতশিল্পে আশার আলো দেখা দিলেও টিকে থাকার লড়াই কঠিন। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পিত সহায়তা ছাড়া এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তাঁতিদের শ্রম যেন বিফলে না যায়, সেই লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত