Ajker Patrika

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ রাশিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮: ২১
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ রাশিয়ার

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আরও কী কী পণ্য আমদানি করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে তাঁর দেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। আজ শুক্রবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সের্গেই লাভরভ এই অনুরোধ করেন। 

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধের উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। 

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাভরভকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। করোনা মহামারি, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের কারণে সারা বিশ্বে ভোগান্তি হচ্ছে। যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট খাদ্য-শস্য, সার, জ্বালানি সংকটে আফ্রিকাসহ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যে অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে—তা বিশেষভাবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে এসব থেকে বের হওয়ার উপায় খোঁজার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। 

বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান ভারসাম্যপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করেন। 

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে মাইন অপসারণে রাশিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত বন্ধু। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৮২ ও ২০১৩ সালে তাঁর নিজের রাশিয়া সফরের কথা উল্লেখ করেন বৈঠকে। এ সময় দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা ও সের্গেই লাভরভ। 

প্রধানমন্ত্রী রাশিয়াকে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য-বিনিয়োগ অংশীদার। বৈঠকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ প্রস্তাব দেওয়ারও আহ্বান জানান লাভরভ। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বশেষ অগ্রগতি ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। আসন্ন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রথম ধাপে পারমাণবিক জ্বালানি আসবে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির  পুতিনকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করায় ধন্যবাদ দেন লাভরভ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থসামাজিক, অবকাঠামোসহ বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। 

বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার তিন লাখ টন গম আমদানি চুক্তির কথা উল্লেখ করে বৈঠকে সারের ব্যাপারেও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির উপায় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে আলাপকালে সের্গেই লাভরভ বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে রাশিয়া সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। 

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসচিব জিয়াউল হাসান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান। 

বৈঠক শেষে বেলা দেড়টার পর ভারতের নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন লাভরভ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান লাভরভ। 

এর আগে দুই দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন লাভরভ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এটি। 

গতকাল বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন লাভরভ। বৈঠকের পর তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতর করতে চায়। সব ক্ষেত্রে যোগাযোগ বাড়ানো ছাড়াও সম্পর্ক গভীরতর করার পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে দুই দেশ কাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত