Ajker Patrika

গারো নেতা চলেশের মৃত্যু: ১৭ বছরেও হত্যা মামলা নেয়নি পুলিশ

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪, ২২: ৫৮
গারো নেতা চলেশের মৃত্যু: ১৭ বছরেও হত্যা মামলা নেয়নি পুলিশ

টাঙ্গাইলের মধুপুরের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী গারোদের অধিকার আদায়ের নেতা চলেশ রিছিলের মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল ১৮ মার্চ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে এই গারো নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ১৭ বছরেও রেকর্ড হয়নি কোনো হত্যা মামলা। আলোর মুখ দেখেনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। একাধিক মন্ত্রী চলেশ রিছিল বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেন নি। এ নিয়ে গারো নেতৃবৃন্দ ও চলেশের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

বনের আদিবাসীদের চাঙা করে রাখা এনজিওগুলোর বগলদাবায় থাকা চলেশের ফাইলও চাপা পড়ে গেছে অন্য ফাইলের ভিড়ে। তাই আগামীকাল ১৮ মার্চ একেবারেই ঘরোয়া পরিবেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে চলেশ রিছিলের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে। 

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতারা জানান, জোট সরকার ভেষজ গুল্মলতা আর শাল গজারির মধুপুর বনাঞ্চলকে ইকোপার্ক করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৩ সালের মাঝামাঝিতে ‘ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যান্ড ইকোট্যুরিজম’ প্রকল্পের আওতায় মধুপুর গড়ের তিন হাজার একর বনভূমির চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই দেয়াল নির্মিত হলে গারোদের ঐতিহ্যগত অধিকার হারাতে হবে ভেবে তাঁরা আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা চলেশ রিছিল। ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি আদিবাসীরা বিক্ষোভ মিছিলে বনরক্ষী ও পুলিশ গুলি চালালে পীরেন স্নাল নামের এক গারো যুবক নিহত হন। আহত হন ২৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু। এই ঘটনার পর আন্দোলন তীব্রতর হলে জোট সরকার প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখে। 
 
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সারা দেশে মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মধুপুরের কাকরাইদ এলাকায় বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামারে সেনাক্যাম্প স্থাপন করে। এই সুযোগে বন বিভাগ প্রাচীর নির্মাণে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। বন বিভাগ দ্রুত গতিতে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। 

এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন গারো নেতারা। প্রথমে দৈনিক সমকাল ও পরের দিন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সংবাদটি প্রকাশ করলে দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় শুরু হয়। এমন পরিস্থিতি সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সি এস করিম সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং প্রাচীর নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। 

সেনা শাসনের সময় বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এই পরাজয়কে সহজভাবে নিতে পারেনি। তাই আন্দোলনকারীদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চলেশ রিছিলসহ আন্দোলনকারীরা আত্মগোপনে চলে যায়। 

 ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ময়মনসিংহের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মধুপুর যাওয়ার সময় চলেশ রিছিল, প্রতাব জাম্বিল, তুহিন হাদিমা, পীরেন সিমসাংকে বেলা ২টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মুক্তাগাছা উপজেলার কালীবাড়ী থেকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা। তাঁদের আটক করে মধুপুরের বিএডিসির সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। দফায় দফায় নিষ্ঠুর নির্যাতনে চলেশ রিছিল বিকেলের দিকে নিথর হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে মধুপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

তৎকালীন মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘চলেশকে গ্রেপ্তার করতে গেলে দৌড়ে পালানোর সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে জ্ঞান হারান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।’ 

এ ঘটনায় মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মধুপুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ময়নাতদন্তের পর ১৯ মার্চ চলেশের মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করে। ২০ মার্চ তাঁকে সমাহিত করার পর চলেশ রিছিলের প্রথম স্ত্রী সন্ধ্যা সিমসাং বাদী হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বন বিভাগের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে মধুপুর থানায় একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করেন। 

মধুপুর থানা-পুলিশ ওই এজাহার নিয়ম মাফিক গ্রহণ করলেও মামলা রেকর্ডভুক্ত করেনি। কারণ হিসেবে ওসি রিয়াজ উদ্দিন উল্লেখ করেছিলেন, ‘যেহেতু ইউডি মামলা হয়েছে, তাই একই ঘটনায় অপর মামলা রেকর্ডভুক্ত করা যায় না।’ 

এদিকে গারো রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্য করার পূর্বে চলেশের গোসল করানো হয়। এই কাজে সম্পৃক্ত শষিণ দালবত, জয়ন বাজি ও কলেশ রিছিল ২৪ মার্চ লিখিতভাবে চলেশের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা উপস্থাপন করেন। 

তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘চলেশের হাতের ওপরের অংশ সম্পূর্ণ চুরমার করা হয়েছে। হাতের তালুতে ছিদ্র ছিল। হাত ও পায়ের আঙুলে নখ ছিল না। পিঠের পুরো অংশ এবং নিতম্বে আঘাতের কারণে রক্তের জমাট ছিল। অণ্ডকোষ মাংসের সঙ্গে মিশে গেছে। হাঁটুর নিচে অসংখ্য আঘাতের দাগ ও দুটি পায়ের তালু ছিল কালো।’ 

এই ঘটনায় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চার হয়ে উঠে। আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) পক্ষ থেকে যৌথ অনুসন্ধান চলে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ৫ মে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিউদ্দিনের নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন। তিনি তদন্ত করেন। চলেশের লাশ দ্বিতীয় দফায় উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রফিউদ্দিনের সেই তদন্ত কার্যক্রমের ফলাফল আজও আলোর মুখ দেখেনি। 

দীর্ঘ ১৭ বছরে আন্দোলন থেমে গেছে। মামলা আজও রেকর্ডভুক্ত হয়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। শুধুমাত্র বেসরকারি সংস্থাগুলোর তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চলেশ রিছিলের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্তের দাগ ছিল। দুই হাতের হাড় ও সব আঙুল ভাঙা ছিল। হাত পায়ের বেশ কয়েকটি নখ ওপড়ানো ছিল।’ 

গারো স্টুডেন্ট ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল বলেন, ‘আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হলো। মামলা হলো না। আমরা চাই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখুক। সরকার হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের বিচারের আওতায় আনুক। সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করুক।’ 

চলেশের প্রথম স্ত্রী সন্ধ্যা সিমসাং বলেন, ‘খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ইউজিন হোমরিক বেঁচে থাকলে হয়তো চলেশের বিচারের একটা ব্যবস্থা হতো। আমি এবার মধুপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। নির্বাচনের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। ১৮ মার্চ পারিবারিকভাবে প্রার্থনা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।’ 

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, ‘চলেশ রিছিল হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারাও বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। আজ তাঁরা নীরব। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যাপারে উদাসীন।’ 

মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি অনেক দিন আগের। থানায় কখনো কোনো কাজই ঝুলিয়ে রাখা হয় না। তদন্ত করে কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চলেশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শেষে ওই সময়ই আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা বিষয়টি অবহিত নই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় মনোনয়নবঞ্চিত সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুষ্টিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নেন সোহরাব সমর্থকেরা। এ সময় তাঁরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও প্রতিবাদ মিছিল করেন।

এ ছাড়াও সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষ্মীপুর এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন।

এ সময় তাঁরা বলেন, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনকে আবার মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

এর আগে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার চারটি আসনে সম্ভাব্য চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। কুষ্টিয়ার চারটি আসনে সম্ভাব্য চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।

এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।

জানতে চাইলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সদ্য সদর আসনের মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়া-তারেক রহমান প্রার্থী হওয়ায় বগুড়ায় বিএনপির আনন্দ মিছিল

বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়া শহরে বিএনপির আনন্দ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
বগুড়া শহরে বিএনপির আনন্দ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে ধানের শীষের জয়ের জন্য লড়বেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লড়বেন বগুড়া-৬ আসন থেকে। বগুড়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করার ঘোষণায় জেলাজুড়ে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘোষণার পরপরই বগুড়ায় জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় বরাবরই বগুড়া বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে এই জেলার দুটি আসনে (বগুড়া-৬ ও ৭) নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনো পরাজিত হননি। ঐতিহ্যবাহী এই নির্বাচনী এলাকায় এবার তাঁর সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

আজ রাত ৮টায় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে এক আনন্দ মিছিল দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সাতমাথা প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ।

সমাবেশে রেজাউল করিম বাদশা এই মনোনয়নকে ‘বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুশির সংবাদ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ খবর পাওয়ার পরপরই তারেক রহমানকে ফোন করে বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। তিনি বগুড়াবাসীর কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেছেন।

রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বগুড়াবাসী নির্বাচিত করবে। আমরা আশা করছি, বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তারেক রহমান বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন এবং প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ায় শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ

মাদারীপুর ও শিবচর প্রতিনিধি
শিবচর উপজেলার পাঁচ্চরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিবচর উপজেলার পাঁচ্চরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় মাদারীপুর শিবচরের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেছে সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলুর কর্মী-সমর্থকেরা। আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিবচর উপজেলার পাঁচ্চরে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় আড়াই ঘন্টার সড়ক অবরোধে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকেরা।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি পদপ্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে মাদারীপুর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণা করা হয়। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু। এখন মনোনয়ন না পাওয়ায় লাভলুর কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চরে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেছেন।

শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আসলাম চৌধুরী নেই বিএনপির প্রার্থী তালিকায়, চট্টগ্রামে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সমর্থকদের বিক্ষোভ

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ১৭
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরীর সমর্থকেরা।

আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা-কর্মীরা মহাসড়কের ভাটিয়ারী, জলিল গেট, বানুরবাজার, কুমিরা, পৌর সদরের শেখপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।

এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে মহাসড়কের দুদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় চরম ভোগান্তি।

বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপির রাজনীতির জন্য সর্বস্ব হারানো আসলাম চৌধুরী টানা ৯ বছর মিথ্যা মামলার ঘানি টেনেছেন। ব্যবসাসহ হারিয়েছেন সবকিছু। দলের জন্য নিবেদিত এ নেতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া সীতাকুণ্ডের বিএনপির নেতা-কর্মীরা কখনো মেনে নেবে না। অবিলম্বে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির ত্যাগী নেতা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিলে সীতাকুণ্ড বিএনপির নেতা-কর্মীরা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবেন।

বিএনপির বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী থেকে শেখপাড়া পর্যন্ত উভয়মুখী সড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে যানজট মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অবরোধের দীর্ঘ এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো অবরোধ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। স্বাভাবিক হয়নি মহাসড়কে যানবাহন চলাচল।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোমিন জানান, আসলাম চৌধুরী-সমর্থিত বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভাটিয়ারী থেকে শেখপাড়া পর্যন্ত রাস্তায় যানজট তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. মজিবুর রহমান বলেন, আসলাম চৌধুরী-সমর্থিত বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। পুলিশ অবরোধকারীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত