Ajker Patrika

তোর বাবার গাড়ি নাকি? তুই কেন গাড়ি রেজিস্ট্রারকে দিয়েছিস— শিক্ষককে উপাচার্য

সিলেট প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৪১
তোর বাবার গাড়ি নাকি? তুই কেন গাড়ি রেজিস্ট্রারকে দিয়েছিস— শিক্ষককে উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার নিয়ে দুই শিক্ষককের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকেরাও। 

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপাচার্যের এমন আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ। বঙ্গবন্ধু চত্বরের পাশে প্রধান সড়কে শতাধিক শিক্ষক মানববন্ধনে অংশ নেন।

গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান ও পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমন পালকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও খারাপ ব্যবহার করেছেন উপাচার্য। আমরা শিক্ষকেরা লজ্জিত ও বিব্রতবোধ করছি। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করছি।’ 

জানা যায়, রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম শোয়েব ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের একটি গাড়ি বরাদ্দ চেয়ে পরিবহন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি দেন। নিয়ম অনুযায়ী ৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে গাড়ি নিতে চাইলে উপাচার্যের অনুমতি লাগে। কিন্তু সেদিন উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকায় পিএসের মাধ্যমে ভিসির মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়। গত শুক্রবার ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় গাড়িটি। এতে রেজিস্ট্রার ও চালক অক্ষত থাকলেও গাড়িটির ক্ষতি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান ও পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমন পালকে গত রোববার রাতে মোবাইল ফোনে ধমক দেন উপাচার্য।

অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান বলেন, ‘গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্য আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। উনি আমাকে বলেছেন—তোর বাবার গাড়ি নাকি? তুই কেন গাড়ি রেজিস্ট্রারকে দিয়েছিস! ১০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি বাংলোতে নিয়ে আসবি। তুই গাড়ি গ্যারেজে পাঠিয়েছিস কেন? এটা কী ধরনের ব্যবহার! আমি অযোগ্য হয়ে থাকলে উনিও অযোগ্য। উনিই জেনেবুঝে এই পদে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি বিষয়টিতে খুবই মর্মাহত। আমাদের যদি কোনো পদ্ধতিগত ভুল হয়ে থাকে তিনি সেটা ডেকে বলতে পারতেন বা চিঠি দিতে পারতেন। তিনি তা না করে গালিগালাজ করেছেন। আমি চাই না বর্তমানে তিনি আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করুন।’ 

অধ্যাপক ড. সুমন পাল বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের যে ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তা ভদ্র সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ ও শিক্ষক সমিতিকে জানিয়েছি।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলো থেকে শিক্ষকেরা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসাইন সরকার।

উপাচার্যের অশালীন আচরণের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে আজ দুপুর ১২টায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভায় বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।  সভার বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসাইন সরকার জানান, এখনই তাঁরা আন্দোলনে বা পদত্যাগে যাবেন না। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। উপাচার্য যদি লিখিতভাবে ক্ষমা চান তাহলে বিষয়টি শেষ করা হবে। আর যদি তা না হয় তাহলে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমি তাঁদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। আমি রাগের মাথায় কী বলেছি খেয়াল নাই। তবে তাঁদের সঙ্গে একটু রাগ করেছি। গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এই ব্যাপারটা তাঁরা আমার কাছে গোপন করেছেন। প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানানো উচিত। তাঁরা কেউ আমাকে গাড়ি দুর্ঘটনার কথা জানাননি। তিন দিন পার হয়ে যাওয়ার পর আমি অন্য একজনের কাছ থেকে এ বিষয়ে শুনেছি। সেই গাড়ি সারানোর জন্য ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়েছে আমাকে না জানিয়ে। আসল ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য তাঁরা এমন করছেন। ৬০ লাখ টাকার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়বে তাঁরা সেটা উপাচার্যকে জানাবেন না, তাঁদের সঙ্গে রাগ করা যাবে না?’

উপাচার্য বলেন, ‘গাড়ি দুর্ঘটনার কথা চাপা দিতেই এখন এসব টালবাহানা করছেন। গাড়ি রেজিস্ট্রার নিয়ে গিয়েছেন রিকুইজিশন করে সে বিষয়ে আমি কোনো আপত্তি দিইনি। আমার কথা হলো, গাড়ি দুর্ঘটনার পরেও আমাকে কেন জানানো হয়নি। প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে রাগ করা আমার অধিকার। আমি রাগ করতেই পারি। তাঁদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অনিয়ম চাপা দিতে এখন ঘটনার মোড় ঘোরাতে চাচ্ছেন।’ 

এর আগেও এভাবে গাড়ি দুর্ঘটনার তথ্য তাঁর কাছে গোপন রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ডিনদের জন্য বরাদ্দকৃত আরেকটি নতুন গাড়ি শহরে নিয়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে সপ্তাহখানেক আগে। অথচ কোনো ডিন সেদিন গাড়ি নিয়ে যাননি। কার অনুমতিতে, কেন রাত ২টা পর্যন্ত গাড়ি ঘোরাফেরা করে? দুর্ঘটনার দায় কে নেবে? পরিবহন শাখার পরিচালককে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। তাঁরা দুটি গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয় আমার কাছে গোপন করে বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। গাড়ি রাস্তায় চলতে গেলে দুর্ঘটনা হতেই পারে। আমি সেই প্রশ্নেও যাচ্ছি না। গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়ে না জানানোর পর আবার সিলেটের ওয়ার্কশপে মেরামত করতে দিয়েছেন অনুমতি ছাড়াই। সেটি আরেকটি অপরাধ। এই দুটি বিষয়ে আমি রাগ করেছি তাঁদের ওপর। কিন্তু এমন কোনো কথা বলিনি যে তাঁদের মানসম্মান চলে গিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত