Ajker Patrika

পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে ঘুরছিলেন অরবিন্দ, নিচে হাজারো মানুষের ভিড়

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর চড়ক উৎসবে পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে ঘুরছেন অরবিন্দ চন্দ্র রায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর চড়ক উৎসবে পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে ঘুরছেন অরবিন্দ চন্দ্র রায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চারদিকে হাজারো মানুষের ভিড়। সবার দৃষ্টি ৩০ ফুট উচ্চতার একটি কাঠের দণ্ডের দিকে। সেখানে আড়াআড়ি করে বাঁশ বেঁধে তাতে ঝোলানো লোহার বড় দুটি বড়শি। সেই বড়শি পিঠের চামড়ায় গেঁথে শূন্যে ঘুরছিলেন অরবিন্দ চন্দ্র রায় (৪২)। পাশাপাশি তিনি ফুল-জল, আবির, কলা, বাতাসা, নকুলদানা ইত্যাদি ছিটিয়ে দিচ্ছেন ভক্ত-দর্শকের দিকে। এ সময় চলছিল উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। বাজছিল ঢাকঢোল।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চাঁদপাড়া শ্মশান কালীমন্দির প্রাঙ্গণে গতকাল শনিবার শেষ বিকেলে গিয়ে দেখা গেল এই দৃশ্য। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব চড়কপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ দিকে পিঠে বড়শি গেঁথে চড়কে ঘোরার উৎসব হয়, যা দেখতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সমবেত হয়।

চড়কে ঘুরতে থাকা অরবিন্দ ফুলবাড়ী পৌর এলাকার উত্তর কৃষ্ণপুরের মতিলালের ছেলে। তিনি জানান, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ কাজ করছেন তিনি। তাঁর পিঠে অগণিত ছিদ্র রয়েছে। প্রতিবার পিঠের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ছিদ্র করে লাগানো হয়। এটি করতে বেশ সাধনার প্রয়োজন।

আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, বড়শিতে বিদ্ধ মানুষকে ঘোরানোর আগে সারা দিন ধরে নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মানুষ ঘোরানোর জন্য মাঠের মাঝখানে বসানো হয় একটি কাঠের দণ্ড। তার ওপর আড়াআড়িভাবে বাঁশ বেঁধে একপাশে ঝোলানো হয় দড়ি। অন্য পাশে বড়শিতে গেঁথে একজনকে ঝোলানো হয়। পরে একদল মানুষ দড়ি টেনে বাঁশটি নাড়িয়ে বড়শিতে গাঁথা লোকটিকে ঘোরাতে থাকেন। এটাই চড়কপূজার মূল আকর্ষণ।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর চড়ক উৎসবে পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে ঘুরছেন অরবিন্দ চন্দ্র রায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর চড়ক উৎসবে পিঠে বড়শি গেঁথে শূন্যে ঘুরছেন অরবিন্দ চন্দ্র রায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শনিবারের উৎসব ঘিরে দুপুর থেকে মেলা বসেছিল। মেলা ঘিরে আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে সমবেত হয়ে স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ নেয়।

স্থানীয় দর্শক চন্দ্রনাথ বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও চড়ক মেলা দেখতে এসেছি। আমাদের সনাতন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এমন আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ।’

উৎসবে আসা দীপালি ও শেফালি রানি জানান, এই চড়ক মেলা উপলক্ষে পুরো গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে। সবাই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ জানান। তাঁরাও মেলায় আসেন।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চাঁদপাড়া শ্মশান কালি মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চাঁদপাড়া শ্মশান কালি মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধা থেকে আসা মাহাবুব নামের একজন বলেন, ‘এখানে আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলাম। শুনলাম পিঠ ফোঁড়া চড়ক মেলা হবে। আমাদের ওই দিকে এসব হয় না। তাই থেকে গেলাম মেলা দেখার জন্য। সত্যি এ এক অবাক করা ব্যাপার। কীভাবে একজন মানুষের পিঠে বড় বড় বড়শি বিঁধে ৩০-৩৫ ফুট উচ্চতায় ঝুলিয়ে ঘোরানো হচ্ছে!’

উৎসবের আয়োজন করা চাঁদপাড়া মন্দির কমিটির সভাপতি সুরজিত চন্দ্র রায় বলেন, চৈত্র মাসের শেষে চড়ক কালীপূজা বা নীল পূজার আয়োজন করা হয়। শত বছরের পুরোনো এই পূজা পূর্বপুরুষদের আমল থেকে হয়ে আসছে। পূজা ও চড়ক উৎসবকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী মেলা বসেছে। এতে কয়েকে হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত