Ajker Patrika

সৈয়দপুর রেলওয়ে

সাইনবোর্ডেই আটকে ক্যারেজ কারখানা

  • ক্যারেজ কারখানা নির্মাণ প্রকল্প ৯ বছরেও বাস্তবায়ন করা হয়নি
  • ভারত মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় প্রকল্পটি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে
  • এখন ৫ থেকে ৮ কোটি টাকা দরে প্রতিটি কোচ আমদানি করা হয়
  • কারখানা হলে প্রতিটি কোচে খরচ পড়বে ২-৩ কোটি টাকা
রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) 
প্রস্তাবিত ক্যারেজ কারখানার সাইনবোর্ড। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রস্তাবিত ক্যারেজ কারখানার সাইনবোর্ড। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার মধ্যে আরেকটি ক্যারেজ কারখানা নির্মাণ প্রকল্প ৯ বছরেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। দৃশ্যত সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সব। ভারত সরকারের অর্থায়নে এ কারখানা নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু ভারত মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না, সেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে ক্যারেজ ও ওয়াগন এখানে তৈরি করা সম্ভব। তখন এসব আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। এতে রাষ্ট্রের অর্থের সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ কারখানার ২৭টি উপকারখানায় শ্রমিকেরা কাজ করেন। প্রতিষ্ঠার পর এখানে নতুন কোচ তৈরি হতো; কিন্তু ১৯৯৩ সালে রেল সংকোচন নীতির আওতায় ওই কোচ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন থেকে কোচের জন্য পুরোপুরি বিদেশনির্ভর হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জার্মানি ও কোরিয়া থেকে শ্রেণিভেদে ৫ থেকে ৮ কোটি টাকা দরে প্রতিটি কোচ আমদানি করছে রেলওয়ে। প্রতিবছর গড়ে ৬০টি কোচ আমদানি করে বাংলাদেশ। ফলে অনেক বড় অঙ্কের ব্যয় হচ্ছে এই আমদানির পেছনে। দেশে নির্মাণ করা হলে প্রতিটি কোচে এর অর্ধেক টাকা খরচ হবে।

সূত্র আরও জানায়, কোচের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে সৈয়দপুরে আরও একটি নতুন কোচ কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের সঙ্গে ২০১৬ সালে একটি চুক্তি হয়। পরে দুই বছর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা এলাকায় নতুন ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যাপক সমীক্ষা চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয় ২০১৮ সালে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, সৈয়দপুর কারখানার উত্তর পাশে দার্জিলিং গেট-সংলগ্ন এলাকায় কোচ তৈরির কারখানা স্থাপনে জায়গা নির্বাচন করা হয়। এ জন্য প্রাথমিকভাবে রেলের ২০ একর জমি নেওয়া হয়। ফলে নতুন করে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি।

২০১৯ সালের মে মাসে কারখানাটির ধরনের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একই বছর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন নির্ধারিত এলাকা পরিদর্শন করেন। কারখানার জন্য সরকার প্রাথমিকভাবে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। বাকি টাকা ঋণের জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে ভারত সরকার এ প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এতে থেমে যায় কাজের অগ্রগতি।

রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কারখানা শাখার সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন, ‘জনবলসংকটে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা ধুঁকে ধুঁকে চলছে। রেলওয়ে কোচ তৈরির নতুন কারখানাটি স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৯ বছর আগে। কারখানা স্থাপনের খবরে অনেকের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল; কিন্তু দীর্ঘদিনেও কাজ শুরু না হওয়ায় আমরা হতাশ।’

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সদস্য সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক বলেন, সৈয়দপুর বাণিজ্যিক শহর। নতুন কোচ তৈরির কারখানাটি স্থাপন করা হলে এ অঞ্চলে ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন, নতুন ক্যারেজ কারখানা চালু হলে এখানে প্রতি মাসে পাঁচটি কোচ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। আর প্রতিটি কোচে খরচ পড়বে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা; অথচ ৫ থেকে ৮ কোটি টাকা দরে প্রতিটি কোচ আমদানি করছে রেলওয়ে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্পটির ভৌত কাঠামোর সমীক্ষা প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর এ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। তবে কারখানাটি স্থাপন করা হলে এখানে নতুন কোচ নির্মাণ করা সম্ভব। তখন আর কোচ আমদানির প্রয়োজন হবে না। এতে রাষ্ট্রের অর্থের সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা না যেতেই কাশ্মীরে বিস্ফোরণ!

বিশ্বে প্রথম পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়ানোর পথে কি পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ

লঞ্চের ওপর তরুণীকে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছিলেন যুবক, ভিডিও ভাইরাল

ভারতের সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বাড়াল কেন্দ্রীয় সরকার

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত