Ajker Patrika

আন্তনগরে পণ্য পরিবহন

রেলের লাগেজ ভ্যান এখন গলার কাঁটা

  • পণ্য পরিবহন বাড়াতে লাগেজ ভ্যান কিনতে খরচ ৩৫৮ কোটি টাকা।
  • আয় বেড়েছে মাসে ৭ লাখ টাকা।
  • লাগেজগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার চিন্তায় মন্ত্রণালয়।
  • ফাঁকা লাগেজে বিনা টিকিটের যাত্রী নেন রেল পুলিশ ও কর্মচারীরা।
রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) 
৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার লাগেজ ভ্যান এখন রেলের গলার কাটা। ছবি: আজকের পত্রিকা
৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার লাগেজ ভ্যান এখন রেলের গলার কাটা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর হয়ে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী রুটে ৬টি যাত্রীবাহী আন্তনগর ট্রেন চলাচল করছে। কম সময়ে স্বল্প খরচে উত্তরাঞ্চলের কৃষিসহ নানান পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ট্রেনগুলোয় লাগেজ ভ্যান যুক্ত করা হয় দুই বছর আগে। তবে এ অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মেলেনি আশানুরূপ সাড়া। ফলে ৩৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যুক্ত এসব লাগেজ ভ্যান কোনো কাজে আসছে না। এসব লাগেজ ভ্যান এখন রেলওয়ের গলার কাঁটা।

লাগেজ ভ্যানগুলোয় মালামালের পরিবর্তে বিনা টিকিটের যাত্রী পরিবহন করে পকেট ভরছেন রেলওয়ে পুলিশের অসাধু সদস্য ও রানিং স্টাফরা। রেলওয়ের পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু চিলাহাটি রুটেই নয়, সারা দেশে একই অবস্থা। যে আশা নিয়ে রেলওয়ে আন্তনগর ট্রেনে লাগেজ ভ্যান যুক্ত করেছিল, তা সফল হয়নি।

রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এসব লাগেজ ভ্যান কিনতে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার চুক্তি হয় চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সে সময় ৮ থেকে ৯ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যানের দাম পড়ে ৩ কোটি ৫ লাখ এবং প্রতিটি মিটারগেজ লাগেজ ভ্যানের দাম ধরা হয় ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীন থেকে আমদানি করা হয় ১২৫টি লাগেজ ভ্যান। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বহরে যুক্ত করা হয় এসব। এর মধ্যে ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ। এর মধ্যে রয়েছে ২৮টি ফ্রিজিং লাগেজ। এর আগে পুরোনো লাগেজ ভ্যান ছিল ৫০টি, যার ১৮টি সচল ছিল।

নতুন এসব লাগেজ ভ্যান যুক্ত হওয়ার আগে গড়ে মাসে পার্সেল পরিবহনে রেলের আয় হতো ৭২ লাখ টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে লাগেজ ভ্যানগুলো যুক্ত হওয়ার পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ লাখ টাকায়। অর্থাৎ রেলওয়ে ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় করে গড়ে প্রতি মাসে আয় করছে মাত্র ৭ লাখ টাকা।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের লাগেজ ভ্যানে নেই কোনো মালামাল। মালামালের পরিবর্তে সেগুলোতে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

সৈয়দপুর পৌর কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েলফেয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আজম বলেন, ট্রাকে করে মালামাল পরিবহনে সৈয়দপুর থেকে ঢাকায় সবজি পাঠাতে প্রতি কেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা খরচ পড়ে। সেখানে ট্রেনে করে পাঠাতে খরচ সাড়ে ৫ টাকার মতো। এ ছাড়া ট্রেনে পরিবহন করলে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশন হয়ে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে তিন-চারবার সবজি ওঠানো-নামানোতে পণ্য নষ্ট হয়। তাই আমরা ট্রাকেই সাধারণত পণ্য আনা-নেওয়া করি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের পরিবহন বিভাগে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, লাগেজ ভ্যানগুলো খালি থাকায় এখন মালামালের পরিবর্তে রেলওয়ে (জিআরপি) পুলিশের ও রানিং স্টাফের অসাধু সদস্যরা বিনা টিকিটের যাত্রী পরিবহন করছেন। এতে রেলওয়ের লাভ না হলেও তাঁদের পকেট ভরছে।

এ নিয়ে কথা হয় রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা এ এম এম শাহনেওয়াজের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, রেলে যে লাগেজ ভ্যান রয়েছে, তার মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এখন এসব লাগেজ ভ্যানকে লাভজনক করতে পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে দিতে চায় রেলওয়ে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত