Ajker Patrika

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: মুক্তি পেয়ে যা বলল ১৬ বছরের শিক্ষার্থী মাহিম

রংপুর প্রতিনিধি
আবু সাঈদ হত্যা মামলা: মুক্তি পেয়ে যা বলল ১৬ বছরের শিক্ষার্থী মাহিম

কোটা সংষ্কার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিম। আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা পৌনে ১টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল তার জামিন আদেশ মঞ্জুর করলে বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। 

মুক্তি পাওয়ার পর এই শিক্ষার্থী বলে, ‘টিয়ার শেলে আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি, জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর দেখি আমি তাজহাট থানায়। আমার হাত উল্টো করে হ্যান্ডক্যাপ দিয়ে বেঁধে রেখেছিল পুলিশ। পুলিশকে বলেছিলাম, আমি পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ি, তারপরেও ওরা আমাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।’ 

কারাগার থেকে বেরিয়ে মাহিম মা-বাবা ও স্বজনদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরে মাহিম বলে, ‘টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছিল পুলিশ। আমি একাই পড়ে গেছিলাম। তখন আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছি। তখন আমাকে ধরছে। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি তাজহাট থানায়। তখন আমার হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগানো ছিল, পেছন থেকে বাঁধা। আমি পুলিশকে বলেছিলাম, আমি পুলিশ লাইনের স্টুডেন্ট, তারপরেও পুলিশ আমাকে ছাড়েনি। রাবার বুলেট টা আমার গলায় লেগেছিল। দুই সপ্তাহ আগে লেগেছিল, এখনো দাগ সেরকম নেই। আমার পরনে তখন কলেজ ড্রেস ছিল। কলেজ ড্রেস, আমার স্কুল ব্যাগ এবং আইডি কার্ড তাজহাট থানায় ছিল। পরে তো শুনি তাজহাট থানা নাকি পুড়িয়ে দিয়েছে।’ 

এর আগে, দুপুরে আদালতের পিপি রফিক হাসনাইন জানান, নথিপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থী মাহিমের বয়স ১৬ বছর ১০ মাস হওয়ায় এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় তাকে জামিন দিয়েছে আদালত। সব প্রসিডিউর শেষে আজই তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী জোবাইদুল হক বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় ১৬ বছর ১০ মাসের কলেজছাত্র মহিমকে পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বয়স ১৯ বছর দেখিয়ে আদালতে তুলেছিল। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। পরে প্রমাণ দিয়ে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আদালত থেকে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নিয়ে আসি আমরা। সেই কাজটুকু করতে গিয়ে আমরা অনেক ধকল সামলাই। আদালত ৪ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে পুলিশের সহযোগিতায় পুট-আপ দিয়ে আজ আমরা শুনানি করি। বিজ্ঞ বিচারক মাহিমকে জামিন দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। মাহিম নিজের পরিচয় দেওয়ার পরেও ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ১৯ বছর দেখানো হয়েছে। একটি ছোট কিশোরকে গ্রেপ্তার করে তাকে অধিক বয়স লিখে কারাগারে পাঠানোটা বেআইনি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।’ 

আজ বৃহস্পতিবার রংপুর কারাগার থেকে বের হয়ে মা-ফুফুদের সঙ্গে আলফি শাহরিয়ার মাহিম। ছবি : আজকের পত্রিকা গত ১৯ জুলাই রংপুর জেলা পুলিশ পরিচালিত পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিম (১৬ বছর ১০ মাস) পুলিশের দায়ের করা পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়া, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। 

আলফি শাহরিয়ার মাহিমের বোন মাহীগঞ্জ মহা বিদ্যালয়ের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সানজানা আখতার স্নেহা বুধবার (৩১ জুলাই) তার নিজ ফেসবুক আইডিতে ১৬ বছর ১০ মাস বয়সী শিশু মাহিমকে মাহিমকে পুলিশ প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি পোস্ট করে এবং তা ব্যাপক ভাইরাল হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ পরিবারের সদস্যদের ডেকে নিয়ে আশ্বাস দেয় মাহিমকে কারামুক্তির। এ নিয়ে বুধবার রাতেই আজকের পত্রিকার অনলাইনে’ রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের শিক্ষার্থী কারাগারে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। 

মাহিমের বক্তব্যের বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মাহিম যদি তার পরিচয় পুলিশকে দেওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ সেটি না শুনে যাচাই বাছাই না করে তাকে ১৯ বছর দেখিয়ে চালান দিয়ে থাকে। তাহলে বিষয়টি আমরা তদন্ত করব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছি। নিরপরাধ কেউ কোনোভাবেই হয়রানির শিকার হবেন না। এ জন্য ২২ মামলায় আমরা এখন পর্যন্ত মেট্রোপলিটন এলাকায় ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, কাজের মধ্যে মিসটেক হতে পারে। কিন্তু আমরা পেশাদারিতে অটুট। কোনোভাবেই আমরা কাউকে হয়রানি করব না।’
 
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বুক পেতে দিলে পুলিশের গুলিতে মারা যায় বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওই ঘটনায় পুলিশের এসআই বিভূতিভূষণ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান মাহিমকে ১৯ বছর দেখিয়ে গ্রেপ্তার দেখায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত