Ajker Patrika

রিকশার ভাড়া বিমানের ৩ গুণ!

রিমন রহমান, রাজশাহী
রিকশার ভাড়া বিমানের ৩ গুণ!

রাজশাহী থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৫৫ কিলোমিটার। বিমানে ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়ছে ১৭ টাকা ৬৪ পয়সা। রাজশাহীতে এখন রিকশাতেই প্রতি কিলোমিটারের জন্য ভাড়া গুনতে হচ্ছে কমপক্ষে ৫০ টাকা, যা বিমানের ভাড়ার প্রায় তিন গুণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শহরে রিকশা-অটোরিকশার ভাড়া এমন অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এ জন্য যানজটকে দুষছেন চালকেরা।

পরীক্ষার আগে সব রিকশা-অটোরিকশার গন্তব্যই এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আবার পরীক্ষা শেষে সবাই ছুটছেন শহরের দিকে। সড়কে শুধু রিকশা আর অটোরিকশা। রিকশা-অটোরিকশার এমন চাপে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ পার হতে সময় লাগছে অন্তত ৫০ মিনিট। রাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিন সোমবার থেকেই এমন যানজট দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল থেকেও একই চিত্র দেখা গেছে। শিফট অনুযায়ী এক ঘণ্টা করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

ফলে সারা দিনই রাবির দিকে রিকশা-অটোরিকশা যাচ্ছে এবং ফিরে আসছে।

পরীক্ষার প্রথম দিন সকাল ৭টা থেকেই নগরীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর থেকে শিরোইল, ভদ্রা, তালাইমারী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ফটক পর্যন্ত যানজট শুরু হয়ে যায়। আবার নগরীর সাহেববাজার থেকে তালাইমারী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কেও যানজট লেগে যায়। সারা দিনই ছিল যানজট। গত সোমবার সকাল থেকেও একই চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভদ্রা থেকে একটি এবং সাহেববাজার থেকে আরেকটি সড়ক এসে মিলেছে তালাইমারী মোড়ে। দুই লেনের এই সড়কে বিভাজক না থাকার কারণে যে যেদিক দিয়ে খুশি যানজট পাশ কাটিয়ে গন্তব্যের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে যানজট আরও বাড়ছে। তালাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে দিয়ে বিনোদপুর পর্যন্ত অসহনীয় যানজট লেগে থাকছে সারা দিন। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দিনভর শহরের অন্যান্য এলাকাতেও যানজট লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে রিকশাচালকেরাও নিচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া।

এখন শহরের যেকোনো গন্তব্যে ১০ টাকার রিকশা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে কমপক্ষে ১০০ টাকা। সাব্বির হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে ভদ্রা পর্যন্ত রিকশায় এলাম ১৫০ টাকা ভাড়ায়। এই রাস্তার দূরত্ব তিন কিলোমিটার। কিলোমিটারপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়া দিলাম, যা আকাশপথের বিমান ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি।’

তবে রিকশা-অটোরিকশার চালকেরা বলছেন, যানজটের কারণেই বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সুরমান আলী নামের এক রিকশাচালক বলেন, জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে দু-তিনবার যাওয়া-আসা করতেই দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ‘এ’ ইউনিটের প্রথম শিফটের পরীক্ষা শেষ করে হেঁটেই হোটেলে ফিরছিলেন পরীক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, সকালে রিকশায় সাহেববাজার থেকে তালাইমারী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পার হয়েছেন এক ঘণ্টায়। তালাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তায় রিকশার চাকা আর ঘুরছিলই না। শেষে এটুকু হেঁটেই দ্রুত গিয়ে পরীক্ষায় বসেন। ফেরার পথে আর রিকশায় ওঠেননি। হেঁটেই ফিরছেন।

দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষার্থী তুহিন আনোয়ার জানান, অটোরিকশায় শহরের কামারুজ্জামান চত্বর থেকে শিরোইল পর্যন্ত রাস্তা তিনি পার হয়েছেন ২০ মিনিটে। তারপর ভদ্রায় এসে আবার যানজটে পড়েন। ভদ্রা থেকে কোনোরকমে তালাইমারী এসে অটোরিকশা আর নড়ছিলই না। ভদ্রা থেকে তালাইমারী পর্যন্ত পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ের পথ এসেছেন ৫০ মিনিটে। আর তালাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ফটক পর্যন্ত দুই মিনিটের পথে লেগেছে আরও ২০ মিনিট।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। যানজটের মুখে ট্রাফিক বিভাগকেও দেখা গেছে অসহায়। পুলিশ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যানজট লেগে থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়।

রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় এখন অনেক বেশি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। গাড়ির সংখ্যাও অনেক বেশি। সব গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ফলে যানজট স্বাভাবিক বিষয়। পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমি এই মুহূর্তে বলতে পারব না। এটা আমার নলেজে নাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত