Ajker Patrika

ভিক্ষা ছেড়ে পঙ্গুত্বকে জয়

গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২১, ১০: ৩১
ভিক্ষা ছেড়ে পঙ্গুত্বকে জয়

বাঘা (রাজশাহী): ভিক্ষার ঝুলি ফেলে নিজেই উপার্জনের পথ করে নিয়েছেন আব্দুস সাত্তার। নিজের চেষ্টায় জয় করেছেন শারীরিক অক্ষমতাকে। সম্মানজনক উপার্জনে এই করোনার মধ্যেও অন্তত দুবেলা খাবার জুটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের।

আব্দুস সাত্তারের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অমরপুর গ্রামে। বাবার নাম মুন্তাজ প্রামানিক।

অচল দুই পা জড়ো করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকের আসনে বসা আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে কথা হয় পেছনে যাত্রীদের আসনে বসে। ৩৫ বছর আগে তাঁর বয়স তখন ১৬ বছর। দিনমজুর ছিলেন। একদিন কাজে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সহকর্মীরা তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন। দুই পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল তাঁর। হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো উপকার তো হয়ইনি, উল্টো দুই পা অচল হয়ে গেছে। এ অবস্থাতেই প্রায় ১৫ বছর কোনো রকম কাজ করে গেছেন। একসময় আর যখন পেরে উঠছিলেন না, তখন লজ্জার মাথা খেয়ে হাতে তুলে নেন ভিক্ষার ঝুলি।

বিয়ারিং দিয়ে বানানো একটি গাড়িতে চড়ে ভিক্ষা করতেন তিনি। গ্রামের কালু নামের একজন পেছনে সেই গাড়ি ঠেলার কাজ করতেন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে। দিন শেষে যা কামাই হতো দুজনে ভাগ করে নিতেন। এভাবে চলতে চলতে টাকা জমিয়ে হাত দিয়ে চালানো একটি তিন চাকার সাইকেল কিনে ফেলেন আব্দুস সাত্তার। তখন কালুর সহযোগিতা ছাড়াই ভিক্ষা শুরু করেন। আয়ও বাড়তে থাকে। ভিক্ষার জমানো টাকা আর এনজিওর ঋণ নিয়ে একদিন হাজির হন আড়ানি বাজারের মাজদার মেকারের কাছে। তাঁর কাছ থেকে বানিয়ে নেন ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা। এতে খরচ হয় ৪৮ হাজার টাকা। এরপর আর ভিক্ষার জন্য হাত বাড়াননি আব্দুস সাত্তার।

এই অটোরিকশাই হয়ে ওঠে আব্দুস সাত্তারের উপার্জনের বাহন। কিন্তু বিধিবাম! কিছুদিন পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য গাড়িটি বিক্রি করে দিতে হয়। সুস্থ হওয়ার পর আরও বিপাকে পড়েন। না পারেন আরেকটা অটোরিকশা কিনতে, না পারেন ভিক্ষার ঝুলি তুলে নিতে। পরিবারের লোকজনও প্রবল আপত্তি তোলে। বেশ কিছুদিন অনেক কষ্টে কেটেছে দিন। বছর দুয়েক আগের ঘটনা এটি।

দেড় বছর আগে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার টাকা পান তিনি। সেই টাকার সঙ্গে এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আবার কিনে ফেলেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। আবার ভাত–কাপড়ের কিছুটা নিশ্চয়তা মেলে। এর মধ্যে এসে পড়ে করোনা মহামারি। সম্প্রতি রাজশাহীর সীমান্ত এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসন কঠোর লকডাউন দিয়েছে। ফলে আয় কমে গেছে আব্দুস সাত্তারের। তারপরও দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। এ টাকায় তিন সদস্যের পরিবারের খাওয়া–পরা চলে যাচ্ছে। ছেলে জাইদুল ইসলাম ও মেয়ে জেসমিন খাতুনের বিয়ে দিয়েছেন আগেই।

বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুস সাত্তারকে উপজেলা প্রশাসনের ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি কিনে দেওয়া হয়েছে। সরকারের ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলায় যেসব ভিক্ষুক উপকৃত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আব্দুস সাত্তারও একজন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত